বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলতে ১২০০ থেকে ১৫০ সাল পর্যন্ত সময়কালকে অন্ধকার যুগ বলা হয়। এ নিয়ে অবশ্য বিতর্ক আছে অনেকেই অন্ধকার যুগের স্বীকার করে না। কিন্তু অনেকে ১২০০ থেকে ১৩৫০ সাল পর্যন্ত সময়কে অন্ধকার যুগ বলে মনে করে। তাদের ধারনা এই সময় বাংলার রাজনৈতিক অরাজকতা চলছিল যার ফলে কোন সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি।

    ১২০৪ সালে ইখতিয়ার উদ্দিন মুহম্মদ বখতিয়ার খিলজি বাংলার রাজা লক্ষণ সেনকে পরাজিত করেন।অনেকেই মনে করেন মুসলমান শাসন আমলে বাংলার হিন্দু সমাজ ও সাহিত্যের উপর ব্যাপক নির্যাতন চালায়। তবে এও ঠিক যে পরবর্তীকালে মুসলমান শাসনামলে বাংলা সাহিত্যের অনেক উন্নতি হয়েছে। এমনকি হিন্দুকবি ও লেখক মুসলমান রাজদরবারে সাহিত্য চর্চা করেছেন।কাজেই মুসলমান শাসন মানেই সাহিত্যহীন সময় নয়।এজন্য অনেকেই এই যুগের সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলতে রাজি না। ডক্টর ওয়াকিল আহমদ বলেন

“ বাংলা সাহিত্যে কথিত অন্ধকার যুগ মোটেই সংস্কৃতির বন্ধ্যত্বের যুগ ছিল না। ধর্ম ,শিক্ষা, শিল্পচর্চা দায়িত্ব যাদের উপরে ন্যাস্ত ছিল তারা সীমিত আকারে হলে ও শিক্ষা সাহিত্য চর্চায় নিয়োজিত ছিলেন।’’১


বলা হয়ে থাকে বলা হয়ে থাকে এই যুগে কোনো সাহিত্যকর্ম পাওয়া যায়নি তাই এটি বাংলা সাহিত্যের অন্ধকার যুগ বলা হয়। এর স্বপক্ষে ডঃ হুমায়ুন আজাদ বলেন

“ সাহিত্যকর্মের পরিচয় পাওয়া যায় না বলে এই সময়টাকে বলা হয় অন্ধকার যুগ। পণ্ডিতেরা এ সময়টাকে নিয়ে অনেক ভেবেছি অনেক আলোচনা করেছেন কিন্তু কেউ অন্ধকার সরিয়ে ফেলতে পারেননি”২


কিন্তু এই সময় কিছু সাহিত্য নিদর্শন পাওয়া গেছে। প্রাকৃত ভাষায় রচিত গীতিকবিতা প্রাকৃত পৈঙ্গল এসময় সংকলিত হয়েছিল। এছাড়াও রামাই পন্ডিতের শূন্যপুরাণ এবং কালিমা জালাল বা নিরঞ্জনের রুষ্মা,হুলায়ূধ মিশ্র রচিত শেখ শুভোদয়ার অন্তর্গত পীর মাহত্ম্যজ্ঞাপক বাংলা আর্যা অথবা ভাটিয়ালি রাগেনগীয়তে ইত্যাদি সে সময়ের সাহিত্যের উদাহরণ।মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ মনে করেন এর রচনাকাল অনুমানিক ত্রয়োদশ থেকে অষ্টাদশ শতকের মধ্যে। ১২০৪ সালে লক্ষণ সেন কে পরাজিত করে বাংলায় আসেন মুসলমানরা। অনেকে মনে করে মুসলমানরা এত অত্যাচার ও উৎপীড়ন চালিয়েছিল যে কারো মনে সাহিত্যের কথা জাগেনি।তাই এই সময়ে বাংলা ভাষা সাহিত্যহীন মরুভূমি। কিন্তু এই যুক্তি মানা যায় না ।কেননা দেড়শ বছর রক্তপাত হানাহানি চললে মানুষ বাচত না । এছাড়া মুসলমানরা সাহিত্য সৃষ্টিতে উৎসাহ দিত সেই প্রমাণ ও মিলে।তাই তারা সাহিত্যে কে দমিয়ে দিতে এসেছিল একথা যুক্তিহীন।ড.দীনেশচন্দ্র সেন বলেন:-

“রাজকার্যাবসানে মুসলমান সম্রাটগন পাত্র-মিত্র পরিবেষ্টিত হইয়া হিন্দু শাস্ত্রের বঙ্গানুবাদ শুনিতে আগ্রহ প্রকাশ করিতেন। মুসলমান সম্রাট ও সম্ভ্রান্ত ব্যক্তিগনের কৌতুহল নিবৃত্তির জন্যই রাজদ্বারে দীনহীন বঙ্গভাষার প্রথম আহ্বান পড়িয়া ছিল।৩


মুসলিম শাসনামলের সূচনা কালে যেহেতু ভারতীয় উপমহাদেশে অন্যান্য ভাষার সাহিত্যের নিদর্শন পাওয়া যায়। এর ফলে মনে করা হয় বাংলা ভাষায় ও সাহিত্য রচিত হয়েছিল সেসময়। কিন্তু ভারতের এই অঞ্চলে বন্যা প্রবণ এলাকা হওয়ার কারণে সাহিত্যের উপকার গুলো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা যায়নি বলে মনে করেন গবেষকরা । যেহেতু আমরা দেখতে পাই মধ্যযুগের সাহিত্য কর্ম শ্রীকৃষ্ণকীর্তনের পুথি গরু ঘরের মাচা থেকে উদ্ধার করা হয়। তাই বলা যায় বন্যাপ্রবণ অঞ্চল হওযায় বাংলা সাহিত্যের এই সময়ের উপাদান গুলো সংরক্ষন করা যায়নি। তবে এটা মনে করা উচিত নয় যে এই সময়টা একদমই সাহিত্য সৃষ্টি হয়নি।


অন্য কোন বিষয়ে জানতে লিংক ভিজিট করুন:-https://theliteraturebu.blogspot.com

তথ্য সূত্র:-

১। সাহিত্যের পুরাবৃত্ত; ড. ওয়াকিল আহমদ, পৃ:১০৫

২। লাল-নীল দীপাবলী; ড. হুমায়ন আজাদ, পৃ:১৭

৩। বঙ্গভাষা ও সাহিত্য; ড. দীনেশচন্দ্র সেন, পৃ:৮৩



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে