পাশাপাশি এটাও বলবেন যে এই নামাজে কখন কোন সূরা পড়তে হয়???
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আলহামদুলিল্লাহ, ওয়া সালামুন আলা ইবাদিহিল্লা লাযিনাস তাফা, আম্মা বাদ! রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাধারণত তাহাজ্জুদের পর বিতর নামায পড়তেন। এটি ছিল নবীজীর সাধারণ অভ্যাস। বয়স ও পারিপার্শ্বিক বিভিন্ন অবস্থার কারণে তাহাজ্জুদের রাকাতসংখ্যা কম-বেশি হত। কিন্তু বিতর সর্বদা তিন রাকাতই পড়তেন। এক রাকাত বিতর পড়া নবীজী থেকে প্রমাণিত নয়। যে সব রেওয়ায়াতে পাঁচ, সাত বা নয় রাকাতের কথা এসেছে, তাতেও বিতর তিন রাকাতই। বর্ণনাকারী আগে- পরের রাকাত মিলিয়ে সমষ্টিকে ‘বিতর’ শব্দে ব্যক্ত করেছেন। হাদীসের রেওয়ায়াতসমূহে ব্যাপকভাবে বিতর ও তাহাজ্জুদের সমষ্টিকে ‘বিতর’ বলা হয়েছে। এটি একটি উপস্থাপনাগত বিষয়। নবীজী বিতর তিন রাকাত পড়তেন। এটিই তাঁর অনুসৃত পন্থা। নিম্নের হাদীসসমূহ থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত। আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা রা. কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগার রাকাতের বেশি পড়তেন না। প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন।-সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩ সা‘দ ইবনে হিশাম রাহ. বলেন, হযরত আয়েশা রা. তাকে বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮; হাদীস ১৬৯৮; মুয়াত্তা মুহাম্মাদ ১৫১ (বাবুস সালাম ফিল বিতর) মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৪৯৪, হাদীস ৬৯১২; সুনানে দারাকুতনী ২/৩২, হাদীস ১৫৬৫; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১ এই হাদীসটি ইমাম হাকেম আবু আব্দুল্লাহ রাহ.ও ‘মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন’ কিতাবে বর্ণনা করেছেন। তার আরবী পাঠ এই- ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻻ ﻳﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺍﻟﺮﻛﻌﺘﻴﻦ ﺍﻷﻭﻟﻴﻴﻦ ﻣﻦ ﺍﻟﻮﺗﺮ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের প্রথম দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। ইমাম হাকেম (রহ.) তা বর্ণনা করার পর বলেন- ﻫﺬﺍ ﺣﺪﻳﺚ ﺻﺤﻴﺢ ﻋﻠﻰ ﺷﺮﻁ ﺍﻟﺸﻴﺨﻴﻦ অর্থাৎ হাদীসটি বুখারী ও মুসলিমের শর্ত মোতাবেক সহীহ। ইমাম শামসুদ্দীন যাহাবী রাহ. ‘তালখীসুল মুস্তাদরাক’- এ হাকেম রাহ.-এর সিদ্ধান্তকে সমর্থন করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮০ এই হাদীস দ্বারা একদিকে যেমন প্রমাণিত হয় যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাঁর সাধারণ নিয়মে তিন রাকাত বিতর আদায় করতেন তেমনি একথাও প্রমাণিত হয় যে, তিন রাকাতের দ্বিতীয় রাকাতে তাশাহহুদের জন্য বসতেন, কিন্তু সালাম ফেরাতেন না। সালাম ফেরাতেন সবশেষে তৃতীয় রাকাতে। যদি দ্বিতীয় রাকাতে বৈঠক করার নিয়ম না থাকত তাহলে সালাম করার বা না করার প্রসঙ্গতই আসত না। কেননা সালাম তো ফেরানো হয়ে থাকে। ইমাম ইবনে হাযম যাহেরী রাহ. ‘মুহাল্লা’ কিতাবে বিতরের বিভিন্ন পদ্ধতির মাঝে আলোচিত পদ্ধতিটিও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেন, বিতর তিন রাকাত পড়া হবে। দ্বিতীয় রাকাতে বসবে এবং (তাশাহহুদ পড়ে) সালাম ফেরানো ছাড়াই দাঁড়িয়ে যাবে। তৃতীয় রাকাত পড়ে বসবে, তাশাহহুদ পড়বে এবং সালাম ফেরাবে, যেভাবে মাগরিবের নামায পড়া হয়। এটিই ইমান আবু হানীফা রাহ.-এর মত। এর দলিল হচ্ছে, সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর সূত্রে বর্ণিত হাদীস, যাতে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা. বলেছেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বিতরের দুই রাকাতে সালাম ফেরাতেন না। -মুহাল্লা ইবনে হাযম ২/৮৯ সাদ ইবনে হিশাম রাহ.-এর রেওয়ায়াতটি আরও একটি সনদে বর্ণিত হয়েছে, যার আরবী পাঠ নিম্নরূপ- ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ ﻻ ﻳﺴﻠﻢ ﺇﻻ ﻓﻲ ﺁﺧﺮﻫﻦ অর্থাৎ রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন এবং শুধু সর্বশেষ রাকাতে সালাম ফেরাতেন। হাকেম রাহ. এই রেওয়ায়াতের পর লেখেন, আমীরুল মুমিনীন হযরত উমর ইবনুল খাত্তাব রা.ও এভাবে বিতর পড়তেন এবং তাঁর সূত্রে মদীনাবাসীগণ তা গ্রহণ করেছেন। -মুস্তাদরাক আলাস সহীহাইন ১/৩০৪, হাদীস ১১৮১ (৩) আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন- ﻗﻠﺖ ﻟﻌﺎﺋﺸﺔ : ﺑﻜﻢ ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻮﺗﺮ؟ ﻗﺎﻟﺖ : ﻛﺎﻥ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﺄﺭﺑﻊ ﻭﺛﻼﺙ , ﻭﺳﺖ ﻭﺛﻼﺙ , ﻭﺛﻤﺎﻥ ﻭﺛﻼﺙ , ﻭﻋﺸﺮ ﻭﺛﻼﺙ , ﻭﻟﻢ ﻳﻜﻦ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﺄﻧﻘﺺ ﻣﻦ ﺳﺒﻊ , ﻭﻻ ﺑﺄﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﺛﻼﺙ ﻋﺸﺮﺓ . অর্থাৎ আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তের রাকাতের অধিক পড়তেন না। - সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯ চিন্তা করে দেখুন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাহাজ্জুদ নামায কখনো চার রাকাত, কখনো ছয় রাকাত, কখনো আট রাকাত, কখনো দশ রাকাত পড়তেন; কিন্তু মূল বিতর সর্বদা তিন রাকাতই হত। ইমাম ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. ফাতহুল বারী ৩/২৬ ﺑﺎﺏ ﻛﻴﻒ ﺻﻼﺓ ﺍﻟﻠﻴﻞ , ﻛﺘﺎﺏ ﺍﻟﺘﻬﺠﺪ )- এ লেখেন- ﻫﺬﺍ ﺃﺻﺢ ﻣﺎ ﻭﻗﻔﺖ ﻋﻠﻴﻪ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ , ﻭﺑﻪ ﻳﺠﻤﻊ ﺑﻴﻦ ﻣﺎ ﺍﺧﺘﻠﻒ ﻋﻦ ﻋﺎﺋﺸﺔ ﻓﻲ ﺫﻟﻚ . ﻭﺍﻟﻠﻪ ﺃﻋﻠﻢ আমার জানামতে এটি সংশ্লিষ্ট বিষয়ে সর্বাধিক সহীহ রেওয়ায়াত। এ বিষয়ে হযরত আয়েশা রা. বর্ণিত হাদীসের বর্ণনাকারীদের মাঝে যে বিভিন্নতা পরিলক্ষিত হয় এর দ্বারা সে সবের মাঝে সমন্বয় করা সম্ভব। (৪) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের তাহাজ্জুদ ও বিতর প্রত্যক্ষ করার জন্য হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. এক রাতে তাঁর খালা উম্মুল মুমিনীন হযরত মাইমূনা রা.-এর ঘরে অবস্থান করেন। তিনি যা যা প্রত্যক্ষ করেছেন বর্ণনা করেছেন। তাঁর শাগরেদরা সে বিবরণ বিভিন্ন শব্দে বর্ণনা করেছেন। আমি এখানে সুনানে নাসায়ী ও অন্যান্য হাদীসের কিতাব থেকে একটি রেওয়ায়াত উদ্ধৃত করছি- ‘মুহাম্মাদ ইবনে আলী তার পিতা থেকে, তিনি তার পিতা আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন যে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে শযা্য থেকে উঠলেন, এরপর মেসওয়াক করলেন, এরপর দুই রাকাত পড়লেন, এরপর শুয়ে গেলেন। তারপর পুনরায় শয্যা ত্যাগ করলেন, মেসওয়াক করলেন, অযু করলেন এবং দুই রাকাত পড়লেন; এভাবে ছয় রাকাত পূর্ণ করলেন। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়লেন। এরপর দুই রাকাত পড়েন। ﺣﺘﻰ ﺻﻠﻰ ﺳﺘﺎ ﺛﻢ ﺃﻭﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ ﻭﺻﻠﻰ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ -সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯, হাদীস ১৭০৪; মুসনাদে আহমাদ ১/৩৫০, হাদীস ৩২৭১; তহাবী শরীফ ১/২০১-২০২ (৫) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী ইমাম সাঈদ ইবনে জুবাইর, যিনি ইবনে আব্বাস রা.-এর বিশিষ্ট শাগরেদ, তিনি আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণনা করেন- ﻛﺎﻥ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻳﻮﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ ﻭﻳﻘﺮﺃ ﻓﻲ ﺍﻷﻭﻟﻰ ﺳﺒﺢ ﺍﺳﻢ ﺭﺑﻚ ﺍﻷﻋﻠﻰ , ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺜﺎﻧﻴﺔ ﻗﻞ ﻳﺎ ﺃﻳﻬﺎ ﺍﻟﻜﻔﺮﻭﻥ , ﻭﻓﻲ ﺍﻟﺜﺎﻟﺜﺔ ﻗﻞ ﻫﻮ ﺍﻟﻠﻪ ﺃﺣﺪ . রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তিন রাকাত বিতর পড়তেন, প্রথম রাকাতে ‘সাব্বিহিসমা রাব্বিকাল আলা’, দ্বিতীয় রাকাতে ‘কুল ইয়া আয়্যুহাল কাফিরূন’ এবং তৃতীয় রাকাতে ‘কুল হুয়াল্লাহু আহাদ’ পড়তেন। -সুনানে দারেমী ১/৩১১, হাদীস ১৫৯৭; জামে তিরমিযী ১/৬১, হাদীস ৪৬২; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৯; হাদীস ১৭০২; তহাবী শরীফ ১/২০১, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা ৪/৫১২, হাদীস ৬৯৫১ ইমাম নববী রাহ. ‘আলখুলাসা’ কিতাবে উক্ত হাদীসের সনদকে সহীহ বলেছেন। -নাসবুর রায়াহ, জামালুদ্দীন যাইলায়ী ২/১১৯ বিতরের তিন রাকাতে উপরোক্ত তিন সূরা, এক এক রাকাতে এক এক সূরা, পড়া সম্পর্কে একাধিক সাহাবী থেকে রেওয়ায়াত বিদ্যমান রয়েছে। প্রতিটি রেওয়ায়াত প্রমাণ করে যে, বিতরের নামায তিন রাকাত। মোটকথা, বিতরের নামায তিন রাকাত হওয়ার বিষয়ে হাদীস ও সুন্নাহর বহু প্রমাণা রয়েছে এবং অধিকাংশ সাহাবী ও তাবেয়ীর আমলও তাই ছিল। এখানে আরেকটি হাদীস উল্লেখ করছি- ﻋﻦ ﺛﺎﺑﺖ ﻗﺎﻝ: ﻗﺎﻝ ﺃﻧﺲ: ﻳﺎ ﺃﺑﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﺧﺬ ﻋﻨﻲ ﻓﺈﻧﻲ ﺃﺧﺬﺕ ﻋﻦ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ , ﻭﺃﺧﺬ ﺭﺳﻮﻝ ﺍﻟﻠﻪ ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻦ ﺍﻟﻠﻪ , ﻭﻟﻦ ﺗﺄﺧﺬ ﻋﻦ ﺃﺣﺪ ﺃﻭﺛﻖ ﻣﻨﻲ , ﻗﺎﻝ : ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﺑﻲ ﺍﻟﻌﺸﺎﺀ , ﺛﻢ ﺻﻠﻰ ﺳﺐ ﺭﻛﻌﺎﺕ ﻳﺴﻠﻢ ﺑﻴﻦ ﺍﻟﺮﻛﻌﺘﻴﻦ , ﺛﻢ ﺃﻭﺗﺮ ﺑﺜﻼﺙ ﻳﺴﻠﻢ ﻓﻲ ﺁﺧﺮﻫﻦ ‏( ﺍﻟﺮﻭﻳﺎﻧﻲ ﻭﺍﺑﻦ ﻋﺴﺎﻛﺮ , ﻭﺭﺟﺎﻟﻪ ﺛﻘﺎﺕ , ﻛﻤﺎ ﻓﻲ ﻛﻨﺰ ﺍﻟﻌﻤﺎﻝ ) প্রসিদ্ধ তাবেয়ী সাবেত বুনানী রাহ., বলেন, আমাকে হযরত আনাস ইবনে মালেক রাহ. বলেছেন, হে আবু মুহাম্মাদ! (সাবেত রা.-এর কুনিয়াত- উপনাম) আমার কাছ থেকে শিখে নাও। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে গ্রহণ করেছি। আর তিনি আল্লাহ রাব্বুল আলামীন থেকে নিয়েছেন। তুমি শেখার জন্য আমার চেয়ে অধিক নির্ভরযোগ্য কাউকে পাবে না। একথা বলে তিনি আমাকে নিয়ে ইশার নামায আদায় করেন। এরপর ছয় রাকাত পড়েন, তা এভাবে যে, প্রতি দুই রাকাতে সালাম ফেরান। এরপর তিন রাকাত বিতর পড়েন এবং সবশেষে সালাম ফেরান। -মুসনাদে রুয়ানী, তারীখে ইবনে আসাকির; ইমাম সুয়ূতী রাহ. বলেন, এই হাদীসের রাবীগণ নির্ভরযোগ্য (কানযুল উম্মাল ৮/৬৬-৬৭, হাদীস ২১৯০২ ‘আলবিতরু মিন কিতাবিস সালাত, কিসমুল আফআল) জরুরি জ্ঞাতব্য বিতর নামাযের ব্যাপারে আজকাল এক ব্যাপক অবহেলা এই পরিলক্ষিত হচ্ছে যে, একে এমন এক নামায মনে করা হয় যার আগে কোন নফল নামায নেই, যেমন মাগরিবের নামায; এর আগে নফল নামায মাসনূন নয়; অথচ বিতরের ব্যাপারে শরীয়তের কাম্য এই যে, তা কিছু নফল নামায পড়ার পর আদায় করা। সবচেয়ে ভাল এই যে, যার শেষ রাতে তাহাজ্জুদের জন্য জাগার নিশ্চয়তা রয়েছে, সে তাহাজ্জুদের পরে বিতর পড়বে। যদি বিতর রাতের শুরু ভাগে ইশার পর পড়া হয় তবুও উত্তম এই যে, দুই-চার রাকাত নফল নামায পড়ার পর বিতর আদায় করবে। মাগরিবের মত আগে কোন নফল ছাড়া শুধু তিন রাকাত বিতর পড়া পছন্দনীয় নয়। হাদীস শরীফে আছে- ﻻ ﺗﻮﺗﺮﻭﺍ ﺑﺜﻼﺙ ﺗﺸﺒﻬﻮﺍ ﺑﺼﻼﺓ ﺍﻟﻤﻐﺮﺏ , ﻭﻟﻜﻦ ﺃﻭﺗﺮﻭﺍ ﺑﺨﻤﺲ , ﺃﻭ ﺑﺴﺒﻊ , ﺃﻭ ﺑﺘﺴﻊ , ﺃﻭ ﺑﺈﺣﺪﻯ ﻋﺸﺮﺓ ﺭﻛﻌﺔ , ﺃﻭ ﺃﻛﺜﺮ ﻣﻦ ﺫﻟﻚ . তোমরা শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, এতে মাগরিবের সাদৃশ্যপূর্ণ করে ফেলবে; বরং পাঁচ, সাত, নয়, এগার বা এরও অধিক রাকাতে বিতর পড়ো। -মুস্তাদরাকে হাকেম ১/৩০৪, হাদীস ১১৭৮; সুনানে কুবরা বাইহাকী ৩/৩১, ৩২ মোটকথা, বিতরের আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়-দুই, চার, ছয়, আট-যত রাকাত সম্ভব হয় পড়ে নাও। ৩ নং-এর অধীনে উম্মুল মুমিনীন হযরত আয়েশা রা.-এর হাদীস উল্লিখিত হয়েছে, যাতে তিনি বলেছেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন-বিভিন্ন সংখ্যায় রাতের নামায আদায় করতেন। উল্লিখিত হাদীসে ওই নির্দেশনাই এসেছে যে, শুধু তিন রাকাত বিতর পড়ো না, আগে কিছু নফল অবশ্যই পড়। তবে বিতর সর্বাবস্থায় তিন রাকাতই। উক্ত হাদীসের সাথে একথার কোন সম্পর্ক নেই যে, তিন রাকাত এক বৈঠকেই পড়তে হবে, তাহলেই শুধু তা মাগরিবের সাদৃশ্য থেকে বেঁচে যাবে। তাই তিন রাকাত পড়তে হলে তা এক বৈঠকেই পড়তে হবে। স্মরণ রাখতে হবে, মাগরিবের সাদৃশ্য থেকে বাঁচার পদ্ধতি হাদীসে সুস্পষ্টভাবে বলে দেওয়া হয়েছে যে, তিন রাকাত বিতরের আগে নফল পড়ে নাও। হাদীসের ব্যাখ্যা ছেড়ে নিজের পক্ষ থেকে বিতরের নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করা বিভ্রানি- ছাড়া আর কিছুই নয়। শরীয়তে সকল নামাযের মূলকথা এই যে, প্রতি দুই রাকাতে বৈঠক হবে এবং তাশাহহুদ পড়া হবে। হযরত আয়েশা (রা.) থেকে সহীহ মুসলিম ১/১৯৪, হাদীস ৪৯৮-এ একটি দীর্ঘ হাদীসে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের এক ব্যাপক বাণী উদ্ধৃত রয়েছে। তাতে তিনি ইরশাদ করেন- ﻭﻓﻲ ﻛﻞ ﺭﻛﻌﺘﻴﻦ ﺍﻟﺘﺤﻴﺔ ‘প্রতি দুই রাকাতে তাশাহহুদ রয়েছে।’ একই হুকুম একাধিক সাহাবায়ে কেরাম থেকে বর্ণিত রয়েছে। শরীয়তের ব্যাপক শিক্ষা পরিহার করে কোন রেওয়ায়াতের মনগড়া ব্যাখ্যা দিয়ে একথা বলা যে, তিন রাকাত বিতর পড়লে শুধু এক বৈঠকেই পড়া-এতে কোন সন্দেহ নেই যে, এটা ﻣﻦ ﺃﺣﺪﺙ ﻓﻲ ﺃﻣﺮﻧﺎ ﻫﺬﺍ ﻣﺎ ﻟﻴﺲ ﻣﻨﻪ ﻓﻬﻮ ﺭﺩ - এর অন্তর্ভুক্ত। আল্লাহ তাআলা উম্মতকে উক্ত অনিষ্ট থেকে হেফাযত করুন। আমীন। এই সংক্ষিপ্ত আলোচনার উপরই লেখাটি সমাপ্ত করছি। তবে বিষয়টি যেহেতু গুরুত্বপূর্ণ তাই আগামী কোনো সংখ্যায় হযরত মাওলানা মুহাম্মাদ ইউসুফ লুধিয়ানবী (রহ.)এর একটি বিস্তারিত আলোচনা প্রকাশ করা হবে, যা তাঁর ‘ইখতেলাফে উম্মত আওর সিরাতে মুস্তাকীম’ কিতাবে প্রকাশিত হয়েছে। ﻫﺬﺍ , ﻭﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﺗﻌﺎﻟﻰ ﻭﺳﻠﻢ ﻋﻠﻰ ﺳﻴﺪﻧﺎ ﻭﻣﻮﻻﻧﺎ ﻣﺤﻤﺪ ﻭﻋﻠﻰ ﺁﻟﻪ ﻭﺻﺤﺒﻪ ﺃﺟﻤﻌﻴﻦ , ﻭﺁﺧﺮ ﺩﻋﻮﺍﻧﺎ ﺃﻥ ﺍﻟﺤﻤﺪ ﻟﻠﻪ ﺭﺏ ﺍﻟﻌﺎﻟﻤﻴﻦ . এ সংখ্যার প্রচ্ছদ হজ্ব এবং কুরবানী বিষয়ক প্রবন্ধসমূহ মুসলমানদের মাঝে ঈমান ও ইসলামী ভ্রাতৃত্বের ঐক্য সৃষ্টির চেষ্টা করুন একই দিনে ঈদের বিষয় দায়িত্বশীলদের উপর ছাড়ুন হজ্জ্বঃ হাদীস ও আছারের আলোকে বদলী হজ্বের মাসায়েল নফল হজ্ব কখন করব, কীভাবে করব হজ্বের প্রস্ত্ততি হজ্ব বিষয়ক ভুল-ভ্রান্তি হজ্জ্ব: যা দান করে আত্মত্যাগ ও আত্মনিবেদনের শিক্ষা হজ্বে আছে ইবরাহীমী আনুগত্যের প্রশিক্ষণ ইহরামের চাদরকেই ইহরাম মনে করা কুরআন মজীদ ও সহীহ হাদীসের আলোকে হজ্ব ও উমরার গুরুত্ব ও ফযীলত কুরবানীর মাসায়েল কুরবানী ও ঈদের পয়গাম কুরবানী বিষয়ক কিছু হাদীস কুরআন ও সুন্নাহয় কুরবানী কুরবানী ও কুরবানীর তাৎপর্য : ইবাদত সম্পর্কে বিভ্রান্তি থাকা উচিত নয় আশরায়ে যিলহজ্ব ও আইয়ামে তাশরীক : তাওহীদের উচ্চারণে পরিশুদ্ধ হোক আমাদের জীবন ঈদুল আযহা : আমাদের ঈদ, ওদের ... কোরবানীর সময়সীমা : একটি প্রশ্ন ও তার উত্তর কুরআন ও হাদীসের আলোকে আশারায়ে যিলহজ্ব : গুরুত্ব, ফযীলত ও বিশেষ আমল দুটি প্রশ্ন ও তার উত্তর : ইয়াওমে আরাফার রোযা ও কোরবানির সাথে আকীকা কুরবানীর শরীক সংখ্যা কি বেজোড় হওয়া জরুরি কপিরাইট

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

সংক্ষিপ্ত আকারেঃ-


যিনারা নিয়মিত ভাবে তাহাজ্জুদের নামায পড়েন, তাঁরা ব্যতিরেকে আর সবার জন্য ঈশা নামাযের সঙ্গেই বেতের নামায পড়ে নেয়া উত্তম।

বেতের নামাযের নিয়তঃ

নাওয়াইতুয়ান উসাল্লিায়া লিল্লাহেতা’লা ছালাছা রাকা’তাই ছালাতিল বেতরে ওয়াজিবুল্লাহিতা’লা মুতাওয়জ্জিহান ইলাজ্জিহাতিল কা’বাতিশ শারিফতি আল্লাহু আকবর।

বাংলা নিয়তঃ-

মহান আল্লাহ্’র নামে পবিত্র কেবলামুখী হয়ে দাঁড়িয়ে তিন রাকা’ত বেতের ওয়াজিব নামাযের নিয়ত করলাম।আল্লাহু আকবর।


বেতের নামায পড়ার নিয়মঃ-

অন্যান্য নামাযের মত করে প্রথম দু’রাকা’ত নামায আদায় করে বসে তাশাহুদ পড়ে দাঁড়িয়ে যথারীতি সূরা কি’রাত পাঠ করে পুনরায় তাহরিমা বেঁধে দো’য়য়ে কুনুত পাঠ করে রুকু-সেজদা শেষে বৈঠকের পর সালাম ফিরিয়ে নামায শেষ করতে হবে।




ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ


তিন রাকাত বিতর নামাজের নিয়ম::


১ম রাকাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য একটি সুরা মিলাই, 

২য় রাকাতেও সুরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য একটি সুরা মিলাই 

এরপর বৈঠকে বসি এবং তাশাহুদ (আত্তাহিয়াতু) পাঠ করে দাড়িয়ে যাই এবং 

৩য় রাকাতে সুরা ফাতিহা পাঠ করে অন্য একটি সুরা মিলিয়ে  তারপর আল্লাহু আকবার বলে দুইহাত কান পর্যন্ত তাকবীরে তাহরীমার অনুরূপ উঠিয়ে হাত বাঁধতে হবে। তারপর দোয়া কূনুত পাঠ করে রুকুতে যেতে হবে।  

এভাবে ৩য় রাকাতে আত্তাহিয়াতু, দরুদ, দোয়া মাছুরা পাঠ করে সালাম ফিরিয়ে শেষ করতে হবে

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ