জেনিটাল ওয়ার্টস কি?

জেনিটাল ওয়ার্টস অথবা জরুল খুবই সাধারণ একটি যৌন সংসর্গিত সংক্রমণ, যা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাসের (এইচপিভি) কারণে হয়। অন্যান্য উপর্গের মধ্যে ব্যথা, অস্বস্তি এবং চুলকানি হল এর অন্যতম বৈশিষ্ট। পুরুষ ওমহিলাদের যৌনাঙ্গ অঞ্চলের কাছাকাছি একটি বা একগুচ্ছ আঁচিল দেখা দিতে পারে। পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের এই সংক্রমণের কবলে পড়ার ঝুঁকি বেশি।

জেনিটাল ওয়ার্টস এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?

যৌনাঙ্গের আঁচিল বিভিন্ন রূপে দেখা দিতে পারে। যৌনাঙ্গে আঁচিলের সবচেয়ে সাধারণ লক্ষণগুলি হল:

  • ছোটো, বিক্ষিপ্ত ফোলা ( চামড়ার রঙে অথবা গাঢ় বর্ণ)।
  • যৌনাঙ্গে একগুচ্ছ ফোলা অংশ।
  • কুঁচকির জায়গায় চুলকানি অথবা অস্বস্তি।
  • যৌন মিলনের সময় রক্তপাত ও তার পর ব্যথা।


জেনিটাল ওয়ার্টস যেসব জায়গায় দেখা দেয়:

মহিলাদের ক্ষেত্রে:

  • যোনির ভিতরে।
  • যোনিদ্বার, জরায়ু গ্রীবা, অথবা কুঁচকিতে।


পুরুষদের ক্ষেত্রে:

  • লিঙ্গে।
  • অন্ডথলি, উরু অথবা কুঁচকিতে।
  • উভয় লিঙ্গের ক্ষেত্রেই
  • মলদ্বারের চারপাশে।
  • ঠোঁট, মুখ, জিভ, অথবা গলায়।


জেনিটাল ওয়ার্টস এর প্রধান কারণগুলি কি কি?

জেনিটাল ওয়ার্টস এর মূল কারণ এইচপিভি সংক্রমণ। এই সংক্রমণ এইচপিভি সংক্রমিত ব্যক্তির থেকে সুস্থ ব্যক্তির দেহে ছড়িয়ে পড়ে যেসকল উপায়ে:

যৌনসঙ্গম (যোনি, মুখ অথবা পায়ু দ্বারা)- এইচপিভি দ্বারা সংক্রামিত হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায় খুব অল্প বয়সে যৌন ক্রিয়ায় সক্রিয় হয়ে উঠলে অথবা একাধিক সঙ্গী বা সঙ্গীনীর সঙ্গে অসুরক্ষিত যৌন সংসর্গ বা এমন কারওর সাথে যৌন মিলন লিপ্ত হওয়া, যার যৌনসঙ্গম সংক্রান্ত ইতিহাস জানা নেই।
প্রসব (সংক্রামিত মায়ের থেকে শিশুর দেহে সংক্রামিত হয়)।
জেনিটাল ওয়ার্টস কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ আংশিকভাবে এই রোগ নির্ণয় করেন শারীরিক পরীক্ষার মাধ্যমে, যার নির্ধারণে পুরো আঁচিলটি বা তার কিছুটা অংশ ল্যাবরেটরিতে পাঠানো হয় অণুবীক্ষণ যন্ত্রের নিচে নীচে পরীক্ষার জন্য।

চর্মরোগ বিশেষজ্ঞ নিম্নলিখিত উপসর্গগুলির পরামর্শ দিতে পারেন:

পোডোফাইলোটক্সিন (আঁচিলের কোষের বৃদ্ধির রোধ করতে)।
ইমিকুইমড (এইচপিভি-র বিরুদ্ধে লড়াইর জন্য শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে)
কখনও সখনও কিছু পদ্ধতির অবলম্বন করা হয়, এগুলি হল:

ক্রায়োসার্জারি (তরল নাইট্রোজেন) যার দ্বারা আঁচিলকে জমিয়ে দেওয়া হয়।
কেটে ফেলা অথবা অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে বাদ দেওয়া।
ইলেক্ট্রোকটারি (বিদ্যুৎ প্রবাহ) আঁচিল বিনষ্ট করে দেয়।
লেজার ট্রিটমেন্ট (লেজার লাইট) আঁচিল নষ্ট করে দেয়।
যৌনাঙ্গের আঁচিলের চিকিৎসার সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কারণ হলো এইচপিভি সংক্রমণ, যার থেকে সার্ভিকাল এবং যোনির ক্যান্সার হয়। এইচপিভি প্রতিকারে টীকাকরণ আঁচিলের পাশাপাশি ক্যান্সারের ঝুঁকি কম কমাতে সহায়ক।

জেনিটাল ওয়ার্টস এর ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়
কোনো নারী যদি একাধিক পুরুষের সাথে অরক্ষিত যৌনমিলন করেন কিংবা কোনো পুরুষ যদি একাধিক নারীর সাথে অরক্ষিত যৌনমিলন করেন, তাহলে এইচপিভিতে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকি বেশি থাকে। অন্যান্য ঝুঁকিপূর্ণ বিষয়ের মধ্যে রয়েছেঃ

  • নারী বা পুরুষের কোনো একজনের যদি যৌন সংক্রামক রোগ থাকে।
  • আপনি যদি এমন কারো সাথে যৌন মিলনে লিপ্ত হন, যার আগের যৌন ইতিহাস আপনার জানা নেই।
  • যৌবনে অনেকের সাথে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করা।


কখন ডাক্তার দেখাবেন

  • যদি আপনার যৌনাঙ্গ এলাকায় ছোট ছোট গোটা বা আঁচিল হয়।
  • যদি আপনার যৌনসঙ্গী বা সঙ্গিনীর যৌনাঙ্গে আঁচিল লক্ষ করেন বা রোগ ধরা পড়ে।



জেনিটাল ওয়ার্টস এর পরীক্ষা-নিরীক্ষা
যেহেতু জেনিটাল ওয়ার্টস বা যৌনাঙ্গের আঁচিল নির্ণয় করা কিছুটা কঠিন ব্যাপার, তাই আপনার ডাক্তার আপনার যৌনাঙ্গের আঁচিলে অ্যাসিটিক অ্যাসিড দ্রবণ প্রয়োগ করতে পারেন, তখন আঁচিল সাদা হয়ে যায়। এরপর সেটাকে তিনি বিশেষ মাইক্রোস্কোপের মাধ্যমে দেখতে পারেন। এ পরীক্ষার নাম কলপোস্কেপ।

মহিলাদের ক্ষেত্রে নিয়মিত তলপেটের পরীক্ষা ও প্যাপটেস্ট করা জরুরি। এতে জেনিটাল ওয়ার্টসের কারণে সৃষ্ট যোনি ও জরায়ুমুখের পরিবর্তন কিংবা জরায়ুমুখের ক্যান্সারের প্রাথমিক চিহ্নগুলো নির্ণয় করতে সহজ হয়, যা এইচপিভি সংক্রমণের সম্ভাব্য জটিলতা।

প্রথম প্যাপটেস্ট করাবেন যৌনমিলনের তিন বছরের মধ্যে অথবা আপনার বয়স ২১ বছর হলে। যদি আপনার বয়স ৬০ বছরের বেশি হয়, তাহলে প্যাপটেস্টের পরিমাণ কমাতে পারেন। আপনি চিকিৎসকের সাথে কথা বলুন। তিনি নির্ধারণ করে দেবেন আপনার জন্য সঠিক কী কী পরীক্ষা প্রয়োজন। যদি আপনার জেনিটাল ওয়ার্টস হয়, তাহলে আপনাকে প্রতি তিন থেকে ছয় মাস অন্তর প্যাপটেস্ট করাতে হবে। এটা নির্ভর করে আপনার অবস্থার তীব্রতার ওপর।

জেনিটাল ওয়ার্টস এর জটিলতা

মহিলাদের ক্ষেত্রে জরায়ুমুখের ক্যান্সারের সাথে এইচপিভি সংক্রমণের গভীর সম্পর্ক রয়েছে। কিছু বিশেষ ধরনের এইচপিভি যোনি ওষ্ঠের ও পায়ুপথের ক্যান্সার ঘটায়। পুরুষের ক্ষেত্রে পায়ুপথের ও লিঙ্গের ক্যান্সার ঘটায়। এইচপিভি বা হিউম্যান প্যাপিলোমা ভাইরাস সব সময় ক্যান্সার সৃষ্টি করে না, তবে এখন পর্যন্ত মহিলাদের ক্ষেত্রে এটা খুবই বিপজ্জনক। তাই আক্রান্ত মহিলাদের নিয়মিত প্যাপটেস্ট করাতে হবে।

যৌনাঙ্গের আঁচিল গর্ভাবস্থাকালে সমস্যা ঘটাতে পারে। আঁচিলগুলো বড় হতে পারে, যার জন্য প্রস্রাব করতে সমস্যা হতে পারে। যোনির দেয়ালের আঁচিলগুলো বাচ্চা প্রসবের সময় যোনির টিসুর সঙ্কোচনের ক্ষমতা কমিয়ে দেয়।

যেসব মহিলার যৌনাঙ্গের আঁচিল রয়েছে তাদের সন্তানের গলায় ওয়ার্টের সংক্রমণ হতে পারে। শিশুর শ্বাসনালীর প্রতিবন্ধকতা রোধ করতে শল্য চিকিৎসার প্রয়োজন হতে পারে­ যদিও এটা বিরল ঘটনা।

জেনিটাল ওয়ার্টস এর চিকিৎসাব্যবস্থা
যৌনাঙ্গের আঁচিল দূর করার জন্য ওষুধ বা শল্য চিকিৎসা দুই ধরনের ব্যবস্থারই প্রয়োজন হতে পারে। এ ভাইরাস কখনো সম্পূর্ণ নির্মূল হয় না, চিকিৎসার পরও আবার জেনিটাল ওয়ার্ট হতে পারে।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে