বস্তুত আল্লাহ তা‘আলা যত ধরনের রোগ-ব্যধি দিয়েছেন তা নিরাময়ের জন্য ব্যবস্থাপত্রও দিয়েছেন। জাবের রা. সূত্রে বর্ণিত রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, সবধরনের ব্যধিরই প্রতিষেধক রয়েছে। যদি কেউ ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে পথ্য গ্রহণ করে তবে আল্লাহর নির্দেশক্রমে সে আরোগ্য লাভ করবে। সহীহ মুসলিম, হাদীস ৫৮৭১। তবে কিছু ব্যবস্থা আছে প্রত্যক্ষ; যথা, মধু, কালো জিরা, গাছ-গাছড়া প্রভৃতি এবং এ থেকে প্রস্তুতকৃত ঔষধ। আবার কিছু ব্যবস্থা আছে পরোক্ষ; যথা হাদীসে বর্ণিত রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদ থেকে মুক্তি সংক্রান্ত বিভিন্ন দুআ-দুরূদ। রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদ থেকে নিরাপত্তা লাভের উদ্দেশে এসব উপায় গ্রহণ তাওয়াক্কুল তথা আল্লাহর উপর আস্থার পরিপন্থী নয়; বরং হাদীসের ভাষ্যমতে এসব উপায় গ্রহণই নববী কর্মপন্থা হিসেবে পরিগণিত। পক্ষান্তরে শর্ত সাপেক্ষে  যদিও তাবীজ-কবচ গ্রহণের ব্যাপারে অনুমতি প্রদান করা হয় তবে এ মাধ্যমটি গ্রহণ করা উচিৎ নয়। কারণ :
১। এতে শিরকের মত মরণঘাতি ব্যধিতে আক্রান্ত হয়ে যাওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে।
২। যে হাদীসটির উদ্ধৃতিকে তাবীজ-কবচের বৈধতার ব্যাপারে প্রমাণ হিসেবে উপস্থাপন করা হয় তাতে ছোট ছোট শিশুদের ক্ষেত্রে এসব উপায় গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। আর বড়দের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট দু‘আটি পাঠের কথা বলা হয়েছে।
৩। অধিকাংশ তাবিজের ক্ষেত্রে কুরআনের আয়াত ও দুআ-দুুরূদের মধ্যকার বর্ণমালার মানসংখ্যা লেখা হয় যা শরীয়তসম্মত নয়।
৪। তাবিজের মধ্যকার কুরআনের আয়াত ও দুআ-দুরূদের যথাযথ মান রক্ষা করা সম্ভব হয় না। 
৫। বর্তমান সমাজে তাবিজ-কবচের প্রতি মানুষের দুর্বলতা এতটা প্রবল যে, তারা বিপদাপদ ও রোগ-ব্যধি নিরাময়ের ক্ষেত্রে এ মাধ্যমকেই একমাত্র প্রভাবক হিসেবে গণ্য করে থাকে।
৬। প্রচলিতি তাবিজ-কবচে খাজা বাবা, পীর বাবাসহ নানা রকম শরীয়ত গর্হিত শিরক-বিদাতের কথা লিখিত থাকে।
শিরক-বিদাতের এ ছিদ্রপথকে রুদ্ধ করার জন্যও তাবিজ-কবচের এ মাধ্যমকে পরিহার করা উচিৎ। তাইতো মাওলানা আশরাফ আলী থানবী রাহ.বলেন,তাবীজ-কবচ করা জায়েজ হলেও তা না করাই উত্তম। ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৮৮। অন্যত্র তিনি বলেন, তাবীজ-কবচের কারণে যদি জনসাধারণের আকীদা-বিশ্বাসে ত্রুটি আসে তবে তাদের উপর এ উপায় গ্রহণের ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হবে। তবে তাবীজ-কবচকে পরিহার করা সর্বাবস্থায় শ্রেয়। সুন্নাহসম্মত পন্থা এতটুকুই যে, দু‘আ ও আয়াত পাঠ করে আক্রান্ত ব্যক্তির উপর শুধু দম করা হবে। ইমদাদুল আহকাম ১/৩৩০। অতএব রোগ-ব্যধি ও বিপদাপদের ক্ষেত্রে এ তাবীজ-কবচের পন্থা গ্রহণ না করে সংশ্লিষ্ট ব্যাপারে হাদীসে বর্ণিত মাসনূন দু‘আ পাঠ করা ও প্রত্যক্ষ চিকিৎসা ব্যবস্থা গ্রহণ করাই বাঞ্ছনীয়। এটাই নিরাপদ ও সহীহ পদ্ধতি। অতএব তাবিজ-কবচ ব্যবহারের কোনো প্রয়োজনই নেই। এর কোনো কাজও নেই। যা করেন আল্লাহই করেন। এক্ষেত্রে তাবিজের কোনো ক্ষমতা বা সক্ষমতা নেই। দুআ প্রার্থনাই সবচেয়ে বড় তাবিজ বা রক্ষাকবচ। এর উপর কোনো তাবিজ হয় না। সহীহ মুসলিম, হাদীস ২২০০, ফাতহুল বারী ১০/১৯৫, ইমদাদুল ফাতাওয়া ৪/৮৮, ইমদাদুল আহকাম ১/৩৩০, ফাতাওয়া মাহমূদিয়া ২০/৬৩

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আমাদের দেশে কতক পীর-ফকির, আলেম- জাহেল, কি শিক্ষিত, কি অশিক্ষিত অনেকেই তাবিজ-কবচ, তাগা, কড়ি, সামুক, ঝিনুক ও গাছ-গাছালির শিকর-বাকর ইত্যাদি দিয়ে বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা করেন এবং ইহা বৈধ ও জায়েজ মনে করেন। এ সম্পর্কে বাজারে কিছু বই পুস্তক পাওয়া যায়, সে সব বইয়ে নির্ধারিত বিষয়ে গ্রহণ যোগ্য কোন দলিল নেই, আছে কিছু মনগড়া কিচ্ছা-কাহিনী, অসংখ্য তদবিরের বর্ণনা ও তার বানোয়াট উপকারীতা। এ সব বই পড়ে কেউ কেউ বিপদ-আপদ, দুঃখ-কষ্ট, অভাব- অনটন, রোগ, যন্ত্রণা থেকে মুক্তি লাভের আশায় বিভিন্ন তদবির ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয় ও তা গ্রহণ করে। তারা এ ধরণের চিকিৎসার মূল্যায়ন ও তার বৈধতা-অবৈধতা সম্পর্কে পুরোপুরি অজ্ঞ। আমি এই লিখাটির মাধ্যমে এ বিষয়টির তত্ত্ব ও স্বরূপ উদ্ঘাটন এবং ইসলামের দৃষ্টিতে তার হুকুম বর্ণনার প্রয়াস পেয়েছি। ০১. সাহাবি ইমরান বিন হুসাইন রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত : একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এক ব্যক্তির হাতে তামার চুড়ি দেখে বললেন, এটা কি? সে বলল: এটা অহেনার অংশ। {অহেনার অর্থ এক প্রকার হাড়, যা থেকে কেটে ছোট ছোট তাবিজ আকারে দেয়া হয়।} তিনি বললেন: এটা খুলে ফেল, কারণ এটা তোমার দূর্বলতা বাড়ানো ভিন্ন কিছুই করবে না। যদি এটা বাঁধা অবস্থায় তোমার মৃত্যু হয়, তবে কখনও তুমি সফল হবে না।’ (মুসনাদে আহমদ, হাকেম ও ইবনে মাজাহ) হাদিসটি সহিহ। ০২. উকবা বিন আমের রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি আল্লাহর রাসূলকে বলতে শুনেছি: ‘যে ব্যক্তি তাবিজ লটকালো, আল্লাহ তাকে পূর্ণতা দেবেন না, আর যে কড়ি ব্যবহার করবে, আল্লাহ তাকে মঙ্গল দান করবেন না।’ আহমদ, হাকেম। ০৩. উকবা বিন আমের আল-জোহানি রাদিআল্লাহু আনহু বলেন : ‘একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের খেদমতে একদল লোক উপস্থিত হল। তিনি দলটির নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না। তারা বলল, হে আল্লাহর রাসূল! নয়জনকে বায়আত করলেন একজনকে করলেন না? রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: তার সাথে তাবিজ রয়েছে। অতঃপর তিনি স্বহস্তে তা ছিড়ে ফেললেন এবং তাকে বায়আত করলেন, আর বললেন, যে ব্যক্তি তাবিজ ব্যবহার করল সে শিরক করল।’ সহিহ মুসনাদে আহমদ, হাকেম। ০৪. একদা হুজায়ফা রাদিআল্লাহু আনহু এক ব্যক্তির হাতে জ্বরের একটি তাগা দেখতে পেয়ে তা কেটে ফেলেন। অতঃপর তিনি তিলাওয়াত করেন : তাদের অধিকাংশ আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে, তবে শিরক করা অবস্থায়।’ (ইউসুফ : ১০৬) তাফসিরে ইবনে কাসির। এ থেকে প্রমাণিত হয়, সাহাবি হুজায়ফার মতে তাগা ব্যবহার করা শিরক। ০৫. বুখারি ও মুসলিমে বর্ণিত, আবু বশির আনসারি রাদিআল্লাহু আনহু কোন এক সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের সঙ্গী ছিলেন। সে সফরে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম জনৈক ব্যক্তিকে এ নিদের্শ দিয়ে পাঠালেন, ‘কোনও উটের গলায় ধনুকের ছিলা অথবা বেল্ট রাখবে না, সব কেটে ফেলবে।’ ০৬.আবু ওয়াহহাব রাদিআল্লাহু আনহু থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: ঘোড়া বেঁধে রাখ, তার মাথায় ও ঘাড়ে হাত বুলিয়ে দাও এবং লাগাম পরিয়ে দাও। তবে ধনুকের ছিলা ঝুলিয়ো না। সুনানে নাসায়ী। ০৭. আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ রাদিআল্লাহর স্ত্রী জয়নব রাদিআল্লাহু আনহা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: একদিন আব্দুল্লাহ বাড়িতে এসে আমার গলায় তাগা দেখতে পান। তিনি বললেন, এটা কী? আমি বললাম, এটা পড়া তাগা। এতে আমার জন্য ঝাঁড়-ফুঁক দেয়া হয়েছে। তা নিয়ে তিনি কেটে ফেললেন এবং বললেন, আব্দুল্লাহর পরিবার শিরক থেকে মুক্ত। আমি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলতে শুনেছি : ঝাড়-ফুঁক, সাধারণ তাবিজ ও ভালোবাসা সৃষ্টির তাবিজ ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। আহমদ, হাকেম, ইবনে মাজাহ। ০৮. তাবেয়ি আব্দুল্লাহ বিন উকাইম সরাসরি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উদ্ধৃতি দিয়ে বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: যে ব্যক্তি কোন কিছু ধারণ করবে, তাকে ঐ জিনিসের কাছেই সোপর্দ করা হবে।’ আহমদ, তিরমিজি। এ সব দলিলের মাধ্যমে প্রমাণিত হয় যে, তাবিজ ব্যবহার করা হারাম ও শিরক। তাবিজ ইত্যাদি ব্যবহার করা ছোট শিরক না বড় শিরক? কেউ যদি তাবিজ-কবচ, মাদুলি-কড়ি, সামুক- ঝিনুক, গিড়া, হাঁড়, তাগা-তামা-লোহা বা অনুরূপ কোন ধাতব বস্তু গলায় বা শরীরের কোথায়ও ধারণ করে এবং এ ধারণা পোষণ করে যে, ঐ গুলো বালা-মুসিবত দূর করার ক্ষেত্রে পরিপূর্ণ ক্ষমতা রাখে, তবে তা বড় শিরক। আর যদি এ ধরনের ধারণা না হয়, তবে তা ছোট শিরক। শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল্লাহ বলেছেন, বালা-মুসিবত দূর করার উদ্দেশ্যে গিড়া, তাগা পরিধান করা ছোট শিরক। অর্থাৎ যদি তা মাধ্যম বা উসিলা মনে করে ব্যবহার করা হয়। শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ বলেছেন, শয়তানের নাম, হাড়, পূঁতি, পেরেক অথবা তিলিস্মা অর্থাৎ অর্থবিহীন বিদঘুটে শব্দ বা অক্ষর প্রভৃতি বস্তু দিয়ে তাবিজ বানানো ছোট শিরকের অন্তর্ভুক্ত। ফাতহুল মাজিদ গ্রন্থের টীকায় তিনি আরো বলেছেন : তাবিজ ব্যবহার করা জাহেলি যুগের আমল। ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় তাবিজ-কবচ অনেক ধর্মের প্রতিকি চিহ্ন ছিল। যেমন হিন্দু পুরোহিতদের মাদুলী ধারণ করা, বিশেষ করে কালী শিবের পূজায়। উয়ারী সম্প্রদায়ের আকীদার অন্যতম প্রতিক ছিল বিভিন্ন ধরণের তাবিজ। শায়খ হাফেজ হেকমি বলেন: ‌’কুরআন ও হাদিস ব্যতীত, ইহুদিদের তিলিসমাতি, মূর্তি পূজারী, নক্ষত্র পূজারী, ফেরেশতা পূজারী এবং জিনের খিদমত গ্রহণকারী বাতিল পন্থীদের তাবিজ ব্যবহার; অনুরূপভাবে পূঁতি, ধনুকের ছিলা, তাগা এবং লোহার ধাতব চুড়ি ইত্যাদি ব্যবহার করা নিঃসন্দেহে শিরক। কারণ, এগুলো সমস্যা সমাধানের বৈধ উপায় কিংবা বিজ্ঞান সম্মত ঔষধ নয়। এ হল সেসব তাবিজ কবচের হুকুম যাতে কুরাআনের আয়াত, হাদিসের দোয়া দরুদ ইত্যাদি ব্যবহার করা হয় না তার। কুরআন-হাদিসের তাবিজ : হ্যাঁ, যে সব তাবিজ-কবচে কুরআন হাদিস ব্যবহার করা হয় সে ব্যাপারে আলেমদের মাঝে মতভেদ রয়েছে। এক শ্রেণীর আলেম কুরআন-হাদিসে বর্ণিত দুআ সমূহের তাবিজ ব্যবহার করা বৈধ মনে করেন। যেমন, সাঈদ বিন মুসাইয়িব, আতা আবু জাফর আল-বাকের, ইমাম মালেক। এক বর্ণনা মতে ইমাম আহমদ, ইবনে আব্দুল বার, বাইহাকি, কুরতুবি, ইবনে তাইমিয়া, ইবনে কাইয়িম এবং ইবনে হাজারও রয়েছেন। তাদের দলিল, আল্লাহ তাআলা বলেন, আর আমি কুরআনে এমন বিষয় নাযিল করেছি যা রোগের সু-চিকিৎসা এবং মুমিনদের জন্য রহমত।’ {ইসরা:৮২} এক কল্যাণময় কিতাব, ইহা আমি তোমার প্রতি অবতীর্ণ করেছি। {সাদ:২৯} সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমরের ব্যক্তিগত আমল সম্পর্কে বর্ণিত আছে, তিনি নিজ ছোট বাচ্চা, যারা দোয়া মুখস্থ করতে অক্ষম, তাদেরকে অনিষ্ট থেকে রক্ষার জন্য গায়ে দোয়ার তাবিজ ঝুলিয়ে দিতেন। দোয়াটি এই: ‘আল্লাহর নামে তাঁর পরিপূর্ণ বাণী সমূহের মাধ্যমে আশ্রয় প্রার্থনা করছি। তাঁর গজব ও শাস্তি থেকে, তাঁর বান্দাদের অনিষ্টতা থেকে এবং শয়তানদের কুমন্ত্রণা ও তাদের উপস্থিতি থেকে।’ (আহমদ, তিরমিজি, আবু দাউদ) হাদিসটি হাসান। পক্ষান্তরে অধিকাংশ সাহাবি ও তাদের অনুসারীদের মতে কুরআন ও হাদিসের তাবিজ ব্যবহার করাও নাজায়েজ। তাদের মধ্যে রয়েছেন: আব্দুল্লাহ বিন মাসউদ, ইবনে আব্বাস, হুযাইফা, উকবা বিন আমের, ইবনে উকাইম, ইব্রাহিম নখয়ি, একটি বর্ণনা অনুযায়ী ইমাম আহমদ, ইবনুল আরাবি, শায়খ আব্দুর রহমান বিন হাসান, শায়খ সুলাইমান বিন আব্দুল ওয়াহহাব, শায়খ আব্দুর রহমান বিন সাদি, হাফেজ আল-হেকমি এবং মুহাম্মদ হামিদ আলফাকি। আর সমসাময়ীক মনীষীদের মধ্যে আছেন শায়খ আলবানি ও শায়খ আব্দুল আজিজ বিন বাজ। তারা বলেন, উল্লেখিত আয়াত দ্বারা তাবিজের বৈধতা প্রমাণিত হয় না। উপরন্তু রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কুরআনের দ্বারা চিকিৎসা করার স্বরূপ স্পষ্টভাবে বলে দিয়েছেন, আর তা হচ্ছে কুরআন তিলাওয়াত করা এবং সে অনুযায়ী আমল করা। এ ছাড়া কুরআনের আয়াত তাবিজ আকারে ব্যবহার করার ক্ষেত্রে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম থেকে কোন প্রমাণ নেই, এমনকি সাহাবাদের থেকেও। তা ছাড়া ইমাম আবু দাউদ বলেছেন, সাহাবি আব্দুল্লাহ বিন আমেরের বর্ণিত হাদিসের সূত্র (সনদ) হাদিস বিশারদদের নিকট বিশুদ্ধ নয়। আর শুদ্ধ হলেও এটা তার একার আমল, যা অসংখ্য সাহাবির বিপরীত হওয়ার ফলে এবং এর স্বপক্ষে কোন দলিল না থাকার কারণে আমাদের জন্য প্রযোজ্য নয়। আরেকটি কারণ, যেসব দলিলের মাধ্যমে তাবিজ নিষিদ্ধ প্রমাণিত হয়েছে, সেসব দলিলে পৃথক করে কুরআন-হাদিসের তাবিজ বৈধ বলা হয়নি। যদি বৈধ হত, তবে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম অবশ্যই তা বলে দিতেন। যেমন তিনি শিরক মুক্ত ঝাড়-ফুকের ব্যাপারটি অনুমতি দিয়েছেন। মুসলিমের বর্ণনায় এসেছে, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন, ‘তোমাদের ঝাড়-ফুঁক আমার কাছে পেশ কর, ওটা শিরকের আওতাধীন না হলে তাতে কোন বাধা নেই।’ মুসলিম। পক্ষান্তরে তিনি তাবিজ সম্পর্কে এরূপ কিছু বলেননি। দ্বিতীয়ত. সাহাবি আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদের ছাত্র ইব্রাহিম নখয়ি বলেন, তারা অর্থাৎ আব্দুল্লাহ বিন মাসউদের সঙ্গী-সাথী ও শিষ্যগণ কুরআন বা কুরআনের বাইরের সব ধরণের তাবিজ অপছন্দ করতেন। যেমন আলকামা, আসওয়াদ, আবু ওয়ায়েল, হারেস বিন সোয়ায়েদ, ওবায়দা সালমানি, মাসরুক, রাবি বিন খায়সাম এবং সোয়ায়েদ বিন গাফলাহ প্রমুখ তাবেয়িগণ। (ফতহুল মজিদ) তৃতীয়ত. অবৈধ পন্থার পথ রুদ্ধ করার জন্য শরিয়ত অনেক বৈধ কাজও নিষিদ্ধ ঘোষণা করেছে, সে হিসেবে নিষিদ্ধ তাবিজ থেকে উম্মতকে হিফাজত করার লক্ষ্যে বৈধ তাবিজও নিষিদ্ধ করা উচিত। কারণ এ পথ খোলা রাখলে বাতিল তাবিজপন্থীরা সাধারণ মানুষের মন আল্লাহর ওপর ভরসা থেকে বিমুখ করে, তাদের লিখিত তাবিজের প্রতি আকৃষ্ট করে ফেলার সুযোগ পাবে। শুধু তাই নয়, ঐ সব শয়তানদের প্ররোচনার কারণে কতক সাধারণ মানুষ ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়ে। আর তারা মানুষের আসক্তি দেখে তাদের সহায়-সম্পদ লুটে নেয়ার ফন্দি আটে। যেমন, তাদেরকে বলে, তোমাদের পরিবারে, ধন সম্পত্তিতে বা তোমার ওপর এরূপ বিপদ আসবে। অথবা বলে, তোমার পিছনে জিন লেগে আছে ইত্যাদি। এভাবে এমন কতগুলো শয়তানি কথা-বার্তা তুলে ধরে যা শুনে সে মনে করে, এ লোক ঠিকই বলছে। সে যথেষ্ট দয়াবান বলেই আমার উপকার করতে চায়। এভাবেই সরলমনা মূর্খ লোকেরা তাদের কথায় বিশ্বাস করে ও অতঃপর ভয়ে অস্থির হয়ে যায়, আর তার কাছে সমাধান তলব করে। তাই তাবিজ কুরআন-হাদিসের হলেও ব্যবহার করা, রুগির বালিশের নীচে রাখা বা দেয়ালে ঝোলানো নাজায়েজ বলাই অধিকতর শ্রেয়। একটি সংশয় : অনেকে বলে থাকেন, তাবিজ, কবচ ইত্যাদি আমরা দোয়া-দরুদ ও প্রাকৃতিক ঔষধের ন্যায় ব্যবহার করি। যদি তার অনুমোদন থাকে তবে তাবিজ কবচ নিষিদ্ধ কেন? এর উত্তর হচ্ছে : অসুখ-বিসুখ ও বালা- মুসিবত থেকে মুক্তি পাওয়ার পদ্ধতি দুইটি : এক. যা সরাসরি কুরআনের আয়াত বা রাসূলের হাদিস দ্বারা প্রমাণিত। একে শরিয়তি উপায় বা চিকিৎসা বলা যেতে পারে। যেমন ঝাঁড় ফুক ইত্যাদি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম করে দেখিয়েছেন এবং যার বর্ণনা হাদিসের বিভিন্ন কিতাবে রয়েছে। এ গুলো আল্লাহর ইচ্ছায় বান্দার মঙ্গল সাধন বা অমঙ্গল দূর করে। দুই. প্রাকৃতিক চিকিৎসা অর্থাৎ বস্তু ও তার প্রভাবের মধ্যে বিদ্যমান সম্পর্ক, যা খুবই স্পষ্ট এমনকি মানুষ সেটা বাস্তবে অনুভব ও উপলব্ধি করতে পারে। যেমন: বিভিন্ন কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি করা ঔষধ। ইসলামি শরিয়ত এগুলো ব্যবহার করার জন্য উৎসাহ প্রদান করেছে। কারণ, এগুলো ব্যবহার করার অর্থই হচ্ছে আল্লাহর কাছে আশ্রয় প্রার্থনা করা, যিনি এ সব জিনিসে নির্দিষ্ট গুণাবলি দান করেছেন এবং তিনি ইচ্ছা করলে যে কোন সময় এসব বস্তুর গুন ও ক্রিয়া বাতিল করে দিতে পারেন। যেমন তিনি বাতিল করেছিলেন ইব্রাহিমের আলাইহিস সালামের জন্য প্রজ্বলিত আগ্নির দাহন ক্রিয়া। কিন্তু তাবিজ ইত্যাদির মধ্যে আদৌ কোন ফলদায়ক প্রভাব নেই এবং তা কোন অমঙ্গল দূর করতে পারে না। এতে জড় বস্তুর কোন প্রভাবও নেই। তাছাড়া, মহান আল্লাহ এগুলোকে কোন শরয়ি মাধ্যম হিসেবে নির্ধারণ করেননি। মানুষও স্বাভাবিকভাবে এগুলোর কোন প্রভাব প্রতিক্রিয়া দেখে না, অনুভবও করতে পারে না। এ জন্য অনেকে বলেছেন, এগুলোর ওপর ভরসা করা, মুশরিকদের ন্যায় মৃত ব্যক্তি ও মূর্তির ওপর ভরসা করার সমতুল্য; যারা শুনে না, দেখে না, কোন উপকারও করতে পারে না, আর না পারে কোন ক্ষতি করতে। কিন্তু তারা মনে করে, এগুলো আল্লাহর কাছ থেকে তাদের জন্য কল্যাণ বয়ে আনবে, অথবা অমঙ্গল প্রতিহত করবে। সবার প্রতি অনুরোধ: এখনো যে সব আলেম- ওলামা তাবিজ-কবচ নিয়ে ব্যস্ত তাদের দরবারে আমার সবিনয় অনুরোধ, এর থেকে বিরত থাকুন। বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগ, সাধারণ মানুষ খুব সহজেই টিভি চ্যানেল, ইন্টারনেট ও বিভিন্ন মাধ্যমে জানতে পারছে যে, তাবিজ-কবচ বৈধ নয় বা ইসলামে এর কোন স্বীকৃতিও নেই। এমতাবস্থায় যারা তাবিজ-কবচ করেন বা বৈধ বলেন তাদের ব্যাপারে তারা বিব্রতকর অবস্থায় পতিত হন। আল-হামদু লিল্লাহ, বর্তমান সময়ে আরবি শিক্ষিত ও সাধারণ শিক্ষিত অনেক ব্যক্তি, বিশেষ করে তরুন প্রজন্ম তাবিজ-কবজের অসারতা বুঝতে পেরে এর বিরুদ্ধে সোচ্চার হয়েছেন। নিজে রিবত থাকছেন এবং অপরকে বিরত থাকার জন্য উদ্বুদ্ধ করছেন। যেহেতু এটা আকীদার বিষয়, তাই এখানে শিথিলতার কোন সুযোগ নেই। অতএব, এ থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে অনুরোধ করছি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ