যদি হাজারে আসওয়াদ জান্নাতের পাথর হয়! তাহলে পৃথিবীতে আসার ইতিহাস. জানতে চায়.? প্রশ্ন ভুল হলে অগ্রিম ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি।।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

হাজারে আসওয়াদ : বেহেশতি পাথর

হজ বা ওমরাহ করার সময় সবার কালো পাথরের দিকে বিশেষ আগ্রহ থাকে। সবাই একে চুমু খাওয়ার জন্য আকাক্সক্ষা পোষণ করেন। এর নাম হাজারে আসওয়াদ। বেহেশতি এই কালো পাথরটি (এখন অবশ্য কয়েকটি খণ্ডে বিভক্ত) কাবা শরিফের পূর্ব কোনে লাগানো। এত চুমু খাওয়ার ফজিলত অত্যন্ত বেশি। হজরত উমর (রা.) বলেছিলেন, ‘আমি জানি তুমি একটা পাথর, তোমার উপকার বা ক্ষতি করার কোনো ক্ষমতা নেই। যদি আমি রাসুলুল্লাহকে (সা.) তোমার গায়ে চুমু দিতে না দেখতাম, তবে আমি কখনো তোমাকে চুমু দিতাম না।’
এই পাথরকে চুমু দেয়ার উদ্দেশ্য হচ্ছে আল্লাহর রাসুলের আনুগত্য করা। এই চুমু খাওয়া সুন্নত। 
হাজারে আসাওয়াদের আভিধানিক অর্থ হলো কালো পাথর। তবে অনেক হাদিসে একে সাদা রঙের পাথর বলে উল্লেখ রয়েছে।
আল্লামা আবু আবদুল্লাহ আল-ফাকেহি তাঁর ‘আখবারে মক্কা’ গ্রন্থে হজরত আবদুল্লাহ বিন আব্বাস (রা.) থেকে একটি হাদিস বর্ণনা করেছেন। হাদিসটির সনদ দুর্বল। এতে বলা হয়েছে :
‘রাসুলুল্লাহ (সা.) বলেছেন, যদি জাহেলিয়াতের অপবিত্রতা ও নাপাকি এবং জালেম ও পাপিষ্টদের হাতের কালিমায় হাজারে আসওয়াদ কলুষিত না হতো, তাহলে এর মাধ্যমে সব পঙ্গুত্বের চিকিৎসা হতো এবং আল্লাহ প্রথম দিন একে যে আকৃতিতে সৃষ্টি করেছেন হুবহু সেই আকৃতিতেই পাওয়া যেত। আল্লাহ এর রং পরিবর্তন করে এই জন্যই কালো করে দিয়েছেন যে, দুনিয়াবাসী মানুষ যেন বেহেশতের সৌন্দর্য (দুনিয়াতে বসেই) দেখতে না পায় এবং এটা যেন বেহেশতের মধ্যেই ফিরে আসে। এটি বেহেশতের সাদা ইয়াকুত পাথরের একটি। হজরত আদমকে (আ.) পৃথিবীতে পাঠানোর সময় আল্লাহ তা কাবা শরিফের স্থানে রেখে দিয়েছিলেন। তখন কাবাঘর ছিল না। তখন জমিন ছিল পবিত্র, এতে কোনো গুনাহ হতো না।
এতে গুনাহ করার মতো কোনো অধিবাসী ছিল না। আল্লাহ হারাম সীমান্তের চারদিকে একদল ফেরেশতাকে সারি বেঁধে পাহারার কাজে নিয়োজিত করেন। তখন জমিনের অধিবাসী ছিল জিন। এই পাথরের দিকে নজর করার কোনো অধিকার তাদের ছিল না। কেননা, এটা একটি বেহেশতি জিনিস। যে বেহেশতের দিকে নজর করবে সে তাতে প্রবেশ করবে। যে ব্যক্তির জন্য জান্নাত ওয়াজিব হয়েছে তারই কেবল ওই পাথরটি দেখা উচিত। ফেরেশতারা সবাইকে বিতাড়িত করতে থাকে এবং কাউকে তা দেখার অনুমতি দিচ্ছিল না।’
কাবাঘর নির্মাণের সময় ফেরেশতরা হজরত ইব্রাহিমকে (আ.) পাথরটি এনে দিলে তিনি কাবাঘরের পূর্বকোনে লাগান। রাসুলুল্লাহর (সা.) নবুয়তের আগে কুরাইশরা কাবাঘর সংস্কারের সময় তিনি নিজ হাতে পাথরটিকে যথাযথ স্থানে রেখে সম্ভাব্য সঙ্ঘাত এড়ানোর ব্যবস্থা করেছিলেন।
পাথরটি অবশ্য অটুট থাকেনি। হজরত আবদুল্লাহ বিন যোবায়েরের শাসনামলে কাবা শরিফে আগুন লাগে। এ সময় হাজারে আসওয়াদটিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে তিন টুকরা হয়ে যায়। তিনি এটিকে রূপা দিয়ে মুড়িয়ে দেন। তবে সবচেয়ে দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটে ৩১৭ হিজরিতে। এ সময় কারামতি সম্প্রদায়ের লোকজন হাজারে আসওয়াদ খুলে নিয়ে কুফার একটি মসজিদে লাগিয়ে দেয়। তাদের উদ্দেশ্য ছিল লোকজন যেন হজের জন্য সেখানে না যায়। ২২ বছর পর আবুল কাসিম মুতিউ, কারো মতে আবুল আব্বাস ফজল বিন আল মোকতাদের ৩০ হাজার দিনারের বিনিময়ে তা আবার মক্কায় নিয়ে এসে কাবাঘরে লাগিয়ে দেন।
হাজারে আসওয়াদ এখন বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা হচ্ছে। ১২৬৮ হিজরিতে সুলতান আবদুল হামিদ হাজারে আসওয়াদকে সোনা দিয়ে মুড়িয়ে দেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ