শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

Call

কিয়ামতের দিন হযরত ইসরাফিল (আঃ) শিংগায় ফুক দেবেন.এতে সকল ব্যক্তি বেঁচে উঠবেন.এবং সকলে একসাথে এক মাঠে একত্রিত হবে.সেখানে মহান আল্লাহ তায়ালা তাদের সকল কাজের হিসাব নিবেন.

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

আল্লাহপাক কিয়ামতের দিন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে বলবেন— ‘মাথা উত্তোলন করুন এবং যা চাওয়ার চান, সব দেওয়া হবে।’ যদি না দিতেন, তাহলে চাইতে বলতেন না। কিয়ামতের দিন সব মানুষ বিচলিত হয়ে এদিক সেদিক ঘোরাফেরা করবে আর নাফসি নাফসি বলে পেরেশান হয়ে নবীদের কাছে সুপারিশ করার আবেদন করবে। আদম (আ.)-এর কাছে গেলে তিনি বলবেন, আমার দ্বারা সম্ভব নয় আল্লাহপাক জান্নাতে ফল খেতে নিষেধ করলে আমি তা মানতে পারিনি। ওই ফল ভক্ষণ করেছি। ফলে বেহেশত থেকে বহিষ্কৃত হতে হয়েছে। আমার জানা নেই আজ কী ব্যবহার করা হয় আমার সঙ্গে। এরপর হজরত মূসা (আ.)-এর কাছে পাঠানো হলে তিনি বলবেন, আমি সুপারিশ করতে পারব না, কারণ আমি কিবতি একজনকে থাপ্পড় দিয়ে হত্যা করেছিলাম। জানি না আজ আমার সঙ্গে কিরূপ ব্যবহার করা হয়। এভাবে তারা হজরত নূহ ও ইব্রাহিম (আ.)-এর কাছে পৌঁছবে, তারাও নিজের অক্ষমতা প্রকাশ করে বলবেন, তোমরা সর্বশ্রেষ্ঠ ও সর্বশেষ নবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের কাছে যাও। তার কাছে আবেদন করার পর তিনি সেজদায় পড়ে কাঁদতে থাকবেন। হুজুর সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলবেন, হে আল্লাহ! সমস্ত মানুষ বিচলিত, সবাই মহাবিপদে আছে। আপনি বিচার কায়েম করুন, জান্নাত ও জাহান্নামের সিদ্ধান্ত করুন। এরপর আল্লাহপাক মিজান তথা দাঁড়িপাল্লা কায়েম করবেন এবং মানুষের হিসাব নেওয়া আরম্ভ করবেন। এটাকে বলা হয় শাফায়েতে কুবরা। সেদিনের ভয়াবহতা সম্পর্কে আলোচনা করতে গিয়ে একদা নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবাদের সামনে বলেন, সেদিন মানুষ বিচলিত হয়ে ঘুরতে থাকবে উলঙ্গ অবস্থায়। উলঙ্গ অবস্থার কথা বললে হজরত আয়েশা সিদ্দিকা (রা.) লজ্জায় মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বলেন, হে আল্লাহর রসুল একজন অপরজনকে দেখবে না? এ প্রশ্ন শুনে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কাঁদতে লাগলেন। অতঃপর বললেন, হে আয়েশা! সেদিন সম্পর্কে তুমি আঁচ করতে পারনি। সেদিন সবার দৃষ্টি উপরের দিকে থাকবে। কেউ কারও দিকে তাকাবে না, নিজের চিন্তায় সবাই বিভোর থাকবে। হিসাব-নিকাশের পর জান্নাতিগণ জান্নাতে আর জাহান্নামিরা জাহান্নামে প্রবেশ করবে। অনেক উম্মতে মুহাম্মাদি জাহান্নামে যাবে। তা দেখে নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম ব্যথিত হয়ে সেজদায় পড়ে যাবেন। আল্লাহপাক বলবেন, মাথা উত্তোলন করে যা চাওয়ার চান, দেওয়া হবে। তখন নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম উম্মতের জাহান্নাম থেকে নিষ্কৃতির আবেদন করবেন। আল্লাহপাক বলবেন, আজ আপনার পেরেশানির দিন নয়। আপনি যা চাইবেন, তাই দেওয়া হবে। দুনিয়াতে অনেক কষ্ট করেছেন, আজ কষ্টের দিন নয়। আপনার ইচ্ছামতো জাহান্নামিদের বের করুন। আল্লাহপাক নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামকে ব্যাপক অনুমতি দেবেন। শুধু নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লামের উম্মতকে বের করতে না বলে নির্দেশটি ব্যাপক রাখাতে তিনি অন্য উম্মতদেরও বের করবেন। এরপরও অনেক উম্মত বাকি থাকবে। হাজার হাজার বছর পর আল্লাহপাক বলবেন, আপনার সমস্ত উম্মতকে বের করে এনেছেন কি? তিনি বলবেন, হ্যাঁ। আল্লাহপাক বলবেন, আরও অনেকে আছে নিয়ে আসুন। ভয়াবহ হাশরের ময়দানের চিত্র : হাশরের মাঠের চিত্র হবে অত্যন্ত ভয়াবহ। সেদিন পৃথিবী সৃষ্টি থেকে শুরু করে ধ্বংস হওয়ার পর্যন্ত সমস্ত মানুষকে জমায়েত করা হবে। পবিত্র কুরআনে বলা হয়েছেÑ ‘সেদিন পরিবর্তিত করা হবে এ পৃথিবীকে অন্য পৃথিবীতে এবং পরিবর্তিত করা হবে আসমান সমূহকে এবং লোকেরা পরাক্রমশালী এক আল্লাহর সামনে হাজির হবে। (সুরা ইবরাহিম : ৪৮)। রাসুল সা. বলেনÑ ‘কিয়ামতের দিন সাদা ময়দার রুটির মতো চকচকে একটি মাঠের উপর সমস্ত মানুষকে একত্রিত করা হবে। সেখানে কারও কোনো নিশানা থাকবে না। (বুখারি : কিতাবুত রিকাক) হাশরের ময়দানে আপনজনদের ভুলে যাবে : হাশরের ময়দানে মানুষ তার আপনজনদের ভুলে যাবে। সবাই নিজের চিন্তায় ব্যতিব্যস্ত থাকবে। হজরত রাসুল সা. বললেনÑ ‘তিনটি স্থানে কেউ কারও কথা স্মরণ রাখবে না। ১. মিযানের নিকট। সেখানে প্রত্যেকেই চরম উদ্বিগ্ন হয়ে জানতে চাইবে যে, তার নেকির পাল্লা হালকা হয়, নাকি ভারী হয়! ২. আমলনামা প্রদানের সময়, যখন প্রত্যেককে বলা হবেÑ ‘তোমাদের নিজ নিজ আমলনামা পাঠ কর।’ তখন প্রত্যেকেই ভীষণভাবে অধীর হয়ে জানতে চাইবে যে, তার আমলনামা ডান হাতে দেওয়া হবে নাকি পেছন দিক দিয়ে বাম হাতে দেওয়া হবে। ৩. পুলসিরাতের নিকট, যখন তা জাহান্নামের উভয় পাড় ঘেঁষে ওপরে বসানো হবে (এবং তার ওপর দিয়ে অতিক্রমের নির্দেশ দেয়া হবে)। এই তিনটি স্থানে কেউ কাউকে স্মরণ রাখবে না।’ (আবু দাউদ) কাফেররা অন্ধ ও চেহারার উপর ভর করে  হাশরের ময়দানে উপস্থিত হবে : আল্লাহ তাআলা বলেন: আর যে আমার স্মরণ থেকে মুখ ফিরিয়ে নেবে, তার জন্য হবে নিশ্চয় এক সংকুচিত জীবন এবং আমি তাকে কিয়ামত দিবসে উঠাবো অন্ধ অবস্থায়। সে বলবে, হে আমার রব, কেন আপনি আমাকে অন্ধ অবস্থায় উঠালেন? অথচ আমি তো ছিলাম দৃষ্টিশক্তি সম্পন্ন? তিনি বলবেন, এমনিভাবেই তোমার নিকট আমার নিদর্শনাবলী এসেছিল, কিন্তু তুমি তা ভুলে গিয়েছিলে এবং সেভাবেই আজ তোমাকে ভুলে যাওয়া হল। (সূরা ত্বা-হা- ১২৪-১২৬) তিনি আরো বলেন: আর আমি কিয়ামতের দিনে তাদেরকে একত্র করব উপুড় করে, অন্ধ, মূক ও বধির অবস্থায়। তাদের আশ্রয়স্থল জাহান্নাম; যখনই তা নিস্তেজ হবে তখনই আমি তাদের জন্য আগুন বাড়িয়ে দেব। (সূরা বানী ইসরাইল- ৯৭)  হাদীসে এসেছে: আনাস রা. থেকে বর্ণিত যে, এক ব্যক্তি জিজ্ঞেস করল, ইয়া রাসূলাল্লাহ! কিয়ামতের দিন কাফেরদের কিভাবে চেহারার উপর উপুর করে উঠানো হবে? তিনি বললেন: যে মহান সত্ত্বা দুনিয়াতে দু পা দিয়ে চলাচল করিয়েছেন, তিনি কি কিয়ামতের দিন মুখ-মন্ডল দিয়ে চলাচল করাতে পারবেন না? কাতাদা বললেন : অবশ্যই তিনি পারবেন, মহান রবের সম্মানের কসম করে বলছি। (বুখারী ও মুসলিম) আবু হুরাইরা রা. থেকে বর্ণিত যে রাসূলুল্লাহ স. বলেছেন: কেয়ামতের দিন মানুষ ঘর্মক্ত হবে। এমনকি যমীনের সত্তর হাত ঘামে ডুবে যাবে। তাদের ঘামে তারা কান পর্যন্ত ডুবে যাবে। (বুখারী ও মুসলিম) হাশরের ময়দানে  সূর্যের দূরত্ব ও প্রখরতা : মিকদাদ ইবনে আসওয়াদ রা. থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন আমি রাসূলুল্লাহ স. কে বলতে শুনেছি তিনি বলেছেন: কিয়ামত দিবসে সূর্য মানুষের খুব নিকটবর্তী হবে। এমনকি এর দুরত্ব এক মাইল পরিমাণ হবে। এ সম্পর্কে সুলাইম ইবনে আমের বলেন, আল্লাহর শপথ! মাইল বলতে এখানে কোন মাইল তিনি বুঝিয়েছেন আমি তা জানি না। জমির দূরত্ব পরিমাপের মাইল বুঝিয়েছেন, না সুরমা দানির মাইল (শলাকা) বুঝিয়েছেন? মানুষ তার আমল অনুযায়ী ঘামের মধ্যে থাকবে। কারো ঘাম হবে পায়ের গিরা বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে হাটু বরাবর। কারো ঘামের পরিমাণ হবে কোমর বরাবর। আবার কারো ঘামের পরিমাণ হবে তার মুখ বরাবর। (সহীহ মুসলিম ২১৯৬) হযরত উকবা ইবনে আমের (রা.) বলেন, মহানবী (সা.) বলেছেন, কিয়ামত দিবসে সূর্য্য যমীনের নিকটবর্তী হবে; ফলে মানুষ ঘর্মাক্ত হতে থাকবে। কারো ঘাম গোড়ালী পর্যন্ত, কারো অর্ধহাঁটু, কারো উরু, কারো কোমর, কারো মুখ পর্যন্ত পৌঁছবে। কারো মাথা পর্যন্ত ঘামের মধ্যে ডুবে যাবে। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ