একজন আদর্শ ব্যবস্থাপকের দক্ষতা নির্ভর করে ব্যবস্থাপনার নীতিগুলোর সঠিক প্রয়োগের উপর- কথাটির যথার্থতা মূল্যায়ন? 


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

কার্য বিভাজনঃ এই নীতির মূল কথা হচ্ছে , সংগঠনের কাজের প্রকৃতি অনুযায়ী শ্রেণিবিভাগ করে। প্রতিটি কাজের দায়িত্ব কর্মদক্ষতা ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে এক একজন বিশেষজ্ঞ কর্মীর ওপর অর্পণ করতে হবে। এটাকে শ্রম বিভাজনের নীতিও বলে। এ নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মীকে একই কাজ নিয়মিত করতে হয়। ফলে কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি পীয় , কাজে ফাঁকি রােধ হয় , তত্ত্বাবধান ও জবাবদিহিতা সহজ হয় এবং বিশেষজ্ঞতা তৈরি হয়।


কর্তৃত্ব ও দায়িত্বঃ এ নীতি অনুযায়ী দায়িত্ব ও কর্তৃত্ব এমনভাবে বন্টন করতে হবে যাতে এ দুয়ের মধ্যে সুসামঞ্জস্য নিশ্চিত হয়। কেননা , দায়িত্ব অনুযায়ী কর্তৃত্ব বা ক্ষমতা না থাকলে দায়িত্ব পালন আদৌ সম্ভব নয়। আবার দায়িত্বের তুলনায় কর্তৃত্ব বেশি বা কম হলে বিশৃঙ্খলা বা অনিয়ম দেখা দেবে। তাই দায়িত্ব ও কর্তৃত্বের ভারসাম্য রক্ষা অপরিহার্য। 


নিয়মানুবর্তিতা Discipline: শুধু ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নয় , সকল ক্ষেত্রেই এ নীতি প্রযােজ্য। অন্যথায় উত্তম সাজে। আশী করা যায় না। হেনরি ফেয়ল তাই ব্যবস্থাপনার সকল স্তরে নিয়মানুবর্তিতা বজায় রাখার জন্য উপয় কালের গুরুত্বারােপ করেছেন । তার মতে , প্রতিষ্ঠানে যােগ্যতাসম্পন্ন বস থাকবে এবং নির্দিষ্টনিময়নীতি থাকবে । অধস্তন বলতে প্রতি অনুগত থাকবে , নিয়মনীতি মেনে চলবে এবং অপরকে তা মেনে চলতে অনুপ্রাণিত করবে। তাহলেই নিয়মানুবর্তিতা বজায় থাকবে। 


আদেশের ঐক্যঃ এ নীতির মূল কথা হচ্ছে প্রতিষ্ঠানে নিয়ােজিত কর্মরি আদেশদাতা হবেন । একজন মাত্র ব্যক্তি । অর্থাৎ একজন কর্মীর একাধিক ঊেধ্বর্তন থাকতে পারবে না । এ প্রসঙ্গে Weihrich and some বলেন "Unity of command means that employees should receive orders from one superior only" যদি একই ব্যক্তি একসাথে একাধিক উর্ধ্বতনের নিকট হতে আদেশপ্রাপ্ত হন তাহলে তার পক্ষে কারাে আদেশই পালন , করা সম্ভব হবে না। কারণ একই সাথে একাধিক ঊর্ধ্বতনের আদেশ পরস্পর বিরােধী বা ভিন্নমুখী হতে পারে এক্ষেত্রে। একজন কর্মী কার আদেশ পালন করবে আর কারটা করবে না তা নিয়ে সমস্যায় পড়বে । তাই সুষ্ঠু ও সুশৃঙ্খলভাবে। কার্যসম্পাদনের লক্ষ্যে আদেশদানের ক্ষেত্রে ঐক্যনীতি অনুসরণ করা অপরিহার্য। 


নির্দেশনার ঐক্যঃ এ নীতির মূল কথা হলাে প্রতিষ্ঠানের সকল নির্দেশনা হবে এক লক্ষ্য ও পরিকল্পনাকেন্দ্রিক । অর্থাৎ একটা সামগ্রিক উদ্দেশ্য বা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের বিষয়টি মাথায় রেখে তার আলােকে প্রতিষ্ঠানে প্রয়ােজনীয় নির্দেশনা দিতে হবে , যাতে নির্দেশনাগুলাের মধ্যে মিল বা ঐক্য থাকে। আর সমগ্র পরিকল্পনাটি বাস্তবায়নের দায়িত্ব একজন ব্যক্তির ওপরই ন্যস্ত থাকবে। কোনাে অবস্থাতেই পরস্পর বিরােধী আদেশ - নির্দেশ জারি করা যাবে না। 


সাধারণ স্বার্থেঃ  এ নীতির মূল কথা হচ্ছে । সংগঠনের সাধারণ স্বার্থকে ব্যক্তিস্বার্থের উর্ধ্বে স্থান দিতে হবে। কেননা সংগঠনের স্বার্থ রক্ষিত হলেই মালিক, শ্রমিক কর্মী , জনগণ তথা সর্বসাধারণের স্বার্থ রক্ষিত হবে । তাই কোনাে একজনের স্বার্থ কখনই প্রতিষ্ঠানের স্বার্থ বা লক্ষ্যের। ওপরে স্থান দেয়া উচিত ।


পারিশ্রমিকঃ কোনাে শ্রমিকের প্রদত্ত শ্রমের আর্থিক মূল্যই হচ্ছে পারিশ্রমিক । শ্রমিকের প্রদত্ত শ্রমের । উপযুক্ত পারিশ্রমিক প্রদান করা ব্যবস্থাপনার অন্যতম নীতি। প্রতিষ্ঠানে নিয়ােজিত শ্রমিক - কর্মীর কাজের ধরন , পরিমাণ , মেধা , কর্মদক্ষতা , অভিজ্ঞতা , জীবনযাত্রার মান ইত্যাদি বিবেচনাপূর্বক উপযুক্ত বা ন্যায্য বেতন ও অন্যান্য সুযোগ - সুবিধা প্রদানের নীতিকেই পারিশ্রমিকের নীতি বলে। 


কেন্দ্রীকরণঃ কেন্দ্রীকরণ বলতে কর্তৃত্বের বন্টন বা মাত্রা নির্ধারণকে বুঝায় । অর্থাৎ সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা বা কর্তৃত্ব ব্যবস্থাপনা স্তরের কোন পর্যায়ে কী পরিমাণ থাকবে তা নির্ধারণ করাকেই কেন্দ্রীকরণ বলে । এ নীতি অনুযায়ী গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা উচ্চ ব্যবস্থাপনার হাতে কেন্দ্রীভূত রেখে কম গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অধস্তন কর্মকর্তাদের মাঝে বণ্টন বা বিকেন্দ্রীভূত করতে হবে। উল্লেখ্য , কেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা অধস্তন কর্মীদের কর্মস্পৃহা ও ভূমিকা হ্রাস করে এবং বিকেন্দ্রীভূত সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষমতা কর্মীদের দায়িত্ববােধ জাগ্রত করে। 


আরােহণী শিকল বা জোড়া - মইঃ এ নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থাপনাকে এমনভাবে নকশা করতে বা সাজাতে হবে যাতে করে ব্যবস্থাপনা উচস্তর হতে নিম্নস্তরে ধাপে ধাপে অবস্থান করে এবং প্রতিটি ধাপের সাথে সুসম্পর্ক বজায় থাকে। এতে করে আদেশ - নির্দেশ বা সিদ্ধান্তসমূহ সাংগঠনিক কাঠামাে অনুসরণ করে উচ্চস্তরের নির্বাহী হতে পর্যায়ক্রমে নিম্নস্তরের নির্বাহীর নিকট পৌছাবে এবং তথ্য - উপাত্ত , পরামর্শ , অভাব - অভিযােগ একইভাবে নিম্নস্তরের নির্বাহী হতে উচ্চস্তরের নির্বাহীর নিকট পৌঁছাবে। 


শৃঙ্খলাঃ প্রতিষ্ঠানে যােগ্য ব্যক্তিকে যােগ্য হানে এবং প্রতিটি বস্তু বা উপকরণকে সঠিক স্থানে স্থাপন করার - নামই হচ্ছে সুখলা। এ নীতি অনুযায়ী প্রত্যেক কর্মচারীর জন্য কর্ম ও কর্মস্থল সুনির্দিষ্ট থাকতে হবে এবং সেই সাথে প্রতিটি বঙও যথাস্থানে স্থাপন করতে হবে। এতে করে প্রতিষ্ঠানে উত্তম কর্ম - পরিবেশ বজায় থাকবে এবং অপব্যয় ও অপচয় হ্রাস পাবে। 


সাম্যতা নিরপেক্ষতাঃ সাম্যতা বলতে সকলের প্রতি সমান আচরণকে বুঝায়। এ নীতি অনুযায়ী প্রতিষ্ঠানে নিয়ােজিত সকল কর্মীকে সমান দৃষ্টিতে দেখতে হবে। অর্থাৎ রাগ বা অনুরাগের বশবর্তী না হয়ে পক্ষপাতহীনভাবে কর্মীদের যােগ্যতা ও কর্মদক্ষতা অনুসারে ক্ষমতা ও দায়িত্ব অর্পণ , কাজের যথার্থ মূল্যায়ন , যথাসময়ে ন্যায্য মজুরি প্রদান , প্রাপ্য সুযােগ - সুবিধা প্রদান করতে হবে এবং সকলের প্রতি সুবিচার নিশ্চিত করতে হবে। এতে কর্মীদের মনােবল , আনুগত্য ও কর্মস্পৃহা বৃদ্ধি পাবে। 


 চাকরির স্থায়িত্বঃ এ নীতি অনুযায়ী কর্মীদের চাকরির নিরাপত্তা ও স্থায়িত্ব বিধান করা হলে তারা নিশ্চিন্তে ও নির্বিঘ্নে স্বতঃস্ফূর্তভাবে কাজে মনােনিবেশ করবে এবং উদ্দেশ্যার্জনে সর্বোচ্চ নিষ্ঠা ও আন্তরিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটাবে , প্রতিষ্ঠান ও নিজের স্বার্থকে এক ও অভিন্ন বলে মনে করতে সক্ষম হবে। পক্ষান্তরে যখন - তখন কর্মী ছাঁটাই , পদাবনতি , বদলি ইত্যাদির ভয় কর্মীদের কর্মস্পৃহাকে অবদমিত করে রাখে। তাই ব্যবস্থাপনার উচিত চাকরির স্থায়িত্ব বা নিরাপত্তা নিশ্চিত করা। 


উদ্যোগঃ নতুন কিছু উদ্ভাবন বা আবিষ্কারের জন্য স্বতঃস্ফূর্ত ও স্বাধীন প্রচেষ্টার সামর্থ্য বা শক্তিকে উদ্যোগ বলে। এ নীতি অনুযায়ী ব্যবস্থাপনার উচিত কর্মীদের উদ্ভাবনী শক্তি বিকাশের জন্য উপযুক্ত কর্মপরিবেশ তৈরি করা। স্বাধীন ও উপযুক্ত কর্মপরিবেশ কর্মীদের উদ্যোগী করে তােলে এবং উদ্দীপনা শক্তিকে বৃদ্ধি করে। ফলে তারা পরিকল্পনা। বাবায়নে স্বাধীন চিলা করার সুযােগ পায় এবং নতুন নতুন কর্ম - উপায় উদ্ভাবনে সচেষ্ট হয়। 


একতই বল বা দলীয় চেতনাঃ এ নীতির মূল কথা হচ্ছে কমাদের মধ্যে। লায় চেতনী বা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার প্রবণতা জাগ্রত করা । অর্থাৎ দলবদ্ধভাবে কাজ করলে অসাধ্য সাধন করা যায় - এ ধারণা সকলের মধ্যে দিতে হবে এবং সকল ব্যক্তি , বিভাগ ও উপবিভাগকে নিয়ে একতাবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে । তাহলে কর্মীদের মধ্যে পারস্পরিক সমঝােতা ও সহযােগিতা বৃদ্ধি পাবে এবং প্রাতিষ্ঠানিক স্বার্থ সামষ্টিক স্বাথ হিসেবে গণ্য হবে ইত্যাদি। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ