শব্দ হল যান্ত্রিক তরঙ্গ (mechanical wave)। আর যান্ত্রিক তরঙ্গ জড় মাধ্যমের কম্পনের দ্বারা এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় প্রবাহিত হয়। এই পদ্ধতিটা খানিকটা এরকম -
যখন প্রাথমিকভাবে কোন কম্পন সৃষ্টি হয় তখন ওই কম্পন মাধ্যমে থাকা কণাগুলিকে (particles) কম্পিত করার চেষ্টা করে। আর কনাগুলি ওই তরঙ্গের প্রভাবে স্প্রিং এর মত একবার সংকুচিত হয় আর একবার প্রসারিত হয়। এই পদ্ধতিকে ঘনীভবন ও তনুভবন (Compressions and Rarefactions) বলা হয়। এইভাবে কম্পনের শক্তি এক কনা থেকে আর এক কনাতে স্থানান্তরিত হয়। সামগ্রিকভাবে প্রাথমিক তরঙ্গটি এক জায়গা থেকে আর এক জায়গায় প্রবাহিত হয়। একটা উদাহরণ দিয়ে ব্যাপারটা বোঝা যাক।
ধরা যাক রামের মা রামকে টিউব ওয়েল থেকে থেকে জল এনে বাড়ির বড় ড্রামটাকে ভরতি করতে বলল। এখন তাই রাম বালতি নিয়ে চলল জল আনতে। বাড়ি থেকে টিউব ওয়েলের দূরত্ব খুব কম কম করে হলেও তিনশো মিটার। বালতি করে দুইবার জল আনার পর রাম বুঝতে পারল একা জল বয়ে আনা এতদুর থেকে একটু কষ্টকর। তাই জল বয়ে আনার জন্য তার ভাই শ্যামকে সে ডেকে নিল। রাম অর্ধেকটা পথ বয়ে আনে আর শ্যাম রামের কাছ থেকে বালতিটা নিয়ে বাড়ি আসে। দ্বিতীয়বারে শ্যাম খালি বালতি ফেরত দেয় আর ভরতি বালতি নিয়ে আসে। এইভাবে খানিকক্ষণ চলার পর ওদের বোন মধু ওদেরকে সাহায্য করার জন্য এগিয়ে আসে। রাম টিউব ওয়েল থেকে জল নিয়ে একটু এগিয়ে গিয়ে শ্যামকে দেয়। শ্যাম আর একটু এগিয়ে গিয়ে বালতিটা মধুকে দেয় আর মধু বাড়ীতে নিয়ে এসে ড্রাম ভরতি করতে থাকে। এইভাবে খুব তাড়াতাড়ি কাজটা হয়ে যায় এবং বড় কথা কারুর খুব একটা কষ্ট হয় না।
এবার উপরের ঘটনার সঙ্গে শব্দ প্রবাহের ব্যাপারটাকে তুলনায় আনা যাক। এখানে জল হচ্ছে শব্দ শক্তি। রাম,শ্যাম আর মধু হচ্ছে মাধ্যমে থাকা কনাগুলি। রামের শ্যামের দিকে এগিয়ে যাওয়াটা সংকোচন আর দূরে সরে যাওয়াটা প্রসারন। এইভাবে সংকোচন প্রসারনের মাধ্যমে খুব সহজেই এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় জলকে (পড়ুন শব্দকে) পৌঁছে দেওয়া গেল। এখন মাধ্যমে রাম, শ্যামের মত কনার সংখ্যা যত বেশী হবে তত তাড়াতাড়ি শব্দ এক জায়গা থেকে অন্য জায়গায় পৌঁছে যাবে মানে শব্দের বেগ বেশী হবে।
এখন বাতাসের থেকে জলে কনার সংখ্যা অনেক বেশী এবং জলে কনাগুলির মধ্যেকার দূরত্ব অনেক কম থাকে। জলের থেকে কঠিন কোন বস্তুতে কনাগুলি আরও বেশী কাছাকাছি থাকে। ফলে শব্দ কঠিন বস্তুতে (লোহা) খুব দ্রুত যায়, তারপর যায় তরল বস্তুতে (জল)। আর সবচেয়ে আস্তে যায় বায়ু বা গ্যাসীয় বস্তুতে। ঠিক সেই হিসেবে জলে শব্দের বেগ বাতাসের থেকে বেশী হয়।