Call

আত্মহত্যা এতই গর্হিত কাজ যে এর প্রতি ধিক্কার জানিয়ে অন্যদেরকে এ থেকে সতর্ক করতে রাসূলুল্লাহ (সাঃ) আত্মহত্যাকারীর জানাযা ত্যাগ করেন। যেমন জাবের বিন সামুরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন— ﺃُﺗِﻰَ ﺍﻟﻨَّﺒِﻰُّ - ﺻﻠﻰ ﺍﻟﻠﻪ ﻋﻠﻴﻪ ﻭﺳﻠﻢ - ﺑِﺮَﺟُﻞٍ ﻗَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﺑِﻤَﺸَﺎﻗِﺺَ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ . ‘নবী সা. সমীপে এক ব্যক্তিকে আনা হলো যিনি নিজেকে তরবারীর ফলা দিয়ে মেরে ফেলেছে। ফলে তিনি তার জানাযা পড়লেন না।’ [মুসলিম : ২৩০৯] অপর বর্ণনায় রয়েছে, জাবের বিন সামুরা থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ﺃَﻥَّ ﺭَﺟُﻼ ﻣِﻦْ ﺃَﺻْﺤَﺎﺏِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲِّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ ﺃَﺻَﺎﺑَﺘْﻪُ ﺟِﺮَﺍﺡٌ ، ﻓَﺂﻟَﻤَﺖْ ﺑِﻪِ ، ﻓَﺪَﺏَّ ﺇِﻟَﻰ ﻗَﺮْﻥٍ ﻟَﻪُ ﻓِﻲ ﺳَﻴْﻔِﻪِ ﻓَﺄَﺧَﺬَ ﻣِﺸْﻘَﺼًﺎ ﻓَﻘَﺘَﻞَ ﻧَﻔْﺴَﻪُ ﻓَﻠَﻢْ ﻳُﺼَﻞِّ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﺍﻟﻨَّﺒِﻲُّ ﺻَﻠَّﻰ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﻋَﻠَﻴْﻪِ ﻭَﺳَﻠَّﻢَ " . নবী সা. এর এক সাহাবী আহত হন। এটি তাকে প্রচণ্ড যন্ত্রনা দেয়। তখন তিনি হামাগুড়ি দিয়ে একটি শিংয়ের দিকে এগিয়ে যান, যা তার এক তরবারির মধ্যে ছিল। এরপর তিনি এর ফলা নেন এবং আত্মহত্যা করেন। এ কারণে রাসূলুল্লাহ সা. তার জানাযা পড়ান নি। [তাবরানী : ১৯২৩] চলুন এবার আমরা প্রসিদ্ধ মুহাদ্দীসিনে কেরামের কাছ থেকে এই হাদীসগুলোর ব্যাখ্যা জানবো। ফাঁসি, বিষপান বা অন্য কোন উপায়ে আত্মহত্যাকারীর জানাযা ছালাত বিষয়ে তাদের কি বক্তব্য, তা জানবো। এখানে, "রসূল সা.-এর নিকট তীর বা বর্শার আঘাতে আত্মহত্যা করেছে এমন এক ব্যক্তির লাশ আনা হয়। তিনি তার জানাযা পড়াননি।" এর ব্যাখ্যা প্রসঙ্গে ইমাম নববী বলেন যে, হযরত ওমর বিন আব্দুল আযীয ও ইমাম আওযায়ীর মতে এরূপ ব্যক্তির জানাযা জায়েয নেই। তবে ইমাম হাসান বসরী, ইমাম নাখয়ী, ইমাম মালেক, ইমাম আবু হানিফা, ইমাম শাফেয়ী ও অন্যান্য সংখ্যাগরিষ্ঠ আলেমের মতে তার জানাযা পড়া যাবে। এ হাদিসের ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে তাঁরা বলেন, রসূল সা.-এর জানাযা না পড়ানোর উদ্দেশ্য ছিলো কেবল জনগণকে সাবধান করা, যেনো তার এই গুনাহর কাজ না করে। সাহাবায়ের কিরাম তার জানাযা পড়েছেন। এরপর ইমাম নববী সেই ঋণগ্রস্থ ব্যক্তির উদাহরণ দিয়েছেন এবং কাযী ইয়াযের উক্তি উদ্ধৃত করেছেন যে, প্রত্যেক মুসলমানের জানাযা পড়া উচিত এটাই সকল আলেমের অভিমত, চাই তার উপর শরিয়তের দণ্ড কার্যকর হয়ে থাক, পাথর নিক্ষেপে মারা যাক কিংবা আত্মহত্যা করুক। আবু দাউদের জানাযা সংক্রান্ত অধ্যায়েও এই মর্মে একটি হাদিস রয়েছে এবং তাতে রসূল সা.-এর শুধুমাত্র এই কথাটির উদ্ধৃতি রয়েছে যে, আমি এ ব্যক্তির জানাযা পড়াবোনা। এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম খাত্তাবী বলেন, অধিকাংশ ফকীহর মত, এরূপ ব্যক্তির জানাযা নামায পড়া হবে। হাফেয মুনযিরীও বলেছেন, রসূল সা.-এর জানাযা না পড়ানোর উদ্দেশ্য ছিলো মানুষকে হুশিয়ার করা। তিরমিযী শরিফের জানাযা সংক্রান্ত অধ্যায়েও এই মর্মে একটি হাদিস সন্নিবেশিত হয়েছে। হাদিসটি নিম্নরূপ : --------------------------------------------------------------------------------- "হযরত জাবের বিন সামুরা জানান, এক ব্যক্তি আত্মহত্যা করেছিল, রসূল সা. তার জানাযা পড়াননি।" এ হাদিসের ব্যাখ্যায় ইমাম তিরমিযী বলেন যে, আত্মহত্যাকারীদের জানাযা নিয়ে মতভেদ রয়েছে। অনেকের মতে, প্রত্যেক মুসলমানের এমনকি আত্মহত্যাকারীরও জানাযা নামায জায়েয। ইমাম আহমদের মত হলো, নেতা ও শাসকের জানাযা পড়ানো ঠিক নয়। তবে অন্যদের পড়া উচিত। মাওলানা আব্দুর রহমান মুবারকপুরী স্বীয় গ্রন্থ 'তুহফাতুল আহওয়াযী'তে প্রথমে ইমাম নববীর উপরোক্ত বক্তব্য উদ্ধৃত করেছেন। অতপর 'নাইলুল আওতার' এর বরাত দিয়ে ইমাম শওকানীর উক্তি তুলে ধরেছেন যে, ইমাম মালেক, ইমাম শাফেয়ী, ইমাম আবু হানিফা এবং অধিকাংশ আলেমের মতে ঘোরতর পাপিরও জানাযা নামায পড়া জায়েয। আত্মহত্যাকারীর জানাযা যদিও রসূল সা. পড়াননি, কিন্তু সাহাবায়ে কিরাম পড়িয়েছেন। সুনানে নাসায়ী থেকেও এই বক্তব্য সমর্থিত হয়। কেননা হাদিসে রসূল সা.- এর কেবল এতোটুকু কথা উদ্ধৃত করা হয়েছে যে, ------------ 'তার জানাযা আমি তো পড়াবোনা।' এর তাৎপর্য অন্য কথায় এই দাঁড়ায় যে, রসূল সা. শুধু নিজেই জানাযা নামায থেকে বিরত থেকেছেন, কিন্তু সাহাবায়ে কিরামকে পড়বার অনুমতি দিয়েছেন। আমি শুরুতেই বলেছি, হানাফি ফিকাহ শাস্ত্রবিদগণের মতামতও দু'রকমের পাওয়া যায়। তবে আমি মনে করি, জায়েয হওয়ার মতটিই অপেক্ষাকৃত শুদ্ধ ও অগ্রগণ্য। দুররে মুখতারে বলা হয়েছে : ---------------------------------------------------------- "সজ্ঞানেও যদি কেউ আত্মহত্যা করে তবে তাকে গোসল দিতে হবে ও জানাযা পড়তে হবে। এটাই কার্যকর বিধান বা ফতোয়া।" এই উক্তির ব্যাখ্যা দিতে গিয়ে ইমাম ইবনে আবেদীন 'রদ্দুল মুখতারে' বলেন : "সেসব হিসেবে দাঁড় করেছেন, তাদের যুক্তির পক্ষে হাদিস থেকে সমর্থন পাওয়া যায়না। হাদিসে শুধু বলা হয়েছে যে, রসূল সা. জানাযা পড়াননি। শুধু শিক্ষা দেয়াই এর উদ্দেশ্য ছিলো। এমন কথা বলা হয়নি যে, সাহাবায়ে কিরামও জানাযা পড়েননি। রসূল সা.-এর জানাযা পড়ানো এবং অন্যদের জানাযা পড়ানো এক কথা নয়। এরূপ ব্যক্তি তওবা করেনি বা তার তওবা কবুল হয়নি, এমন কথা বলা কঠিন। কেননা তওবা তো যে কোনো গুনাহগারের কবুল হতে পারে, এমনকি কাফেরেরও হতে পারে।" 'রদ্দুল মুকতার' গ্রন্থকারের উপরোক্ত অভিমত সম্পূর্ণ সঠিক ও ন্যায়সঙ্গত। যে ব্যক্তিকে সবাই মুসলমান বলে জানে এবং কাফের আখ্যায়িত করার মতো যথেষ্ট অকাট্য যুক্তি নেই, তাকে জানাযার নামায ও দোয়া দ্বারা উপকৃত হওয়ার অবাধ অধিকার থেকে বঞ্চিত করা যায়না। কেননা হাদিসের সুস্পষ্ট উক্তি দ্বারা এ অধিকার প্রত্যেক মুসলমানকে দেয়া হয়েছে। হাদিসে এক মুসলমানের উপর অপর মুসলমানের প্রাপ্য যে কয়টি অধিকার বর্ণনা করা হয়েছে, জানাযা পড়া তার অন্যতম। তাছাড়া যে সমাজে আমরা বসবাস করছি, তাও দৃষ্টিপথে রাখতে হবে। এখানে অসংখ্য লোক এমন রয়েছে, যারা নামায, রোযা, হজ্জ, যাকাত ইত্যাদি ফরয তরক করে চলছে এবং নরহত্যা, মদ্যপান, ব্যভিচার ও অন্যান্য কবিরা গুনাহে লিপ্ত। তাদের সবার জানাযা পড়া হবে, আর কেবল আত্মহত্যাকারীর জানাযা পড়া হবেনা এবং অন্যদেরকেও পড়তে নিষেধ করা হবে- এটা একটা অদ্ভুত ব্যাপার। এ কথা নি:সন্দেহে সত্য যে, আল্লাহ ও রসূল সা. যদি সুস্পষ্ট ভাষায় বলে দিতেন যে, আত্মহত্যাকারী বা অমুক কবিরা গুনাহকারীর জানাযা কোনো মুসলমান পড়তে পারবেনা, তাহলে আমরা কখনো এ হুকুম অমান্য করার ধৃষ্ঠতা দেখাতাম না। কিন্তু এ ধরণের সুস্পষ্ট নির্দেশ যখন নেই, তখন সঠিক তথ্যনির্ভর মত এবং সতর্ক কর্মপন্থা এটাই হতে পারে যে, আমরা কোনো ব্যক্তির জানাযা পড়তে না চাইলে নাই পড়লাম, কিন্তু যে ব্যক্তি কাফের নয় এবং ইসলামের গণ্ডির বাইরে নয়, তার জানাযা পড়া নিষেধ বলে ফতোয়া দেয়া উচিত নয় এবং অন্যদেরকেও জানাযা পড়া থেকে বিরত রাখা উচিত নয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
shahidrand1

Call

আত্মহত্যা কবীরা গুনাহ। রাসুল(সঃ)সহ রাষ্ট্রের উচু পর্যায়ের কেউ যেমন হযরত উমর(রাঃ), আবুবকর(রাঃ),হযরত আলী(রাঃ)সহ বহু উচু পর্যায়ের সাহাবীরা এই ধরনের জানাযায় অংশগ্রহন করতেন না না। উনাদের সময় একটা নিয়ম হয়ে গিয়েছিল কারা জানাযায় অংশগ্রহন করবেন না। কারন হচ্ছে, এই ধরনের কাজ যারা করে, তাদের চিন্তায় যেন এটা থাকে, আমি আত্মহত্যা করলে, দেশের মহান সম্মানিত সাহাবীরা বা রাসুল(সঃ) জানাযায় অংশগ্রহন করবেন না। সবচেয়ে বড় কথা,সবাইকে এটা জানানো, শরিয়তের দৃষ্টিকোন থেকে এটা বড় গুনাহ। কিন্তু লাশ তো উপরে থাকবে না। এখানেও কিছু মানুষ তৈরী হয়ে গিয়েছিল, কে কে জানাযায় অংশগ্রহন করবে। ধন্যবাদ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ