কিছু কিছু মুসলিম বলে যে বাজনা সহকারে গান শুনলে তা হারাম আসলে কী তা ঠিক যদি ঠিক হয় তবে ক্বোরআনের প্রমান দেখান।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
mdsaim

Call

স্কুলে আমাদের শিশু-কিশোরদের সাধারণ শিক্ষার পাশাপাশি অত্যন্ত সুকৌশলে শিক্ষা দেওয়া হচ্ছে গান, বাজনা, তবলা, সারিন্দা, হারমুনিয়াম ইত্যাদি । ওদের মুরুব্বী আবুজেহেল, আবু লাহাবেরা পবিত্র কোরআনের প্রচার-প্রসারে বিঘ্নতা সৃষ্টির লক্ষ্যে যে আদর্শ (?) রেখে গেছে, তা-ই তারা অবলম্বন করছে মাত্র । মক্কার কাফের মুশরিকরা কোরআন শিক্ষা তথা কোরআন শ্রবণ থেকে মানুষদের বিরত রাখার জন্য ঘোষণা দিয়েছিল । وَقَالَ الَّذِينَ كَفَرُوا لَا تَسْمَعُوا لِهَذَا الْقُرْآَنِ وَالْغَوْا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَغْلِبُونَ অর্থঃ আর কাফেরেরা বলে, তোমরা এ কোরআন শ্রবণ করোনা, এবং এর আবৃত্তিতে হট্টগোল সৃষ্টি কর, যাতে তোমরা জয়ী হও । ( সূরা হা-মীম সেজদা আয়াত: ২৬) তাফছিরে কুরতুবীতে লিখেন :- হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস (রাঃ) বলেন, আবু জেহেল অন্যদেরকে প্ররোচিত করল যে, মুহাম্মদ যখন কোরআন তেলাওয়াত করে, তখন তোমরা তার সামনে গিয়ে হৈ-হুল্লোড় করতে থাকবে, যাতে সে কি বলছে তা কেউ বুঝতে না পারে । কেউ কেউ বলেন, কাফেরেরা শিশ দিয়ে, তালি বাজিয়ে এবং নানারূপ শব্দ করে কোরআন শ্রবণ থেকে মানুষকে বিরত রাখার প্রস্তুতি নিয়েছিল । ( সংক্ষেপিত মাআরিফুল কোরআন -১২০৪ পৃঃ) কোরানের দলীল: আল্লাহ তাআলা সূরা লুকমানে আখেরাত-প্রত্যাশী মুমিনদের প্রশংসা করার পর দুনিয়া-প্রত্যাশীদের ব্যাপারে বলছেন, ((وَمِنَ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ بِغَيْرِ عِلْمٍ وَيَتَّخِذَهَا هُزُوًا أُولَئِكَ لَهُمْ عَذَابٌ مُهِينٌ)) অর্থঃ “এক শ্রেণীর লোক আছে যারা মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে অবান্তর কথাবার্তা সংগ্রহ করে অন্ধভাবে এবং উহাকে (আল্লাহর পথ) নিয়ে ঠাট্টা বিদ্রুপ করে । এদের জন্যে রয়েছে অবমাননাকর শাস্তি”। (সূরা লোকমান আয়াত ০৬) উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল । কেউ কুরআন শ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবং বলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে । এতে শুধু কষ্টই কষ্ট । তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর । -মাআরিফুল কুরআন ১০৫২ পৃঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. কে উক্ত আয়াতের ‘লাহওয়াল হাদীস’-এর ব্যাখ্যা জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘তা হল গান’ । আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা., আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. একই কথা বলেন । তাবেয়ী সায়ীদ ইবনে যুবাইর থেকেও অনুরূপ মত বর্ণিত হয়েছে । বিখ্যাত তাবেয়ী হাসান বসরী রাহ. বলেন, উক্ত আয়াত গান ও বাদ্যযন্ত্রের ব্যাপারে নাযিল হয়েছে, যা বান্দাকে কুরআন থেকে গাফেল করে দেয় । (তাফসীরে ইবনে কাসীর ৩/৪৪১. তাফসিরে তাবারী) কুরআন মজীদের অন্য আয়াতে আছে, ইবলিস-শয়তান আদম সন্তানকে ধোঁকা দেওয়ার আরজী পেশ করলে আল্লাহ তাআলা ইবলিসকে বললেন, -“তোর আওয়াজ দ্বারা তাদের মধ্য থেকে যাকে পারিস পদস্খলিত কর।” -সূরা ইসরা : ৬৪ এ আয়াতের ব্যাখ্যায় আবদুল্লাহ ইবনে আব্বাস রা. বলেন, যে সকল বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তাই ইবলিসের আওয়াজ । বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. বলেন, ইবলিসের আওয়াজ বলতে এখানে গান ও বাদ্যযন্ত্রকে বোঝানো হয়েছে । আল্লামা ইবনুল কাইয়্যিম রাহ. বলেন, এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, যেসব বস্তু পাপাচারের দিকে আহ্বান করে তার মধ্যে গান-বাদ্যই সেরা । এজন্যই একে ইবলিসের আওয়াজ বলে আখ্যায়িত করা হয়েছে । -ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৯ হাদীসের দলীলঃ- হযরত জাবির (রা) থেকে বর্ণিত, হুজুর (স.) ইরশাদ করেন, গান মানুষের অন্তুরে মুনাফেকির জন্ম দেয় যেমন পানি শস্য উৎপাদন করে । - বায়হাকী, মিশকাত : ৪১১ সাহাবী ও তাবেয়ীদের ভাষ্য অনুযায়ী বহু গুনাহর সমষ্টি হল গান ও বাদ্যযন্ত্র । যথা : ক) নিফাক এর উৎস খ) ব্যভিচারের প্রেরণা জাগ্রতকারী গ) মস্তিষ্কের উপর আবরণ ঘ) কুরআনের প্রতি অনিহা সৃষ্টিকারী ঙ) আখিরাতের চিন্তা নির্মূলকারী চ) গুনাহের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টিকারী ও ছ) জিহাদী চেতনা বিনষ্টকারী । -ইগাছাতুল লাহফান ১/১৮৭ অন্য এক হাদিসে এসেছে, হযরত আবু উমামা (রাজিঃ) থেকে বর্ণিত, রাসুল {সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম} ইরশাদ করেন : তোমরা গায়িকা নারীদের বেচা-কেনা করো না, ওদেরকে গান শিক্ষা দিও না, ওদের ব্যবসায় কোন প্রকার কল্যাণ নেই, ওদের উপার্জিত পয়সা হারাম, আর ওদের ক্ষেত্রেইতো পবিত্র কোরআনের এই আয়াত { وَمِنْ النَّاسِ مَنْ يَشْتَرِي لَهْوَ الْحَدِيثِ لِيُضِلَّ عَنْ سَبِيلِ اللَّهِ } অবতীর্ণ হয়েছে । (জামে তিরমিযী হাদীস : ১২৮২; ইবনে মাজাহ হাদীস : ২১৬৮) হযরত আবু উমামা রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুল {সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম} ইরশাদ করেছেন যে, মহান আল্লাহ আমাকে জগদ্বাসীর জন্য রহমত ও বরকত এবং হিদায়ত ও পথপ্রদর্শক হিসাবে প্রেরণ করেছেন । আর আমার সেই প্ররাক্রমশালী প্রভু আমাকে সর্বপ্রকারের ঢোল তবলা, যাবতীয় বাদ্যযন্ত্র, মূর্তিপূজা, শূলি ও ক্রুশ থেকে এবং জাহেলী যুগের কুপ্রথা ও কুসংস্কার নির্মূল ও ধংস সাধনের নির্দেশ দিয়েছেন । (ইমাম আহমাদ, সূত্র : মিশকাতুল মাসাবিহ, ২/৩১৮) হযরত জাবির ইবনে আব্দুল্লাহ থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওসাল্লাম) ইরশাদ করেছেন, গানবাজনা মানুষের অন্তরে মুনাফেকী উৎপাদন করে যেমন পানি শস্য উৎপাদন করে থাকে । (মিশকাত ২/৪১১) অন্য এক হাদিসে এসেছেঃ হযরত আবদুল্লাহ ইবনে মাসউদ রা. বলেন, পানি যেমন (ভূমিতে) তৃণলতা উৎপন্ন করে তেমনি গান মানুষের অন্তরে নিফাক সৃষ্টি করে । -ইগাছাতুল লাহফান ১/১৯৩; তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫২ বিখ্যাত তাবেয়ী হযরত নাফে’ রাহ. থেকে সহীহ সনদে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার চলার পথে আবদুল্লাহ ইবনে উমর রা. বাঁশির আওয়াজ শুনলেন । সঙ্গে সঙ্গে তিনি দুই কানে আঙ্গুল দিলেন । কিছু দূর গিয়ে জিজ্ঞাসা করলেন, হে নাফে’! এখনো কি আওয়াজ শুনছ ? আমি বললাম হ্যাঁ । অতঃপর আমি যখন বললাম, এখন আর আওয়াজ শোনা যাচ্ছে না তখন তিনি কান থেকে আঙ্গুল সরালেন এবং বললেন, একদা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম চলার পথে বাঁশির আওয়াজ শুনে এমনই করেছিলেন । -মুসনাদে আহমদ হাদীস : ৪৫৩৫; সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪৯২৪ বিখ্যাত তাবেয়ী মুজাহিদ রাহ. থেকেও এমন একটি হাদীস বর্ণিত হয়েছে ।-ইবনে মাজাহ হাদীস : ১৯০১ একদিন হযরত আয়েশা রা.-এর নিকট বাজনাদার নুপুর পরে কোনো বালিকা আসলে আয়েশা রা. বললেন, খবরদার, তা কেটে না ফেলা পর্যন্ত আমার ঘরে প্রবেশ করবে না । অতঃপর তিনি বললেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেছেন, যে ঘরে ঘণ্টি থাকে সেই ঘরে রহমতের ফেরেশতা প্রবেশ করে না ।-সুনানে আবু দাউদ হাদীস : ৪২৩১; সুনানে নাসাঈ হাদীস : ৫২৩৭; রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ইরশাদ করেন, ঘণ্টি বাজা ঘুঙুর হল শয়তানের বাদ্যযন্ত্র ।-সহীহ মুসলিম হাদীস : ২১১৪ রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন , আমার উম্মতের কিছু লোক মদের নাম পাল্টিয়ে তা পান করবে এবং বাদ্যযন্ত্র সহকারে গান করবে । আল্লাহ তাআলা তাদের ভুগর্ভে বিলীন করে দিবেন এবং কতকের আকৃতি বিকৃত করে বানর ও শুকরে পরিনত করে দিবেন । [ সুনানে ইবনে মাজাহ : ৪০২০ , সহীহ ইবনে হিব্বান : ৬৭৫৮ , আততিরমিযি বর্ণিত হাদীস নং-২২১২, জামিহ আল কাবির বুখারী কৃত , সুনানে বায়হাকী , মুসান্নাফে ইবনে শায়বা , আল মুজাম তাবরানী কৃত , বগভী, আদ দানি , আল সিলসিলাহ আস-সহীহাহ- ২২০৩, দাম আল মালাহী; ইবনে আবি দুনিয়া সহ আরো অনেক হাদীস গ্রন্থে বর্নিত হয়েছে] রাসুল (সঃ) ইরশাদ করেন: আমার উম্মতের মধ্যে এমন কিছু লোক আসবে যারা ব্যভিচার, রেশমী কাপড়, মদ এবং বাদ্যযন্ত্রকে বৈধতা দেবে । (আল বুখারী বর্ণিত, দেখুন আল ফাতহ, ১০/৫১) । রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “আমার উম্মতের মধ্য হতে একদল লোক এমন হবে যারা ব্যভিচার, রেশমি বস্ত্র পরিধান, মদ পান এবং বাদ্যযন্ত্র ব্যবহার ইত্যাদি হালাল মনে করবে । এবং কিছু লোক এমন হবে যারা একটি পর্বতের নিকটে অবস্থান করবে এবং সন্ধ্যাবেলায় তাদের মেষপালক তাদের নিকট মেষগুলো নিয়ে আসবে এবং তাদের নিকট কিছু চাইবে, কিন্তু তারা বলবে, ‘আগামীকাল ফেরত এসো’। রাতের বেলায় আল্লাহ তায়ালা তাদেরকে ধ্বংস করে দিবেন এবং তাদের উপর পর্বত ধ্বসিয়ে দিবেন, বাকি লোকদেরকে তিনি বানর ও শূকরে পরিণত করে দিবেন এবং শেষ বিচারের দিন পর্যন্ত তারা এই অবস্থায় থাকবে”। [বুখারী, ভলিউম ৭, বুক ৬৯, সংখ্যা ৪৯৪] হযরত আবদুল্লাহ্ ইবনে ওমর (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন,রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম এরশাদ করেন, নিশ্চয় আল্লাহু রাববুল আলামিন হারাম করে দিয়েছেন আমার উম্মতের উপর মদপান করা, জুয়া খেলা, বাশিঁ বাজানো, তবলা ও বাদ্যযন্ত্র । আমার জন্য বৃদ্ধি করে দিয়েছেন বিতরের নামাজ । বিখ্যাত মুহাদ্দিস ইয়াজিদ বলেন, হাদিসে কাইনান বলতে বাদ্যযন্ত্রকে বুঝানো হয়েছে । (মুসনাদে আহমদ ২য় খন্ড পৃ: ১৬৫) হযরত আবদুর রহমান ইবনে ছাবেত (রাদ্বিয়াল্লাহু আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, রাসুলে করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন আমার উম্মতে ‘ষুসুফ’তথা জমিন ফেটে ঢুকাই ফেলা ‘ক্বুযুফ’ তথা পাথর বর্ষন মুসান্নাহ তথা চেহারা পাল্টানো হবে সাহাবারা জিজ্ঞাসা করলেন তা কখন হবে ইয়া রাসুলুল্লাহ ? রাসুল (সাল্লাল্লহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, যখন বাদ্যযন্ত্র প্রকাশ্য করবে এবং মদকে হালাল করে দেবে । (আবু দাউদ ২য় খন্ড পৃষ্ঠা- ১৬৩) হযরত আলী (রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন , রাসুলে খোদা (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন আমি প্রেরিত হয়েছি বাদ্যযন্ত্রকে ভেঙ্গে দেওয়ার জন্য । অতঃপর রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেন, গায়ক গায়িকার জীবিকা (গানের মাধ্যমে) হারাম এবং ব্যাবিচারের জীবিকা হারাম । যে শরীর হারাম দ্বারা গঠিত তাকে আল্লাহ তা’আলা জাহান্নামে প্রবেশ করাবেন । (কানজুল উম্মাল ১৫ তম খন্ড পৃষ্ঠা ২২৬) হযরত আবু মুছা আল আশইয়ারী (রাহমাতুল্লাহু আলাইহি ) থেকে বর্ণিত রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলইহি ওয়া সাল্লাম) এরশাদ করেন যার দুনিয়ার মধ্যে গান বাজনা শুনবে তাদেরকে জান্নাতে গানের অনুষ্ঠান শুনার অনুমতি দেওয় হবে না অর্থাৎ জান্নাতে প্রবেশের সুযোগ দেওয়া হবে না । (কানজুল উম্মাল ১৫ তম খন্ড) হযরত আবদুল্লাহ বিন আমর (রা) থেকে বর্ণিত, নবী করীম (স.) মদ, জুয়া, কুবা এবং গুবাইরা প্রভৃতিকে নিষেধ করেছেন । তিনি আরও বলেছেন, নেশা সৃষ্টিকারী সব জিনিষই হারাম । - আবু দাউদ, মিশকাত : ৩১৮। কুবা বলা হয় দাবা খেলা অথবা ছোট তবলাকে । গুবাইরা একটি বিশেষ ধরনের মদ । হাবশী লোকেরা যা চুনা থেকে তৈরি করে । হযরত আবু মালেক আশআরী থেকে বর্ণিত, রাসুল (স.) ইরশাদ করেন, আমার উম্মতের মধ্যে এমন একদল লোকের আবির্ভাব ঘটবে যারা রেশম, মদ ও বাদ্যযন্ত্র হালাল মনে করবে । - ইবনে মাজাহ্, ফতোয়া মাওলানা আব্দুল হাই লাখনভী : ২/৮ । ইমাম মালেক রাহ. কে গান-বাদ্যের ব্যাপারে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, কেবল ফাসিকরাই তা করতে পারে । -কুরতুবী ১৪/৫৫ ইমাম শাফেয়ী রাহ. বলেছেন যে, গান-বাদ্যে লিপ্ত ব্যক্তি হল আহমক । তিনি আরো বলেন, সর্বপ্রকার বীণা, তন্ত্রী, ঢাকঢোল, তবলা, সারেঙ্গী সবই হারাম এবং এর শ্রোতা ফাসেক । তার সাক্ষ্য গ্রহণ করা হবে না ।-ইগাছাতুল লাহফান ১/১৭৯; কুরতুবী ১৪/৫৫ হাম্বলী মাযহাবের প্রখ্যাত ফকীহ আল্লামা আলী মারদভী লেখেন, বাদ্য ছাড়া গান মাকরূহে তাহরীমী । আর যদি বাদ্য থাকে তবে তা হারাম । -আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৮৮ আল্লামা শমসুদ্দীন ছরখাসী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, ঐ গায়কের স্বাক্ষী গ্রহণ যোগ্য নয় , যে তাঁর গানের মাধমে, মানুষ কে একত্রিত করে এবং মানুষ তাঁর দিকে ছুটে আসে । ১৬ তম খন্ড পৃষ্টা নং ১৩২ [মসবুত] আল্লামা ইবনে নুজাইম মিশরী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু বলেন, ইমাম ফকিহ বযযাবী রাদ্বিয়াল্লাহু তা’আলা আনহু তাঁর মানাকেবে উল্লেখ করেন, গান যখন বাদ্যযন্ত্রের মাধ্যমে গাওয়া যাবে তখন হারাম হওয়ার ব্যাপারে আলেম সমাজ ঐক্য মতক পোষন করেছেন । বাদ্যযন্ত্র ছাড়া গাওয়ার মধ্য মতানৈক্য রয়েছে । ব্যাখ্যা কারীরা ব্যাখ্যা দেন নাই । হ্যাঁ ‘‘নেহায়া ’’ ও ‘‘ইনায়া’’ নামক কিতাবে রয়েছে বিনোদনের জন্য গান করা প্রত্যেক ধর্মে হারাম । এবং ইমাম মুহাম্মদ রাহমাতুল্লাহু আলাইহি তার প্রসিদ্ধ ‘‘যিয়াদাত’’ নামক কিতাবে বলেন, যেসমস্ত অছিয়ত আমরাও আহলে কিতাবদের মতে হারাম তার মধ্যে গায়ক ও গায়িকার গানের ব্যাপারে অছিয়ত করাও অন্তর্ভুক্ত । অর্থাৎ মারা যাওয়ার পর তার পাশে বা কবরে গান গাওয়ার অছিয়ত করা যাবে না । আর যখন গান গাওয়ার ব্যাপারে ইমাম মুহাম্মদ (র) এর স্পষ্ট ইবারত রয়েছে । সে ক্ষেত্রে উনার মাযহাব অবলম্বিদের মতানৈক্যের কোন অবকাশ থাকে না । [ বাহরুর রায়েখন্ড-৭ পৃষ্টা ৮৮-৮৯ ইমাম ইবন তাইমিয়া (রাহিমুল্লাহ) আরো বলেন সেই ব্যক্তির সম্পর্কে যার স্বভাব হল গান-বাজনা শোনা, “ সে যখন কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করে তখন সে আবেগাপ্লুত হয় না, অপরদিকে সে যখন শয়তানের বাদ্যযন্ত্র (গান-বাজনা) শ্রবণ করে, সে নেচে উঠে । যদি সে সালাত প্রতিষ্ঠা করে, তবে সে হয় বসে বসে তা আদায় করে অথবা মুরগী যেভাবে মাটিতে ঠোকর দিয়ে শস্যদানা খায় সেভাবে দ্রুততার সাথে আদায় করে । সে কুরআন তিলাওয়াত শ্রবণ করতে অপছন্দ করে এবং তাতে কোন সৌন্দর্য খুঁজে পায় না। তার কুরআনের প্রতি কোন রুচি নেই এবং যখন তা পড়া হয় সে এর প্রতি কোন টান বা ভালোবাসা অনুভব করে না। বরং, সে মু’কা ও তাসদিয়া শুনে মজা পায় । এগুলো শয়তানী আনন্দ এবং সে তাদের অন্তর্ভুক্ত যাদের সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “যে ব্যক্তি দয়াময় আল্লাহর স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেয়, আমি তার জন্যে একটি শয়তান নিযুক্ত করে দেই, অতঃপর সেই সর্বক্ষণ তার সাথী হয়ে থাকে” । [৪৩-৩৬] [আউলিয়া আর রাহমান] দফ-এর পরিচয় এক প্রকার আরবীয় বাদ্যযন্ত্র, দফ-এর এক পাশ খোলা । বাজালে ঢ্যাব ঢ্যাব আওয়াজ হয় । প্লাস্টিকের গামলা বাজালে যেমন আওয়াজ হবে তেমন । আসলে দফ কোনো বাদ্যযন্ত্রের পর্যায়ে পড়ে না । আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয় । কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে - আওনুল বারী ২/৩৫৭ । আওনুল বারী গ্রন্থে দফ-এর পরিচয় দিতে গিয়ে লেখা হয়েছে যে, এর আওয়াজ স্পষ্ট ও চিকন নয় এবং সুরেলা ও আনন্দদায়কও নয় । কোনো দফ-এর আওয়াজ যদি চিকন ও আকর্ষণীয় হয় তখন তা আর দফ থাকবে না; বাদ্যযন্ত্রে পরিণত হবে । -আওনুল বারী ২/৩৫৭ ইমাম শাফেয়ী রাহ. শর্তসাপেক্ষে শুধু ওলীমা অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশ আছে বলে মত দিয়েছেন । কেননা বিয়ের ঘোষণার উদ্দেশ্যে ওলীমার অনুষ্ঠানে দফ বাজানোর অবকাশের বর্ণনা হাদীসে রয়েছে । -জামে তিরমিযী হাদীস : ১০৮৯; সহীহ বুখারী হাদীস : ৫১৪৭, ৫১৬২ মনে রাখতে হবে, এখানে দফ বাজানোর উদ্দেশ্য হল বিবাহের ঘোষণা, অন্য কিছু নয় । -ফাতহুল বারী ৯/২২৬ আর দফ-এর মধ্যে যখন বাদ্যযন্ত্রের বৈশিষ্ট্য এসে যাবে তখন তা সর্বসম্মতিক্রমে নাজায়েয বলে পরিগণিত হবে। -মিরকাত ৬/২১০ সুফী সাধকের নাম ব্যবহারকারী একটি জগতেও আজ আধুনিকতার ছোঁয়া লেগেছে । তাই আধুনিক কিছু সুফী বলে থাকে, বাদ্যসহ যিকির ও কাওয়ালি জায়েয । দলীল হিসেবে তারা সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিম এ বর্ণিত দুটি বালিকার দফ বাজিয়ে কবিতা গাওয়ার হাদীসটি উপস্থাপন করে । এ প্রসঙ্গে আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী রাহ. লেখেন, উক্ত হাদীসে আয়েশা রা.-এর বর্ণনাই তাদের অবাস্তব দাবির বিরুদ্ধে উৎকৃষ্ট জবাব । গান-বাদ্য যে নাজায়েয এই বিষয়টি স্পষ্ট করার জন্য হাদীসের রাবী হযরত আয়েশা রা. বলছেন, উক্ত বালিকাদ্বয় কোনো গায়িকা ছিল না । তারা কোনো গান গায়নি । -ফাতহুল বারী ২/৪৪২ ইমাম কুরতুবী রাহ. বলেন, গান বলতে যা বুঝায়, বালিকাদ্বয় তা গায়নি। পাছে কেউ ভুল বুঝতে পারে তাই আয়েশা রা. বিষয়টি স্পষ্ট করে দিয়েছেন । ইমাম কুরতুবী আরো বলেন, বর্তমানে একশ্রেণীর সুফীরা যে ধরনের গান ও বাদ্যযন্ত্রের প্রচলন ঘটিয়েছে তা সম্পূর্ণ হারাম । -তাফসীরে কুরতুবী ১৪/৫৪ বিখ্যাত সাধক হযরত জুনাইদ বাগদাদী রাহ. তার যুগে কাওয়ালি শোনা বন্ধ করে দিয়েছিলেন । লোকেরা জিজ্ঞাসা করলে তিনি বললেন, বর্তমানে কাওয়ালি শোনার শর্তগুলো পালন করা হয় না । তাই আমি এর থেকে তওবা করছি । -আহসানুল ফাতাওয়া ৮/৩৯২ http://lokmanbinyousuf.blogspot.com/2013/07/collection_5565.html

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Rabbe

Call

আল্লাহ তাআলা সূরা লুকমানে আখেরাত-প্রত্যাশী মুমিনদের প্রশংসা করার পর দুনিয়া-প্রত্যাশীদের ব্যাপারে বলছেন,আর একশ্রেণীর লোক আছে, যারা অজ্ঞতাবশত খেল-তামাশার বস্তু ক্রয় করে বান্দাকে আল্লাহর পথ থেকে গাফেল করার জন্য।-সূরা লুকমান : ৬ উক্ত আয়াতের শানে নুযূলে বলা হয়েছে যে, নযর ইবনে হারিস বিদেশ থেকে একটি গায়িকা বাঁদী খরিদ করে এনে তাকে গান-বাজনায় নিয়োজিত করল। কেউ কুরআনশ্রবণের ইচ্ছা করলে তাকে গান শোনানোর জন্য সে গায়িকাকে আদেশ করত এবংবলত মুহাম্মদ তোমাদেরকে কুরআন শুনিয়ে নামায, রোযা এবং ধর্মের জন্য প্রাণ বিসর্জন দেওয়ার কথা বলে। এতে শুধু কষ্টই কষ্ট। তার চেয়ে বরং গান শোন এবং জীবনকে উপভোগ কর।-মাআরিফুল কুরআন ৭/৪এরই পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তাআলা উক্ত আয়াত

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

হযরত আয়শা (রাঃ) বলেন: তাঁর কাছে উপস্থিত থেকে দুটি মেযে ঈদুল আযহার দিনে গান গাইছিল ও বাদ্য বাজাচ্ছিল। নবী করীম (সাঃ) কাপড়মুড়ি দিয়ে শুয়েছিলেন। এ সময় হযরত আবু বকর (রাঃ) সেখানে উপস্থিত হলেন। তিনি এ দেখে মেয়ে দুটিকে ধমকালেন। নবী করীম (সাঃ)তা শুনে মুখের কাপড় সরিয়ে বললেন: হে আবু বকর, ওদের করতে দাও। এখন তো ঈদের উৎসবের সময়। ভাইয়েরা, সব ধরনের গান ও বাদ্যই যদি হারাম হতো তাহলে তো রাসূল (সাঃ) গান গাওয়া ও বাদ্য বাজানোর পারমিশন দেয়া তো দূরে থাক,তা বন্ধকরার নির্দেশ দিয়ে নাউযুবিল্লাহ বলে সেখান থেকে তৎক্ষণাৎ প্রস্থান করার কথা। সেখানে নিশ্চয় যে ধরনের গান গাওয়া হচ্ছিল ও বাদ্যের ব্যবহার এমনসীমা ও রুচির মধ্যে ছিলযা আমার প্রিয় নবী (সাঃ) বন্ধ করতে দেন নাই- আমি নিজেকে মস্তবড় কোন বুজুর্গ ব্যক্তি ভাবি না এবং সমাজের আর দশজনের কাছ থেকে ভিন্ন সেজে বিচ্ছিন্ন হয়ে বৈরাগ্য জীবন যাপনে অভ্যস্ত নই। একজন ইমানদার মানুষ হিসেবে তাই আমিও ক্ষেত্র বিশেষে সীমার মধ্যে থেকে গান ওবাদ্যের রুচিশীল প্রয়োগকে হারাম মনে করতে রাজি নই। তেমনি সেই সংগীত শোনা থেকে নিজেকে বিরত রাখতে চেষ্টা করি ও অন্যকেও থাকতে বলি যা আল্লাহর স্মরণ থেকে অন্তরকে সর্বদা গাফেল রাখে এবং উত্তেজনা ও পাশবিকতাকে জাগিয়ে তুলতে পারে- ধন্যবাদ-

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ