শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

কুরআনে এরকম বিজ্ঞানময় ইঙ্গিত অনেক আছে, কিছু দিয়ে দিলাম। ১০০০ হাজার এর ও বেশী আয়াতে বিজ্ঞানের বিভিন্ন বিষয়বস্তুকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে পবিত্র কোরআনে। সম্প্রতি বিজ্ঞানীরা যেগুলা জানতে পেরেছে ১৪০০ বছর আগেই কুরানে যা উল্লেখ করা হয়েছে। তাই কুরআন ও বিজ্ঞানকে আলাদা করার কিছু নেই। কুরআন বিজ্ঞানময়, যদিও এটা ধর্মগ্রন্থ, মানবজাতির জন্য পথ প্রদর্শক স্বরুপ।

বোঝার সুবিধার্থে ২ঃ১১৭ এভাবে আয়াতগুলো দেয়া হয়েছে। মানে কুরআনের ২ নং সুরার ১১৭ নং আয়াত।

সৃষ্টিতত্ত্বঃ

আল্লাহ সবকিছুর সৃষ্টি করেছেন শূন্য থেকে– ২:১১৭।

পৃথিবী এবং মহাকাশ/বায়ুমণ্ডল একসময় একসাথে মিলিত ছিল এবং তা আলাদা করা হয়েছে বিশাল শক্তি দিয়ে– ২১:৩০।

পানি থেকে তৈরি হয়েছে সকল প্রাণ– ২১:৩০।

মহাবিশ্ব ক্রমাগত সম্প্রসারিত হচ্ছে– ৫১:৪৭।

মহাবিশ্ব ছয়টি পর্যায়ে তৈরি হয়েছে এবং প্রাণ সৃষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ তৈরি হয়েছে চারটি পর্যায়ে– ৫০:৩৮, ৪১:১০।

প্রতিটি প্রাণীর সৃষ্টি হয় নিয়ন্ত্রিত বিবর্তনের মাধ্যমে– ৭:৬৯, ১৫:২৮, ২৪:৪৫, ৩২:৭, ৭১:১৪।

মানুষের সৃষ্টির সূচনা হয়েছিল পানিসিক্ত অজৈব পদার্থ (কাঁদা) থেকে– ৩২:৭, ১৫:২৬।

পৃথিবীর বাইরে মহাকাশে/বায়ুমণ্ডলে প্রাণ আছে– ৪২:২৯। গত বছর বিজ্ঞানীরা আবিষ্কার করেছেনমেঘে অত্যন্ত উঁচুতেও বিপুল পরিমাণে অতি ক্ষুদ্র কীটাণু আছে।

মহাকাশ বিজ্ঞান

সূর্য পূর্ব দিকের দুটি প্রান্তে উঠে এবং পশ্চিম দিকের দুটি প্রান্তে অস্ত যায়– ৫৫:১৭, ৭০:৪০, ৩৭:৫।

পৃথিবী নিজস্ব অক্ষে ঘুরছে– ২৭:৮৮, ২১:৩৩, ৩৬:৪০।

সূর্যের নিজস্ব অক্ষ রয়েছে, এটি গ্যালাক্সিকে কেন্দ্র করে ঘুরে– ৩৬:৪০, ২১:৩৩।

পৃথিবী সম্পূর্ণ গোল নয় বরং তা ডিমের মত উপরে নিচে চ্যাপ্টা– ৭৯:৩০, ৩৯:৫।

প্রথমে মহাকাশে সবকিছু ছিল ধোঁয়া, তারপর অভিকর্ষের প্রভাবে তা একত্র হয়ে পৃথিবীর মত গ্রহের জন্ম দিয়েছে– ৪১:১১।

পৃথিবীর সমস্ত পানি এসেছে মহাকাশ থেকে, পরিমিতভাবে– ২৩:১৮। বিজ্ঞানীরা ধারণা করেন, ধুমকেতু এবং উল্কার মাধ্যমে আদি পৃথিবীতে পানি এসেছে।

চাঁদ এবং সূর্যের আকৃতি এবং দূরত্ব সুনিয়ন্ত্রিত– ৫৫:৫। সূর্য চাঁদ থেকে ৪০০ গুণ বড় এবং চাঁদ পৃথিবী থেকে যত দূরে, সূর্য তার ৪০০ গুণ বেশি দূরে। এ কারণেই পূর্ণ সূর্য গ্রহণ হয়। সূর্য যদি এর থেকে কাছে বা চাঁদ যদি এর থেকে দূরে হত, অথবা চাঁদ ছোট হত বা সূর্য যদি আরও বড় হত, তাহলে পূর্ণ সূর্যগ্রহণ হত না।

মহাকাশের সম্প্রসারণের গতি যদি আলোর গতি থেকে বেশি না হত, তাহলে কখনও রাত হত না কারণ রাতের আকাশের প্রতিটি বিন্দুতে কোন না কোন নক্ষত্র বা গ্যলাক্সি থেকে আলো পৃথিবীতে এসে পৌঁছাত এবং রাতের আকাশ থাকতো দিনের মত জ্বলজ্বলে– ৩:১৯০।

পদার্থ বিজ্ঞান

সময় আপেক্ষিক– ৩২:৫, ৭০:৪, ২২:৪৭।

প্রতিটি বস্তু তৈরি হয়েছে জোড়ায় জোড়ায়– ম্যাটার এবং এন্টিম্যাটার– ৫১:৪৯।

পৃথিবীতে যত লোহা আছে তার সব এসেছে পৃথিবীর বাইরে থেকে – ৫৭:২৫। একমাত্র সুপারনোভার বিস্ফোরণে মহাবিশ্বে লোহা সৃষ্টি হয়, যা উল্কার মাধ্যমে পৃথিবীতে অবতীর্ণ হয়।

নক্ষত্র যেখানে ধ্বংস হয়– ব্ল্যাকহোল– ৫৬:৭৫।

পালসার– যা অতি তীব্র ছিদ্রকারি গামারশ্মি বিচ্ছুরণ করে এবং সেকেন্ডে বহুবার ‘নক’ করে– ৮৬:১-৩।

২০০৬ সালের পদার্থ বিজ্ঞানে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী আবিষ্কার– মহাবিশ্বের সবকিছু সব জায়গায় সমানভাবে ছড়িয়ে নেই বরং নির্দিষ্ট কিছু পথে মাকড়সার জালের বুননের মত ছড়িয়ে আছে– ৫১:৭।

আগুন জ্বালাবার জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেন তৈরি করে গাছের সবুজ পাতা– ৩৬:৮০।

বৃষ্টির পানির ফোঁটা মাটিতে পড়ে মাটির কণাগুলো আয়নিত করে ফেলে, যার কারণে কণাগুলো “ব্রাউনিয়ান গতি” কারনে স্পন্দন করা শুরু করে। তারপর আয়নিত কণাগুলোর ফাঁকে পানি এবং অন্যান্য জৈব পদার্থ আকৃষ্ট হয়ে জমা হয় এবং মাটির কণাগুলো ফুলে যায়– ২২:৫।

মেঘের পানিতে মৃত জমিকে জীবিত করার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ রয়েছে– ৫০:৯, ২৫:৪৮-৪৯। সমুদ্রের পানির উপরে ০.১ মিলিমিটার মোটা স্তর থাকে যাতে বিপুল পরিমাণে জৈব বর্জ্য পদার্থ থাকে, যা মৃত শৈবাল এবং প্ল্যাঙ্কটন থেকে তৈরি হয়। এই বর্জ্য পদার্থগুলো ফসফরাস, ম্যাগনেসিয়াম, পটাসিয়াম, কপার, জিঙ্ক, কোবাল্ট, লেড শোষণ করে। এই স্তরটি পানি বাষ্প হবার সময় পানির পৃষ্ঠটানের কারণে পানির কণার সাথে চড়ে মেঘে চলে যায় এবং বৃষ্টির সাথে বিপুল পরিমাণে পড়ে মাটির পুষ্টির জন্য প্রয়োজনীয় রাসায়নিক পদার্থগুলো সরবরাহ দেয়।

আবহাওয়া বিজ্ঞান

বাতাসের মাধ্যমে মেঘ ছড়ায় এবং মেঘের মাঝামাঝি মেঘের উপর মেঘ স্তরে স্তরে জমা হয়ে বৃষ্টির মেঘ তৈরি হয়– ২৪:৪৩, ৩০:৪৮।

মেঘ অত্যন্ত ভারী, একটি বৃষ্টির মেঘ ৩০০,০০০ টন পর্যন্ত ওজন হয়– ১৩:১২, ৭:৫৭।

আকাশে অনেক উচ্চতায় উঠার সময় অক্সিজেনের অভাবে শ্বাস কষ্ট হয় এবং বুক সঙ্কীর্ণ হয়ে যায়– ৬:১২৫।

আকাশ পৃথিবীর জন্য একটি বর্ম সরূপ যা পৃথিবীকে মহাকাশের ক্ষতিকর মহাজাগতিক রশ্মি থেকে রক্ষা করে– ২১:৩২, ২:২২।

আকাশ প্রতিফলন করে– পানি বাষ্প হয়ে মহাকাশে হারিয়ে যাওয়া থেকে এবং পৃথিবীকে সূর্যের ক্ষতিকর রশ্মি থেকে– ৮৬:১১।

সমুদ্রের নিচে আলাদা ঢেউ রয়েছে, যা উপরের ঢেউ থেকে ভিন্ন– ২৪:৪০।

বৃষ্টির পরিমাণ সুনিয়ন্ত্রিত– ৪৩:১১। পৃথিবীতে প্রতি বছর যে পরিমাণ বৃষ্টি হয় তার পরিমাণ ৫১৩ ট্রিলিয়ন টন এবং ঠিক সম পরিমাণ পানি প্রতি বছর বাষ্প হয়ে মেঘ হয়ে যায়। এভাবে পৃথিবী এবং আকাশে পানির ভারসাম্য রক্ষা হয়।

ভূমধ্যসাগর এবং আটলান্টিক সাগরের মধ্যে লবনাক্ততার পার্থক্য আছে এবং তাদের মধ্যে একটি লবণাক্ততার বাঁধ রয়েছে যার কারনে আটলান্টিক সাগরের লবনাক্ত পানি ভূমধ্যসাগরের কম লবনাক্ত পানির সাথে মিশে যায় না এবং দুটি সাগরে দুই ধরনের উদ্ভিদ এবং প্রাণীর বসবাস সম্ভব হয়– ৫৫:১৯-২০।

জীব বিজ্ঞান

বাতাস শস্যকে পরাগিত করে– ১৫:২২।

মৌমাছির একাধিক পাকস্থলী আছে, কর্মী মৌমাছিরা স্ত্রী, পুরুষ নয়, মধুর অনেক ঔষধি গুণ আছে– ১৬:৬৮-৬৯।

গবাদি পশুর খাবার হজম হবার পর তা রক্তের মাধ্যমে একটি বিশেষ গ্রন্থিতে গিয়ে দুধ তৈরি করে যা আমরা খেতে পারি– ১৬:৬৬।

স্ত্রী পিঁপড়া তার পেটের কাছে অবস্থিত একটি অঙ্গ দিয়ে শব্দ করে অন্য পিঁপড়াদের সাথে কথা বলতে পারে এবং নির্দেশ দেয়, সাম্প্রতিককালে যন্ত্র ব্যবহারের মাধ্যমে এটির প্রমাণ পেয়েছে মানুষ– ২৭:১৮।

উদ্ভিদের পুরুষ এবং স্ত্রী লিঙ্গ আছে– ১৩:৩।

গম শীষের ভেতরে রেখে দিলে তা সাধারণ তাপমাত্রায়ও কয়েক বছর পর্যন্ত ভালো থাকে এবং তা সংরক্ষণ করার জন্য কোন বিশেষ ব্যবস্থার দরকার হয় না– ১২:৪৭।

উঁচু ভূমিতে ফুল ও ফলের বাগান ভাল ফলন দেয় কারণ উঁচু জমিতে পানি জমে থাকতে পারেনা এবং পানির খোঁজে গাছের মূল অনেক গভীর পর্যন্ত যায়, যার কারণে মূল বেশি করে মাটি থেকে প্রয়োজনীয় পুষ্টি সংগ্রহ করতে পারে। তবে শস্য যেমন আলু, গম ইত্যাদি ফসলের জন্য উল্টোটা ভালো, কারণ তাদের জন্য ছোট মূল দরকার যা মাটির উপরের স্তর থেকে পুষ্টি নেয়– ২:২৬৫।

গাছে সবুজ ক্লোরোফিল রয়েছে– ৬:৯৯।

রাত হচ্ছে বিশ্রামের জন্য, আর দিন হচ্ছে কাজেরজন্য কারণ দিনের বেলা সূর্যের আলো আমাদের রক্ত চলাচল, রক্তে সুগার, কোষে অক্সিজেনের পরিমাণ, পেশিতে শক্তি, মানসিক ভারসাম্য, মেটাবোলিজম বৃদ্ধি করে– ২৮:৭৩। [সুত্র]

চিকিৎসা বিজ্ঞান

মানবশিশুর লিঙ্গ নির্ধারণ হয় পুরুষের বীর্য থেকে– ৫৩:৪৫-৪৬, ৭৫:৩৭।

মায়ের গর্ভ শিশুর জন্য একটি সুরক্ষিত জায়গা। এটি বাইরের আলো এবং শব্দ, আঘাত, ঝাঁকি থেকে রক্ষা করে, শিশুর জন্য সঠিক তাপমাত্রা তৈরি করে, পানি, অক্সিজেনের সরবরাহ দেয়– ২০:২৩, ১২:১৪।

মায়ের গর্ভে সন্তান কিভাবে ধাপে ধাপে বড় হয় তার নিখুঁত বর্ণনা দেওয়া হয়েছে যা কু’রআনের আগে অন্য কোন চিকিৎসা শাস্ত্রের বইয়ে ছিলনা– ২৩:১৩-১৪। যেমন প্রথমে শিশু একটি চাবানো মাংসের টুকরার মত থাকে, যা ইউটেরাসের গায়ে ঝুলে থাকে, তারপর প্রথমে হাড় তৈরি হয় এবং তারপর হাড়ের উপর মাসল তৈরি হয়, তারপর তা একটি মানব শিশুর বৈশিষ্ট্য পাওয়া শুরু করে।

মানব শিশুর প্রথমে শুনতে পায়, তারপর দেখতে পায়– ৭৬:২। প্রথমে কান হয়, তারপর চোখ।

মানুষের দেহ মৃত্যুর বহু বছর পর পাথরের মত শক্ত ফসিল হয়ে যায় এবং লোহা (পাইরাইট) তৈরি হয়– ৪৯:৫১।

মানুষের আঙ্গুলের ছাপ প্রত্যেকের জন্য ভিন্ন– ৭৫:৪।

মানুষকে প্রথম ভাষা ব্যবহার করা শেখানো হয়েছে এবং ভাষার জন্য অত্যাবশ্যকীয় স্বরনালী একমাত্র মানুষকেই দেওয়া হয়েছে – ৫৫:৩-৪।

ভূতত্ত্ব/ইতিহাস

ইরাম নামে একটি শহরের কথা বলা আছে যেখানে অনেকগুলো পাথরের লম্বা স্তম্ভ আছে, যা কিনা ১৯৯২ সালে চ্যালেঞ্জার মহাকাশ যানের রাডার ব্যবহার করে মাটির নিচ থেকে প্রথম আবিষ্কৃত হয়েছে– ৮৯:৭।

মানব সভ্যতার উন্নতি ধারাবাহিকভাবে হয়নি, বরং আগে কিছু জাতি এসেছিল যারা আমাদের থেকেও উন্নত ছিল, যারা ধ্বংস হয়ে গেছে– ৪০:৮২, ৩০:৯, ২০:১২৮।

কুরআনে ফেরাউনের সময় মিশরে যে সমস্ত প্রাকৃতিক দুর্যোগ, দুর্ভিক্ষ, মহামারীর কথা বলা আছে, তা কুরআন প্রকাশিত হবার হাজার বছর পরে আবিষ্কৃত একটি প্রাচীন হায়ারো গ্লিফিক লিপি ‘ইপুয়ার’-এ হুবহু একই রকম ঘটনাগুলোর বর্ণনা পাওয়া গেছে, যা এর আগে কখনও জানা ছিল না– ৭:১৩০, ৭:১৩৩, ২৬:৫৭-৫৯।

গাণিতিক তথ্য এবং মুজিজা

কুরআনে ‘একটি দিন’ (ইয়াওম) ঠিক ৩৬৫ বার আছে। এক বছর = ৩৬৫ দিন।

চাঁদ (কামার) আছে ২৭ বার। চাঁদ ২৭ দিনে একটি চক্র সম্পন্ন করে।

‘একটি মাস’ (শাহর) আছে ১২ বার। ১২ মাসে এক বছর।

‘ভূমি’ (আল-বের) ১২ বার এবং ‘সমুদ্র’ (আল-বাহর) ৩২ বার। ১২/৩২ = ০.৩৭৫। পৃথিবীতে ভূমির মোট আয়তন ১৩৫ মিলিয়ন বর্গ কিমি, সমুদ্র ৩৬০ মিলিয়ন বর্গ কিমি। ১৩৫/৩৬০ = ০.৩৭৫।

দুনিয়া ১১৫ বার এবং আখিরাত ঠিক ১১৫ বার আছে।

শয়তান এবং ফেরেশতা ঠিক ৮৮ বার করে আছে।

উন্নতি (নাফ) এবং দুর্নীতি (ফাসাদ) ঠিক ৫০ বার করে আছে।

বল (কুল) এবং ‘তারা বলে’ (কা-লু) ঠিক ৩৩২ বার করে আছে।

এরকম অনেকগুলো সমার্থক এবং বিপরীতার্থক শব্দ কুরআনে ঠিক একই সংখ্যক বার আছে। এতগুলো গাণিতিক সামঞ্জস্য বজায় রেখে সাড়ে ছয় হাজার বাক্যের একটি গ্রন্থ যিনি তৈরি করেন, তিনি নিঃসন্দেহে এক মহাবিজ্ঞানময় সত্তা, যিনি মানুষকে গণিতের প্রতি মনোযোগ দেবার জন্য যথেষ্ট ইঙ্গিত দিয়েছেন।

বিঃদ্রঃ পবিত্র কুরআনের বহু আয়াতেই রয়েছে এমনি বৈজ্ঞানিক তথ্য। মৌমাছি এবং পিঁপড়ার বেলায় আল্লাহ কুরআনে স্ত্রীবাচক শব্দ ব্যবহার করেছেন। আবার যেমন আল্লাহ ‘সবকিছু’(’সবাইকে’ নয়) জোড়ায় তৈরি করেছেন, জীব নয়, জড় পদার্থকে (ম্যাটার– এন্টি ম্যাটার)।

কুরআনের বাংলা অনুবাদ গ্রন্থগুলোতে আমরা ঠিক এভাবে বিষয়গুলো পাই না।

মানুষকে সৃষ্টি করা হয়েছে ’কাঁদা’ থেকে যেখানে কাঁদা হচ্ছে পানি সিক্ত মাটি এবং আদি মাটি ছিল অজৈব পদার্থের মিশ্রণ। সুতরাং কাঁদা = পানিসিক্ত অজৈব পদার্থ। বাংলা অনুবাদকেরা এই খুঁটিনাটি ব্যপারগুলো লক্ষ্য করেননি। যে বিশেষ কিছু আরবি শব্দের যে অর্থগুলো তাদের কাছে অপ্রাসঙ্গিক মনে হয়েছে, প্রকৃতপক্ষে সেগুলোই সঠিক, তা তাদের সীমিত বৈজ্ঞানিক জ্ঞান অনুসারে যতই অবাস্তব মনে হোক না কেন। তাই পাঠকদেরকে অনুরোধ করবো সাম্প্রতিক ইংরেজি অনুবাদগুলো পড়তে, যেগুলোতে উপরোক্ত আয়াতগুলোর সঠিক অনুবাদ করা হয়েছে।

আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার হল– কুরআনের ভাষা কোন বৈজ্ঞানিক গবেষণা প্রবন্ধের ভাষা নয়, এটি কোন বৈজ্ঞানিক রিসার্চ পেপার নয়। মানুষ যেভাবে দেখে, শুনে, অনুভব করে, আল্লাহ কুরআনে সেই পরিপ্রেক্ষিতে বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো প্রকাশ করেছেন। তাই যারা কুরআনের বর্ণনাগুলোকে বৈজ্ঞানিক ভাষার মাপকাঠিতে যাচাই করতে যাবেন, তারা ভুল করবেন।

আল্লাহ কুরআনে এমন সব শব্দ ব্যবহার করেছেন যেগুলো ১৪০০ বছর আগে বিজ্ঞান সম্পর্কে কোনই ধারণা নেই এমন মানুষরাও বুঝতে পারবে এবং একই সাথে বিংশ শতাব্দীর বিজ্ঞানীরাও সেই শব্দগুলোকে ভুল বা অনুপযুক্ত বলে দাবি করতে পারবে না।

নিশ্চয়ই আকাশগুলো এবং পৃথিবীর সৃষ্টি এবং দিন-রাতের আবর্তনে বুদ্ধিমানদের জন্য অনেক নিদর্শন রয়েছে। (৩:১৯০)

আরো কিছু আয়াত দিয়ে দিচ্ছি নীচে, দেখতে থাকুনঃ

দিন ও রাত্রির বিবর্তন সম্পর্কে:

"তুমি কী দেখোনা যে, আল্লাহ রাত্রিকে দিবসে প্রবিষ্ট করেন এবং দিবসকে রাত্রিতে প্রবিষ্ট করেন।" (লুকমান: ২৯)

পৃথীবির আকৃতি সম্পর্কে:

"এবং আল্লাহ পৃথিবীকে ডিম্বাকৃতি করে তৈরি করেছেন" (আন-নাবিয়াত: ৩০)

বিশ্বের উতপত্তি ও বিগ ব্যাঙ সম্পর্কে: "কাফেররা কী দেখে না যে, আকালমন্ডলী ও পৃথিবীর মুখ বন্ধ ছিল (সৃষ্টির একটা অংশ হিসেবে) অতঃপর আমি উভয়কে | খুলে দিলাম।" (আম্বিয়া:৩০)।

"তারপর তিনি আকাশের দিকে মনযোগ দিলেন যা ছিল ধূমপুঞ্জ, তিনি তাকে এবং পৃথিবীকে বললেন, তোমরা আস ইচ্ছায় বা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় এলাম।" (হামীম মাজদাহ: ১১)

সূর্য ও চাঁদের আলোর পার্থক্য সম্পর্কে:

"কল্যানময় তিনি, যিনি নভোমন্ডলে রাশিচক্র সৃষ্টি করেছেন এবং তাতে রেখেছেন সূর্য ও দীপ্তিময় চন্দ্র।" (আল-ফুরকান: ৬১)।

"সূর্য আবর্তন করে তার নির্দিষ্ট অবস্থানে। এটা পরাক্রমশীশ সর্বজ্ঞ আল্লাহর নিয়ন্ত্রনে।"

মহাবিশ্বের সম্প্রসারন সম্পর্কে:

"আমি নিজ হাত দ্বারা আকাশ নির্মান করেছি এবং আমিই এর সম্প্রসারনকারী" (যারিয়াত: ৪৭)

এখানে উল্লেখ করা দরকার, খ্যাতনামা বিজ্ঞানী স্টিফেন হকিং তার 'সময়ের সংক্ষিপ্ত ইতিহাস' (A Brief History Of Time) নামক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, "মহাবিশ্ব সম্প্রসারিত হচ্ছে"।

পানি বাষ্পে পরিনত হওয়া সম্পর্কে: "আমি বৃষ্টিগৰ্ভ বায়ু পরিচালনা করি, অতঃপর আকাশ থেকে পানি বর্ষন করি, অতঃপর তোমাদেরকে তা পান করাই।" (হিজর: ২২)।

পানি, বৃষ্টি ও বায়ু সম্পর্কে:

"তুমি কি দেখনা যে, আল্লাহ মেঘমালাকে সঞ্চালিত করেন, অতঃপর তাকে পুঞ্জীভূত করেন, অতঃপর তাকে স্তরে স্তরে রাখেন; অতঃপর তুমি দেখ যে, তা হতে বৃষ্টিনারা নির্গত করেন।" (আন-নূর: ৪৩)।

এজাড়াও সুরা ত্বারিক ১১, রাদ ১৭, ফুরকান ৪৮,৪৯, ফাতির ৯, আরাফ ৫৭, ইয়াসীন ৩৪, জামিয়া ৫, কাফ ৯,১০,১১, ওয়াক্বিয়া ১৯ উল্লেখযোগ্য।

পাহাড় পর্বতের পেরেক সাদৃশতা সম্পর্কে:

"আমি কি ভূমিকে বিছানা করিনি, এবং পর্বতমালাকে পেরেক তৈরি করিনি" (নাবা: ৬-৭)

"আমি পৃথিবীতে ভারি বোঝা রেখে দিয়েছি যাতে পৃথিবী ঝুঁকে না পড়ে।" (আম্বিয়া: ৩১)।

সুমুদ্র, মিষ্টি ও লবনাক্ত পানি সম্পর্কে:

"তিনি পাশাপাশি দুই দরিয়া প্রবাহিত করেছেন, উভয়ের মাঝখানে রয়েছে অন্তরাল, যা কখনো অতিক্রম করে না।" (আর। রাহমান: ১৯-২০)।

"তিনিই সমান্তরালে দুই সমুদ্র করেছেন, এটি মিষ্ট তৃজ্ঞা নিবারক ও এটি লোনা বিস্বাদ; উভয়ের মাঝখানে রেখেছেন | একটি অন্তরায়, একটি দুর্ভেদ্য আড়াল।" (ফুরকান: ৫৩)।

সব কিছুর জোড়ায় জোড়াস সৃষ্টি সম্পর্কে:

"আমি প্রত্যেক জিনিসকে জোড়ায় জোড়ায় সৃষ্টি করেছি, যাতে তোমরা শিক্ষা গ্রহন কর।" (অয-যারিয়াত: ৪৯)

"আর আকাশ থেকে তিনি পানি বর্ষন করেন, তা দিয়ে বিভিন্ন লতা-যুগল উতপন্ন করেন, যার একেকটি অন্যটি থেকে । সম্পূর্ণ আলাদা।" (ত্ব-হা: ৫৩)

পানি দ্বারা প্রাণী সৃষ্টি সম্পর্কে:

"আল্লাহ প্রত্যেক প্রাণীকে পানি দ্বারা সৃষ্টি করেছেন।" (আন-নূর: ৪৫)

মানুষের সৃষ্টি সম্পর্কে

"পড় তোমার প্রভূর নামে যিনি তোমাকে সৃষ্টি করেছেন। সৃষ্টি করেছেন মানুষকে জমাট রক্ত থেকে।" (সূরা আলাক্ব: ১,২)।

সূর্যের ও পৃথীবির আবর্তন সম্পর্কে:

"তিনিই সৃষ্টি করেছেন রাত ও দিন এবং সূর্য ও চন্দ্র। সবাই আপন আপন কক্ষপথে বিচরণ করে।" (আম্বিয়া-৩৩)

"সূর্য নাগাল পেতে পারে না চন্দ্রের এবং রাত্রি আগে চলে না দিনের। প্রত্যেকেই আপন আপন কক্ষপথে প্রদক্ষিন করে।" (ইয়াসিন:৩৩)

"তিনিই সে মহান সত্তা, যিনি বানিয়েছেন সূর্যকে উজ্জল আলোকময়, আর চাঁদকে স্নিগ্ধ আলো বিতরনকারীরুপে। | (ইউনুস-৫)

আমি এখানে বৈজ্ঞানিক সত্য স্বল্প সংখ্যক আয়াত উল্লেখ করলাম। আপনার নিশ্চই স্বীকার করবেন, আরাে ১৪০০ বছর আগে কোনো মানুষের পক্ষে এরকম বৈজ্ঞানিক ও বিশ্লেষনমূলক সত্য জানা সম্ভব নয়। তার মানে, আল-কুরাআন যে। আল্লাহর কালাম তাতে কোনো সন্দেহ নই।

যদি তারপরেও কেউ অবিশ্বাস করেন তাকে আমার কিছু বলার নেই। আল-কুরআনে আল্লাহ নিজেই উল্লেখ করেছেন, "তারা বধির, বোবা ও অন্ধ। সুতরাং তারা ফিরে আসবে না।" (বাকারাহ: ১৮)


ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ