শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
AbdulHalim

Call

 গ্রিক পুরাণে বর্ণিত ইকারুসের কথা সবার জানা। পিঠে মোমের ডানা লাগিয়ে তিনি পাখির মতো উড়তে চেয়েছিলেন। মহাবীর আলেকজান্ডারও ঈগলের রথে চেপে যেতে চেয়েছিলেন স্বর্গে। এমনইভাবে সেই প্রাচীন কাল থেকে মানুষ আকাশে ওড়ার স্বপ্ন বুকে লালন করে এসেছে। একদিন এই স্বপ্নই উড়োজাহাজের ধারণার জন্ম দেয়। রাইট ভ্রাতৃদ্বয় যেদিন তাদের চেষ্টায় সফল হলেন, সেদিন শুধু তাদের স্বপ্ন সত্যি হয়নি, সত্যি হয়েছে পুরো মানবজাতির অনন্তকালের স্বপ্ন।


রাইট ব্রাদার্সের সফলতার পর পেরিয়ে গেছে এক শতকেরও বেশি সময়। কালের পরিক্রমায় আধুনিক হতে হতে এখন হরহামেশাই আকাশে উড়তে দেখা যায় উড়োজাহাজ, হেলিকপ্টার। কিন্তু তবু এই বাহন মানুষের সাধ্যের বাইরে রয়ে গেছে। সাতশ কোটি মানুষের এই বিশ্বে হাতে গোনা মাত্র কয়েকজন ব্যক্তিগত প্লেনের মালিক। বাকিদের ওড়ার শখ কিংবা প্রয়োজন মেটে টিকিট কেটে এয়ারলাইন্সের বিশাল বপুর প্লেনগুলোয় চেপে।
image
ফলে আকাশে ওড়ার স্বপ্ন মানুষের সত্যি হলেও তা বলতে গেলে এখনও নাগালের বাইরে। কারণ যাত্রীবাহী প্লেনগুলোকে চাইলেই নিজের পছন্দের রুটে নিয়ে যেতে পারেন না কেউ। আর হেলিকপ্টারে কখনো প্লেনের স্বাদ পাওয়া সম্ভব নয়। মানুষের এ সীমাবদ্ধতার কথা মাথায় রেখেই ক্যালিফর্নিয়াভিত্তিক প্লেন নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইসিওএন নিয়ে এসেছে স্বল্প বাজেটের হালকা স্পোর্ট এয়ারক্রাফট।

ব্যক্তিগত পর্যায়ে আকাশভ্রমণ সহজলভ্য করতে ২০০৪ সালে মার্কিন কেন্দ্রীয় বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষ (এফএএ) একটি পরিকল্পনা করে। এ পরিকল্পনার অংশ হিসেবে লাইট স্পোর্ট এয়ারক্রাফট তৈরির লক্ষ্যে আগ্রহী নির্মাতাদের আইনানুগ অনুমতিও দিয়ে দেয় সংস্থাটি।

এরই ধারায় চলতি বছর জুলাই মাসে আইসিওএন উন্মুক্ত করেছে তাদের প্রথম স্পোর্ট এয়ারক্রাফট ‘এ-ফাইভ’। বিশেষ এই প্লেনটি জল ও স্থলে উড্ডয়ন ও অবতরনে সক্ষম। প্লেনটি নির্মাণে আইসিওএন তাদের প্রকল্পের নাম দেয় ‘সবার জন্য উড্ডয়নের স্বাধীনতা, আনন্দ ও উত্তেজনা’।
image
এই সিরিজের প্রতিটা এয়ারক্রাফট তৈরিতে আইসিওএন’র খরচ পড়েছে এক লাখ ৮৯ হাজার ডলার (এক কোটি ৪৭ লাখ ৮৯ হাজার টাকা), যা যেকোনো প্রাইভেট জেটের তুলনায় বলতে গেলে নগন্য। ফলে আগের চেয়ে আরও অনেক বেশি মানুষের সাধ্যের আওতায় চলে এসেছে ব্যক্তিগত প্লেন।

৬৮৬ কেজি ওজনের এ-ফাইভ এয়ারক্রাফট খুব সহজেই স্থানান্তরও করা যায়। এর পাখাগুলো ভাঁজ করে ট্রেইলার দিয়ে এক স্থান থেকে অন্য স্থানে নেওয়া যায়। আর উড্ডয়ন ও অবতরনের ক্ষেত্রেও খুবই স্বল্প পরিসরে কাজ সারা যায়। স্থলে মাত্র ৭১০ ফুটের রানওয়ে এবং জলে ৯২০ ফুটের খোলা স্থান পেলেই প্লেনটি ওঠানো-নামানো যায়।

প্লেন চালনায় অনভিজ্ঞদের কথা মাথায় রেখে এ-ফাইভ’র অপারেটিং সিস্টেমও খুব সহজ করে তৈরি করা হয়েছে। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান আইসিওএন প্লেনটিকে বলছে, ‘ডানাওয়ালা স্পোর্টস কার’। তবে চাইলেই প্লেনটি কিনে ওড়ানো যাবে না। যুক্তরাষ্ট্রে এর জন্য লাগবে স্পোর্ট পাইলট লাইসেন্স (এসপিএল)। আর যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে এখনও এর বাজারজাত শুরু হয়নি। 
image
এরই মধ্যে প্লেনটিকে নিম্ন উচ্চতায় ও স্বল্প জনবসতির এলাকায় ওড়ানোর অনুমতি দেওয়া হয়েছে। সেই সঙ্গে প্রথম এ-ফাইভ এয়ারক্রাফটটি বিক্রিও হয়ে গেছে। কিনেছেন চেসনা এয়ারক্রাফট’র সাবেক প্রধান নির্বাহী জ্যাক পেলটন। তার মতে, প্লেনটি ওড়ানো অবিশ্বাস্যভাবে সহজ, নিরাপদ এবং দারুন আনন্দের।

এ পর্যন্ত দেড় হাজারেরও বেশি মানুষ এ-ফাইভ কিনতে লাইন দিয়েছেন। এ লাইনে যেমন আছেন সার্চ জায়ান্ট গুগলের চেয়ারম্যান এরিক স্কিমিডট, একই ভাবে রয়েছেন স্পোর্টস অর্গানাইজেশন এনএএসসিএআর’র চালক কার্ল এডওয়ার্ডস। তারা প্রত্যেকে পাঁচ হাজার ডলার (তিন লাখ ৮৭ হাজার টাকা) করে জামানতের অর্থও জমা দিয়েছেন। তবে আগ্রহীদের চাহিদা এখনই মিটছে না। তাদের সবাইকে অপেক্ষা করতে হবে ২০১৯ সাল পর্যন্ত। আইসিওএন যদিও বলছে, তারা উৎপাদন তরান্বিত করেছে, তবু এই গ্রাহক চাহিদা মেটাতে তাদের আরও চার বছর লাগাতার কাজ করে যেতে হবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ