শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

যখন হযরত মূসা(আলাইহিস সালাম) দশ বছর পূর্ণ করলেন, তখন হযরত শোয়ায়ব -এর কাছে আরয় করলেনঃ এখন আমি জননী ও ভগ্নির সাথে সাক্ষাতের উদ্দেশে মিসর যেতে চাই। ফেরাউনের সিপাহীরা তাঁকে গ্রেফতার ও হত্যার জন্যে খোঁজ করছিল। এ আশঙ্কার কারণেই তিনি মিসর ত্যাগ করেছিলেন। দীর্ঘদিন অতীবাহিত হওয়ার ফলে এখন সে আশঙ্কা অবশিষ্ট নেই। শোয়ায়ব তাঁকে স্ত্রী অর্থাৎ, নিজের কন্যাসহ কিছু অর্থকড়ি ও আসবাবপত্র দিয়ে বিদায় দিলেন। পথিমধ্যে শাম অঞ্চলের শাসকদের পক্ষ থেকে বিপদাশঙ্কা ছিল, তাই তিনি পরিচিত পথ ছেড়ে অখ্যাত পথ অবলম্বন করলেন। তখন ছিল শীতকাল। স্ত্রী ছিলেন অস্তঃসত্তা এবং তাঁর প্রসবকাল ছিল নিকটবর্তী। সকাল-বিকাল যে কোন সময় প্রসবের সম্ভাবনা ছিল। রাস্তা ছিল অপরিচিত। তাই তিনি মরু অঞ্চলে পথ হারিয়ে তূর পর্বতের পশ্চিমে ও ডান দিকে চলে গেলেন। গভীর অন্ধকার। কনকনে শীত। বরফসিক্ত মাটি। এ দুর্যোগ- মুহূর্তে স্ত্রীর প্রসব বেদনা শুরু হয়ে গেল। মূসা শীতের কবল থেকে আত্মরক্ষার্থে আগুন জ্বালাতে চাইলেন। কিন্তু তিনি আগুন জ্বালাতে ব্যর্থ হলেন। হঠাৎ তিনি দেখলেন, তূর পর্বতে আগুলে দেখতে পেলেন। সেটা ছিল প্রকৃতপক্ষে নূর। তিনি পরিবারবর্গকে বললেনঃ তোমরা এখানেই অবস্থান কর। আমি আগুন দেখেছি। সম্ভবতঃ আগুনের কাছে কোন পথপ্রদর্শক ব্যক্তিও পেতে পারি, যার কাছ থেকে পথের সন্ধান জানতে পারব। পরিবারবর্গের মধ্যে স্ত্রী যে ছিলেন, তা তো সুনিশ্চিত। কোন কোন রেওয়ায়েত থেকে জানা যায় যে, কোন খাদেমও সাথে ছিল। তাকে উদ্দেশ করেও সম্বোধন করা হয়েছে। আবার কোন কোন রেওয়ায়েত আছে যে, কিছুসংখ্যক লোক সফর সঙ্গীও ছিল, কিন্তু পথ ভুলে তিনি তাদের কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে [৫]পড়েন। নবুওয়ত লাভ সিনাই পর্বত, এই স্থানেই মূসা প্রথম আল্লাহ ( আরবি: ﻪﻠﻟﺍ আল-লাহ) বা ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী আল্লাহ এর সঙ্গে কথা বলেছিলেন। মূসা পাহাড়ের পাদদেশে এই ঘটনার সম্মুখীন হন। পাহাড়টি ছিল তাঁর ডানদিকে। এই উপত্যকার নাম ছিল তুয়া। যখন তিনি আগুনের কাছে পৌঁছালেন; মুসনাদে-আহ্মদে ওয়াহাব ইবনে মুনাব্বেহ্ বর্ণনা করন যে, মূসা আগুনের কাছে পৌঁছে একটি বিস্ময়কর দৃশ্য দখতে পেলেন। তিনি দেখলেন যে, এটি একটি বিরাট আগুন, যা একটি সতেজ ও সবুজ বৃক্ষের উপর দাউ দাউ করে জ্বলছে, কিন্তু আশ্চর্যের বিষয় এই যে, এর কারণে বৃক্ষের কোন ডাল অথবা পাতা পুড়ছে না; বরং আগুনের কারণে বৃক্ষের সৌন্দর্য, সজীবতা ও উজ্জ্বল্য আরও বেড়ে গেছে। মূসা এই বিস্ময়কর দৃশ্য কিছুক্ষণ পর্যন্ত দেখতে থাকলেন এবং অপেক্ষা করলেন যে, আগুনের কোন স্ফুলিঙ্গ মাটিতে পড়লে তিনি তা তুলে নেবেন। অনেকক্ষণ অতীবাহিত হওয়ার পরও যখন এমন হল না, তখন তিনি কিছু ঘাস ও খড়কুটা একত্রিত করে আগুনের কাছে ধরলেন। বলাবাহুল্য, এতে আগুন লেগে গেলেও তাঁর উদ্দেশ্য সিদ্ধ হবে। কিন্তু এগুলো আগুনের কাছে নিতেই আগুন পেছনে সরে গেল। কোন কোন রেওয়ায়েত আছে, আগুন তাঁর দিকে অগ্রসর হল। তিনি অস্থির হয়ে পেছনে সরে গেলেন। মোটকথা, আগুন লাভ করার উদ্দেশ্য সিদ্ধ হল না। তিনি এই অত্যাশ্চর্য আগুনের প্রভাবে বিস্ময়াভিভূত ছিলেন, ইতিমধ্যে একটি [৬]গায়বী আওয়াজ হল। বাহ্রে-মুহীত, রূহুল-মাআনী ইত্যাদি গ্রন্থে আছে, হযরত মূসা এই গায়বী আওয়াজ চতুর্দিক থেকে সমভাবে শ্রবণ করেন। তার কোন দিক নির্দিষ্ট ছিল না। শুনেছেনও অপরূপ ভঙ্গিতে; শুধু কানে নয়, সমস্ত অঙ্গ- প্রত্যঙ্গ দ্বারা শুনেছেন। এটা ছিল একটা মুজেযার মতই। আওয়াজের সারমর্ম ছিল এই যে, যে বস্তুকে তুমি আগুন মনে করছ, তা আগুন নয়- আল্লাহ্ তাআলার জ্যোতি। এতে বলা হয়, আমিই তোমার পালনকর্তা। রূহুল-মাআনী মুসনাদে বরাতে ওয়াহাবের রেওয়ায়েতে বর্ণিত রয়েছে যে, মূসাকে যখন ইয়া মূসা শব্দ প্রয়োগে আওয়াজ দেয়া হয়, তখন তিনি লাব্বায়েক (হাজির আছি) বলে জওয়াব দেন এবং বলেন যে, আমি আওয়াজ শুনছি। কিন্তু কোথা থেকে আওয়াজ দিচ্ছেন, তা জানি না। আপনি কোথায় আছেন? উত্তরে বলা হলঃ আমি তোমার উপরে, সামনে, পশ্চাতে ও তোমার সাথে আছি। অতঃপর মূসা আরয করলেনঃ আমি স্বয়ং আপনার কালাম শুনেছি, না আপনার প্রেরিত কোন ফেরেশতার কথা শুনেছি? জওয়াব হলঃ আমি নিজেই তোমার সাথে কথা বলছি। সূরা আত ত্বোয়া-হা -এর ১২ নম্বর আয়াতে আল্লাহ্ তাআলা উল্লেখ করেনঃ “ আমিই তোমার পালনকর্তা, অতএব তুমি জুতা খুলে ফেল, তুমি পবিত্র উপত্যকা তুয়ায় রয়েছ। ” জুতা খোলার নির্দেশ দেয়ার এক কারণ এই যে, স্থানটি ছিল সম্ভ্রম প্রদর্শনের এবং জুতা খুলে ফেলা তার অন্যতম আদব। দ্বিতীয় কারণ এই যে, কোন কোন রেওয়ায়তে থেকে জানা যায়, মূসা -এর পাদুকাদ্বয় ছিল মৃত জন্তুর চর্মনির্মিত। হযরত আলি, হাসান বসরী ও ইবনে জুরায়জ থেকে প্রথমোক্ত কারণই বর্ণিত আছে। তাদের মতে মূসার পদদ্বয় এই পবিত্র উপত্যকার মাটি স্পর্শ করে বরকত হাসিল করুক এটাই ছিল জুতা খুলে রাখার উপকারিতা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ