"ইব্রাহীম (আ)-এর পিতার নাম" ঃ
যেখানে আল্লাহ কুরআনকে তাওরাত, যাবূর ও ইনজীলের বিশুদ্ধতা বিচারের মানদণ্ড বলে ঘোষণা করেছেন, সেখানে কোনো কোনো তাফসীরকারক বা আলেম বাইবেলের বর্ণনাকে বিশুদ্ধতার মাপকাঠি হিসাবে গণ্য করে তার ভিত্তিতে কুরআনের বর্ণনাকে ব্যাখ্যা করেন। এর একটি জঘন্য উদাহরণ হলো ইবরাহীম (আ) এর পিতার নাম। মহান আল্লাহ বলেন:
ﻭَﺇِﺫْ ﻗَـﺎﻝَ ﺇِﺑْـﺮَﺍﻫِـﻴْـﻢُ ﻷَﺑِـﻴْـﻪِ ﺁﺯَﺭَ
“এবং যখন ইবরাহীম তাঁর পিতা আযরকে বললেন” [সূরাঃ আল-আন'আম(৬)ঃ৭৪]
এখানে সুস্পষ্টভাবে ইবরাহীমের পিতার নাম ‘আযর’ বলে উল্লেখ করা হয়েছে। কিন্তু বাইবেলে বলা হয়েছে যে ইবরাহীমের পিতার নাম ছিল ‘তেরহ’ । কুরআন কারীমে সাধারণত নবুয়ত, দাওয়াত ও মু’জিযা বিষয়ক তথ্য ছাড়া নবীগণের পিতা, মাতা, জন্মস্থান, জীবনকাল ইত্যাদি বিষয়ে অতিরিক্ত তথ্য আলোচনা করা হয় না। কখনো কখনো ইহূদীদের মিথ্যাচারের প্রতিবাদের জন্য কিছু তথ্য প্রদান করা হয়। যেমন, ইহূদীরা তাদের বাইবেল বিকৃত করে লিখেছে যে, আল্লাহ ৬ দিনে পৃথিবী সৃষ্টি করেন এবং ৭ম দিনে বিশ্রাম করেন। কুরআন কারীমে এরশাদ করা হয়েছে যে, মহাবিশ্ব সৃষ্টি করতে আল্লাহর কোনো শ্রম হয়নি বা বিশ্রামের প্রয়োজন হয়নি। এখানে ইবরাহীমের পিতার নাম বিশেষভাবে উল্লেখ করার কারণ সম্ভবত ইব্রাহীমের পিতার নামের ক্ষেত্রে ইহূদীদের ভুলটি তুলে ধরা। সর্বাবস্থায় মুমিনের জন্য কুরআন-হাদীসের বর্ণনার পরে আর কোনো বর্ণনার প্রয়োজন হয় না। এ জন্য অধিকাংশ প্রাজ্ঞ মুফাস্সির বলেছেন যে, ইবরাহীম (আ) -এর পিতার নাম ‘আযর’ ছিল। কুরআনের এই তথ্যই চূড়ান্ত। ইহূদী-খৃস্টানদের তথ্যের দিকে দৃষ্টি দেওয়ার কোনো প্রয়োজন মুসলিম উম্মাহর নেই। বাইবেলের বর্ণনায় প্রভাবিত হয়ে কোনো কোনো মুফাস্সির সমন্বয় করতে চেয়েছেন। কেউ বলেছেন বলেছেন যে, আযর ও তেরহ দুইটিই ইব্ররাহীম (আ) -এর পিতার নাম ছিল। যেমন ইয়াকূব (আ) এর আরেকটি নাম ইস্রাঈল। কেউ বলেছেন একটি ছিল তার উপাধি ও একটি ছিল তার নাম। অনুরূপ আরো কিছু মতামত আছে। এ সকল ব্যাখ্যায় কুরআনের বর্ণনাকে বিকৃত করা হয় নি। সকলেই একমত যে, এখানে ‘তাহার পিতা’ বলতে ইব্রাহীমের জন্মদাতা পিতাকে বুঝানো হয়েছে এবং ‘আযর’ তারই নাম অথবা উপাধি…। তবে সবচেয়ে জঘন্য ও মিথ্যা একটি মত প্রচলিত আছে যে, বাইবেলের বর্ণনাই ঠিক, ইবরাহীমের পিতার নাম ছিল তেরহ। তার নাম কখনোই আযর ছিল না। তারা কুরআনের বর্ণনাকে সরাসরি মিথ্যা না বলে এর একটি উদ্ভট ব্যাখ্যা দিয়ে বলেছেন যে, ইবরাহীমের এক চাচার নাম ছিল আযর। কুরআনে চাচাকেই ‘পিতা’ বলা হয়েছে। এভাবে তারা বাইবেলের বর্ণনাকে বিশুদ্ধতার মাপকাঠি হিসেবে গ্রহণ করে কুরআনের আয়াতের স্পষ্ট অর্থকে বিকৃত করেছেন। ‘পিতা’ অর্থ ‘চাচা’ বলা মূলত কুরআনের অর্থের বিকৃতি করা এবং কোনো প্রকারের প্রয়োজন ছাড়া স্পষ্ট অর্থকে অস্বীকার করা। কোনো কোনো ব্যতিক্রম স্থানে চাচাকে পিতা বলার দূরবর্তী সম্ভাবনা থাকলেও আমাদেরকে দুটি বিষয় মনে রাখতে হবে: প্রথমত, নিজের জন্মদাতা পিতা ছাড়া কাউকে নিজের পিতা বলা বা নিজেকে তার সন্তান বলে দাবি করা হাদীস শরীফে কঠোর ভাবে নিষেধ করা হয়েছে। দ্বিতীয়ত, কুরআনের স্পষ্ট অর্থ অন্যান্য আয়াত বা হাদীসের স্পষ্ট নির্দেশ ছাড়া রূপক বা ঘোরালো ভাবে ব্যাখ্যা করা বিকৃতির নামান্তর। সহীহ বুখারীতে সংকলিত হাদীস থেকেও আমরা জানতে পারি যে, আযরই ইবরাহীমের জন্মদাতা পিতা এবং এই আযরকেই ইবরাহীম কিয়ামতের দিন ভর্ৎসনা করবেন এবং একটি জন্তুর আকৃতিতে তাকে জাহান্নামে ফেলা হবে। এই বিকৃতি ও অপব্যাখ্যা সমর্থন করার জন্য কেউ কেউ দাবি করেন যে, ইবরাহীমের জন্মদাতা পিতা কাফির ছিলেন না; কারণ আদম (আ) থেকে রাসূলুল্লাহ (সঃ) পর্যন্ত তাঁর পূর্বপুরুষদের মধ্যে কেউ কাফির-মুশরিক ছিলেন না। এই কথাটি ভিত্তিহীন এবং কুরআন কারীম, সহীহ হাদীস ও ঐতিহাসিক তথ্যাদির সুস্পষ্ট বিপরীত। কুরআন কারীমে এবং অনেক সহীহ হাদীসে বারংবার ইবরাহীমের পিতাকে কাফির বলা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর দাদা আব্দুল মুত্তালিব কুফরী ধর্মের উপর ছিলেন বলে বুখারী ও মুসলিমের হাদীসে উল্লেখ করা হয়েছে। রাসূলুল্লাহ (সঃ) তাঁর চাচা আবূ তালিবকে মৃত্যুর সময়ে ইসলাম গ্রহণের দাওয়াত দিলে তিনি ইসলাম গ্রহণে অস্বীকার করে বলেন আমি আব্দুল মুত্তালিবের ধর্মের উপরেই থাকব। স্বভাবতই আমর ইবনু লুহাই-এর যুগ থেকে আব্দুল মুত্তালিবের যুগ পর্যন্ত পূর্বপুরুষগণও শিরকের মধ্যে লিপ্ত ছিলেন, যদিও তাঁরা সততা, নৈতিকতা, জনসেবা ইত্যাদির জন্য প্রসিদ্ধ ছিলেন। রাসূলুল্লাহ (সঃ)-এর পূর্বপুরুষগণ সকলেই অনৈতিকতা, ব্যভিচার ও অশ্লীলতা মুক্ত ছিলেন।
[সূত্র ঃ "হাদীসের নামে জালিয়াতি"। পৃষ্ঠা ঃ ১১৬ | সংস্করণ ঃ ২০১০ | ড. খোন্দকার আব্দুল্লাহ জাহাঙ্গীর (রাহিঃ) | আস-সুন্নাহ ট্রাস্ট]।
আরো দেখতে পারেন, সামহোয়্যার ব্লকের ওয়েবসাইটে >
https://m.somewhereinblog.net/mobile/blog/abdullahmfa/29494104
ইব্রাহীম (আঃ) তার পিতার নাম ছিল তারাহ বা তারিখ, তবে অনেকেই তাকে আযর নামেও চিনে, আযর বলা হয় ঐ ব্যাক্তিকে যিনি মূর্তি তৈরী করেন,,, যেমন যারা মাছ ধরে তাদের বলা হয় জেলে, যারা হাড়ি পাতিল তৈরী করে তাদের বলা হয় কুমার, যারা দা বটি তৈরী করে তাদের বলা হয় কামাড়, ঠিক আযর বলা হয় ঐ ব্যাক্তিকে যিনি মূর্তি তৈরী করেন! ধন্যবাদ৷