পেনাইল ক্যান্সার কি?
পেনাইল ক্যান্সার একটি রোগ, যাতে পেনিস বা লিঙ্গের টিস্যুতে ম্যলিগন্যান্ট বা ক্যান্সারযুক্ত কোষগুলির অনিয়ন্ত্রিতভাবে সংখ্যাবৃদ্ধি হয়। এটি একটি বিরল ধরণের ক্যান্সার, যা চল্লিশোর্ধ্ব পুরুষদের মধ্যে দেখা যায়। সুন্নত বা খৎনা ক্যান্সারের ঝুঁকি কমিয়ে দেয় আর তাই মুসলমান এবং ইহুদি পুরুষদের মধ্যে পেনাইল ক্যান্সার সচরাচর দেখা যায়না। এর সঙ্গে জড়িত কোষের ওপর ভিত্তি করে পেনাইল ক্যান্সারকে বিভিন্ন প্রকারে শ্রেণীবদ্ধ করা হয়। লিঙ্গের ত্বককে আক্রান্ত করা ক্যান্সারকে লিঙ্গের মেলানোমা বলা হয়।

পেনাইল ক্যান্সার এর প্রকারভেদ:
পেনাইল ক্যান্সার প্রধানত তিন রকমের হয়। এক, স্কুয়ামাস সেল পেনাইল ক্যান্সার, দুই, কারসিনোমা পেনাইল ক্যান্সার ও তিন, মেলানোমা অফ দ্য পেনিস। এই তিন রকমের পেনাইল ক্যান্সারের মধ্যে ৯০ শতাংশই হল, স্কুয়ানোমা পেনাইল ক্যান্সার৷ এই ক্যান্সারে প্রথমে যৌনাঙ্গের কোষগুলি আক্রান্ত হয়, তার পর তা ছড়িয়ে যায় যৌনাঙ্গের চারদিকে।

পেনাইল ক্যান্সার এর প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি?
লিঙ্গ স্পর্শ করলে অস্বাভাবিক বৃদ্ধি বা পিণ্ড অনুভব করা পেনাইল ক্যান্সারের প্রাথমিক লক্ষণগুলির মধ্যে একটি। অন্যান্য লক্ষণগুলির মধ্যে রয়েছে রক্তপাত অথবা অনবরত দুর্গন্ধযুক্ত স্রাবের নির্গমন, যা একসঙ্গে অনেক সপ্তাহ চলার পরও সারে না, লিঙ্গের মাথায় ফুসকুড়ি, লিঙ্গের গায়ে ঘা বা অনিয়মিত ক্ষত অথবা অস্বাভাবিকভাবে লিঙ্গে ব্যথা। রোগ যত মাথাচাড়া দেয় এইসব উপসর্গের সঙ্গে স্পষ্ট কারণ ছাড়া ওজন হ্রাস, ক্লান্তি এবং প্রস্রাবে সমস্যা দেখা দেয়।

ক্যান্সার বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের লক্ষণ দেখা গেলেই, দেরি না করে চিকিত্সকের স্মরণাপন্ন হওয়া উচিত। সাধারণত পঞ্চাশের বেশি বয়সি পুরুষদের এই ধরনের ক্যান্সার হওয়ার আশঙ্কা থাকে৷ তবে চল্লিশ বছরের কম বয়সিদেরও অনেক সময় পেনাইল ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে দেখা যায়।

পেনাইল ক্যান্সার এর প্রধান কারণ কি?
ব্রিটেনের ক্যান্সার রিসার্চ প্রকাশিত একাধিক নথি বলছে, এই পেনাইল ক্যান্সারের জন্য দায়ি হিউম্যান পেপিলোমা ভাইরাস (HPV)। তবে পেনাইল ক্যান্সার হওয়ার নির্দিষ্ট কারণ পুরোপুরি বোঝা যায়নি; তবে এই রোগের প্রবণতা বৃদ্ধি করে এমন কিছু ঝুঁকিপূর্ণ কারণ হলো ধূমপান এবং ফিমোসিস হওয়া, এই অবস্থায় লিঙ্গের ফোরস্কিন বা উপরের চামড়া লিঙ্গের মাথায় আটকে যায়, আর তাতে লিঙ্গে বারবার সংক্রমণের প্রবণতা সৃষ্টি হয় এবং ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অন্যান্য কারণগুলির মধ্যে রয়েছে বার্ধক্য, লিঙ্গে আঘাত এবং যৌনাঙ্গে জরুল হওয়ার ইতিহাস।

পেনাইল ক্যান্সার কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
সাধারণ চিকিৎসকের কাছে চিকিৎসা করানোর পরেও উপরের উল্লেক্ষিত কোনও একটি উপসর্গও যদি না সারে, তাহলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির একজন বিশেষজ্ঞ বা ইউরোলজিস্টের পরামর্শ নেওয়া উচিত, তিনি বিস্তারিতভাবে পরীক্ষা এবং অনুসন্ধান করে দেখবেন। প্রাথমিক এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অনুসন্ধানের মধ্যে একটি হল লোকাল বায়োপসি করানো। বায়োপসিতে আক্রান্ত অঙ্গ থেকে নমুনা সংগ্রহ করা হয় এবং তা অণুবিক্ষণ যন্ত্রে পরীক্ষা করা হয় ক্যান্সার কোষ অথবা অন্যান্য রোগের উপস্থিতি জানার জন্য। একবার বায়োপসি হয়ে যাওয়ার পর একগোছা স্ক্যান করানো হয়, যেমন - ক্যান্সারের সঠিক বিস্তার এবং সীমা জানার জন্য পিইটি স্ক্যান বা সিটি স্ক্যানের পরামর্শ দেওয়া হয়। এইভাবে, লসিকা গ্রন্থির সংযুক্তি, বিস্তার এবং সাধারণ টিস্যুর ওপর ক্যান্সারের আক্রমণের প্রবলতার ওপর ভিত্তি করে ক্যান্সারকে স্টেজ বা পর্যায় নির্ধারণ করা হয়। স্টেজ ক্যান্সারের সম্পর্কে পূর্বানুমান এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির আরোগ্য লাভের সম্ভাবনার স্পষ্ট ধারণা পেতে সাহায্য করে।

আক্রান্ত অংশের আকার এবং ক্যান্সারের বিস্তারের ওপর ভিত্তি করে চিকিৎসা নির্ভর করে। লিঙ্গের মাথার টিউমারের জন্য এবং তা লিঙ্গত্বকের মধ্যেই সীমিত হয়, ওই অংশটি বাদ দিতে লেজার সার্জারি করা হয়। তারপর স্কিন গ্রাফ্ট বসানো হয়। ক্যান্সারের উচ্চ পর্যায়ে চিকিৎসা পদ্ধতিগুলির মধ্যে রয়েছে কেমোথেরাপি, রেডিয়েশন থেরাপি এবং সার্জারি।

পেনাইল ক্যান্সার রোগের প্রতিরোধের উপায়:
হ্যাঁ, পেনাইল ক্যান্সার রোগ প্রতিরোধ করা সম্ভব হতে পারে। নিচের পদক্ষেপগুলো নিয়ে এই রোগ প্রতিরোধ করা যেতে পারে:

  • ভাল যৌনাঙ্গ স্বাস্থ্যবিধি
  • বহুগামিতা পরিহার করা
  • এইচপিভি সংক্রমণ প্রতিরোধ করতে কনডম ব্যবহার করা
  • ধূমপান এড়ানো।



শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে