মুহাম্মদ আলী জন্ম নাম ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে জুনিয়র ।  ১৭ জানুয়ারি ১৯৪২–৩ জুন ২০১৬) একজন মার্কিন পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধাছিলেন, সাধারণভাবে যাকে ক্রীড়ার ইতিহাসে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হেভিওয়েট হিসেবে গণ্য করা হয়ে থাকে। ক্রীড়াজীবনের শুরুর দিকে আলী রিংয়ের ভেতরে ও বাইরে একজন অনুপ্রেরণাদায়ক ও বিতর্কিত ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন। স্পোর্টস ইলাস্ট্রেটেডতাঁকে শতাব্দীর সেরা খেলোয়াড় ও বিবিসি তাঁকেশতাব্দীর সেরা ক্রীড়াব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মানিত করেছে।

আরো বিস্তারিত জানতে এখানে দেখুন। 

image

Talk Doctor Online in Bissoy App
Call

১৯৪২-এর ১৭ই জানুয়ারি আমেরিকায় কেনটাকি অঙ্গরাজ্যের লুইভিলে জন্মগ্রহণ করেন মুহাম্মদ আলী। তখন তাঁর নাম ছিল ক্যাসিয়াস মার্সেলাস ক্লে। ১২ বছর বয়সে তিনি মুষ্টিযুদ্ধ শুরু করেন এবং রোমে ১৯৬০ সালের অলিম্পিকে লাইট হেভিওয়েটে স্বর্ণপদক জয় করে.

১৯৬০ সালের অক্টোবর মাসে ১৮ বছর বয়সে তিনি মুষ্টিযুদ্ধকে পেশা হিসাবে নেন। ১৯৬৩ সালের জুনে প্রথম পেশাদার সফরে তিনি আসের লন্ডনে। তার আগেই তিনি ১৮টি মুষ্টিযুদ্ধে সরাসরি লড়াইয়ে জিতেছেন। লন্ডনে আসার আগে তিনি বলেছিলেন ইংল্যান্ডের বিখ্যাত মুষ্টিযোদ্ধা হেনরি কুপারকে তিনি পঞ্চম রাউন্ডেই হারাবেন।


স্থানীয় হিরো হেনরি কুপার ক্যাসিয়াস ক্লে-কে চতুর্থ রাউন্ডে ধরাশায়ী করেছিলেন। কিন্তু আমেরিকান অতিথি প্রমাণ করেন তার কথা শুধু মুখের কথা নয়। ওয়েম্বলি স্টেডিয়ামে ৫৫ হাজারের বেশি দর্শকের সামনে পঞ্চম রাউন্ডে তিনি পরাজিত করেন প্রতিপক্ষ হেনরি কুপার.

ক্লে-র প্রথম আন্তর্জাতিক শিরোপা জয় ১৯৬৪-র ফেব্রুয়ারি মাসে। বিশ্ব চ্যাম্পিয়ান সনি লিস্টনকে পরাজিত করে প্রথম বিশ্ব খেতাব আসে তাঁর ঝুলিতে। পরাজিত লিস্টন আগেই বুঝেছিলেন এ লড়াই সহজ হবে না। তিনি বলেছিলেন: “আমার মনে হচ্ছে জিততে গেলে ছেলেটাকে রীতিমত জখম করতে হবে।”


লড়াইয়ের আগে বেশির ভাগ বক্সিং বিশেষজ্ঞই তাঁর জয়ের সম্ভাবনা নাকচ করে দিয়েছিলেন। কিন্তু মায়ামিতে ক্লে অসাধারণ লড়াইয়ে লিস্টনকে পরাজিত করেন ষষ্ঠ রাউন্ডের আগেই। ষষ্ঠ রাউন্ডের লড়াই শুরুর আগেই হার মেনে নেন লিস্টন।

ক্লে-র কাছে লিস্টনের পরাজয় সেইসময় - এবং আজও মুষ্টিযুদ্ধের ইতিহাসে একটা যুগান্তকারী ঘটনা। সেই অপ্রত্যাশিত জয়ের অনুভূতিতে ক্লে-র কন্ঠে ছিল আরও অনেক বেশি আত্মপ্রত্যয়ের সুর: “আমি সর্বসেরা! আমি সর্বসেরা! আমি বিশ্বের রাজা!”


সনি লিস্টনকে প্রথমবার হারানোর পর তাঁর ইসলাম ধর্মগ্রহণের ঘোষণা দেন তিনি এবং তিনি নতুন নাম নেন মুহাম্মদ আলী।


লিস্টনের সঙ্গে মেইন অঙ্গরাজ্যের লিউইসটনে আলীর এক লড়াই ছিল বির্তকিত। প্রথম রাউন্ডের প্রথম মিনিটেই লিস্টনকে ধরাশায়ী করেন আলী। এখনও অনেকের বিশ্বাস লিস্টন ওই খেলায় শুরুতেই হাল ছেড়ে মাটিতে পড়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু মুহাম্মদ আলী সবসময়েই বলে গেছেন ‘ভূতে তো ওকে ঘুঁষি মারে নি!


১৯৬৫র নভেম্বর মাসে সাবেক চ্যাম্পিয়ান ফ্লয়েড প্যাটারসনকে হারিয়ে নিজের শিরোপা অক্ষুণ্ন রাখেন মুহাম্মদ আলী। আলীর রাজনৈতিক আদর্শ ও ধর্ম নিয়ে তাঁকে কটাক্ষ সবসময় করেছেন.

আলী হেনরি কুপারের সঙ্গে লড়তে আবার আসেন লন্ডনে ১৯৬৬ সালের মে মাসে। তাঁর প্রথম লড়াইয়ের সময় ব্রিটিশ ভক্তরা তাঁকে নিয়ে কোনো মাতামাতি করে নি। কিন্তু তাঁর দ্বিতীয় সফরের সময় ভক্তদের উচ্ছ্বাস ছিল চোখে পড়ার মত।


১৯৬৭ সালে ভিয়েতনাম যুদ্ধে লড়াই করার জন্য আমেরিকান সেনা বাহিনীতে যোগ দিতে তিনি অস্বীকৃতি জানালে তাঁর শিরোপা কেড়ে নেওয়া হয়। এর আরও তিন বছর পর আবার তিনি ফিরে আসেন বক্সিং রিং-এ।


তাঁর প্রথম পরাজয় ১৯৭১ সালের মার্চ মাসে নিউ ইর্য়কের ম্যাডিসন স্কোয়ার গার্ডেন্সে জো ফ্রেজিয়ারের কাছে। দুই অপ্রতিরোধ্য হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ান সেই প্রথমবার মুখোমুখি হয়েছিলেন বক্সিং রিং-এ।


১৯৭৪ সালে জর্জ ফোরম্যানকে হারিয়ে আবার তিনি বিশ্ব হেভিওয়েট চ্যাম্পিয়ান হন ৩২ বছর বয়সে। কঙ্গোর কিনশাসায়া ১৯৭৪ সালে হওয়া এই প্রতিযোগিতার আরেকটি জনপ্রিয় নাম ছিল ‘রাম্বল ইন দা জাঙ্গল’। মুষ্টিযুদ্ধের ইতিহাসে তিনি দ্বিতীয় ব্যক্তি যিনি এই শিরোপা হারিয়ে আবার জিতে নিতে সক্ষম হয়েছিলেন।


১৯৭৮ সালে লিওন স্পিংক্সের কাছে হেরে আলী তাঁর শিরোপা হারালেও ওই একই বছর স্পিংক্সের কাছে থেকেই আবার সেই খেতাব ছিনিয়ে নেন আলী। এর নয় মাস পর মুহম্মাদ আলী বক্সিং থেকে অবসর নেওয়ার ঘোষণা দেন। ১৯৮০ সালে নতুন চ্যাম্পিয়ান ল্যারি হোমসকে চ্যালেঞ্জ জানাতে আবার রিং-এ ফেরেন তিনি। কিন্তু হোমসের কাছে পরাজয় এবং আরও একটি লড়াইয়ে হেরে ৪০ বছর বয়সে তিনি পুরো অবসরে যান।

১৯৮৪ সালে দুরারোগ্য পারকিনসন্স রোগে আক্রান্ত হন বিশ্বখ্যাত এই মুষ্টিযোদ্ধা। ১৯৯৬ সালে আটলান্টা অলিম্পিকে মশাল প্রজ্জ্বলন অনুষ্ঠানে আবার বিশ্বব্যাপী মানুষ তাঁকে দেখেন।image

আলীর কন্যা লায়লা ১৫ বছর বয়সে মুষ্টিযুদ্ধে নামেন, ১৯৯৯ সালে তিনি পেশাদার মুষ্টিযোদ্ধা হয়ে ওঠেন 

Talk Doctor Online in Bissoy App