যারা সম্মানার্থে দাঁড়ানোর পক্ষে মতামত পেশ করেন, তারা সা‘দ ইবনু মু‘আযের উক্ত হাদীছটি দলীল হিসাবে পেশ করে থাকেন। তারা উক্ত হাদীছের শেষ অংশ ﻗُﻮْﻣُﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﻴِّﺪِﻛُﻢْ -এর অর্থ করেন, ‘তোমরা তোমাদের নেতার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাও’। উক্ত ব্যাখ্যা বেশ কয়েকটি কারণে গ্রহণযোগ্য নয়। প্রথমতঃ উক্ত হাদীছটি মুসনাদে আহমাদে ছহীহ সূত্রে বর্ধিত আকারে এসেছে। ﻗُﻮْﻣُﻮْﺍ ﺇِﻟَﻰ ﺳَﻴِّﺪِﻛﻢ ﻓَﺄَﻧْﺰِﻟُﻮْﻩ ‘তোমরা তোমাদের নেতার দিকে এগিয়ে যাও এবং তাঁকে (গাধা হ’তে) নামিয়ে নাও’ (আহমাদ হা/২৫১৪০; সিলসিলা ছহীহাহ হা/৬৭)। এতে বুঝা যায় যে, অসুস্থ সা‘দ বিন মু‘আয (রাঃ)-কে গাধার পিঠ থেকে নামতে সাহায্য করার জন্যই রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাদেরকে এগিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছিলেন। এজন্যই হাফেয ইবনু হাজার আসক্বালানী (রহঃ) বর্ধিত অংশটুকু উল্লেখ করে বলেন, ﻫَﺬِﻩِ ﺍﻟﺰِّﻳَﺎﺩَﺓُ ﺗَﺨْﺪِﺵُ ﻓِﻰ ﺍﻟْﺎِﺳْﺘِﺪْﻻَﻝِ ﺑِﻘِﺼَّﺔِ ﺳَﻌْﺪٍ ﻋَﻠَﻰ ﻣَﺸْﺮُﻭْﻋِﻴَّﺔِ ﺍﻟْﻘِﻴَﺎﻡِ ﺍﻟْﻤُﺘَﻨَﺎﺯَﻉِ ﻓِﻴْﻪِ অর্থাৎ ‘এই বর্ধিত বর্ণনাটুকু সা‘দ ইবনু মু‘আয (রাঃ) সংশ্লিষ্ট বিবরণ দ্বারা বিতর্কিত ক্বিয়াম বা সম্মানার্থে দন্ডায়মান হওয়াকে শরী‘আতের দলীল সাব্যস্ত করার দাবীকে নাকচ করে দিয়েছে’ (ফাৎহুল বারী ১১/৬০-৬১ পৃঃ, হা/৬২৬২-এর আলোচনা দ্রষ্টব্য)। দ্বিতীয়তঃ তিনি অসুস্থ ছিলেন। ইহুদী গোত্র বনু কুরায়যার সাথে যুদ্ধের সময় তিনি তীরের আঘাত পেয়েছিলেন। আর যখমী অবস্থায় তিনি গাধার পিঠে সওয়ার হয়ে আসলে রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাকে নামতে সাহায্য করার নির্দেশ দেন। তৃতীয়তঃ ব্যাকরণগত দিক থেকেও তাদের বক্তব্য সঠিক নয়। কারণ রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) যদি সম্মানার্থে দাঁড়াতে বলতেন তাহ’লে বলতেন, ﻗُﻮْﻣُﻮْﺍ ﻟِﺴَﻴِّﺪِﻛُﻢْ ‘তোমরা তোমাদের নেতার সম্মানার্থে দাঁড়িয়ে যাও’। কারণ আরবী ব্যাকরণ মতে, ﻗﻴﺎﻡ শব্দের ﺻﻠﻪ বা সম্বন্ধ যখন ﺇﻟﻰ আসে, তখন তা সহযোগিতা অর্থে আসে। আর যখন ﻝ আসে, তখন তা সম্মান অর্থে আসে। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) তাঁর নির্দেশে ﺇﻟﻰ সম্বন্ধপদ প্রয়োগ করেছেন। অতএব এর অর্থ হবে, ‘তোমরা তোমাদের নেতার সাহায্যার্থে দন্ডায়মান হও’ (মিরক্বাতুল মাফাতীহ ৯/৮৩ পৃঃ)। (এ বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা দেখুন সিলসিলা ছাহীহাহ হা/৬৭-এর ব্যাখ্যা)। ইসলামী শরী‘আতে কারো সম্মানার্থে দাঁড়ানো বা দাঁড়িয়ে নীরবতা পালন করা নাজায়েয। এটি একটি জাহেলী প্রথা, যা বর্জন করা আবশ্যক। রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) বলেছেন, ‘যে ব্যক্তি এতে আনন্দ পায় যে, লোকজন তার সম্মানে দাঁড়িয়ে যাক, সে যেন তার স্থান জাহান্নামে করে নিল’ (আবুদাঊদ, তিরমিযী, মিশকাত হা/৪৬৯৯ সনদ ছহীহ, ‘ক্বিয়াম’ অনুচ্ছেদ)। অন্য হাদীছে এসেছে, হযরত আনাস (রাঃ) বলেন, ছাহাবায়ে কেরামের নিকট রাসূলুল্লাহ (ছাঃ) অপেক্ষা কোন ব্যক্তিই অধিক প্রিয় ছিলেন না। অথচ তারা কখনো রাসূলুল্লাহ (ছাঃ)-কে দেখে দাঁড়াতেন না (তিরমিযী হা/২৭৫৪; সনদ ছহীহ, মিশকাত হা/৪৬৯৮)।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ