অভিনয় এম বাকি বিল্লাহ আবিদ হাসান। ১৭ বছরের এক স্বপ্নবাজ তরুণ। লালমাটিয়া স্কুল এন্ড কলেজেরএইচ এস সি ১ম বর্ষের মেধাবী ছাত্র। নরসিংদী জেলার বেলাব উপজেলার বিন্নাবাইদ গ্রামের এক দরিদ্র পরিবারে তার জন্ম। পিতা-মাতা আর এক বোন সহ চার সদস্য বিশিষ্ট পরিবারের মাঝে পিতা-মাতার একমাত্র আদরের পুত্র সন্তা আবিদ। ছোট সময় থেকেই পড়া লেখার প্রতি প্রবল ইচ্ছে ছিল তার। মেধাও ছিল বেশ ভালো। প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে শুরু করে মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে কোন ক্লাশেই প্রথম থেকে দ্বিতীয় স্থান অধিকার করেনি আবিদ। পিইসি, জেএসসি এবং এসএসসি তে পেয়েছে গোল্ডেন এ প্লাস। সন্তানের মেধার এই ধার দেখে কৃষক পিতা অনেক খুশি। মা ও বেশ আনন্দিত। পড়ালেখা শেষ করে ভাল চাকরী করে সংসাসের হাল ধরবে আবিদ। ঢাক ঢুল পিটিয়ে, ঘোড়ার গাড়িতে করে সুন্দর লাল টুকটুকে একটা বউ আনবে ঘরে। চাঁদের আলো নেমে আসবে তাদের সংসারে। জীবন থেকে মুছে যাবে সকল দু:খ-কষ্ট। এমন স্বপ্ন দেখেন আবিদের বাবা-মা। দেখতে দেখতে কেটে গেলো একটি বছর। চলে আসল আবিদের এইচ এস সি পরীক্ষা। মহান রবের অশেষ রহমতে আগের পরীক্ষাগুলোর মত এবারও বেশ ভাল পরীক্ষা দেয় আবিদ। পরীক্ষা শেষ হলে তার অনেক সহপাঠীরাই ভর্তি হয় বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি কোচিং এ। কিন্তু অর্থের অভাবে কোন কোচিং এ ই ভর্তি হতে পারেনি আবিদ। বাসায় বসে বিভিন্ন সহায়ক নোট পড়ে ই বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা দেয় আবিদ। সাফল্যের সোনালী পায়রা এবারও ধরা দেয় আবিদের হাতে। টিকে যায় প্রাচ্যের অক্সফোর্ড খ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে। অনেক কষ্টে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হলেও ঢাকায় থেকে অনিয়মিত ক্লাশে অংশগ্রহণ করার মতো আর্থিক সক্ষমতা ছিলনা আবিদের। কিছুদিন বাদে বাদে ক্লাশে উপস্থিত হতো আবিদ। বিষয়টি হঠাৎ নজরে আশে আবিদের ডিপার্টমেন্টের প্রধান ড.রফিক উল্লাহ স্যারের। বিষয়টি নিয়ে খোলামেলা কথা বলতে একদিন স্যার আবিদকে ক্যান্টিনে ডাকে। সেখানে বিস্তারিত কথা হয় দু জনের। আবিদের সকল কথা শোনে এক প্রকার মায়াই হয় স্যারের। আবিদ নামক সুপ্ত প্রতিভা যেন অঙ্কুরে বিনষ্ট না হয়ে যায় এ জন্য আবিদের সকল লেখা পড়ার খরচ বহন করার সিদ্ধান্ত নেয় ড. রফিক উল্লাহ। সুযোগ করে দেন উনার বাসায় থাকার। রফিক উল্লাহ স্যারের বাসায় থাকা অবস্থায় সখ্যতা গড়ে উঠে রফিক উল্লাহ স্যারের কলেজ পড়ুয়া মেয়ে আদিবার। দুজনের মাঝে গড়ে উঠে গভীর প্রেমের সম্পর্কের। অল্প দিনের ব্যবধানে এই সম্পর্কের কথা জানাজানি হয়ে যায় আদিবার পরিবারের সবার। জানাজানি হলেও আদিবার পরিবারের পক্ষ থেকে এ বিষয়ে কোন ভ্রু-ক্ষেপ করা হয় নি। কারন আদিবার বাবাও চেয়েছিল আবিদ কোনক্রমে প্রতিষ্ঠিত হতে পারলে একমাত্র মেয়েকে তুলে দিবে আবিদের হাতে। দিন, মাস, বছর গেলো। বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ালেখা শেষ হলো আবিদের। ধারাবাহিক সফলতা পেল এবারও আবিদ। সন্তানের এমন সিফলতার সংবাদে খুশি আবিদের দরিদ্র পিতা মাতা। শেষ হলো আবিদের পড়ালেখা। এবার সময় নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করার। পরিশ্রম আর কঠিন অধ্যবসায়ী হবার কারণে ক্যারিয়ারের স্বপ্নও পূরণ হবার সামনে হাঁটতে থাকে আবিদ। চাকুরীর জন্য পরীক্ষা দেয় নাসার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে। এবারও রফিক উল্লাহ স্যারের সহযোগীতায় সেখানে চাকুরী হয় আবিদের। চাকুরী হবার পর নিজের মেয়েকে আবিদের হাতে তুলে দেওয়ার উপযুক্ত সময় মনে করেন ড. রফিক উল্লাহ। চাকুরীতে যোগদানের জন্য আমেরিকা যাবার আগেই আবিদের সাথে কথা বলে আদিবার বাবা। এবার আদিবাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দেন তার বাবা। আদিবার বাবার প্রস্তাব পেয়ে কোন জবাব সরাসরি না দিয়ে আবিদ বলেন- আপাতত বিয়ের বিষয়টি এখানেই রাখুন। চাকুরীতে যোগদান করে পরের মাসে ছুটিতে এসে না হয় বিয়ে কিরে আদিবাকে সাথে নিয়ে যাবো। আবিদের এমন প্রস্তাবে বেশ খুশি আদিবার পরিবারের সবাই। অবশেষে এলো আবিদের এপয়েন্টমেন লেটার। চাকুরীতে যোগদানের জন্য চলে যায় আমেরিকায়। যোগদান করে আবিদ নাসার মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্রে। চাকুরীতে যোগদানের কয়েক মাস পরেও আবিদের কোন যোগাযোগ নেই আদিবার সাথে।এদিকে আবিদের কোন খোঁজখবর না পেয়ে প্রায় পাগল হওয়ার উপক্রম আদিবা। কোন মূল্যেই করতে পারেনি আবিদের সাথে যোগাযোগ। প্রায় বছর শেষে হঠাৎ ই মেইল আসে আদিবার কাছে। মেইল খোলেই দেখে আবিদের ছবি। সাথে এক ওয়েস্টার্ন মেয়ে। ছবি দেখেই হতবম্ভ হয়ে যায় আদিবা। ছবির নিচে ছোট করে একটা চিঠি- আদিবা, আশা করি ভালো আছ। কর্মব্যস্ততার ভিতরে তোমার সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমেরিকায় এসে নিজেকে নতুন করে চিনতে পেরেছি। এখানকার পরিবেশ আর বাংলাদেশ অনেক ভিন্ন। বাংলাদেশের যে কোন মেয়ে এসে এখানকার পরিবেশের সাথে মিশতে পারবেনা। যেহেতু আমি মৃত্যুর আগ পর্যন্ত আমেরিকা থাকার সিদ্ধান্ত নিয়েছি তাই তোমার সাথে বিয়ের সিদ্ধান্ত থেকে আমি সরে এসেছি। পছন্দ করে কাওকে বিয়ে করে নিও। আসলে আমি প্রেমের প্রতি আসক্ত বা বিশ্বাসী নই। কেবল নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করতেই তোমার সাথে এই প্রেমের অভিনয়। স্যারের প্রতি সালাম রইল। আমাকে ক্ষমা করে দিও। ভালো থেকো। ইতি আবিদ হাসান।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে