আমি পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ি। স্ত্রীর মাসিকের সময় কি তার সাথে শুয়ে থাকলে আমি নাপাক হয়ে যাব? তাছাড়া সে যদি কোন কারনে নাপাক হয় আর আমি তাকে জড়িয়ে ধরি তাহলে আমি কি নাপাক হয়ে যাব?আর এক্ষেত্রে নামাজ আদায় করতে হলে কি গোসল করত হবে?
ঋতুবতী অবস্থায় স্ত্রীদের সঙ্গে কেবলমাত্র সহবাস ছাড়া বাকি সব ধরনের সম্পর্ক বৈধ।
হযরত আনাস (রাঃ) বলেন যে, ইয়াহূদীরা ঋতুবর্তী স্ত্রীলোকদেরকে তাদের সাথে খেতেও দিতো না এবং তাদের পার্শ্বে রাখতো না। সাহাবীগণ (রাঃ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) কে এই সম্বন্ধে জিজ্ঞেস করলে তারই উত্তরে আয়াত অবতীর্ণ হয় এবং রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন যে, সহবাস ছাড়া অন্যান্য সবকিছু বৈধ।
আনাস (রাঃ) হতে বর্ণিত তিনি বলেন, ইয়াহূদীরা ঋতুবতী স্ত্রীলোকদেরকে তাদের সাথে খেতে দিত না এবং তাদের পার্শ্বে রাখত না। সাহাবীগণ এ সম্পর্কে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে জিজ্ঞাসা করলে সুরা বাকারার ২২২ নাম্বার আয়াতটি অবতীর্ণ হয়। তখন রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বললেন, স্ত্রীদের সাথে সহবাস ছাড়া সবকিছু করতে পার। (সহীহ মুসলিম হা: ৩০২)।
ইকরিমা (রাঃ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এর কোন এক স্ত্রী থেকে বর্ণনা করেন, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যদি তার ঋতুবর্তী স্ত্রীর সাথে থাকতে চাইতেন তাহলে স্ত্রীর নিম্নার্ধে ভাল ভাবে কাপড় বেঁধে নিতেন। (আবূ দাঊদ হা: ২৭২, সহীহ)।
আয়িশাহ (রাঃ) বলেন: রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আমাকে তার মাথা ধৌত করে দিতে বললেন, আমি তার মাথা ধৌত করে দিলাম তখন আমি ঋতুবতী ছিলাম এবং আমার ঋতুকালীন অবস্থায় তিনি আমার কোলে মাথা রেখে শুয়ে কুরআন তেলাওয়াত করতেন। (সহীহ বুখারী হা: ২৯৫, ২৯৭)।
হযরত আম্মারার ফুফু (রাঃ) হযরত আয়েশাকে (রাঃ) জিজ্ঞেস করেন, যদি স্ত্রী হায়েযের অবস্থায় থাকে এবং স্বামী-স্ত্রীর একই বিছানা হয় তবে তারা কি করবে: অর্থাৎ এই অবস্থায় তার স্বামী তার পাশে শুতে পারে কি-না?
হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি তোমাকে সংবাদ দিচ্ছি যা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) স্বয়ং করেছেন। একদা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বাড়িতে এসেই তার নামাযের জায়গায় চলে যান এবং নামাযে লিপ্ত হয়ে পড়েন। অনেক বিলম্ব হয়ে যায়। ইতিমধ্যে আমি ঘুমিয়ে পড়ি। তিনি শীত অনুভব করে আমাকে বলেনঃ এখানে এসো। আমি বলি: আমি ঋতুবতী। তিনি আমাকে আমার জানুর উপর হতে কাপড় সরাতে বলেন। অতঃপর তিনি আমার উরু ও গণ্ড দেশের উপর বক্ষ রেখে শুয়ে পড়েন। আমিও তার উপর ঝুঁকে পড়ি। ফলে ঠাপ কিছু প্রশমিত হয় এবং সেই গরমে তিনি ঘুমিয়ে যান।
হাসান বসরী (রঃ) এবং ইকরামা (রঃ) এর ফতওয়া এটাই। ভাবার্থ এই যে, ঋতুবতী স্ত্রীর সাথে উঠা-বসা, খাওয়া ও পান করা ইত্যাদি সবই সর্বসম্মতিক্রমে জায়েয।।
সুনান-ই- আবু দাউদের মধ্যে বর্ণিত আছে, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমার ঋতুর অবস্থায় আমি ও রাসূলুল্লাহ (সাঃ) একই বিছানায় শয়ন করতাম। তার কাপড়ের কোন জায়গা খারাপ হয়ে গেলে তিনি শুধু ঐটুকু জায়গাই ধুয়ে ফেলতেন, শরীরের কোন জায়গায় কিছু লেগে গেলে ঐ জায়গাটুকুও ধুয়ে ফেলতেন এবং ঐ কাপড়েই নামায পড়তেন।
তবে সুনানে আবূ দাউদের একটি বর্ণনায় এও রয়েছে যে, হযরত আয়েশা (রাঃ) বলেনঃ আমি ঋতুর অবস্থায় বিছানা হতে নেমে গিয়ে মাদুরের উপরে চলে আসতাম। আমি পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আমার নিকট আসতেন না।
তাহলে এই বর্ণনাটির ভাবার্থ এই যে, তিনি সতর্কতামূলকভাবে এর থেকে বেঁচে থাকতেন, নিষিদ্ধতার জন্যে নয়।
সুতরাং স্ত্রীর মাসিকের সময় তার সাথে শুয়ে থাকলে আপনি নাপাক হয়ে যাবেন না। তাছাড়া সে যদি কোন কারনে নাপাক হয় আর তাকে জড়িয়ে ধরেন তাহলেও নাপাক হবেন না। আর এক্ষেত্রে নামাজ আদায় করতে হলে গোসল করত হবে না।