শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

রোজাদারের জন্য যা বৈধঃ (ক) স্ত্রীর সাথে মিলন করার পর গোসল করে পবিত্র হওয়ার পূর্বে সকাল হয়ে যাওয়ার ভয় থাকলে অপবিত্র অবস্থায়ই সাহুরী খেয়ে রোজার নিয়ত করে নিতে পারবে। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, রামাযানের রাত্রিতে স্ত্রী সহবাসের পর গোসল করে পবিত্র হওয়ার আগেই কখনও কখনও রাসূলুল্লাহ (সাঃ)এর সকাল (ফজর) হয়ে যেত। অতঃপর সকাল হয়ে যাওয়ার পর তিনি গোসল করতেন এবং রোজা রাখতেন। (বুখারী ও মুসলিম) (খ) রোজা অবস্থায় মেসওয়াক করাতে কোন অসুবিধা নেই। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন, আমি যদি আমার উম্মাতের উপর কঠিন না মনে করতাম, তাহলে প্রত্যেক অযুর পূর্বে মেসওয়াক করতে আদেশ দিতাম। (বুখারী ও মুসলিম) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) অত্র হাদীসে রোজাদারকে পৃথক করেননি। যাতে বুঝা যাচ্ছে রোজাদারও প্রত্যেক নামাজ ও অযুর পূর্বে মেসওয়াক করতে পারবে। সূর্য পশ্চিমাকাশে ঢলে যাওয়ার আগে মেসওয়াক করা যাবে, পরে করা যাবেনা এধরণের কথা বলা ঠিক নয়। কেননা রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রোজা থাকা অবস্থায় দিনের প্রথমভাগে ও শেষভাগে অর্থাৎ সব সময় মেসওয়াক করতেন। (গ) রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রোজা অবস্থায় কুলি করতেন এবং নাকে পানি দিতেন। তবে রোজা অবস্থায় বেশী করে নাকে দিতে এবং গড়গড়া করে কুলি করতে নিষেধ করেছেন। (আবু দাউদ) (ঘ) রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন করা ও তার শরীরের সাথে শরীর লাগানোতে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। আয়েশা (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ রাসূলুল্লাহ (সাঃ) রোজা অবস্থায় স্ত্রীদেরকে চুম্বন করতেন এবং তাদের সাথে বিনোদন করতেন। তবে তিনি আপন প্রবৃত্তি নিয়ন্ত্রনে তোমাদের চেয়ে অধিক শক্তিশালী ছিলেন। (বুখারী ও মুসলিম) যে সমস্ত যুবক নিজেদেরকে সামলাতে পারবেনা, তাদের জন্য রোজা অবস্থায় স্ত্রীকে চুম্বন ও আলিঙ্গন করা থেকে বিরত থাকাই শ্রেয়। (ঙ) পানাহারের কাজ দেয়না, এমন ইনজেকশন নিলে অথবা পরীক্ষা করার জন্য রক্ত বের করলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। তেমনিভাবে দাঁত উঠালে, অনিচ্ছাকৃতভাবে রোগের কারণে বমি আসলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। (চ) মহিলাগণ রান্না করার সময় তরকারীর লবন ও বিভিন্ন অবস্থা পরীক্ষা করার জন্য জিহবা দ্বারা তরকারীর স্বাদ নিলে রোজার কোন ক্ষতি হবেনা। তবে তা গলা পর্যন্ত না যাওয়াই শ্রেয়। (ছ) চোখে ড্রপ ব্যবহার করলে এবং নাকের ছিদ্র দিয়ে ঔষধ প্রবেশ করালেও রোজা নষ্ট হবেনা। এমনিভাবে শরীরের যে কোন অংশ দিয়ে ঔষধ প্রবেশ করানোতে কোন অসুবিধা নেই। তবে শর্ত হচ্ছে যে ঔষধ যেন পানাহারের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার না হয়। (জ) প্রচন্ড গরমের দিনে শরীরে পানি ঢালা, বেশী বেশী গোসল করায় কোন অসুবিধা নেই। (ঝ) ভুলবশতঃ পানহার করে ফেললেও রোজা নষ্ট হবেনা। তবে মনে হওয়ার সাথে সাথে পানাহার বন্ধ করে দিতে হবে এবং দিনের বাকী অংশ না খেয়ে থাকতে হবে। এ অবস্থায় রোজা বিশুদ্ধ হবে। কাযা বা কাফ্ফারা কোনটিই ওয়াজিব হবেনা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

সিয়াম অবস্থায় নিম্নোক্ত কাজ করলে সিয়ামের কোন ক্ষতি হবে না : [১] শুধুমাত্র রোগ আরোগ্যের জন্য যে ইনজেকশান দেয়া হয়। [২] কুলি করা, নাকে পানি দেয়া। তবে গড়গড়া করবে না। নাকের খুব ভিতরে পানি টান দিয়ে নেবে না। [৩] মিসওয়াক করা, মাজন ও টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পারবে। তবে গলার ভিতর যাতে না ঢুকে সে জন্য সতর্ক থাকতে হবে। [৪] গরম থেকে বাঁচার জন্য মাথায় শীতল পানি দেয়া, গোসল করা, ভিজা কাপড় গায়ে জড়িয়ে রাখা। [৫] জিহ্বা দিয়ে খাদ্য বা তরী-তরকারীর স্বাদ দেখা। [৬] সুরমা ব্যবহার, চোখে বা কানে ঔষধ ব্যবহার। [৭] স্ত্রীকে স্পর্শ করা। [৮] রাত্রি বেলায় স্ত্রী সহবাস করা। [৯] কোন কিছুর ঘ্রাণ নেয়া। তবে ধুমপান, আগরবাতি ও চন্দন কাঠের ধোঁয়া বা ধুপ গ্রহণ করবে না। [১০] সিংগা লাগানো। উপরোক্ত কয়েকটি বিষয়ে দলীল নিম্মে দেয়া হল : ﺑَﺎﻟِﻎْ ﻓِﻲ ﺍﻻِﺳْﺘِﻨْﺸَﺎﻕِ ﺇِﻻَّ ﺃَﻥْ ﺗَﻜُﻮﻥَ ﺻَﺎﺋِﻤًﺎ (ক) সিয়াম অবস্থায় না থাকলে অযুর সময় নাকের ভিতর উত্তমরূপে পানি টেনে নেবে। (তিরমিযী ৩য় ১৪৬) ﻟَﻮْﻻَ ﺃَﻥْ ﺃَﺷُﻖَّ ﻋَﻠَﻰ ﺃُﻣَّﺘِﻲ ﻟَﺄَﻣَﺮْﺗُﻬُﻢْ ﺑِﺎﻟﺴِّﻮَﺍﻙِ ﻋِﻨْﺪَ ﻛُﻞِّ ﻭُﺿُﻮﺀٍ (খ) আমার উম্মতের কষ্টবোধ হবে এ আশঙ্কা না থাকলে প্রত্যেক অযুর সময় মিসওয়াক করার নির্দেশ দিতাম। (বুখারী) ﻛﺎﻥ ﺭَﺳُﻮﻝُ ﺍﻟﻠﻪِ –ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ – ﻳَﺼُﺐُّ ﺍﻟْﻤَﺎﺀَ ﻋَﻠَﻰ ﺭَﺃْﺳِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﻌَﻄَﺶِ ﺃَﻭْ ﻣِﻦْ ﺍﻟْﺤَﺮِّ (গ)সিয়াম অবস্থায় তাপ বা পিপাসার কারণে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার মাথায় পানি ঢালতেন। (আবূ দাঊদ-২৩৬৫) ﻻَ ﺑَﺄْﺱَ ﺃَﻥ ﻳَّﺬُﻭْﻕَ ﺍﻟْﺨَﻞَّ ﺃَﻭِ ﺍﻟﺸَّﻲْﺀَ ﻣَﺎﻟَﻢْ ﻳَﺪْﺧُﻞْ ﺣَﻠْﻘِﻪِ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ (ঘ) গলার ভিতর প্রবেশ না করলে সিয়াম অবস্থায় তরকারী বা খাদ্যের স্বাদ দেখতে কোন অসুবিধা নেই। (বুখারী) ﻟَﻢْ ﻳَﺮَ ﺃَﻧَﺲٌ ﻭَﺍﻟْﺤَﺴَﻦُ ﻭَﺇِﺑْﺮَﺍﻫِﻴْﻢُ ﺑِﺎﻟْﻜُﺤْﻞِ ﻟِﻠﺼَّﺎﺋِﻢِ ﺑَﺄْﺳًﺎ আনাস রাদিআল্লাহু আনহু, হাসান ও ইবরাহীম (রহ.) সিয়াম পালনকারীদের জন্য সুরমা ব্যবহার কোনরূপ অসুবিধা মনে করতেন না। (বুখারী) ﻛَﺎﻥَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ- ﻳُﻘَﺒِّﻞُ ﻭَﻳُﺒَﺎﺷِﺮُ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ ﻭَﻟﻜِﻦْ ﻛَﺎﻥَ ﺃَﻣْﻠَﻜَﻜُﻢْ ﻟِﺈِﺭْﺑِﻪِ (ঙ) রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় (স্ত্রী) চুম্বন করতেন, শরীরে শরীর স্পর্শ করতেন। কেননা, তিনি তার প্রবৃত্তির (যৌন চাহিদা) উপর তোমাদের চেয়ে অধিক নিয়ন্ত্রক ছিলেন। (বুখারী-১৯২৭) ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ -ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺍﺣْﺘَﺠَﻢَ ﻭَﻫُﻮَ ﺻَﺎﺋِﻢٌ (চ) নাবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সিয়াম অবস্থায় নিজের শরীরে শিঙ্গা লাগিয়েছেন। (বুখারী-১৯৩৮) ﺃَﻥَّ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲَّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﻛَﺎﻥَ ﻳُﺪْﺭِﻛُﻪُ ﺍﻟْﻔَﺠْﺮُ ﻭَﻫُﻮَ ﺟُﻨُﺐٌ ﻣِﻦْ ﺃَﻫْﻠِﻪِ ﺛُﻢَّ ﻳَﻐْﺘَﺴِﻞُ ﻭَﻳَﺼُﻮﻡُ (ছ) বিশ্বনবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রাতে সহবাস করে ফজর পর্যন্ত কাটিয়েছেন। অতঃপর গোসল করে ফজরের সলাত আদায় করছেন। (বুখারী ও মুসলিম)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ