শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Waruf

Call

পদার্থ বিজ্ঞানের দিক থেকে মানুষের চোখের দর্শন অনুভূতির স্থায়িত্ব কাল হচ্ছে ০.১ সেকেন্ড। এবং একই বস্তু এই সময়ের গ্যাপের আগে পুনরাবৃত্তি হলে মানুষ কেবল একটি বস্তুই দেখবে যেটি মূল বস্তুর মতই। আবার এই সময়ের মধ্যে দুটো ভিন্ন গঠন বা রঙ এর বস্তু চোখের সামনে আসলে মানুষ বস্তু দুটির পরিবর্তন বুঝতে পারবেনা কিন্তু বস্তুর গঠন বা রঙ দুটি মূল বস্তুর কোনটার মতও দেখবেনা। ভিন্ন একটি স্যাচুরেটেড অবস্থা দেখবে।

এখন গাড়ির চাকার ক্ষেত্রে কেন্দ্র থেকে পরিধি পর্যন্ত কিছু বেড় বা স্পোক থাকে। এবং দুটির মাঝে একটি বড় গ্যাপ থাকে যেখানকার দৃশ্য স্পোক দৃশ্য থেকে ভিন্ন। এখন দ্রুত চলমান বস্তুর সাথে সাথে আমাদের চোখের লেন্সের ফোকাসিং তত দ্রুত হয়না। একটি ফোকাস করা অবস্থায় ফোকাস সেটের পুর্বেই যদি আরেকটি আসে তাহলে এই চলমান দশাটি এমন হবে, পুর্বের বস্তু সামনে যেদিকে যাচ্ছে চোখ ফোকাস সেটের জন্য ঐ বিম্বের দিকেই অগ্রসর হতে চাই। কিন্তু বেশি গতির জন্য দ্রুতই একই আরেকটি বিম্ব ফোকাস সেটে চলে আসে। তখন চোখ আগের বস্তুর সাথে এগিয়ে যেতে সাক্ষম না হয় পরে আসা একই বিম্বের সাথে সেট করতে চাই ফলে চোখের লেন্সের ফোকাস এগিয়ে যাওয়া ছেড়ে পিছিয়ে এসে বর্তমান বিম্বের সাথে সেট হতে চাই। এই প্রক্রিয়া একই গতিতে অনবরত হতে থাকলে পিছিয়ে আসা বিম্ব সেটিংয়ের দৃশ্য হিসাবে মনে হয় যে চাকা উলটা ঘুরছে। অর্থা চোখ দেখে যে বিম্ব পেছনে যাচ্ছে। এটি হচ্ছে আসল কারন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

এটা এক প্রকারের দৃষ্টিভ্রম ( হ্যালুসিনেশান) ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
SUMAN DEWAN

Call

সিনেমায় কিংবা বাস্তবেও অনেক সময় দেখে থাকবেন- গাড়ি চলছে সামনে, কিন্তু তার চাকা ঘুরছে উল্টো দিকে। কিন্তু চাকা সামনের দিকে ঘুরছে বলেই না গাড়ি সামনে যাচ্ছে! তাহলে কিভাবে ঘটে এই বিভ্রম? এর ব্যাখ্যা খুব সহজ, আবার একটু প্যাঁচানো। তো ধাপে ধাপে দেখার চেষ্টা করি ব্যাপারটাঃ


 

শুরুতে বাস্তবতাকে ফেলে শুধু সিনেমাতে আবদ্ধ থাকি। আমাদের জানা আছে যে ভিডিও ক্যামেরা স্থির ছবিই তোলে, তবে সংখ্যায় অনেক। তারপর সেগুলো দ্রুতগতিতে পরপর চালিয়ে চলমান ছবি পাওয়া যায়। তো পর্যায়ক্রমিক দুটি স্থিরচিত্রের (ফ্রেমের) মাঝের সসীম সময় ব্যবধানে অনেক কিছুই মিস  করে ফেলে ক্যামেরা, কিন্তু সেটা এত দ্রুত ঘটে যে আমাদের মস্তিষ্ক ঠিক বুঝে উঠতে পারে না, বরং সে মাঝের সময়টুকুতে কি হতে পারে সেটা নিজের মত করে কল্পনা করে নেয়। আর এই কল্পনাটুকুই হলো বিভ্রম।


 

একটু উদাহরণসহ দেখি ব্যাপারটা। মনে করি আমাদের কাছে একটা ক্যামেরা আছে, যেটা প্রতি সেকেন্ডে ২৪টা ছবি তোলে অর্থাৎ ফ্রেম রেট ২৪ ফ্রেম পার সেকেন্ড। এখন এই ক্যামেরায় একটা ঘড়ির ডায়াল ভিডিও করব যাতে একটা মাত্র কাঁটা আছে , এবং সেই কাঁটা আবার আমাদের ইচ্ছামত বেগে ঘুরবে। শুরুতে ধরি কাঁটাটি সেকেন্ডে ২৪ বার ঘুরে আসে মানে কৌণিক গতি ২৪ রেভ পার সেকেন্ড। তাহলে ক্যামেরা এবং কাঁটার গতি যেহেতু একই, প্রথম ফ্রেমে যদি কাঁটা টাকে ১২ এর উপর, তো পরের ফ্রেমেও ঠিক ১২ এর উপরেই থাকবে, কেননা মাঝের ব্যবধানে কাঁটাটি ঠিক একটা পূর্ণ চক্কর দিয়ে আসবে। পরবর্তী ফ্রেমগুলোতেও একই ঘটনা ঘটবে। সুতরাং, আমাদের ফাইনাল ভিডিওতে দেখব যে কাঁটাটি ১২ এর উপরে স্থির হয়ে আছে, যদিও বাস্তবে সে ঘুরেই চলেছে, অনবরত। যেমন এই ভিডিওটাতে দেখা যাচ্ছে একটাউড়ন্ত হেলিকপ্টার যার রোটর একদমই ঘুরছে না!


 

এবার যদি কাঁটার গতি ক্যামেরার থেকে কিছুটা বাড়িয়ে দেয়া হয়? তাহলে হয়ত দেখা যাবে প্রথম ফ্রেমে কাঁটা ১২ এর উপর আর দ্বিতীয় ফ্রেমে ১ এর উপর, কেননা দুই ফ্রেমের মাঝের ব্যবধানে কাঁটা পুরো একটা চক্কর শেষ করে আরও এগিয়ে যাবে। এভাবে তৃতীয়, চতুর্থ ইত্যাদি ফ্রেমে কাঁটাটি পাওয়া যাবে যথাক্রমে ২ ও ৩ এর উপর। সুতরাং ফাইনাল ভিডিওতে দেখা যাবে কাঁটা সামনের দিকেই এগোচ্ছে, তবে অনেক ধীর গতিতে, কেননা মাঝের পূর্ণ চক্করগুলো মিস করছি আমরা।


 

বোঝাই যাচ্ছে, এবার যদি কাঁটার গতি ক্যামেরার ছবি তোলার গতি থেকে কিছুটা ধীর হয়, তাহলে হয়ত প্রথম ফ্রেমে ১২ তে থাকা কাঁটা দ্বিতীয় ফ্রেমে থাকবে ১১ তে আর তৃতীয় ফ্রেমে ১০ এ। এই ফ্রেমগুলো যখন পর পর চালানো হবে, তখন আমাদের মস্তিষ্ক ধরে নেবে কাঁটাটি ১২ থেকে ১১ হয়ে ১০ এ এসে পৌছিয়েছে, অর্থাৎ উল্টো দিকে ঘুরছে। 


 

এই ঘটনাটার নাম Stroboscopic Effect. এটা ব্যবহার করে অনেক মজার এক্সপেরিমেন্ট করা যায়। যেমন  এই ভিডিওটিতে মনে হবে পানি স্থির হয়ে আছে কিংবা নিচ থেকে উঠে এসে পাইপে ঢুকে যাচ্ছে!


 

এতক্ষণ যা বললাম তার ইফেক্ট কিন্তু দেখা যাবে শুধু ক্যামেরার আউটপুট ভিডিওতে, খালি চোখে নয়। ভিডিও করার সময় যদি আমরা ঘড়ির ডায়ালটার দিকে সরাসরি তাকাতাম, তাহলে কাঁটাটিকে সবসময় দ্রুতগতিতে সামনের দিকেই ঘুরতে দেখতাম, কোনরকম বিভ্রম ছাড়াই। তবে এই স্ট্রোবোস্কোপিক ইফেক্ট খালি চোখেও দেখা যাবে, সেজন্য লাগবে বিশেষ ধরনের আলোর উৎস- স্ট্রোবোস্কোপ, যেটা স্ট্রোব লাইট নামেও পরিচিত। এটা সাধারণ আলোই দেয়, তবে নির্দিষ্ট ফ্রিকোয়েন্সিতে, অর্থাৎ দ্রুতগতিতে জ্বলে আর নেভে। এখন যেটুকু সময় সে আলো দেবে শুধু সেটুকু সময়ই আমরা সামনের জিনিস দেখতে পারবো, মাঝের অন্ধকার সময়টুকুতে দেখতে পারবো না। এই স্ট্রোবোস্কোপের ফ্রিকোয়েন্সি যদি এমনভাবে নিয়ন্ত্রণ করা হয় যে সেটা যা দেখছি তার ফ্রিকোয়েন্সির সমান বা কিছু কম-বেশি (যেমন ঘড়ির কাঁটা যদি ২৪ রেভ/সেকেন্ড এ ঘোরে তাহলে লাইটের ফ্রিকোয়েন্সি হতে হবে ২৪ হার্জ বা তার থেকে কিছু কম-বেশি) তবে আমরা সেই একই ইফেক্ট দেখতে পারবো। তাহলে একটা ভিডিও দেখে নেই- আগেরটার মতোই, তবে এবার স্ট্রোব লাইট ব্যবহার করে।


 

স্ট্রোব লাইট জিনিসটা যে আমাদের একেবারে অপরিচিত, তাও কিন্তু না। ঘরের সাধারণ টিউবলাইট কিংবা রাস্তার সোডিয়াম লাইটও এক ধরনের স্ট্রোব লাইট। এসি কারেন্টে(সিঙ্গেল ফেজ) যখন এদের চালানো হয়, তখন প্রতি সাইকেলে এরা দুইবার পূর্ণ আলো দেয় (ধনাত্মক ও ঋণাত্মক পিকে) আর দুইবার তো সম্পূর্ণ অফই হয়ে যায় (নোডে)। আমাদের এসি কারেন্টের ফ্রিকোয়েন্সি যেহেতু ৫০ হার্জ, তাই এই লাইটগুলো ১০০ হার্জ ফ্রিকোয়েন্সিতে আলো দেয়। তাহলে ১০০ হার্জের আশেপাশের কোন কম্পাঙ্কে কাঁপছে এমন জিনিস পেয়ে গেলে সেটার ক্ষেত্রেও আমরা কিছুটা স্ট্রোবোস্কোপিক ইফেক্ট দেখতে পারবো, তাইনা?


 

এই স্ট্রোবলাইটের ব্যাপারটা কিন্তু প্র্যাক্টিকালি খুব গুরুত্বপূর্ণ! যেমন, একটা মেশিন শপ- যেটাতে লেদ এবং অন্যান্য মেশিনারিজ আছে যেগুলোতে ধারালো কাটিং টুল ফিট করা। এখন সেখানে যদি এরকম ১০০ হার্জের ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প লাগানো থাকে আর মেশিন যদি ১০০ এর গুণিতক কম্পাঙ্কে চলে, তাহলে ঘূর্ণায়মান মেশিনকেও স্থির মনে হতে পারে, আর স্থির মনে করে কোন কর্মী হাত দিয়ে ফেললে ঘটতে পারে বড় দুর্ঘটনা। এজন্য মেশিন শপের লাইটিং এ তিন ফেজের ফ্লোরোসেন্ট ল্যাম্প (যাতে এক ফেজে নোড থাকলেও আরেক ফেজের আলো পাওয়া যায়) কিংবা ইনক্যান্ডেসেন্ট বাল্ব ব্যবহার করতে বলা হয়। তবে পুরো মেশিন শপে ইনক্যান্ডেসেন্ট লাইট ব্যবহার করা খরুচে এবং বিদ্যুতের অপচয়ও বটে। তাই সাধারণত মূল লাইটিং ফ্লোরোসেন্টে করলেও সব মেশিনের উপর একটা করে অল্প ক্ষমতার ইনক্যান্ডেসেন্ট বাল্ব ঝুলিয়ে দেয়া হয়।


 

সহজ ব্যাপারটুকু গেলো, এবার একটু প্যাঁচে আসি। সিনেমায় নয়, কিংবা সোডিয়াম বাতির নিচেও নয়, অনেক সময় সূর্যের অবিচ্ছিন্ন আলোর নিচেই চর্মচক্ষে দেখা যায় চাকা উল্টো দিকে ঘুরতে। তাহলে এটার ব্যাখ্যা কি? দুই ধরনের ব্যাখ্যা দেয়া হয় এটারঃ


 

প্রথম ব্যাখ্যা- সেই স্ট্রোবোস্কোপিক ইফেক্টের মতই, তবে এবার ক্যামেরায় বা আলোক উৎসে নয়, সরাসরি দর্শকের মস্তিষ্কে। এই থিওরির নাম Discrete Frames Theory. এই মতানুযায়ী, মস্তিষ্ক কোন দৃশ্য অবিচ্ছিন্নভাবে প্রসেস করে না, বরং ফ্রেম বাই ফ্রেম করে। তাই ক্যামেরাতে যা ঘটে, তা মস্তিষ্কের ক্ষেত্রেও ঘটবে এটাই স্বাভাবিক। কৌতুহল মেটানোর জন্য এই সরল ব্যাখ্যাটাই যথেষ্ট ছিল, এবং কিছু পরীক্ষণে এর সত্যতাও মিলেছে। কিন্তু অপরদিকে অনেক পরীক্ষণে এই ব্যাখ্যা শোচনীয়ভাবে ধরাও খেয়েছে। যেমন খুব সিম্পল একটা পরীক্ষা ছিল যেটাতে একই মাপের দুটি চাকা একই বেগে একই দিকে ঘুরানো হচ্ছে, কিন্তু একই ব্যক্তি দুটি চাকাকে দুই বিপরীত দিকে ঘুরতে দেখছে! কিন্তু মস্তিষ্কের ব্যাপারটা ক্যামেরার ফ্রেম বাই ফ্রেমের মত সরল হলে তো এমন হওয়ার কথা না... নিশ্চয়ই মস্তিষ্ক আরও জটিল কোন উপায়ে কাজ করে! এর থেকেই এসেছে দ্বিতীয় ব্যাখ্যা।

এই দ্বিতীয় ব্যাখ্যাটার নাম Temporal Aliasing Theory. পারসেপচুয়াল রাইভালরিও বলা যায় একে। অপটিক নার্ভের সিগনাল যখন মস্তিষ্কের কাছে দ্ব্যর্থক মনে হয়, মস্তিষ্ক তখন উভয় সম্ভাবনাকেই ইন্টারপ্রেট করে। তারপর দুই অপশনের মাঝে ওজন করে দেখে কোনটা বেশি অর্থবোধক, তারপর সেটা রেখে বাকিটা বাতিল করে দেয়।


এই পারসেপচুয়াল রাইভালরির খুব ভালো দুটা উদাহরণ নেকার কিউব আর দ্য স্পিনিং ড্যান্সার
এবং একটা মজার ব্যাপার হলো, যেহেতু এখানে দুটা অপশনকেই ওজন করে দেখার ব্যাপার আছে, তাই সাধারণত মস্তিষ্কের কিছুটা সময় লাগে সিদ্ধান্তে পৌঁছুতে। তবে একটা সিদ্ধান্ত হয়ে গেলে সেটা সহজে সরতে চায় না। তাই নেকার কিউবের একটা টপ ফেইস দেখার পর অন্যটা দেখা কিংবা স্পিনিং ড্যান্সারকে বিপরীত দিকে ঘুরতে দেখতে হলে সাধারণত চোখ সরিয়ে নিয়ে পুরো প্রক্রিয়াটি আবার চালানোর সুযোগ দিতে হয় মস্তিষ্ককে, তাকিয়ে থাকা অবস্থায় কন্ট্রাডিকটিং পারসেপশানটিতে পৌঁছানো যথেষ্ট কঠিন।

তাহলে বলা যায় চাকা পেছনে ঘোরে কারণ মস্তিষ্ক তথ্যের অপ্রাপ্যতা, অপর্যাপ্ততা কিংবা দ্ব্যর্থতা পছন্দ করে না। তাই সে হয় দুটি ফ্রেমের মাঝের অংশ কল্পনা করে নেয় কিংবা দুটি সম্ভাবনার মাঝে একটি বেছে নেয়। কিন্তু অনেক সময় সেই কল্পনা কিংবা বেছে নেয়া অপশনটি চলে যায় বাস্তবতার উল্টোদিকে।
 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ