princerand1

Call

যত বড় পাপ হোক না কেন আল্লাহ্‌ শিরিক ছারা সব পাপ মাফ করবেন ।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call



জবাব:

প্রথমত: আপনি আল্লাহর রহমত হতে নিরাশ হবেন না। দেখুন, আল্লাহ তাআলা বলেন, “বলুন, হে আমার বান্দাগণ যারা নিজেদের উপর যুলুম করেছ তোমরা আল্লাহর রহমত থেকে নিরাশ হয়ো না। নিশ্চয় আল্লাহ সমস্ত গোনাহ মাফ করেন। তিনি ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।”।(সূরা যুমার ৫৩) সুতরাং কায়মনোবাক্যে তাওবা করুন। কারণ, যদি ব্যভিচারী সত্যিকার অর্থে দৃঢ়চিত্তে তাওবা করে, তাহলে আল্লাহ তাআলা তার তাওবা কবুল করেন এবং তাকে ক্ষমা করে দেন। ব্যভিচারীর পরকালীন শাস্তির ওয়াদার কথা উল্লেখের পর আল্লাহ তাআলা বলেন: ‘’তবে যে তাওবা করে ঈমান আনে এবং সৎকর্ম করে। পরিণামে আল্লাহ তাদের পাপগুলোকে পুণ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দেবেন। আল্লাহ অতীব ক্ষমাশীল, পরম দয়ালু।‘’  (সূরা আল ফুরকান:৭০)

দ্বিতীয়ত:  আপনি বলেছেন, এখনো তার সঙ্গে আপনার সম্পর্ক বিদ্যমান। মনে রাখবেন, তাওবার ক্ষেত্রে অতীব জরুরী বিষয় হল,প্রথমে গোনাহটি ছেড়ে দিতে হয়। এ ছাড়া তাওবা কবুল হয় না। সুতরাং ওই নারীর সাথে সকল সম্পর্ক স্থায়ীভাবে কর্তন করতে হবে। দেখুন, আল্লাহ তাআলা ব্যভিচারকারীর তাওবার আলামত হিসাবে বলেছেন, ’’আর যে (ব্যভিচার থেকে) তাওবা করে এবং সৎকাজ করে তবে নিশ্চয় সে পরিপূর্ণভাবে আল্লাহর দিকে প্রত্যাবর্তন করে।‘’ (সূরা আল ফুরকান:৭০)

তৃতীয়ত: আপনি বলেছেন, এসব কথা মনে হলে আল্লাহ তাআলার সামনে মুখ তুলতে লজ্জা লাগে। এটাও বলেছেন,’ব্যাভিচার করেছি…যখন মনে হয় বুকটা ফেটে যায় ।না জানি আল্লাহ কতটা অসন্তুষ্ট আমার উপর। কাঁদতে কাঁদতে বুক ভিজে যায়।‘ এগুলো অবশ্যই তাওবার আলামত। তবে আপনি যদি ওই নারীর সাথে সকল সম্পর্ক কর্তন করতে না পারেন তাহলে আপনার এই ‘আল্লাহভীতি’ মূল্যহীন হয়ে পড়ার শতভাগ আশঙ্কা আছে। আরো আশংকা হচ্ছে- না জানি আপনি এ হাদীসের হুমকির অন্তর্ভুক্ত হয়ে আছেন। রাসূলুল্লাহ (সাঃ) বলেন: আমি জানি কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের মধ্যে একদল তিহামা পাহাড়ের মত শুভ্র নেক আমল নিয়ে হাজির হবে। কিন্তু আল্লাহ তাদের সেসব নেক আমলকে লাপাত্তা করে দিবেন। সাওবান বললেনঃ হে আল্লাহর রাসূল (সাঃ)! আপনি আমাদেরকে তাদের পরিচয় জানিয়ে দিন; যেন অজ্ঞাতসারে আমরা তাদের অন্তর্ভুক্ত না হই। তিনি বললেনঃ তারা তোমাদেরই ভাই, তোমাদেরই বংশধর। তারা তোমাদের মত তাহাজ্জুদগুজার। কিন্তু তারা নির্জনে নিভৃতে আল্লাহর নাফরমানীতে লিপ্ত হয়।(ইবনে মাজাহ, হাদিস নং ৪২৪৫)

চতুথত: আপনি বলেছেন, ‘’আপনি তাকে স্ত্রী হিসেবে হিসেবে পেতে চান। কারণ আপনি তাকে ভালবাসেন। তাছাড়া মেয়েটার মানসন্মান বিলীন হয়ে যাবে।‘’ এও বলেছেন, ‘তার স্বামীর সাথে তার কোন সম্পর্ক নাই। আপনি তার স্বামীর হক নষ্ট করে জুলুম করেছেন।‘ হ্যাঁ,আপনি অবশ্যই তার স্বামীর হক নষ্ট করেছেন। কিন্তু বস্তুত আপনার চাইতে বড় জালিম ও খেয়ানতকারী ওই মেয়েটি। বিবাহের মাধ্যমে আপনারা উভয় হয়ত এ-জাতীয় হারাম কর্মে নিপতিত হওয়া থেকে নিজেদেরকে বাঁচাতে পারবেন। তবে এখনও সে আপনার জন্য পরনারী এবং হারাম। সুতরাং এই হাদীসটিও শুনুন, রাসূল (সাঃ)’ বলেছেন, ‘’নিশ্চয় তোমাদের কারো মাথায় লোহার পেরেক ঠুকে দেয়া ওই মহিলাকে স্পর্শ করা থেকে অনেক ভাল, যে তার জন্য হালাল নয়।” (তাবারানী, ছহীহুল জামে হাদীস -৪৯২১) অতএব, যদি আপনি আসলেই নিষ্কলুষভাবে আল্লাহর কাছে তাওবা করতে চান তাহলে বিয়ের বিষয়টা অবতারণার আগে প্রথমে হারামের সকল পথ বন্ধ করে দিন। এই পাপে পুনরায় পতিত হওয়ার সকল উপায় উপকরণ কর্তন করুন। এক কথায়,তার সাথে কথা বলা থেকে শুরু করে সকল অনৈতিক সম্পর্ক ত্যাগ করুন।

পঞ্চমত: এভাবে যদি আপনার সত্যিকার তাওবা অর্জিত হয় তবে এই পাপ থেকে সরে আসার পর এবং তার স্বামীর তালাক সম্পন্ন হওয়ার পর থেকে পূর্ণ তিনটি হায়েয অতিবাহিত হওয়ার পর আর যদি গর্ভাবস্থায় তালাক হয়ে থাকে তাহলে প্রসবের পর (অথাৎ ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর)­ তার সাথে আপনার বিবাহ করা বৈধ হবে। যদি স্বামী থেকে তালাক না হয়ে থাকে কিংবা তালাক হলে তালাকের পর ইদ্দত অতিবাহিত না হয়ে থাকে তাহলে তার সাথে আপনার বিবাহ হারাম বা অবৈধ হবে। এটাই শরিয়তের সীমা।

ষষ্ঠত: এরপরেও নিছক কিছু খোড়া অজুহাত দেখিয়ে যদি তাওবা না করেন এবং শরিয়তের সীমা লঙ্ঘন করেন তাহলে এটাই বাস্তব যে,আপনারা দুনিয়ার জীবনে একজন আরেকজনকে জেনা-ব্যভিচারে বন্ধু হিসাবে বেছে নিয়ে আল্লাহর আজাব-গজব নিজেেদের জন্য নিজেরাই ডেকে আনছেন । ”আর যে তা করবে সে আযাবপ্রাপ্ত হবে। কিয়ামতের দিন তার আযাব বর্ধিত করা হবে এবং সেখানে সে অপমানিত অবস্থায় স্থায়ী হবে।” (সূরা আল ফুরকান:৭০)

পরিশেষে যদি আপনার বোধদয় হয়—এই আশায় দু’টি হাদীস আপনার জন্য পেশ করলাম—-

 ১.সামুরাহ বিন জুনদুব(রা.) হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, একবার রাসূলুল্লাহ (সাঃ)  নামায পড়ানোর পর আমাদের অভিমূখী হয়ে বললেন, আজ রাত আমি স্বপ্ন যোগে দেখলাম, আমার নিকট দু’জন ব্যক্তি আসল এবং আমাকে এক পবিত্র ভূমির দিকে নিয়ে গেল। আমরা তন্দুরের ন্যায় একটি গর্তের নিকট গিয়ে পৌঁছলাম, যার উপরের অংশ ছিল সঙ্কীর্ণ এবং নিচের অংশ ছিল প্রশস্ত। দাউ দাউ করে আগুন জ্বলছিল এবং সে আগুনে কিছু পুরুষ ও মহিলা উলঙ্গাবস্থায় অবস্থান করছিল। যখন আগুনের শিখা বৃদ্ধি পায় তখন তারা উপরের দিকে চলে যায়, আর যখন আগুনের শিখা হ্রাস পায়, তখন শিখার সাথে সাথে তারাও নিচের দিকে নেমে আসে। আমি জিজ্ঞেস করলাম, এরা কারা? সে দু’জন ব্যক্তি বলল, এরা হল যিনাকারী নর-নারী।  (বুখারী হাদীস নং-১৩৮৬)
২.আল্লামা শামছুদ্দিন যাহাবী (রহ.) বর্ণনা করেন, যাবুর শরিফে উল্লেখ আছে, নিশ্চয় যিনাকারীদেরকে লজ্জাস্থানে বেঁধে আগুনে ঝুলিয়ে রাখা হবে এবং তাদেরকে লোহার হাতুড়ি দিয়ে প্রহার করা হবে, যখন তারা প্রহারে যন্ত্রনায় অতিষ্ঠ হয়ে ফরিয়াদ করবে, তখন আযাবের দায়িত্বে নিয়োজিত ফিরিশতারা বলবে, তোমাদের এ ফরিয়াদ  তখন কোথায় ছিল, যখন তোমরা আনন্দ আহলাদে মত্ত ছিলে। ভোগ সম্ভোগে বিহ্বল ছিলে এবং তোমাদের পুরুষাঙ্গ যৌনাঙ্গে ঢুকিয়েছিলে। তখন তোমরা তো আল্লাহকে ভয়ও করনি এবং তাঁকে লজ্জাও করনি। (কিতাবুল কবায়ের পৃ.৫৫)

উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী

সুত্রঃ http://quranerjyoti.com

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ