আগেকার দিনে নিরাপত্তার কারণে মানুষ তাদের স্বর্ণ ও স্বর্ণমুদ্রা স্বর্ণকারদের কাছে গচ্ছিত রাখতেন। এজন্যে স্বর্ণকাররা মজুদ স্বর্ণমুদ্রা নিরাপদে রাখার জন্যে নির্দিষ্ট হারে ফি আদায় করতে পারতেন। স্বর্ণমুদ্রা মজুদ রাখার সময় স্বর্ণকাররা জমাদানকারীকে একটি রিসিট দিত। জমাদানকারী এই রিসিট দেখিয়ে যখন খুশি স্বর্ণকারের কাছ থেকে তারা তখনকার প্রচলিত মূদ্রা বা টাকা উঠিয়ে নিতে পারত। জমাদানকারীরা দেখল যে যখনই তারা রিসিট দেখিয়ে টাকা ওঠাতে যান, স্বর্ণকাররা বেশ বিশ্বস্ততার সাথে টাকা দিয়ে দেয় এবং টাকা পেতে কোনই অসুবিধা হয় না। এর ফলে মানুষ ওই রিসিটকেই টাকার পরিপূর্ণ বিকল্প ভাবতে শুরু করল। কালক্রমে বেচাকেনার জন্যে প্রতিবার স্বর্ণকারের কাছে গিয়ে টাকা ওঠানোর ঝামেলায় না গিয়ে ব্যবসায়ীরা নিজেদের মধ্যে টাকা জমার ঐ রিসিটগুলো বিনিময় করতে লাগল। কালক্রমে রিসিট প্রদানকারী স্বর্ণকাররা বুঝতে পারল যে স্বর্ণমুদ্রা জমাদানকারী লোকজন একইসঙ্গে তাদের সমুদয় টাকা উঠিয়ে নিতে আসে না। গচ্ছিত অঙ্কের একটা সামান্য অংশ মাত্র প্রতিদিন কিংবা প্রতি সপ্তাহে ওঠানো হয়। কাজেই স্বর্ণকারদের কাছে কেউ টাকা ধার নিতে আসলে তাদের নিজস্ব টাকা না থাকলেও যদি এই মর্মে একটা রিসিট লিখে দেয়া যায় যে ‘বাহককে চাহিবা মাত্র (**) পরিমাণ স্বর্ণ/রৌপ্য মুদ্রা প্রদান করতে বাধ্য থাকিবে’ তাহলে এই রিসিট অন্যান্য রিসিটের মতই বিনিময়ের মাধ্যম হিসাবে ব্যবহৃত হতে থাকবে। যেই চিন্তা সেই কাজ। স্বর্ণকাররা তাদের কাছে গচ্ছিত অর্থের চেয়ে বেশি পরিমাণ রিসিট দিতে লাগল। আর এই আদি ধারণা অনুসরণ করেই বর্তমানকালেও দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাঙ্ক প্রচলিত টাকার নোটের ওপর ব্যাঙ্কের গভর্নর এই মর্মে একটি অঙ্গীকারপত্র লিখে দেন যে “চাহিবা মাত্র ইহার বাহককে (**) টাকা দিতে বাধ্য থাকিবে।” সহজভাবে এ বিষয়টি বুঝায় যে আপনার বহনকৃত কাগজের নোটটির অঙ্গিকারনামায় উল্লিখিত অঙ্কের সমমূল্যের যেকোনো কিছু বিনিময় করার সামর্থ্য রয়েছে।
সহজ কথায় এর মানে হচ্ছে এই মুদ্রাটি যে কোন বৈধ লেনদেনের জন্য ব্যবহার করা যাবে। কেউ এই মুদ্রা গ্রহনে অস্বীকার বা মুদ্রার মান নিয়ে প্রশ্ন করতে পারবে না। লেনদেনের মাধ্যম হিসাবে মুদ্রাটি ব্যবহারে সবাই বাধ্য থাকবে। যেমন একটি 100টাকার নোট মানে 100টাকার সমপরিমানের সম্পদের বিনিময়ে মুদ্রাটি ব্যবহারের বৈধ সনদ।