ল্যাবের ফাকে হঠাৎ শামীম বলে উঠল, চল কোথাও ঘুরে আসি।

আতেল ঘরোনার কয়েকজন বন্ধু এমনভাবে তাকালো যেন শামীম কোনো গালী দিয়েছে।

আমি পাশের টেবিলে এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম। অমনোযোগী আমার এই সুন্দর দৃশ্য মিস করার কোনো কারন ছিল না।


যাহোক শেষ পর্যন্ত লাইক মাইন্ডেড কয়েকজন বন্ধু ঠিক করে ফেললাম ঢাকার আশেপাশেই কোথাও ঘুরে আসি।
কোথাই যাওয়া যায় কোথায় যায় করতে করতে ঠিক করে ফেললাম নুহাশ পল্লী। নুহাশ পল্লি যাওয়ার আইডিয়া দিতে না দিতেই সবাই রাজি হয়ে গিয়েছিল। 


এর পেছনে অবশ্য দুইটি কারন ছিল।
১। সবাই মোটামোটি হুমায়ূন ভক্ত।
২। সবাই ঢাকার আশেপাশে যাওয়ার পক্ষপাতি ছিল।


যাহোক শেষ পর্যন্ত  আমরা দিন ও সময় ফিক্স করে ফেললাম। যেহেতু আমরা দিনে যেয়ে দিনেই ফিরে আসার প্লান, তাই খুব ভোরে রওনা দেবার ইচ্ছা ছিল।


কিন্তু বিপত্তি ঘটল অন্যত্র।


যে বন্ধু গুলো আমাদের সাথে প্রথম দিকে যেতে চাইনি তারাও শেষ পর্যন্ত যোগ দিল।
সবার উত্তরার রাজলক্ষী থেকে উঠার কথা ছিল। সবার পৌছানোর কথা ছিল সকাল ৭ টাই। কিন্তু ওই যে বললাম, কালপ্রিটগুলোর জন্যে লেট হয়ে গেল।


আগে থেকে আমি দেখে রেখেছিলাম কি কি বাসে চড়ে সরাসরি নুহাশ পল্লী যাওয়া যায়। সেই অনুযায়ী প্রভাতি-বনশ্রী নামক বাসে উঠার কথা ছিল। কিন্তু বাসটি লম্বা রুটে চলে বিধায় এদের বাস গুলো একেকটা দীর্ঘ সময় পর আসে।
অপু, শাকিল আর শামীম এর অপেক্ষা সহ্য হলো না। বিকল্প উপায়ে যাবার প্লান করলাম। প্রথমে গাজীপুর চৌরাস্তা, এরপর গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে বাস নিয়ে হোতাপাড়া বাস স্টপেজে। গাজীপুর পর্যন্ত ৩০ টাকা এবং গাজীপুর চৌরাস্তা থেকে হোতাপাড়া বাস স্টপেজ পর্যন্ত ১৫ টাকা ঠিক করলাম যদিও ভাড়া ২০ টাকা করে ছিল। স্টূডেন্ট বলে কম দিয়েছিলাম।
হোতাপাড়া বাসস্টপেজে নেমেই কয়েকজন অটোবাইক ঠিক করলাম। ভাড়া ৪০ এর মত মাথাপিছু। বাকি কয়েকজন গেল রেস্টূরেন্টে। কেন? কারন আমরা আগেই জানতাম নুহাশ পল্লী বা এর আশেপাশে খাবার পাওয়া যায়না। যাহোক খাবার নিয়ে আমরা অটোতে চড়ে রওনা দিলাম নুহাশ পল্লীর উদ্দেশ্যে। নুহাশ পল্লী কিভাবে যাবেন এবং কি কি খাবেন এ ব্যপারে আরও জানতে ভ্রমনচারি তে ঘুরে আসতে পারেন।

যাহোক অটোতে যাবার পথে গ্রামের সুন্দর দৃশ্য উপভোগ করেছিলাম।

অতঃপর পৌঁছে গেলাম পিরুজালি গ্রামেঃ পল্লীতে হুমায়ুন আহমেদের নন্দন পল্লী নুহাশ পল্লীতে।

নুহাশ পল্লী টিকেট মুল্য ২০০ টাকা। স্টূডেন্টদের জন্যে অর্ধেক।

আমরা যেদিন নুহাশ পল্লী গিয়েছিলাম, সৌভাগ্যক্রমে অইদিন বৃষ্টি শুরু হলো। সে কি বৃষ্টি।

আগেই প্লান ছিল নুহাশ পল্লীর লীলাবতী দীঘিতে গোসল করব আমরা। গামছা, এক্সট্রা কাপড় নিয়ে গিয়েছিলাম সাথে তাই। আবার এর সাথে যুক্ত হলো বৃষ্টি। 


প্রথমেই লাফ দিলাম হুমায়ুন আহমেদের শোবার ঘরের সামনের সুইমিংপুলে। কিন্তু সমস্যা ছিল একটা। সুইমিংপুলে যে পানিই নেই। তার উপর অল্প যতটুকু পানি ছিল, তার ভিতরেই স্কুলের কতকগুলো সুন্দর সুন্দর মেয়ে ঝাপাঝাপি করছিল।

একটু পরেই ওরা উঠল। তারপর আমরা নামলাম। মটর দিয়ে পানি ভরার চেস্টা করলাম। কিন্তু পুরো সুইমিংপুল ভরতে তো অনেক সময় লাগে। তবুও যতটুকু পানি ছিল তার ভিতরে গাপ্তাগায়ী খুনসুটিতে মেতে ছিলাম। অসাধারন এক অভিজ্ঞতা।

মজার ব্যপার হলো জাওয়াদ নামে আমার এক বন্ধু চোখে যাতে পানি না যায় এবং সাতার কাটার সময় যাতে পানির নিচে সবকিছু দেখতে পায়, এজন্য ওয়াটার প্রুফ গ্লাস নিয়ে গেসিল। সুইমিংপুলে পানি ছিলনা, তবুও তার গ্লাসটি বের করতেই হলো। আর কি রক্ষা, দুষ্টু নাজিরের হাতে পড়ল সেটা। যা  শেষ পর্যন্ত ভাঙ্গা অবস্থায় জাওয়াদের হাতে ফিরল।
এ পর্ব শেষ করে, সিদ্ধান্ত নিলাম লীলাবতী দীঘিতে গোসল করব। যেমন সিদ্ধান্ত তেমন কাজ।


বিশাল দীঘিতে নামলাম গোসল করতে। আমরা যারা সাতার জানতাম সাতরে পার হয়েছিলাম এপাড় থেকে ওপাড় পর্যন্ত। দীঘি দেখতে খুব বেশি বড় মনে না হলেও আসলে অনেক প্রশস্ত। সাতরে পার হওয়াটাও তাই কষ্টকর। আকাশ তো পার হতে গিয়ে ডুবেই যাচ্ছিল। আল্লাহ সহায় ছিল, শেষ পর্যন্ত নাজির ধরে ফেলছিল ওকে।

লীলাবতি দীঘিতে গোসল শেষে পোশাক পরিবর্তন করলাম। এরপর খেয়ে নিলাম বৃষ্টিবিলাসে। বৃষ্টিবিলাসে ওয়াশরুম ও বিশ্রাম নেবার ব্যবস্থা আছে। আমরা ওখানে বেশ খানিকটা রেস্ট নিয়েছিলাম।
খাওয়া-দাওয়া শেষে পুরো নুহাশ পল্লী ঘুরে দেখলাম। অসাধারন সুন্দর। সবচেয়ে ভাল লাগার এবং অনুধাবন করার বিষয় হলো লেখক তার সৃষ্টিসত্তা দিয়ে এগুলো তিলে তিলে সাজিয়েছেন।

ঘোরাঘুরি শেষে চা বানিয়ে এনে দিয়েছিল নুহাশ পল্লির এক পরিচার্যক। আহ! কি অনুভুতি ছিল। ভেরি ভেরি হার্ড টু এক্সপ্লেইন।

মজার সেই ঝটিকা ট্রিপের কথা আজও মনে পড়ে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে