শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

উৎপত্তি অনুসারে বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে পাঁচ ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - ১.তৎসম শব্দ :- যে সব শব্দ সংষ্কৃত  ভাষা থেকে অবিকৃত অবস্থায় বাংলা ভাষায় এসেছে, সে সব শব্দকে তৎসম শব্দ বলে। যেমন : চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ধর্ম, কর্ম, চর্ম, পাত্র, ছাত্র ইত্যাদি। ২. অর্ধ-তৎসম শব্দ :- যে সব শব্দ সংষ্কৃত ভাষা থেকে কিছুটা বিকৃত হয়ে বাংলা ভাষায় এসেছে, সে সব শব্দকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে। যেমন : জোছনা<জ্যোৎস্না, ছেরাদ্দ<শ্রাদ্ধ, গিন্নী<গৃহিণী, কুচ্ছিত<কুৎসিত ইত্যাদি। ৩. তদ্ভব শব্দ:- সংষ্কৃত ভাষার যে সব শব্দ স্বাভাবিক বিবর্তনের ধারায় প্রাকৃত-অপভ্রংশ ইত্যাদির মধ্য দিয়ে পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় স্থান লাভ করেছে, সে সব শব্দকে তদ্ভব শব্দ বলে। যেমন : চামার (চামার<চম্মআর<চর্মকার), হাত (হাত<হত্থ<হস্ত), চাঁদ (চাঁদ<চন্দ<চন্দ্র) ইত্যাদি। ৪. দেশি শব্দ :- যে সব শব্দ আদিকাল থেকেই বাংলা ভাষার নিজস্ব শব্দ হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, সে সব শব্দকে দেশি শব্দ বলে। যেমন- কুলা, ঢেঁকি, ঝাঁটা, টোপর, ডিঙি ইত্যাদি। ৫. বিদেশি শব্দ :- সংষ্কৃত ছাড়া অন্যান্য বিদেশি ভাষা থেকে যে সব শব্দ বাংলা ভাষায় এসেছে, সে সব শব্দকে বিদেশি শব্দ বলে। যেমন : চা, চিনি, তালা, চাবি, চাকু, লুঙ্গি, গুদাম, আলমারি, চাকর, দারোগা, নামায, রোযা, রিক্সা, পাউরুটি ইত্যাদি। গঠন অনুযায়ী বাংলা ভাষার শব্দসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়। যথা - ১. মৌলিক শব্দ :- যে সব শব্দকে ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে তার সাথে অর্থ সংগতিপূর্ণ আর কোনো শব্দ পাওয়া যায় না, সে সব শব্দকে মে․লিক শব্দ বলে। যেমন : হাত, পা, দেশ, সিংহ, মাছ ইত্যাদি। ২. সাধিত শব্দ :- যে সব শব্দকে ভাঙলে বা বিশ্লেষণ করলে তার সাথে অর্থ সংগতিপূর্ণ আরও এক বা একাধিক শব্দ পাওয়া যায়, সে সব শব্দকে সাধিত শব্দ বলে। যেমন : হাতল (হাত+ল), পায়েল (পা+এল), দেশান্তর (দেশ+অন্তর), সিংহাসন (সিংহ+আসন), মেছো (মাছ+উয়া) ইত্যাদি। সন্ধি, সমাস, প্রত্যয়, উপসর্গ, দ্বিরুক্তি ও পদান্তরসহ নানা প্রক্রিয়ার মাধ্য

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

শব্দ হলো অর্থবোধক ধ্বনিসমষ্টি, যা বাক্য গঠ‌নের মূল উপাদান। শব্দ একাধিক বর্ণ ও অক্ষর সমন্বয়ে গঠিত হয়ে থাকে । শব্দের শ্রেণীবিন্যাস: শব্দ‌কে ব্যুৎপত্তি, গঠন ও অর্থ অনুসা‌রে বি‌ভিন্ন ভাগে ভাগ করা হ‌য়ে থা‌কে । উৎপত্তিগত শ্রেণিবিভাগ:  বাংলা ভাষার শব্দকে উৎপত্তিগত দিক দিয়ে পাঁচ ভাগে ভাগ করা হয়েছে। এ ভাগগুলো হলো :  ১) তৎসম শব্দ,  ২)অর্ধ-তৎসম শব্দ,  ৩)তদ্ভব শব্দ,  ৪)দেশি শব্দ ও  ৫)বিদেশি শব্দ। তৎসম শব্দ: সংস্কৃত ভাষার যে-সব শব্দ অপরিবর্তিত রূপে সরাসরি বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সে সব শব্দকে বলা হয় তৎসম শব্দ। উদাহরণঃ- চন্দ্র, সূর্য, নক্ষত্র, ভবন, ধর্ম, পাত্র, মনুষ্য, মস্তক, অন্ন, গৃহ, চরণ, তৃণ, অগ্রহায়ণ,ভাষা ইত্যাদি অর্ধ-তৎসম শব্দ: যেসব শব্দ সংস্কৃত ভাষা থেকে অল্প পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় চলে এসেছে, সেসব শব্দকে অর্ধ-তৎসম শব্দ বলে। যেমন : কেষ্ট, পেন্নাম, নেমন্তন্ন, জোছনা, গিন্নি ইত্যাদি। তদ্ভব শব্দ:  বাংলা ভাষা গঠনের সময় প্রাকৃত বা অপভ্রংশ থেকে যে সব শব্দ পরিবর্তিত হয়ে বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছিলো, সেগুলোকেই বলা হয় তদ্ভব শব্দ। অবশ্য, তদ্ভব শব্দের মূল অবশ্যই সংস্কৃত ভাষায় থাকতে হবে। যেমন- সংস্কৃত ‘হস্ত’ শব্দটি প্রাকৃততে ‘হত্থ’ হিসেবে ব্যবহৃত হতো। আর বাংলায় এসে সেটা আরো সহজ হতে গিয়ে হয়ে গেছে ‘হাত’।  তেমনি, চর্মকার >চম্মআর >চামার, দেশি শব্দ:  বর্তমান বাংলা ভাষাভাষীদের ভূখণ্ডে অনেক আদিকাল থেকে যারা বাস করতো সেইসব আদিবাসীদের ভাষার যে সকল শব্দ বাংলা ভাষায় গৃহীত হয়েছে সে সব শব্দকে বলা হয় দেশি শব্দ। এই আদিবাসীদের মধ্যে আছে - কোল, মুণ্ডা, ভীম, ইত্যাদি। দেশী শব্দের উদাহরণ কুড়ি (বিশ) - কোলভাষা, পেট (উদর) - তামিল ভাষা, চুলা (উনুন) - মুণ্ডারী ভাষা। বিদেশি শব্দ:  বিভিন্ন সময়ে বাংলা ভাষাভাষী মানুষেরা অন্য ভাষাভাষীর মানুষের সংস্পর্শে এসে তাদের ভাষা থেকে যে সব শব্দ গ্রহণ করেছে, বাংলা ভাষার শব্দ ভান্ডারে অন্য ভাষার শব্দ গৃহীত হয়েছে, সেগুলোকে বলা হয় বিদেশি শব্দ। যে কোনো ভাষার সমৃদ্ধির জন্য বিদেশি শব্দের আত্মীকরণ খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর এদিক দিয়ে বাংলা ভাষা বেশ উদারও বটে। নিচে বিদেশী শব্দের উদাহরণ দেওয়া হলো-  আরবি শব্দ : বাংলায় ব্যবহৃত আরবি শব্দসমূহকে দুই ভাগে ভাগ করা যায়:— (১) ধর্মসংক্রান্ত শব্দ: আল্লাহ, ইসলাম, ঈমান, অজু, কোরবানি, কুরআন, কিয়ামত, গোসল, জান্নাত, জাহান্নাম, তওবা, তাসবি, জাকাত, হজ, হাদিস, হারাম, হালাল ইত্যাদি। (২) প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ: আদালত, আলেম, ইনসান, ঈদ, উকিল, ওজর, এজলাস, এলেম, কানুন, কলম, কিতাব, কেচ্ছা, খারিজ, গায়েব, দোয়াত, নগদ, বাকি, মহকুমা, মুন্সেফ, মোক্তার, রায় ইত্যাদি। ফারসি শব্দ : বাংলায় ব্যবহৃত ফারসি শব্দগুলোকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়:— (১) ধর্মসংক্রান্ত শব্দ: খোদা, গুনাহ, দোজখ, নামাজ, পয়গম্বর, ফেরেশতা, বেহেশত, রোজা ইত্যাদি। (২) প্রশাসনিক ও সাংস্কৃতিক শব্দ: কারখানা, চশমা, জবানবন্দি, তারিখ, তোশক, দফতর, দরবার, দোকান, দস্তখত, দৌলত, নালিশ, বাদশাহ, বান্দা, বেগম, মেথর, রসদ ইত্যাদি। (৩) বিবিধ শব্দ: আদমি, আমদানি, জানোয়ার, জিন্দা, নমুনা, বদমাস, রফতানি, হাঙ্গামা ইত্যাদি। ইংরেজি শব্দ : দুই প্রকারের পাওয়া যায়৷ যথাঃ  (১) প্রায় অপরিবর্তিত উচ্চারণে- চেয়ার, টেবিল, পেন, পেন্সিল, ইউনিভার্সিটি, ইউনিয়ন, কলেজ, টিন, নভেল, নোট, নোট, পাউডার, ব্যাগ, ফুটবল, মাস্টার, লাইব্রেরি, স্কুল, ব্যাংক ইত্যাদি। (২) পরিবর্তিত উচ্চারণে - আফিম (opium), স্কুল (school), বাক্স (box), হাসপাতাল (hospital), বোতল (bottle), ডাক্তার (doctor), ইংরেজি (English) ইত্যাদি। পর্তুগিজ শব্দ : আনারস, আলপিন, আলমারি, গির্জা, গুদাম, চাবি, পাউরুটি, পাদ্রি, বালতি ৷ ফরাসি শব্দ : কার্তুজ, কুপন , ডিপো, রেস্তোরাঁ। ওলন্দাজ শব্দ : ইস্কাপন, টেক্কা, তুরুপ, রুইতন, হরতন (তাসের নাম) ৷ গুজরাটি শব্দ : খদ্দর, হরতাল ৷ পাঞ্জাবি শব্দ : চাহিদা, শিখ তুর্কি শব্দ : চাকর, চাকু, তোপ, দারোগা ৷ চীনা শব্দ : চা, চিনি, লুচি মায়ানমার/ বর্মি শব্দ : ফুঙ্গি, লুঙ্গি জাপানি শব্দ : রিক্সা, হারিকিরি ৷ হিন্দী শব্দ : চিঠি, ঠিকানা, পানি ইত্যাদি। মিশ্র শব্দ: এ ছাড়াও আরেকটি বিশেষ ধরনের শব্দ আছে। দুইটি ভিন্ন ধরনের শব্দ সমাসবদ্ধ হয়ে বা অন্য কোনো উপায়ে একত্রিত হলে ওই নতুন শব্দটিকে বলা হয় মিশ্র শব্দ। এক্ষেত্রে যে দুইটি শব্দ মিলিত হলো, তাদের শ্রেণিবিভাগ চিনতে পারাটা খুব জরুরি। যেমনঃ রাজা-বাদশা (তৎসম+ফারসি), হাটবাজার (বাংলা+ফারসি), হেড-মৌলভি (ইংরেজি+ফারসি), হেড-পন্ডিত (ইংরেজি+তৎসম), খ্রিষ্টাব্দ (ইংরেজি+তৎসম), ডাক্তারখানা (ইংরেজি+ফারসি), পকেটমার (ইংরেজি+বাংলা)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ