Call

৮ম জাতীয় বেতন কাঠামোর গেজেট প্রকাশ করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাত আটটার দিকে সচিবালয়ে অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মোহাম্মদ আলী খান গেজেটের কপি অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের হাতে তুলে দেন। পরে অর্থমন্ত্রী গেজেটের কপি সাংবাদিকদের দেখান। টাইমস্কেল ও সিলেকশন গ্রেড বাদ দেওয়া হয়েছে। অর্থমন্ত্রী বলেন, গেজেট প্রকাশ করতে একটু বেশি সময় ব্যয় হয়েছে। এবারের বেতন কাঠামোতে সরকারি চাকরিজীবীরা খুশি হবেন বলে আশা প্রকাশ করেন অর্থমন্ত্রী। অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, ‘মন্ত্রিসভায় পাস হওয়ার পর শিক্ষকেরা প্রস্তাবিত বেতন কাঠামোর বিরুদ্ধে অবস্থান নিয়েছিলেন। পরে তাঁরা নমনীয় হন। এবারের বেতন কাঠামোতে তাঁদের সুযোগসুবিধাও কমানো হয়নি। এখন ২০টি ধাপে বেতন দেওয়া হলেও ভবিষ্যতে তা কমবে বলে আমি নিশ্চিত। চলতি বছরে সরকারি চাকরিজীবীদের জন্য অতিরিক্ত ১৫ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে।’ অর্থমন্ত্রী আরও বলেন, যেহেতু গত জুলাই থেকে নতুন বেতন কাঠামো কার্যকর হচ্ছে, সেহেতু গত জুলাই থেকে চলতি ডিসেম্বর মাস পর্যন্ত বকেয়া বেতনের অর্ধেক দেওয়া হবে ডিসেম্বর মাসের বেতনের সঙ্গে, বাকি অর্ধেক দেওয়া হবে আগামী জানুয়ারি মাসের বেতনের সঙ্গে। অষ্টম বেতন কাঠামোতে ২০টি গ্রেডের মধ্যে সর্বোচ্চ মূল বেতন ৭৮ হাজার টাকা এবং সর্বনিম্ন মূল বেতন ধরা হয়েছে ৮২৫০ টাকা। যাতে বেতন বেড়েছে গ্রেড ভেদে ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ। এছাড়া মন্ত্রিপরিষদ সচিব, মুখ্য সচিব ও এদের সমমর্যাদার পদের বেতন ৮৬ হাজার টাকা এবং জ্যেষ্ঠ সচিব ও সমমর্যাদার পদের বেতন ৮২ হাজার টাকা নির্ধারিত থাকছে। বিদ্যমান সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বিলোপ করে গেজেটে বলা হয়েছে, কোনো স্থায়ী কর্মচারী পদোন্নতি ছাড়া একই পদে ১০ বছর সন্তোষজনকভাবে চাকরি করলে তিনি স্বয়ংক্রিয়ভাবে একাদশ বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন পাবেন। আর কোনো স্থায়ী কর্মচারী চাকরির ১০ বছর পূর্তিতে উচ্চতর গ্রেডে বেতন পাওয়ার পর পরবর্তী ছয় বছর পদোন্নতি না পেলে তার চাকরি সন্তোষজনক হলে সপ্তম বছরে পরবর্তী উচ্চতর গ্রেডে বেতন পাবেন বলে গেজেটে উল্লেখ রয়েছে। গেজেট প্রকাশের আগের দিন অর্থাৎ গত ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত যেসব সরকারি কর্মচারী সিলেকশন গ্রেড ও টাইমস্কেল পেয়েছেন, তা বহাল থাকবে বলেও গেজেটে বলা হয়েছে। নতুন বেতন কাঠামোর বিভিন্ন দিক * শিরোনাম- চাকরি (বেতন ও ভাতাদি) আদেশ ২০১৫ * ২০ গ্রেডের সর্বোচ্চ গ্রেডের বেতন ৭৮ হাজার এবং সর্বনিম্ন গ্রেডের বেতন ৮ হাজার ২৫০ টাকা। গ্রেড ভেদে বেতন বেড়েছে ৯১ থেকে ১০১ শতাংশ। * কোনো স্কেলের সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছার এক বছর পর পরবর্তী টাইমস্কেলে উত্তরণ বিলুপ্ত;এখন থেকে কেউ পদোন্নতি ছাড়া এক পদে ১০ বছর থাকার পর সন্তোষজনক কাজের নিরিখে স্বয়ংক্রিয়ভাবে পরবর্তী গ্রেডে যাবেন। * প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ শ্রেণিভেদ আর থাকছে না; পরিচিতি হবে গ্রেডের ভিত্তিতে। * পহেলা বৈশাখ উপলক্ষে নববর্ষ ভাতা পাবেন সবাই মূল বেতনের ২০ শতাংশ হারে। আগের দুটি উৎসব ভাতা থাকছে। * পার্বত্য জেলা সদরে কর্মরত সব কর্মচারী মূল বেতনের ২০ শতাংশ (সর্বোচ্চ ৩ হাজার টাকা) হারে পাহাড়ি ভাতা পাবেন। সদরের বাইরের উপজেলায় এই ভাতা হবে সর্বোচ্চ ৫ হাজার টাকা। * বাড়ি ভাড়া গ্রেড ও এলাকার ভিত্তিতে নির্ধারিত হবে। * এই বেতন কাঠামো জারির পর প্রত্যেক কর্মীকে নিজের বেতন নির্ধারণের জন্য নির্ধারিত ওয়েবসাইটে গিয়ে (www.payfixation.gov.bd) জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর এবং জন্ম তারিখ দিয়ে লগ ইন করে নির্দিষ্ট ছক পূরণ করতে হবে। গেজেট জারি হওয়ায় চলতি ডিসেম্বর মাসের বেতন জানুয়ারিতে নতুন কাঠামো অনুযায়ী পাবেন চাকরিজীবীরা। গত ১ জুলাই থেকে কার্যকর হয়েছে এই বেতন কাঠামো। ফলে গত জুলাই থেকে নভেম্বর পর্যন্ত পাঁচ মাসের বেতন বকেয়া রয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের। এই বকেয়া বেতন দেওয়া হবে দুই ধাপে। ডিসেম্বরের বেতন জানুয়ারিতে দেওয়ার সময়ই মিলবে জুলাই আর আগস্ট মাসের বকেয়া বেতন। আর সেপ্টেম্বর, অক্টোবর ও নভেম্বর—এই তিন মাসের বকেয়া পাওয়া যাবে জানুয়ারি মাসের বেতন ফেব্রুয়ারিতে পাওয়ার সময়। একসঙ্গে বিপুল পরিমাণ বকেয়া অর্থের সংস্থানের ঝামেলা মেটাতে সরকার দুই ধাপে তা পরিশোধের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা জানান, আইন মন্ত্রণালয় থেকে নতুন কাঠামোর সরকারি আদেশ জারি হয়েছে ১৪ ডিসেম্বর। পরে তা বিজি প্রেসে পাঠানো হয়েছে। ফলে গত ১৪ ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যে যাঁরা টাইম স্কেল, সিলেকশন গ্রেডসহ আগের বেতন কাঠামোর বিভিন্ন সুবিধা ভোগ করছেন, সেগুলো সব বহাল থাকবে। তবে নতুন করে টাইম স্কেল ও সিলেকশন গ্রেড আর পাবেন না কেউই। জারি করা আদেশে ক্যাডার ও নন- ক্যাডার কর্মকর্তাদের যোগদানের ক্ষেত্রে কিছুটা বৈষম্য থাকছে। ক্যাডার কর্মকর্তারা এখন থেকে অষ্টম গ্রেডে যোগদান করবেন। আর নন- ক্যাডাররা করবেন নবম গ্রেডে। এত দিন উভয় শ্রেণির কর্মকর্তারা নবম গ্রেডে যোগ দিতেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা অষ্টম গ্রেডে যোগ দেবেন। সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাতিল হওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা যে সুবিধা পেতেন, তা হিসাব করে নির্দিষ্ট বছর পর পর পদোন্নতির প্রক্রিয়া নির্ধারণ ও প্রয়োজনে পদ সৃষ্টি করবে বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন। তবে চিকিৎসকদের একই দাবি থাকলেও সে ব্যাপারে কোনো সুরাহা নেই নতুন বেতন কাঠামোতে। জারি হওয়া আদেশে বলা হয়েছে, স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় যাঁদের পদোন্নতি হবে না, তাঁরা প্রথম ১০ বছর পর স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেতন কাঠামোর ওপরের গ্রেডে পৌঁছাবেন। আর পরেরবার ওপরের গ্রেড পাবেন আরো ছয় বছর পর। নিম্ন গ্রেডের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের পদোন্নতির সুযোগ কম থাকায় তাঁদের জন্য প্রযোজ্য সিলেকশন গ্রেড ও টাইম স্কেল বাদ দিয়ে এ ব্যবস্থা চালু করা হয়েছে। বেতন কাঠামোর আদেশে চলতি অর্থবছরের বার্ষিক বেতন বৃদ্ধি সুবিধা (ইনক্রিমেন্ট) সবার ক্ষেত্রেই বাতিল করা হয়েছে। আগামী অর্থবছরের ১ জুলাই থেকে প্রতিবছর একই দিনে সব কর্মকর্তা- কর্মচারী ইনক্রিমেন্ট পাবেন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ