শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

উদ্ভিদের স্বাভাবিক বৃদ্ধির জন্য যেসব উপাদান অত্যন্ত সামান্য পরিমাণে প্রয়োজন হয় তাদের মাইক্রো উপাদান বলে। মাইক্রো উপাদান ৬টি, যথা দস্তা (Zn), ম্যাংগানিজ (Mn), মোলিবডেনাম (Mo), বোরন (ই), কপার (Cu) এবং ক্লোরিন (Cl)।

গ) দেওয়া আছে, একজন পুরুষের বয়স ৩৫ বছর    উচ্চতা ১৬৫ সেমি

     ওজন ৮০ কেজি

আমরা জানি,

পুরুষের BMR =৬৬+(১৩.৭×ওজন কেজি)+ (৫×উচ্চতা সে.মি.)-(৬.৮–বয়স বছর)

=৬৬+(১৩.৭×৮০)+(৫–১৬৫)-(৬.৮×৩৫)

=৬৬+১০৯৬+৮২৫-২৩৮

= ১৭৪৯ ক্যালরি

ঘ) উদ্দীপকে উল্লিখিত A, B ও C অংশ হলো যথাক্রমে যকৃত, পাকস্থলী ও অগ্ন্যাশয়। খাদ্য পরিপাকে এই তিনটি অঙ্গ সরাসরি ভূমিকা পালন করে। যকৃত পিত্তরস তৈরি করে। এই পিত্তরস ডিওডেনামে এসে স্নেহজাতীয় খাদ্যকে পরিপাকে সহায়তা করে।

পাকস্থলির গ্যাস্ট্রিক গ্রন্থি থেকে গ্যাস্ট্রিক রস ক্ষরিত হয়। এই HCL খাদ্যের মধ্যে কোনো অনিষ্টকারী ব্যাকটেরিয়া থাকলে তা মেরে ফেলে, নিষ্ক্রিয় পেপসিনোজেনকে সক্রিয় পেপসিনে পরিণত করে। এতে আমিষ জাতীয় খাদ্য আংশিক পরিপাক হয়।

অগ্ন্যাশয় থেকে অগ্ন্যাশয় রস নিঃসৃত হয়। অগ্ন্যাশয় রসে ট্রিপসিন, লাইপেজ ও অ্যামাইলেজ নামক এনজাইম থাকে। এসব এনজাইম আমিষ, স্নেহ ও শর্করা জাতীয় খাদ্যের পরিপাকে সহায়তা করে। উপরের কাজগুলোর মধ্যে A (যকৃত), B (পাকস্থলি), C (অগ্ন্যাশয়) এর সমন্বয় একান্ত প্রয়োজন। এদের কোনো একটি অনুপস্থিতি তথা কাজে সমন্বয় না থাকলে পরিপাকসংক্রান্ত নানা রকমের অসুবিধা দেখা দেবে। এতে মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।

২। উদ্দীপকটি পড়ো এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও:

খাদ্যবস্তু পাকস্থলীতে এসে জীবাণুমুক্ত হয়ে পরিপাক হয়। বর্তমানে বাণিজ্যিক রং, রাসায়নিক পদার্থ, ফরমালিন মেশানো খাদ্য গ্রহণের ফলে আমাদের পরিপাকের ব্যাঘাত ঘটছে। ‘প্রত্যেকেই সচেতন না হলে মানবজীবন হুমকির সম্মুখীন হবে।’

ক) ক্যালরি কী?           ১

খ) রাফেজ বলতে কী বোঝায়?            ২

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত      ৩ পদার্থগুলোর সম্ভাব্য উৎস ব্যাখ্যা করো।

ঘ) উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি মূল্যায়ন করো। ৪

উত্তর : ক) জীবদেহে খাদ্যশক্তি মূল পরিমাপের একককে ক্যালরি বলে।

খ) শস্যদানা, ফলমূল, সবজির অপাচ্য অংশকে রাফেজ বলে। শস্যদানার বহিরাবরণ, সবজি, ফলের খোসা, শাঁস বীজ ও উদ্ভিদের ডাঁটা, ফল, মূল, পাতায় আঁশ থাকে। এগুলো মূলত কোষ প্রাচীরের সেলুলোজ ও লিগনিন দিয়ে গঠিত। রাফেজ পানি শোষণ করে, মলের পরিমাণ বৃদ্ধি করে এবং বৃহদন্ত্র থেকে মল নিষ্কাশনে সাহায্য করে। খাদ্যনালির ক্যান্সারের আশঙ্কা অনেকাংশে হ্রাস পায়। স্থূলতা হ্রাস, ক্ষুধা প্রবণতা হ্রাস ও চর্বি জমার প্রবণতা হ্রাস পায়।

গ) উদ্দীপকে উল্লিখিত খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহৃত পদার্থগুলো হলো রং, রাসায়নিক পদার্থ, ফরমালিন।

নিম্নে এসব ব্যবহৃত পদার্থের সম্ভাব্য উৎস দেওয়া হলো

ঘ) উদ্দীপকের শেষ বাক্যটি হলো প্রত্যেকেই সচেতন না হলে মানবজীবন হুমকির সম্মুখীন হবে।

এই সুন্দর পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে হলে আমাদের নির্মল পরিবেশের যেমন প্রয়োজন, তেমনি নিরাপদ খাদ্য গ্রহণ অপরিহার্য। বর্তমান বাজারে অনৈতিকভাবে খাদ্যে বিভিন্ন ধরনের ক্ষতিকর ও অস্বাস্থ্যকর রাসায়নিক দ্রব্য ভেজাল ও রঞ্জক পদার্থ হিসেবে ব্যবহার করে তা বিক্রি করা হয়। এর ফলে জনস্বাস্থ্য এখন হুমকির সম্মুখীন।

মানবদেহের লোহিত রক্তকণিকার কার্যক্ষমতা নষ্ট করে দেয়। এটি শিশুদের লেখাপড়ায় অমনোযোগিতা, বিষয় বোঝার অক্ষমতা ও অস্থিরতা সৃষ্টি করে। এটি বয়স্ক মানুষের স্বাভাবিক কার্যাবলির ব্যাঘাত ঘটিয়ে মস্তিষ্ক নষ্ট করে, এমনকি মৃত্যুও ঘটায়। সিসার বিষাক্ততায় বিকলাঙ্গ প্রজন্মের জন্ম হয়।

বাণিজ্যিক রং যা কাপড় কিংবা রঙের কাজে ব্যবহার করা হয়, তা বিভিন্ন প্রকার খাদ্য যেমন—আইসক্রিম, গোলা আইসক্রিম, লজেন্স, বেগুনি, বড়া ইত্যাদিতে ব্যবহার করা হচ্ছে। এজাতীয় খাবার ধীরে ধীরে যকৃতের কার্যকারিতা নষ্ট করে নানা ধরনের রোগ সৃষ্টি করে।

ফরমালিনে ডুবানো মাছ, ফল ও অন্য খাদ্যদ্রব্যে পচন সৃষ্টিকারী ব্যাকটেরিয়া জন্ম নিতে পারে না বলে কয়েক দিন বেশ টাটকা দেখা যায়। গবেষণায় দেখা গেছে, এই ফরমালিন মাছের কোষের সঙ্গে যৌগ তৈরি করে ফেলে। মাছ ধোয়া হলেও ওই যৌগটি মাছের দেহে থেকে যায়। যা পরে রান্না করা মাছের সঙ্গে মানবদেহে প্রবেশ করে। চোখের রেটিনার কোষ ধ্বংস করে। এর ব্যবহারে ধীরে ধীরে দেহের যকৃত, বৃক্ক, হৃিপণ্ড, মস্তিষ্কসহ সব কিছুকেই আক্রান্ত করতে পারে। এটির কারণে যকৃত ও বৃক্ক নষ্ট হয়। চামড়ায় ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। ফরমালিনযুক্ত খাবার খাওয়ার ফলে পাকস্থলী, ফুসফুস ও শ্বাসনালিতে ক্যান্সার হতে পারে।

ফরমালিন হাড়ের অস্থিমজ্জাকে আক্রান্ত করে শেষ পর্যন্ত রক্ত ক্যান্সারও হতে পারে। গর্ভবতী মায়েদের এগুলো সেবনে গর্ভের সন্তান বিকলাঙ্গসহ প্রতিবন্ধী শিশুর জন্ম হতে পারে। এতে শিশুদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা হারিয়ে যাচ্ছে এবং শিশুদের বুদ্ধিমত্তা দিন দিন কমছে।

মজুদ খাদ্য ও সবজিতে কীটনাশক ব্যবহার করা হয়। কীটনাশকের বিষাক্ততার সময় নষ্ট হওয়ার আগেই দ্রব্যাদি বাজারজাত করলে বিষাক্ত খাদ্যের প্রভাবে স্বাস্থ্যঝুঁকির আশঙ্কা থাকে। এতে শিশুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হয় বেশি। শরীরে ক্রমাগত ডিডিটির বৃদ্ধি মানুষের হরমোনের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয় এবং ক্যান্সার রোগ সৃষ্টি হতে পারে।

অতএব, এসব বিষাক্ত রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার প্রতিরোধ করার জন্য জনগণকে সচেতন হতে হবে। কারণ একমাত্র জনসচেতনতাই পারে মানবজীবনকে এই ভয়াবহ হুমকি থেকে রক্ষা করতে।

 

৩। চিত্রটি লক্ষ করো এবং সংশ্লিষ্ট প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও :

ক) দন্তমজ্জা কী?     ১

খ) B-কে মিশ্রগ্রন্থি বলা হয় কেন?   ২

গ) উদ্দীপকের ‘A’ চিহ্নিত অঙ্গের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করো।     ৩

ঘ) উদ্দীপকের ‘C’ চিহ্নিত অংশ আংশিকভাবে ‘B’ চিহ্নিত অংশের ওপর নির্ভরশীল—বিশ্লেষণ করো।     ৪

উত্তর : ক) ডেন্টিনের ভেতরের ফাঁপা নরম অংশকে দন্তমজ্জা বলে।

খ) চিত্র B চিহ্নিত অংশ হলো অগ্ন্যাশয়।

অগ্ন্যাশয় পাকস্থলীর পেছনে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ গ্রন্থি। এটি একাধারে পরিপাকে অংশগ্রহণকারী এনজাইম ট্রিপসিন, লাইপেজ ও অ্যামাইলেজ নিঃসৃত করে, যা আমিষ, স্নেহ ও শর্করা জাতীয় খাদ্যকে পরিপাকে সহায়তা করে। অন্যদিকে গ্লুকাগন ও ইনসুলিন নামক হরমোন নিঃসৃত করে যা রক্তের গ্লুকোজ নিয়ন্ত্রণ করে। অর্থাৎ অগ্ন্যাশয় বহিঃক্ষরা ও অন্তঃক্ষরা গ্রন্থির মতো কাজ করে। তাই অগ্ন্যাশয়কে মিশ্র গ্রন্থি বলা হয়।

গ) উদ্দীপকের ‘A’ চিহ্নিত অঙ্গের নাম হলো যকৃত। যকৃত মানবদেহের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি।

যকৃতের কার্যক্রম নিম্নরূপ—

১। যকৃত পিত্তরস তৈরি করে। পিত্তরসের মধ্যে পানি, পিত্তলবণ, কোলেস্টেরল, পিত্তরস ও খনিজ লবণ থাকে। এই রস পিত্তথলিতে জমা থাকে। পিত্তরস ডিওডেনামে এসে পরোক্ষভাবে পরিপাকে অংশ নেয়।

২। যকৃত উদ্বৃত্ত গ্লুকোজ নিজ দেহে গ্লাইকোজেন রূপে সঞ্চিত থাকে। রক্তে কখনো গ্লুকোজের মাত্রা কমে গেলে যকৃতের সঞ্চিত গ্লাইকোজেনের কিছুটা অংশ গ্লুকোজে পরিণত হয় ও রক্তস্রোতে মিশে যায়। এভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।

৩। অতিরিক্ত অ্যামাইনো এসিড যকৃতে আসার পর বিভিন্ন রাসায়নিক ক্রিয়ার মাধ্যমে ইউরিয়া, ইউরিক এসিড ও অ্যামোনিয়ারূপে নাইট্রোজেন ঘটিত বর্জ্য পদার্থ তৈরি করে।

ঘ) উদ্দীপকের চিত্রে B চিহ্নিত অংশ হলো অগ্ন্যাশয় এবং C চিহ্নিত অংশ হলো ক্ষুদ্রান্ত্র।

খাদ্য পরিপাকে ক্ষুদ্রান্ত্র আংশিকভাবে অগ্ন্যাশয়ের ওপর সম্পূর্ণ নির্ভর করে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো—

পাকস্থলী থেকে পাকমণ্ড ক্ষুদ্রান্ত্রের ডিওডেনামে প্রবেশ করে। এ সময় অগ্ন্যাশয় থেকে একটি ক্ষারীয় পাচকরস ডিওডেনামে আসে। এই পাচকরস পাকমণ্ডের অম্লভাব প্রশমিত করে। পাচকরসের এনজাইম দ্বারা শর্করা ও আমিষ পরিপাকের কাজ চলতে থাকে এবং স্নেহ পদার্থের পরিপাক শুরু হয়।

যকৃত থেকে পিত্তরস নিঃসৃত হয়। এটি অম্লীয় অবস্থায় খাদ্যকে ক্ষারীয় করে পরিপাকের উপযোগী করে তোলে। পিত্তলবণ স্নেহ পদার্থের ক্ষুদ্র কণাগুলোকে পানির সঙ্গে মিশতে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয় রসে অ্যামাইলেজ, লাইপেজ ও ট্রিপসিন নামক এনজাইম থাকে।

পিত্তলবণের সংস্পর্শে স্নেহ পদার্থ সাবানের ফেনার মতো ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র দানায় পরিণত হয়। স্নেহ বিশ্লেষক লাইপেজ এই দানাগুলোকে ভেঙে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত করে।

            লাইপেজ

স্নেহ পদার্থ         → ফ্যাটি এসিড+গ্লিসারল

আংশিক পরিপাককৃত আমিষ ক্ষুদ্রান্ত্রে ট্রিপসিনের সাহায্যে ভেঙে অ্যামাইনো এসিড ও সরল পেপটাইডে পরিণত হয়।

              ট্রিপসিন

পলিপেপটাইড        → অ্যামাইনো এসিড+সরল পেপটাইড

অ্যামাইলেজ শ্বেতসারকে সরল শর্করায় পরিণত করে।

         অ্যামাইলেজ

শ্বেতসার         → গ্লুকোজ

সুতরাং ক্ষুদ্রান্ত্রের খাদ্য উপাদান পরিপাকের জন্য অগ্ন্যাশয় বিশেষ ভূমিকা পালন করে। উদ্দীপকের C চিহ্নিত অংশ বা ক্ষুদ্রান্ত্র আংশিকভাবে ই চিহ্নিত অংশ বা অগ্ন্যাশয়ের ওপর নির্ভরশীল।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ