লোক প্রশাসন অধ্যয়ন করার পদ্ধতি সমূহঃ

পদ্ধতি হচ্ছে অধ্যায়নের এমন একটি পন্থা যার দ্বারা বিষয়বস্তু নির্ধারণ ও বিশ্লেষণ করা হয়। প্রত্যেক সামাজিক বিজ্ঞান অধ্যায়ন করার নিজস্ব পদ্ধতি রয়েছে লোকপ্রশাসন সামাজিক বিজ্ঞানের অন্তর্ভুক্ত তাই সামাজিক বিজ্ঞান হিসেবে এর অধ্যায়নের বিভিন্ন পদ্ধতি অনুসরণ করা হয়েছে। প্রশাসনের প্রকৃতির উদ্দেশ্য এবং সঠিকভাবে জানবার এবং অনুধাবন করার জন্য এ সকল পদ্ধতি অতি গুরুত্বপূর্ণ। লোকপ্রশাসনের সাধারণত যে সকল পদ্ধতি অধ্যায়ন করা হয় সেগুলো নিচে দেওয়া হলঃ
১.  ঐতিহাসিক পদ্ধতিঃ সাম্প্রতিককালে লোকপ্রশাসনের ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক পদ্ধতির ব্যবহার বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। এ পদ্ধতি অনুসারে আদি থেকে বর্তমান যুগ পর্যন্ত প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান উৎপত্তি বৃদ্ধি ও অগ্রগতির ইতিহাস জানার পরে এর বর্তমান উপলব্ধির নির্দেশ দেয়।  অবশ্য অতীতকে জানার মধ্যে প্রতিষ্ঠানকে সমভাবে বুঝে উঠা নির্ভর করে না। তবুও প্রতিষ্ঠান বিভিন্ন দিক সম্পর্কে অতিত যে জ্ঞানের সন্ধান দেয় তা যথেষ্ট গুরুত্বপূর্ণ। সাম্প্রতিককালে ইউরোপ ও আমেরিকার প্রখ্যাত প্রশাসকগণ প্রশাসন ক্ষেত্রে বিভিন্ন সমস্যা সমাধানের জন্য ঐতিহাসিক ঘটনাবলীর উপর বহুল পরিমাণে নির্ভর করতেছেন।
২.  বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি ঃলোক প্রশাসন অধ্যায়নের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ পদ্ধতি হচ্ছে বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি। বৈজ্ঞানিক ব্যবস্থাপনার পদ্ধতি অনুযায়ী লোকপ্রশাসন অধ্যায়নের লক্ষ্য হলো, প্রশাসনিক সমস্যার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানসম্মত পদ্ধতি ও কৌশল প্রয়োগ করা। বিজ্ঞানসম্মত উপায়ে ব্যবস্থাপনা কার্য পরিচালনার প্রচেষ্টার ফলে সংগঠন ও ব্যবস্থাপনা আয় ব্যয় নির্ধারণের ক্ষেত্রে কার্যকর কলা-কৌশলের বিকাশ ঘটে। বর্তমান সময়ে অফিসের ব্যবস্থাপনা হিসাব-নিকাশ ইত্যাদি বৈজ্ঞানিক নীতির ভিত্তিতে নির্ধারণ ও নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে।
৩.  আইনগত পদ্ধতি  ঃ লোক প্রশাসনকে আইনগত দৃষ্টিভঙ্গির আলোকে অধ্যায়ন করার নীতি বহুলাংশে প্রচলিত রয়েছে। সকল দেশে প্রশাসনিক আইন রাষ্ট্রীয় আইনের একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ স্বরূপ এবং সরকারি কর্তৃপক্ষ সমূহের সংগঠন ও কার্যাবলী তাদের মধ্যকার পারস্পরিক সম্পর্ক তাদের ক্ষমতা ও দায়িত্ব ইত্যাদি প্রশাসনিক আইন এর আওতাভুক্ত বলে ধারণা করা হয়। এরূেপ সেখানে যেহেতু প্রশাসনের প্রশাসনিক আইন এরই অংশ হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং সেহেতু প্রশাসনকে আইনগত দৃষ্টিকোণ হতে অধ্যায়ন করা হয়।
৪.  পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ঃলোক প্রশাসন অধ্যায়নে পরীক্ষামূলক পদ্ধতি ব্যাপক পরিমাণে ব্যবহৃত হচ্ছে। প্রতিটি প্রশাসনিক প্রতিষ্ঠান এবং সংস্থাকে এক একটি পরীক্ষাগার গলে বলে মনে করা যেতে পারে। এ পরীক্ষাগারে বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় সংস্কার আইন ও নীতিমালা প্রবর্তন করার মানসে নতুন নতুন কৌশল বাস্তবায়নের কাজ গৃহীত হয়।উন্নত এবং সমৃদ্ধিশালী জীবন গঠনের তাগিদে এসমস্ত নীতিমালা প্রায় পরীক্ষামূলকভাবে চালু করা হয়।
৫.  রাজনীতি ভিত্তিক পদ্ধতি  ঃ প্রশাসনকে রাজনৈতিক তত্ত্ব ও প্রচলিত রাজনৈতিক মূল্যবোধের উপাদান হিসেবে গণ্য করা হচ্ছে।প্রশাসনকে এর সামাজিক ও রাজনৈতিক পটভূমি হতে বিচ্ছিন্ন ভাবে অধ্যায়ন করা যেতে পারে এ মত রাজনীতি ভিত্তিক পদ্ধতির অনুসারীগণ কর্তৃক প্রত্যাখ্যাত হয়। রাজনৈতিক দৃষ্টিকোণ হতে লোক প্রশাসনকে অধ্যায়ন করা হলে সংগঠন ব্যবস্থাপনায় ইত্যাদি সংক্রান্ত সমস্যাগুলিকে গণতান্ত্রিক আদর্শ লক্ষ্যের পটভূমিতে অনুশীলন করা যাবে। এ পথে সকল সমস্যা সমাধান করা সম্ভব।
উপরুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে লোক প্রশাসনের উপরোক্ত পদ্ধতি গুলোর মধ্যে কোনটি সঠিক পদ্ধতি তা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। বস্তুত কোন একটি পদ্ধতি স্বয়ংসম্পূর্ণ নয় তবে লোকপ্রশাসন অধ্যায়নের জন্য কয়েকটি পদ্ধতির একত্র প্রয়োগই লক্ষ্য অর্জনে সহায়ক। এগুলো নির্দিষ্ট করে দেয়া কোনো উপায় নেই এগুলো নির্ভর করে সম্পূর্ণভাবে প্রশাসনের সংস্কৃতির উপর।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে