রোটা ভাইরাস কি?
ডায়রিয়া হওয়ার একটি অন্যতম কারণ রোটা ভাইরাস। সাধারণত শীতকালে রোটা ভাইরাসের মাধ্যমে শিশুরা ডায়রিয়ায় বেশি আক্রান্ত হয়।গ্রীষ্ম বা বর্ষায় ডায়রিয়া কারণ থাকে ব্যাকটেরিয়া ।

রোটা ভাইরাস হচ্ছে নবজাতক ও শিশুদের ডায়রিয়াজনিত রোগ ও পানিশূন্যতা প্রধান কারণ। আক্রান্ত হওয়ার ২-৩ দিন পর সাধারণত এ রোগের উপসর্গ দেখা দেয়। রোটা ভাইরাসের সুনির্দিষ্ট কোন চিকিৎসা না থাকলেও পানিশূন্যতা রোধে বারবার পানি খাওয়ানোর পরামর্শ দেয়া হয়।

পাতলা পায়খানা হওয়া ;ডায়রিয়ার সাথে জ্বর হয়;ঘন ঘন বমি হয়; শরীর দুর্বল হওয়া; খাওয়ার রুচি কমে যাওয়া;শরীরে পানি শূন্যতা দেখা দেয়।

রোটা ভাইরাস কি?
রোটা ভাইরাস এক প্রকারের ছোঁয়াচে ভাইরাস যা খাদ্যনালীতে সংক্রমণ ঘটায়, এবং এর ফলে বমি এবং পেট খারাপ হয়। এই অবস্থা ছোট বাচ্চা এবং শিশুদের মধ্যে খুবই সাধারণ। যদিও, প্রতিষেধক এবং ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা বজায় রাখার মাধ্যমে এই রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব। এই ভাইরাসের সংক্রমণ বাচ্চাদের মধ্যে পেট খারাপ হওয়ার একটা খুব সাধারণ কারণ।

রোটা ভাইরাসের ভয়াবহতা:
রোটাভাইরাল ডায়রিয়ার কারণে সারা বিশ্বে প্রতিবছর ৬ লাখের ও বেশী শিশু মৃত্য বরণ করে। বাংলাদেশের প্রতি বছর প্রায় ২৪ লক্ষ শিশু রোটা ভাইরাস জনিত পরিপাকতন্ত্রের প্রদাহে ভোগ। প্রতিবছর ৩ লাখেরও বেশী শিশু মারাত্মক সংক্রমণে আক্রান্ত হয়, যার মধ্যে প্রায় অনেক শিশু মৃত্যু বরণ করে।

রোটা ভাইরাস কিভাবে আক্রান্ত হয়?
রোটা ভাইরাস প্রধানত মুখ গহবর দিয়ে খাদ্যনালীতে প্রবেশ করে। এই ভাইরাস আমাদের চারপাশে ছড়িয়ে আছে এবং একজনের কাছে থেকে অন্যজনের দেহে প্রবেশ করে। সংক্রামিত পানি, খাবার, খেলনা এমনকি বিভিন্ন আসবাবপত্র থেকেও এই রোগের জীবাণু ছড়াতে পারে। রোটা ভাইরাস এ সংক্রামণ হওয়ার ২৮ থেকে ৪৮ ঘন্টার মধ্যে প্রতিক্রিয়া শুরু হয়।


রোটাভাইরাস খুবই ছোঁয়াচে রোগ যা নিচে উল্লেখ করা মধ্যমে ছড়ায়:

  • আক্রান্ত কোনও বাচ্চার মলের সঙ্গে সরাসরি সংস্পর্শ।
  • আক্রান্ত ব্যক্তির সংস্পর্শে গেলে।
  • প্রসাধন দ্রব্যাদী, বিছানা, খাদ্য থেকে।
  • পরিচ্ছন্নতা না বজায় রাখলে।


রোটা ভাইরাস এর লক্ষণ কি কি?
প্রথমে শুরু হয় বমি, এরপর ধীরে ধীরে পানির মত পাতলা পায়খানা। খুব কম সময়ের মধ্যে ডায়রিয়া তীব্র আকার ধারণ করে এবং পানি শূন্যতা এত বেশি দেখা দেয় যে, যার কারণে জীবন-মরণ সমস্যা দেখা দিতে পারে। এছাড়া জ্বর এবং পেটের ব্যথাও থাকতে পারে। ডায়রিয়া থাকতে পারে ৭ দিন পর্যন্ত।

  • জ্বর।
  • পেট খারাপ।
  • বমি।
  • পেটে ব্যাথা।
  • খিদে কমে যাওয়া।
  • ডিহাইড্রেশন।
  • মূত্রের পরিমাণ কমে যাওয়া।
  • মুখ এবিং গলা শুকিয়ে যাওয়া।
  • মাথা ঘোরা।
  • অস্বস্তি বোধ হওয়া বা বিরক্তিভাব।


রোটা ভাইরাস চিকিৎসা কি?
রোটাভাইরাস সংক্রমণের ক্ষেত্রে প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ ভাল। অতএব, জনবহুল জায়গা পরিত্যাগ করার এবং নিজেকে পরিচ্ছন্ন রাখার উপদেশ দেওয়া হয়। সংক্রমণ এড়াতে, আক্রান্ত রোগীর বিছানা বা জামাকাপড় না ছোঁয়াই ভালো। শরীর থেকে বেড়িয়ে যাওয়া লবন এবং জলের ঘাটতি পূরণ করতে ওরাল রিহাইড্রেশন সলিউশনের ব্যবহার করুন, যেমন বাড়িতে তৈরি করা লেমোনেড, ঘোল, নারকেল জল, চিনির দ্রবন (এক লিটার ফুটন্ত জলে ৬ চা চামচ চিনি এবং অর্ধেক চা চামচ আয়োডাইজড লবন দিয়ে বানানো)। সম্পূর্ণ সুস্থ হওয়া পর্যন্ত বাইরের খাদ্য এড়িয়ে চলাই ভালো।

রোটা ভাইরাসে সংক্রমণের চিকিৎসা তার লক্ষণের উপর নির্ভর করে হয় এবং এক্ষেত্রে চিকিৎসক সম্পূর্ণ বিশ্রাম নেওয়ার পরামর্শ দিতে পারেন। নিজেকে হাইড্রেটেড রাখা এবং কাঁচা খাদ্য এড়িয়ে চলাই ভালো।

রোটা ভাইরাস এর প্রতিষেধক কি?
রোটা ভাইরাল ডায়রিয়া থেকে পরিত্রাণ পাওয়ার জন্য দুইভাবে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যায়।

প্রথমত, পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন জীবন যাপন, শিশু যে সমস্ত জিনিসপত্র ব্যবহার করে সেগুলো সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। শিশু যে সমস্ত খেলনা নিয়ে খেলা করে তা পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা এবং আপনার হাত, এমনকি খাবার তৈরি করার স্থান সবসময় পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখা। সর্বোপরি শিশুদের ৬ মাস পর্যন্ত শধু মায়ের বুকের দুধ খাওয়ানো।
দ্বিতীয়ত, শিশুকে রোটাভাইরাসের টিকা খাওয়ানো। বর্তমানে প্রতিষেধক হিসাবে রোটা ভাইরাস এর টিকা বাংলাদেশে পাওয়া যায়।

কেন রোটা ভাইরাস টিকা জরুরী?
গবেষণায় দেখা গেছে উন্নত জীবনযাত্রা মেনেও অনেক ক্ষেত্রে এই রোগ প্রতিরোধ করা যায় না। সর্বোপরি ২ মাস থেকে ৬ মান বয়স্ক শিশুদের এই রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা সবচেয়ে বেশী থাকে। তাই এই বয়সের শিশুদের রোটাভাইরাল ডায়রিয়া মুখে খাবার স্যালাইন দিয়ে সারিয়ে তোলা খুব কষ্টসাধ্য ব্যাপার। বেশীর ভাগ ক্ষেত্রেই শিরাপথে স্যালাইন দিয়ে পানিশূণ্যতা পূরণ করতে হয়। তাই এই টিকার বিকল্প নেই।

রোটা ভাইরাস টিকা কখন দিতে হবে?

রোটা ভাইরাসের টিকা দিতে হবে দেড় মাস থেকে ছয় মাসের মধ্যে। এই টিকা মুখে খাওয়ানো হয়। প্রথম ডোজ দেয়ার পর দ্বিতীয় ডোজ কমপক্ষে ১ মাস পর ‍দিতে হয়। এই টিকা দিলে রোটা ভাইরাসের কারণে ডায়রিয়া হবে না। শিশু রোটাভাইরাস জনিত ডায়রিয়ার কারণে মৃত্যু থেকে রক্ষা পাবে। সুতরাং শিশুদের জীবন রক্ষার্থে তাদের পরিচর্যার পাশাপাশি রোটা ভাইরাস ডায়রিয়া থেকে পরিত্রান পেতে সময়মত টিকা দিয়ে শিশুদের ডায়রিয়া থেকে রক্ষা করুণ।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে