স্কার্ভি কি?

অ্যাসকরবিক অ্যাসিড, যা ভিটামিন সি নামেও পরিচিত, তার দীর্ঘস্থায়ী অভাবের ফলে স্কার্ভি দেখা দেয়। ভিটামিন সি কোলাজেনের গঠনে, শরীরের রক্ত বাহিকাগুলির ও অন্যান্য টিস্যুর অবলম্বনে এবং গঠনে বিশেষ সহায়ক ভুমিকা পালন করে। যদিও অস্বাভাবিকভাবে বর্তমানে, প্রধানত এর অভাবের ফলে শরীরে দুর্বলতা, অ্যানিমিয়া, মাড়ির সমস্যা ও ত্বকের মধ্যে রক্তক্ষরনের মতো সমস্যা দেখা দিচ্ছে। ভিটামিন সি একটি অন্যতম অপরিহার্য অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট।

এর প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?
এক এক জনের এক এক রকম হয়।

প্রাথমিকভাবে দেখতে পাওয়া উপসর্গগুলি হল:

  • স্বাভাবিকভাবে দুর্বলতা ও অস্বস্তি অনুভব হওয়া।
  • অবসাদ বা ক্লান্তি।
  • বমিবমি ভাব।
  • ডাইরিয়া।
  • জ্বর।
  • মায়ালজিয়া (পেশিতে ব্যথা) এবং অস্থিসন্ধিতে ব্যথা।
  • খিদে না পাওয়া।
  • চামড়ায় লোমকূপের মধ্যে রক্তপাতের লক্ষণ।
  • হাত ও পায়ে ব্যথা।


পরে দেখতে পাওয়া উপসর্গগুলি হল:

  • অ্যানিমিয়া।
  • মাড়ির সমস্যা।
  • চোখে ফোলাভাব।
  • খসখসে, শুষ্ক এবং লালচে ত্বক।
  • ক্ষতস্থান ধীরে ধীরে ভালো হওয়া।
  • ত্বকে রক্তপাত।
  • চুল রুক্ষ ও নষ্ট হয়ে যাওয়ার সাথে অত্যাধিক চুল পরা।
  • হাড়ের সংযোগস্থলে ও পেশীর ভিতরে রক্তপাতের ফলে হাত ও পায়ে ফোলাভাব।
  • হাড়ের বৃদ্ধির গতি হ্রাস বা বাধাপ্রাপ্ত হওয়া।


স্কার্ভি রোগের প্রধান কারণ কি কি?
স্কার্ভি সাধারণত অনুন্নতশীল দেশে দেখতে পাওয়া যায় যেখানে অপুষ্টি হলো একটি প্রধান সমস্যা।

স্কার্ভি এমন খাদ্য দ্বারা সৃষ্ট হয় যার মধ্যে ভিটামিন সি যথেষ্ট পরিমাণে নেই। শারীরবৃত্তীয় প্রক্রিয়ায় ভিটামিন সি উৎপন্ন হতে পারে না। তাই খাদ্য ও পানীয় এর মাধ্যমে শরীরের ভিটামিন সি এর চাহিদা পূরণ করতে হয়। অলভ্যতা, জীবনপ্রণালী বা অভ্যাসগত নানা কারণে দেহে ভিটামিন সি এর ঘাটতি দেখা দিতে পারে। এর মধ্যে অন্যতম —

  • ব্যক্তির অপর্যাপ্ত, অস্বাস্থ্যকর ও অসুষম খাবার খাওয়া, বিশেষত যারা অনেকধরনের খাবারের প্রতি খুঁতখুঁতে, যেসব ব্যক্তিদের অ্যানোরেক্সিয়া নার্ভোসা আছে, বয়স্ক, বাচ্চা যাদের মানসিক ও শারীরিক অক্ষমতা আছে, এমন ব্যক্তি যাদের বিশেষ কোন খাদ্যাভ্যাস বা খাবারের প্রতি পছন্দ অপছন্দ বা অ্যালার্জি আছে।
  • যেসব ব্যক্তিরা অপুষ্টির সমস্যাজনিত রোগ, যেমন ম্যালাবসর্প্শন ডিসঅর্ডারস, প্রবল ডিসপেপসিয়া, ডায়ালেসিস, প্রদাহজক মলদ্বারের সমস্যা, কেমোথেরাপি ও অন্যান্য বিশেষ কোন রোগের চিকিৎসাধীনে আছে।
  • বিভিন্ন মানসিক সমস্যা যেমন- বিষন্নতা বা সিজোফ্রেনিয়া।
  • বয়স্ক ব্যক্তি।
  • বিভিন্ন শারীরিক সমস্যা যেমন- ক্রন’স ডিজিজ বা আলসেরাটিভ কোলাইটিস।
  • অ্যানোরেক্সিয়া নারভোসা
  • এমন খাবার গ্রহণ যার কারণে ওজন খুব দ্রুত হ্রাস পায়
  • ধূমপান ও মদ্যপানের বদভ্যাস।
  • অপুষ্টি।


শিশুদের ক্ষেত্রে :

  • অপুষ্টিজনিত রোগে ভোগা মা;
  • অসুষম খাদ্যতালিকা;
  • মাতৃদুগ্ধের অভাব;
  • পরিপাক ও বিপাকজনিত দুর্বলতা।


কিভাবে স্কার্ভি রোগের নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
চিকিৎসা ইতিহাস, শারীরিক পরীক্ষা ও উপসর্গের ওপর ভিত্তি করে স্কার্ভি নির্ণয় করা হয়। খাদ্যে ভিটামিন সি-এর অভাবের ইতিহাসও খতিয়ে দেখা হয়।

স্কার্ভি পরীক্ষায় অন্তর্ভুক্ত:

  • রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমে ভিটামিন সি এবং আয়রনের মাত্রা নির্ধারণ।
  • হাত ও পায়ের সংযোগস্থলগুলির এক্স-রে করা।

যখন ব্যক্তিটি উপসর্গগুলি কমানোর জন্য ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবার খায় এবং ভালো ফল পায় তখন নির্ণয়টি নিশ্চিত হয়।

স্কার্ভি রোগের প্রতিরোধ:
দৈনন্দিন খাবারে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি এবং প্রয়োজনে সম্পূরক ভিটামিন সি গ্রহণের মাধ্যমে স্কার্ভি থেকে বেঁচে থাকা সম্ভব।

টক জাতীয় ফল ও সবুজ শাকসবজিতে পর্যাপ্ত ভিটামিন সি রয়েছে। লেবু, কমলা, মাল্টা, আমড়া, জাম, জাম্বুরা, কাঁচা আম, পেঁপে, পেয়ারা ইত্যাদি ফল এবং বাঁধাকপি, টমেটো, গাজর ও আলুর ত্বকে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন সি পাওয়া যায়।

সুস্থ ও প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষের ক্ষেত্রে দৈনিক ৯০ মি.গ্রা. ও নারীদের ক্ষেত্রে ৭৫ মি.গ্রা. ভিটামিন সি গ্রহণ করা প্রয়োজন। স্তন্যদানকারী মায়ের ক্ষেত্রে ৩০ মি.গ্রা. ও ধূমপায়ীদের ক্ষেত্রে ৩৫ মি.গ্রা. ভিটামিন সি অতিরিক্ত পরিমাণে গ্রহণ করার সুপারিশ করা হয়। তাই যদি নিয়মিত পর্যাপ্ত পরিমান ভিটামিন সি জাতীয় খাবার গ্রহণ করা হয় তবে খুব সহজেই স্কার্ভি রোগ থেকে নিজেকে বাঁচানো সম্ভব।

ভিটামিন সি প্রতিস্থাপন চিকিৎসার সাথে জড়িত। চিকিৎসক ভিটামিন সি সমপূরকের পরামর্শ দেন। খাদ্যতালিকার পরিবর্তনের মধ্যে ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাবারকে যুক্ত করা হয়। এগুলি ব্যাপকভাবে উপসর্গগুলিকে কমাতে পারে। পেপে, পাতিলেবু এবং কমলালেবু হল ভিটামিন সি সমৃদ্ধ ফল। আর ভিটামিন 'সি' একমাত্র সমাধান স্কার্ভি রোগের।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে