রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কি?

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস (আরএ) একটা অবস্থা যাকে গাঁটে এবং গাঁটের চারপাশে প্রদাহ বা ফোলা, গাঁটে ব্যথা এবং অন্যান্য উপসর্গ দিয়ে ব্যখ্যা করা যায়। এটা একটা অটোইমিউন ব্যাধি যেখানে স্বাস্থ্যবান টিসুগুলোকে বিদেশী শরীর মনে করে তাদের আক্রমণ করে।

সময়মতো চিকিৎসার অভাবে কোমলাস্থি, একটা টিসু যেটা গাঁট ও হাড়কে ঢেকে রাখে, ক্ষতিগ্রস্ত হয়। এছাড়াও, কোমলাস্থি ক্ষতিগ্রস্ত হলে গাঁটে জায়গা কম হয়ে যায়। সব মিলিয়ে, অবস্থাটা প্রচন্ড ব্যথাদায়ক হয় কিন্তু ওষুধের দ্বারা কম করা যায়।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস হাতের, পায়ের, কনুইএর, হাঁটুর, কব্জীর এবং গোড়ালীর গাঁটকে প্রভাবিত করে। এই অবস্থাটা কার্ডিওভাস্কুলার বা শ্বসন তন্ত্রের মাধ্যমে ছড়ায়, যে কারণে এটাকে সিস্টেমেটিক অসুখও বলা হয়।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর লক্ষণ ও উপসর্গগুলো কি কি?

এই অবস্থার প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলো নিচে বলা হলো:

  • ভোরবেলায় আড়ষ্ঠতা যেটা পুরো দিন ক্রমাগত গাঁটের নড়াচড়ার ফলে কমে যায়।
  • ক্লান্তি।
  • অ্যানিমিয়া বা রক্ত কমে যাওয়া।
  • বেদনাদায়ক গাঁট।
  • শুকনো চোখ এবং মুখ।
  • শক্ত মাংসপিন্ড কনুইতে, হাতে, হাঁটুতে এবং অন্যান্য গাঁটে।
  • গাঁটে লালভাব এবং ফোলা।
  • বুকে ব্যথা।
  • জ্বর ও ওজন কমে যাওয়া।
  • বেদনাদায়ক অবস্থাটা হাত ও পায়ে উভয় জায়গাকেই একইসাথে প্রভাবিত করে। এটা 30 বছরের পরে কখনও শুরু হতে পারে এবং পুরুষদের চেয়ে মহিলাদের বেশীই আক্রান্ত করে। কখনো, ফ্লেয়ার-আপটি, মানে, ব্যথা এবং ক্লান্তি প্রদাহের সাথে হঠাৎই ঘটতে পারে এবং অবস্থাটা আরো খারাপ করে তোলে।


রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর প্রধান কারণগুলো কি কি?

যদিও এই অবস্থার পিছনে প্রকৃত কারণ এখোনো জানা যায় নি, নিচে উল্লেখিত কারণগুলোকে এই অবস্থার অগ্রদূত মনে করা হতে পারে:

  • জিনের পরিবর্তন।
  • বাবার বংশে কারোর এই ব্যাধি থাকা।
  • সংক্রমণ।
  • হরমোনের পরিবর্তন।
  • মানসিক হতাশা।
  • ধূমপান।
  • প্রদূষকের সংস্পর্শে আসা।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?

উপরোক্ত উপসর্গ দেখে এই রোগ নির্ণয় করা হয়। এছাড়াও, শারীরিক পরীক্ষা, এক্স-রে এবং রক্তপরীক্ষাও এই রোগের উপস্থিতি নিশ্চিত করে। চিকিৎসা আরো ফলপ্রসু হয় যদি এই রোগ খুব তাড়াতাড়ি নির্ণয় করা হয় ও এর চিকিৎসা শুরু করে দেওয়া হয়।

রিউমাটয়েড আর্থ্রাইটিস এর চিকিৎসা কি?

চিকিৎসা প্রী-এম্পটিভ এবং রিঅ্যাক্টিভ উভয় ভাবেই করা হয়, যেমন:

  • ব্যথা কমানোর ওষুধ বা অ্যানালজেসিক ওষুধ।
  • ননস্টেরয়েডাল অ্যান্টি-প্রদাহ ওষুধ যেমন আইবুপ্রোফেন।
  • কর্টিকোস্টেরয়েডস্ যেমন প্রেডনিসোলোন।
  • ব্যাধির প্রকোপ কমাতে অ্যান্টি-রিউম্যাটিক ওষুধ যেমন মেথোট্রেক্সেট।
  • বায়োলজিকাল ওষুধ যেমন, ইনফ্লিক্সিম্যাব।
  • ব্যায়াম, যেমন শক্তির প্রশিক্ষণ এবং টাই চি।
  • ফিজিওথেরাপী ব্যথা কমাতে এবং গাঁটে আবার গতিশীলতা ফিরিয়ে আনতে।
  • উপকরণ যেগুলো ব্যথা এবং চাপে আরাম দেবে।
  • বিশ্রাম।
  • স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়া এবং খাদ্যতালিকায় ওমেগা 3 ফ্যাটি অ্যাসিড যুক্ত করা।
  • মালিশ করা, আকুপাংচার এবং অন্য সম্পূরক চিকিৎসা।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে