শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
AbdulHalim

Call

কাযা সালাত আদায়ের বিধানঃ

কারো যদি কোন নামায কাযা হয়ে যায়, তবে যখনই স্মরণ হবে তখন তা পড়ে নেবে এবং ওয়াক্তিয়া নামাযের উপর তাকে অগ্রবর্তী করবে। এ বিষয়ে মূলনীতি এই যে, ওয়াক্তিয়া ফরয় নামায ও কাযা নামাযসমূহের মাঝে তারবীত বা ক্রমে রক্ষা করা আমাদের ওয়াজিব। আর ইমাম শাফিঈ (র.) এর মতে তা মুসতাহাব। কেননা প্রতিটি ফরজ নামায নিজস্ব ভাবে সাব্যস্ত। সুতরাং অন্য ফরযের জন্য তা শর্ত হতে পারে না। আমাদের দলীল হলো রাসূলুল্লাহ্ (সা.) এর বাণী- যে ব্যক্তি নামাযের সময় ঘুমিয়ে যায় অথবা নামাযের কথা ভুলে যায় আর তা ইমামের সাথে নামাযে শরীক হওয়ার পরই শুধু মনে পড়ে, সে যেন নামায আরম্ভ করেছে তা পড়ে নেয়। এরপর যে নামাযের কথা মনে পড়েছে, তা পড়ে নেবে এরপর ইমামের সাথে যে নামায আদায় করেছে, তা পুনরায় পড়ে নেবে। যদি ওয়াক্ত শেষ হয়ে যাওয়ার আশংকা হয়, তবে ওয়াক্তিয়া নামায আগে পড়ে নেবে এরপর কাযা নামায আদায় করবে। কেননা সময় সংকীর্ণতার কারণে, তেমনি ভুলে যাওয়ার কারণে এবং কাযা নামায বেশী হওয়ার কারণে তারতীব রহিত হয়ে যায়, যাতে ওয়াক্তিয়া নামায ফউত হয়ে যাওয়ার উপক্রম না হয়ে পড়ে। যদি কাযা নামাযকে আগে পড়ে নেয় তবে তা দুরস্ত হবে। কেননা তা আগে পড়তে নিষেধ করা হয়েছে অন্যের কারণে। (কাযা নামাযের নিজস্ব কোন কারণে নয়) পক্ষান্তরে যদি সময়ের মধ্যে প্রশস্ততা থাকে এবং ওয়াক্তিয়া নামাযকে অগ্রবর্তী করে তবে তা জাইয হবে না। কেননা হাদীছ দ্বারা উক্ত নামাযের জন্য যে ওয়াক্ত সাব্যস্ত হয়েছে, তার পূর্বে সে তা আদায় করেছে।

যদি কয়েক ওয়াক্ত নামায ফউত হয় তবে মুলতঃ নামায যে তারতীবে ওয়াজিব ছিল, কাযা নামাযও সে তারতীবে আদায় করবে। কেননা খন্দকের যুদ্ধে নবী (সা.) এর চার ওয়াক্ত নামায কাযা হয়েছিলো, তখন তিনি সেগুলো তারতীবের সাথে কাযা করেছিলেন। তারপর বলেছিলেন- আমাকে যেভাবে সালাত পড়তে দেখেছো, সেভাবে তোমারও সালাত পড়ো। তবে যদি কাযা সালাত হয় ছয় ওয়াক্তের বেশী হয়ে যায়। কেননা কাযা সালাত বেশী পরিমাণে হয়ে গেছে; সুতরাং কাযা সালাতগুলোর মাঝেও তারতীব রহিত হয়ে যাবে, যেমন কাযা সালাত ও ওয়াক্তিয়া সালাতের মাঝে রহিত হয়ে যায়। আধিক্যের পরিমাণ হলো কাযা নামায ছয় ওয়াক্ত হয়ে যাওয়া। অর্থাত্ ষষ্ঠ নামাযের ওয়াক্ত পার হয়ে যাওয়া। জামেউস সাগীব কিতাবের নিম্নোক্ত ইবারতের অর্থ এটাই। যদি একদিন একরাত্রের অধিক নামায কাযা হয়ে যায়, তাহলে যে ওয়াক্তের নামায প্রথমে কাযা করে তা জাইয হবে। কেননা একদিন একরাত্রের অধিক হলে নামাযের সংখ্যা ছয় হয়ে যাবে। ইমাম মুহাম্মদ (র.) হতে বর্ণিত যে, তিনি ষষ্ঠ ওয়াক্ত দাখিল হওয়ার বিষয় বিবেচনা করেছেন। তবে প্রথমোক্ত মতটিই বিশুদ্ধ। কেননা পুনঃ আরোপিত হওয়ার সীমায় উপনীত হওয়া দ্বারা আধিক্য সাব্যস্ত হয়। আর তা প্রথমোক্ত সুরতে রয়েছে। যদি পূর্বের ও সাম্প্রতিক কাযা সালাত একত্র হয়ে যায়, তবে কোন কোন মতে সাম্প্রতিক কাযা সালাত স্মরণ থাকা সত্ত্বেও ওয়াক্তিয়া সালাত আদায় করা জাইয হবে। কেননা কাযা সালাত অধিক হয়ে গেছে। কোন কোন মতে জাইয হবে না এবং বিগত কাযা নামাযগুলোকে ‘যেন তা নেই’ ধরে নেয়া হবে যাতে ভবিষ্যতে সে এ ধরনের অলসতা থেকে সতর্ক হয়।

যদি কিছু কাযা সালাত আদায় করে ফেলে এবং অল্প পরিমাণ অবশিষ্ট থাকে, তবে কোন কোন ইমামের মতে ‘তারতীব’ পুনঃ আরোপিত হবে। এই মতই অধিক প্রবল। কেননা ইমাম মুহাম্মদ (র) হতে বর্ণিত আছে যে, যদি কেউ একদিন ও এক রাত্রের নামায তরক করে আর পরবর্তী দিন প্রতি ওয়াক্তিয়া সালাতের সাথে এক ওয়াক্তের কাযা সালাত আদায় করতে থাকে, তবে কাযা সালাতগুলো সর্বাবস্থায় জাইয হবে। পক্ষান্তরে ওয়াক্তিয়া সালাত যদি (কাযা সালাতের) আগে আদায় করে, তবে তা ফাসিদ হয়ে যাবে। কেননা, কাযা নামাযগুলো অল্প এর গণ্ডিতে এসে গেছে। আর যদি ওয়াক্তিয়াকে (কাযা নামাযের) পরে আদায় করে, তবে একই হুকুম হবে। কিন্তু পরবর্তী ‘ঈশার নামাযের হুকুম ভিন্ন (অর্থাত্ আদায় হয়ে যাবে)। কেননা তার ধারণা মতে তো ‘ঈশার সালাত আদায় করার সময় তার যিম্মায় কোন কাযা সালাত নেই। যুহর আদায় করেনি, একথা স্মরণ থাকা অবস্থায় কেউ যদি আসরের সালাত পড়ে, তবে তা ফাসিদ হবে। কিন্তু একেবারে শেষ ওয়াক্ত স্মরণ থাকা অবস্থায় পড়ে থাকলে ফাসিদ হবে না। এটা তারতীব সংক্রান্ত মাসআলা। অবশ্য ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর মতে (উক্ত আসরের নামাযের) ফরজগুণ নষ্ট হয়ে গেলেও মূল নামায বাতিল হবে না)। বরং নফল রূপে গণ্য হবে। আর ইমাম মুহাম্মদ (র.) এর মতে মূল নামাযও বাতিল হয়ে যাবে। কেননা ‘ফরযিয়াতের’ জন্যই তাহরীমা বাধা হয়েছিল। সুতরাং ফরযিয়াত যখন বাতিল হয়ে গেল, তখন মূল তাহরীমাও বাতিল হয়ে যাবে।

ইমাম আবূ হানীফা ও আবূ ইউসূফ (র.) এর দলীল এই যে, তাহরীমা বাধা হয়েছে মূলতঃ সালাতের জন্য ফারযিয়াতের গুণ সহকারে, সুতরাং ফরযিয়াতের গুণ বিনষ্ট হওয়ার কারণে মূল সালাত বিনষ্ট হওয়া জরুরী নয়। তবে আসর ফাসিদ হবে স্থগিতাবস্থায়, অতএব যদি যুহরের কাযা আদায় না করে ধারাবাহিক ছয় ওয়াক্ত নামায পড়ে ফেলে তবে সব ক’টি ওয়াক্তের নামাযই জাইয রূপান্তরিত হয়ে যাবে। এটা ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মত। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ (র.) এর মতে চূড়ান্ত ভাবেই তা ফাসিদ হয়ে যাবে। কোন অবস্থাতেই তা পুনঃবৈধতা পাবে না। এ বিষয়ে যথাস্থানে আলোচিত হয়েছে। ‘বিতর পড়েনি’ একথা স্মরণে থাকা অবস্থায় কেউ যদি ফজরের নামায আদায় করে, তবে তা ফাসিদ হয়ে যাবে। এটা আবূ হানীফা (র.) এর মত। ইমাম আবূ ইউসূফ ও মুহাম্মদ (র.) ভিন্নমত পোষণ করেন। এ মতভিন্নতার ভিত্তি এই যে, ইমাম আবূ হানীফা (র.) এর মতে বিতর হল ওয়াজিব। পক্ষান্তরে সাহেবাইনের মতে তা সুন্নত। আর সুন্নত ও ফরজ নামাযসমূহের মাঝে তারতীব জরুরী নয়। বিতরের ব্যাপারে এই মতপার্থক্যের ভিত্তিতেই (এ মাসআলা রয়েছে)। কেউ যদি ‘ঈশার নামায পড়ার পর পুনরায় উযূ করে সুন্নত ও বিতর আদায় করেন। অতঃপর প্রকাশ পেল যে, ‘ঈশার সালাত সে বিনা উযূতে পড়েছে, তবে আবূ হানীফা (র.) এর মতে শূধু ‘ঈশা ও সুন্নত পুনঃআদায় করবে, বিতর নয়। কেননা তার মতে বিতর স্বতন্ত্র ফরজ আর সাহেবাইনের মতে বিতরও পুনঃ আদায় করতে হবে। কেননা তা ‘ঈশা’ এর অনুবর্তী। আল্লাহই উত্তম জানেন।

মূল- শায়খুল ইসলাম বুরহান উদ্দীন আবুল হাসান আলী ইবন আবূ বকর আল-ফারগানী [রহ.]
অনুবাদ- মাওলানা আবু তাহের মেসব

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ