পৃথিবীর প্রথম ভাষা কি? আল্লাহ এবং প্রথম মানুষ কোন ভাষায় কথা বলতেন? আগের মানুষ নাকি ইংগিত দিয়ে কথা বলতেন? ভাষার শুরু কখন? আরবী যদি প্রথম ভাষা হয় তার প্রমাণ কি? প্রশ্নগুলোর উত্তর দিন।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

আধুনিক বাংলা ভাষার ক্রমবিবর্তনের পথে পিছু হেঁটে আমরা ধারাবাহিকভাবে শেষ পর্যন্ত পৌঁছে যেতে পারি প্রাচীন ভারতীয় আর্য ভাষার প্রাচীনতম রূপ বৈদিকে। সুপ্রাচীন ইন্দো-ইউরোপীয় ভাষাগোষ্ঠীর অন্যতম শাখা ইন্দো-ইরানীয়। ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর আবার দুটি শাখা- একটি ইরানীয়, অন্যটি ভারতীয় আর্য ভাষাগুচ্ছ। বাংলা এই আর্য ভাষাগোষ্ঠীর অন্তর্ভুক্ত আধুনিক কালের একটি ভাষা। ইন্দো-ইরানীয় ভাষাগোষ্ঠীর আর্যশাখা বেশ কয়েকটি দলে ভারতের উত্তর-পশ্চিম সীমান্ত দিয়ে ভারতবর্ষে প্রবেশ করে। এই নবাগত সুসংবদ্ধ ভাষাগোষ্ঠীর মধ্য থেকেই বর্তমান উত্তর ভারতের বিভিন্ন ভাষার উদ্ভব হয়। আর্যভাষা কালেক্রমে তিনটি স্তর অতিক্রম করে। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা : খ্রিস্টপূর্ব ১৫০০ থেকে ৬০০ অব্দ [৯০০ বছর] [ধ্রুপদী সংস্কৃত- ঋকবেদ, সামবেদ, যজুর্বেদ, অথর্ববেদ, ব্রাক্ষ্ণণ ও উপনিষদ] মধ্য ভারতীয় আর্যভাষা : খ্রিস্টপূর্ব ৬০০ থেকে ১০০০ খিস্টাব্দ [১৬০০ বছর] [সংস্কৃত- রামায়ণ, মহাভারত, পুরাণ, নাটক, গীতিকাব্য, চম্পুকাব্য, ব্যাকরণ অলঙ্কারশাস্ত্র ইত্যাদি। বাল্মীকী, ব্যাস, পাণিনি, ভাস, কালিদাস, বাণ, দণ্ডী, কৌটিল্য(চাণক্য) এ ভাষার বিখ্যাত লেখক; এবং পালি-বৌদ্ধ জাতক, ত্রিপিটক পালি ভাষায় লিখিত] নব্য ভারতীয় আর্যভাষা : খ্রিস্টাব্দ ১০০০ থেকে বর্তমান কাল [১০০০ বছর] পাল রাজাদের আমলে রচিত বাংলা সাহিত্যের প্রাচীনতম নিদর্শন চর্যাপদ। সমগ্র উত্তর ভারতে, আফগান সীমান্ত থেকে আসাম সীমান্ত পর্যন্ত, হিমালয় থেকে মহারাষ্ট্র পর্যন্ত আর্যভাষাগোষ্ঠীর বিস্তার। আমাদের বাংলা এই গোষ্ঠীর একটি বড় শাখা। আর্যরা ভারতে আসার আগে থেকেই এখানে ভেড্ডি, অস্ট্রিক, দ্রাবিড় প্রভৃতি অনার্যরা বাস করত। এদের মধ্যে বাঙালির উপর সবচেয়ে বেশি প্রভাব ফেলেছিল অস্ট্রিকরা। আজ থেকে ৩২০০ বছর পূর্বে রচিত গ্রন্হ বেদে ‘বঙ্গ’ নামটির উল্লেখ পাওয়া যায়। বঙ্গ সম্ভবত একটি অস্ট্রিক শব্দ। সংস্কৃতকে বলা চলে বাংলার দূর সম্পর্কের আত্মীয়। মাগধী প্রাকৃত বা গৌড়ী প্রাকৃত- যে ভাষার থেকেই বাংলার জন্মের কথা বলি না কেন, প্রকৃত সত্য হচ্ছে, আজকের বাংলা ভাষা পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষা থেকে শব্দ গ্রহণ করে বর্তমান পর্যায়ে এসেছে। বাঙালির রক্তে যেমন মিশে আছে বহু জাতি- ভেড্ডি, অস্ট্রিক, দ্রাবিড়, মঙ্গোল, আলপাইন, আর্য, শক, আরব, তুর্কী, মোগল, পাঠান প্রভৃতির রক্ত, তেমনি তার ভাষার মধ্যেও রয়ে গেছে অজস্র বিদেশি শব্দ। বাংলার মধ্যে ঢুকে নিজের অজান্তেই সে কখন হয়ে উঠেছে বাংলা শব্দ। খ্রিস্টিয় সপ্তম শতকে শতকে মাগধী প্রাকৃতকে অবলম্বন করে বাংলা ভাষার বুনিয়াদ স্হাপন হয়। কিন্তু তারও আগে হাজার বছর ধরেই, ধীরে ধীরে, চলছিল এই সৃষ্টিকাজ। প্রায় এক হাজার বছর আগে বাংলা সাহিত্যের প্রাচীন নিদর্শন ‘চর্যাপদ’ লেখা হয়। ড. মুহম্মদ শহীদুল্লাহর মতে, চর্যার রচনাকাল খ্রিস্টাব্দ ৬০০ থেকে ১২০০ এর মধ্যে। এ সময় বাংলায় চলছিল গুপ্ত-পাল-সেন-বর্মণদের রাজত্ব। গুপ্ত এবং পালরা ছিলেন বৌদ্ধ। তাই চর্যাকার বৌদ্ধ ভিক্ষুদের প্রতি তাদের কোনো বিদ্বেষ ছিল না। কিন্তু কলিঙ্গের বর্মণ এবং কর্ণাটকের সেন রাজারা ছিলেন বক্রাক্ষ্ণণ্যবাদী। সিংহাসনে বসেই তারা রাজ্য থেকে বৌদ্ধদের বিতাড়িত করেন। ড. আহমেদ শরীফ-এর মতে, আর্য এবং সেনরা বাঙালিদের তাদের মাতৃভাষা বাংলা থেকে বঞ্চিত করে রেখেছিল। আর্যদের কাছে অনার্যরা এমন কি মানুষ বলেও গণ্য হত না। এ কারণেই বিভিন্ন গোত্রের অনার্যরা আর্যদের কাছে পরিচিত ছিল দস্যু, রাক্ষস, যক্ষ, নাগ, পক্ষী, কুকুর, দৈত্য প্রভৃতি নামে। অর্থ্যাৎ, বহিরাগত এসব রাজারা বাংলাকে কোনো প্রকার মূল্যই দেয়নি। কিন্তু তবুও তারা বাংলা ভাষাকে নিশিচহ্ন করতে পারেনি।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

“অরিজিন অব হিউমেন স্পিস এন্ড এফলপাকেট নামক গ্রন্থে বিখ্যাত ভাষাবিদ মরিস ফিলিপ বলেছেন, “ভাষাতত্ত্বের ইতিহাস এবং ধবনিতত্ত্বের উপর সাম্প্রতিক অনুসন্ধানে আমরা এ কথা দৃঢ়ভাবে ঘোষনা করিতে পারি যে, “ঋগবেদ” হচ্ছে সবচেয়ে প্রাচীন শুধুমাত্র আরিয়ান গোষ্টির জন্য নয়, যা সমগ্র বিশ্বের জন্য সত্য ।”(সনাতন সংস্কৃতি হতে) ১ম ভাষা আরবি হওয়ার প্রমাণ যখন আদম (আ:) তার ভুলের জন্য আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইছিলেন তখন আরবিতে আসমানে ভেসে উঠেছিল কালিমা। তাই বলা যায় আরবি এ ১ম ভাষা। আবার ভাষাতত্ত্ববিদগণ মনে করেন,আগে মানুষ বিভিন্ন আজার-ইংগিত এ কথা বলত।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ