শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

হুম...হযরত খিজির (আ) এখনো  জীবিত আছেন..।

তাকে কিয়ামত পর্যন্ত কেউ দেখতে পারবে না...

তিনি অদৃশ জীবন যাপন করেন। আবু হাতিম (রঃ) বলেন, আমার উস্তাদ আবু উবায়দাহ (রহঃ) বলেছেন, আদম সন্তানদের মাঝে সবচেয়ে বেশি
আয়ুর অধিকারী হলো খিজির (আঃ)....।


 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

খিজির (আঃ) কি নবী ছিলেন, না ওলী ছিলেন, তিনি কি বেঁচে আছেন কি নেই এ ব্যাপারে আলেমদের মধ্যে মতভেদ রয়েছে। হযরত খিজির (আঃ) তার সম্পর্কে এই দুই ধরনের মত আমরা লক্ষ করে থাকি। এই দুই পক্ষের মতামত ও দলিলসমুহ উপস্থাপন করা হলো বাকী বিচার বিবেচনা করার দায়িত্ব আপনাদের। বুখারী শরীফের সহিহ হাদীস দ্বারা প্রমাণিত যে হযরত খিজির (আঃ) জীবিত এবং তিনি মানুষের সাথে মিলিতও হন, নবী করিম (সাঃ) এরশাদ করেছেন খিজির (আঃ) আল্লাহর হকুমে আবে হায়াত পান করেছেন, সুতরাং তিনি কেয়ামত পযন্ত জীবিত থাকবেন। তিনি মানুষের সাথে মানুষের সুরতে উপস্থিত হয়ে মুলাকাত করে থাকেন। কোন কোন সময় নিজের পরিচয় দিয়ে থাকেন বলেন আমি হলাম খিজির। আর কোন কোন সময় অনেকে উনার সাথে মিলিত হয়ে যান, সাক্ষাৎপ্রাপ্ত হন, কিন্তু তারা বুঝতেও পারে না যে উনি খিজির (আঃ)। সুতরাং আমরা দোয়াও করতে পারি হে আল্লাহ আমাকের হযরত খিজির (আঃ) এর সাথে সাক্ষাৎ করিয়ে দাও। দামেস্কের একটি মসজিদ যে মসজিদের নামই হল মসজিদে খিজির, যাকে জামে মসজিদে দামেশক ও বলা হয়। হাদীস শরীফে আছে সে মসজিদের মিনারে ফজরের নামাজের সময় হযরত ঈসা (আঃ) আসমান থেকে নেমে আসবেন। যখন ফজর নামাজের একামত দেয়া শেষ হবে। বনি উমাইয়ার একজন বাদশাহ নাম অলিদ বিন আবদুল মালিক তিনি বাদশাহ থাকাকালীন সময় এ মসজিদে তশরীফ নিয়ে আসেন। তিনি আসার পর সৈন্যদের বলে দেন তোমরা আমি মসজিদে থাকাকালীন কাউকে প্রবেশ করতে দিও না আমি একাকীই নামাজ আদায় করব। তিনি একাকী নামাজ পড়তে লাগলেন কিন্তু কিছুক্ষন পর দেখলেন তার অদুরে অন্য একজন লোক নামাজ আদায় করছেন, তখন তিনি খুব রাগতভাবে নামাজ আদায় করলেন মনে মনে বলত লাগলেন আমি সিপাহিদের বলে দিয়েছি আমি থাকাকালীন মসজিদে যেন কেউ প্রবেশ না করে কিন্তু এ লোকটিকে তারা প্রবেশ করতে দিল কেন? এসব চিন্তা করতে করতে তিনি নামাজ শেষ করলেন আর শেষ করে তিনি সে লোকটিকে আর মসজিদে দেখতে পেলেন না। তবুও বাদশাহ সিপাহিদের প্রশ্ন করল তখন সিপাহিরা উত্তর দিল হযরত যিনি আপনার পাশে নামাজ পড়েছেন তিনি কোন সাধারন লোক না তিনি হলেন হযরত খিজির (আঃ)। এভাবে খিজির (আঃ) এর সাথে অনেকেরই সাক্ষাৎ হয়ে থাকে। হযরত খিজির (আঃ) কে ছিলেন সে বিষয়ে ওলামাদের মধ্যে মতানৈক্য রয়েছে কোন কোন ওলামার মতে তিনি ফিরিশতা ছিলেন তবে জমহুর ওলামাগন এ মতের বিরোধীতা করেছেন। জমহুরের মতে তিনি মানুষ ছিলেন তবে কোন কোন ওলামা বলেন তিনি মানুষ ছিলেন এবং আল্লাহর অলি ছিলেন। আর জমহুর এর অধিকাংশের মতে তিনি আল্লাহর নবী ছিলেন। এবং তিনি এখনও জীবিত আছেন তিনি মৃত্যু বরণ করেন নি, যদিও অন্যান্য নবীগনের উপর কিছুক্ষনের জন্য হলেও মৃত্যু এসেছে। তবে ইসা (আঃ) ইদরিস (আঃ) ইলিয়াস (আঃ) খিযির (আঃ) এই চার জন নবীর উপর মৃত্যু সংগঠিত হয়নি। সুতরাং হযরত খিযির (আঃ) আল্লাহর নবী ছিলেন এবং এর পক্ষে কোরআন ও হাদীস শরীফের দলীলও রয়েছে। হাফিজ আবু বকর বায়হাকী আনাস ইবন মালিক (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, যখন রাসুলুল্লাহ (সাঃ) ইনতিকাল করেন তাঁ র সাহাবীগণ তার চতুষ্পার্শ্বে বসে গেলেন ও রোদন করতে লাগলেন ৷ তারা সকলে একত্রিত হলেন ৷ এমন সময় একজন আধাপাকা শ্মশ্রুধারী উজ্জ্বল স্বাহ্যবান এক ব্যক্তি ঘরে প্রবেশ করলেন ও সকলকে ডিঙ্গিয়ে তার নিকটবর্তী হলেন এবং কান্নাকাটি করলেন ৷ অতঃপর সাহাবায়ে কিরামের প্রতি তাকালেন ও বললেন : প্রতিটি মুসীবত হতেই আল্লাহ তাআলার কাছে সান্ত্বনা রয়েছে ৷ প্রতিটি ক্ষতিরই ক্ষতিপুরণ রয়েছে এবং প্রতিটি নশ্বর বন্তুর স্থলবর্তী রয়েছে ৷ সুতরাং আল্লাহর প্রতি সকলে প্রত্যাবর্তন করুন ৷ তারই দিকে মনােযােগী হোন! তিনি আপনাদেরকে মুসীবতের মাধ্যমে পরীক্ষা করছেন ৷ তাই আপনারা ধৈর্যধারণ করুন! ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে সেই যার ক্ষতি পুরণ হবার নয় ৷ এ কথা বলে তিনি চলে গেলেন ৷ সাহাবীগণের একজন অন্য জনকে বলতে লাগলেন, তোমরা কি এই ব্যক্তিকে চেন? আবু বকর (রাঃ) ও আলী (রাঃ) বললেন : হ্যা , রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর জাতি ভাই খিযির (আ)। ইমাম শাফিঈ (রহঃ) তার মুসনাদে আলী ইবন হুসাইন (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাঃ) যখন ইনতিকাল করেন ও শোকবাণী আসতে থাকে , তখন উপস্থিতসাহাবীগণ এক ব্যক্তিকে বলতে শুনেন, তিনি বলেছেন, প্রতিটি মুসীবত থেকেই আল্লাহ আলার পক্ষ থেকে সান্তুনা রয়েছে, প্রতিটি নশ্বর বন্তুর স্থলবর্তী রয়েছে, প্রতিটি ক্ষতিরইক্ষতিপুরণ রয়েছে ৷ সুতরাং আল্লাহ তাআলার প্রতি ভরসা করুন ও তার কাছেই প্রত্যাশা করুন ৷ আর প্রকৃত মুসীবতগ্রস্থ ব্যক্তি তিনিই, যিনি সওয়াব থেকে বঞ্চিত হন। আলী ইবন হুসাইন (রাঃ) বলেন, তােমরা কি জান, তিনি কে ছিলেন? তিনি ছিলেন খিযির (আ)। আবদুল্লাহ ইবন ওহাব (রহঃ) মুহাম্মদ ইবন মুনকাদির (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, একদিনউমর ইবন খাত্তাব (রাঃ) একটি জানাযার নামায আদায় করছিলেন, এমন সময় তিনিএকজন অদৃশ্য ব্যক্তির আওয়াজ শুনলেন, আপনার প্রতি আল্লাহ তাআলা রহমত করুন৷ আমাদেরকে ছেড়ে জানাযা পড়বেন না। উমর (রাঃ) তার জন্য অপেক্ষা করলেন। তিনি নামাযে যোগদান করলেন এবং মৃত ব্যক্তির জন্য এরুপ দুআ করলেন, হে আল্লাহ৷ আপনি যদি তাকে শাস্তি দেন তবে অনেক ক্ষেত্রেই সে আপনার অবাধ্যতা করেছে ৷ আরআপনি যদি তাকে মাফ করে দেন তাহলে সে তো আপনার রহমতেরই মুখাপেক্ষী। মৃতব্যক্তিকে দাফন করার পর ঐ ব্যক্তি বললেনঃ হে কবরের বাসিন্দা ! তোমার জন্য সুসংবাদ,যদি না তুমি তত্ত্বাবধানকারী, কর উত্তলকারী, খাজাঞ্চী, কােষাধ্যক্ষ, কিংবা কোতয়াল হয়েথাক ৷ তখন উমর (রাঃ) বললেন, চল, আমরা তাকে তার দুআ ও তার উক্তি সম্পর্কেজিজ্ঞাসা করি যে, তিনি কে? বর্ণনাকারী বলেন, এমন সময় তিনি অদৃশ্য হয়ে গেলেন। তারা লক্ষ্য করে দেখলেন যে, তার পায়ের চিহ্ন এক হাত দীর্ঘ ৷ তখন উমর (রাঃ) বলেন, আল্লাহর শপথ ! ইনিই খিযির (আঃ), তার সম্বন্ধে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) আমাদেরকে অবহিত করেছিলেন। হাফিজ ইবন আসাকির (রহঃ) আলী (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন। তিনি বলেন একদিন রাতের বেলায় আমি তাওয়াফ করছিলাম। হঠাৎ এক লোককে আমি কাবা শরীফের গিলাফ ধরে থাকতে দেখলাম। তখন তিনি বলেছিলেন, হে মহান সত্তা! যার বাণী শুনতে কেউ বিরক্তবোধ করে না, যাঞা যাকে বিরক্ত করে না পুনঃ পুনঃ কাকুতি মিনতিকারীর মিনতিতেএবং যাঞাকারীদের প্রার্থনায় যিনি বিরক্ত হন না, আপনার ক্ষমার শীতলতা দিয়ে আমার প্রাণ জুড়ান। এবং আপনার রহমতের স্বাদ আস্বাদন করান। আলী (রাঃ) বলেন, আমিবললাম, আপনি যা বলছিলেন তা আমার জন্য পুনরায় বলুন ৷ তিনি বললেন, আমি যাবলেছি তুমি কি তা শুনে ফেলেছ? বললাম, শুনেছি ৷ তখন তিনি আবার বললেন, ঐ সত্তারশপথ, যার হাতে খিযিরের প্রাণ ন্যস্ত। আলী (রাঃ) বলেন, ইনিই হচ্ছেন খিযির (আঃ)। যেব্যক্তি দুআটি প্রতি ফরয সালাতের পর পড়বে তার গুনাহ রাশি আল্লাহ তাআলা ক্ষমা করে দেবেন, যদিও তার গুনাহরাশি সাগরের ফেনা, গাছের পাতা ও তারকার সংখ্যার মত হয়তবুও আল্লাহ তাআলা তা মাফ করে দেবেন। ইবন আসাকির (রহঃ) রাবাহ ইবন উবায়দ (রহঃ) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, একদিন আমি একটি লোককে দেখলাম উমর ইবন আবদুল আযীয (রহঃ)-এর হাতে ভর দিয়ে তার আগে আগে চলছে ৷ তখন আমি মনে মনে বললাম, এ লোকটি পাদুকা বিহীন ৷ অথচ উমরের কত অম্ভরঙ্গ! বর্ণনাকারী বলেন, উমর ইবন আবদুল আযীয (রহব) সালাত শেষে ফিরে আসলেন, তখন আমি তাঁকে জিজ্ঞেস করলাম, এই মাত্র যে লোকটি আপনার হাতে ভর দিয়ে চলছিলেন তিনি কে? তিনি বললেন, তুমি কি তাকে দেখেছ হে রাবাহ? আমি বললাম, জী হ্যা ৷ তিনি বললেন, তোমাকে তো আমি একজন পুণ্যবান লোক বলেই জানি ৷ তিনি হচ্ছেন আমার ভাই খিযির (আ)৷ তিনি আমাকে সুসংবাদ দিলেন যে, আমি অচিরেই শাসনকর্তা হব এবং ন্যায় বিচার করব। অপর দল বলেনঃ হযরত খিজির (আঃ) নবী ছিলেন ঠিক আছে কিন্তু তিনি যে বর্তমানেও জীবিত আছেন তা ঠিক না এ বিষয়ে যে সব হাদীস রয়েছে তার কোনটি দুর্বল কোনটির রাবি সন্দেহযুক্ত, কোনটি বাতিল তাদের দলিল হল ইমাম আহমদ (রহঃ) তার মুসনাদে জাবির ইবন আবদুল্লাহ (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন ৷ তিনি বলেন, রাসুলুল্লাহ (সাব) বলেছেন, যে পবিত্র সত্তার হাতে আমার প্রাণ তার শপথ, যদি মুসা (আ) আমার যামানায় বেঁচে থাকতেন তাহলে আমার অনুসরণ ব্যতীত তার কোন উপায় থাকত না ৷ এ হাদীস শরীফ দ্বারা তারা যুক্তি প্রদর্শন করেন যে যদি নবীগণ রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর যামানায় জীবিত থাকতেন, তাহলে তারা রাসুলুল্লাহ (সাঃ)-এর অনুসারী হতেন এবং তার নিষেধের আওতাধীন থাকতেন ৷ যদি খিযির (আঃ) জীবিত থাকতেন তাহলে তিনি মুহাম্মাদ (সাঃ)-এর উম্মত ও তাঁর শরীয়তের অনুসারীদের অন্তর্ভুক্ত হতেন ৷ অপর একটি যুক্তি হল তাও বুখারী শরীফের হাদীস একদিন নবী করিম (সাঃ) সাহাবীদের বলেন ১০০ বছর পর তোমাদের মধ্যে হতে কোন মানুষ বেঁচে থাকবে না, এ থেকে বুঝা যায় খিজির (আঃ) ও যেহেতু মানুষ সুতরাং তিনিও বেঁচে থাকার কথা নয়। তিনি যদি আমাদের নবী মুহাম্মদ (সাঃ) এর জামানায়ও বেঁচে থাকেন তবুও তিনি তখন থেকে ১০০ বছরের মধ্যে ইন্তেকাল করেছেন। সুতরাং যারা বলে খিযির (আঃ) জিবিত হজ্ব করেন মদীনায় মানুষের সাথে মোলাকাত করেন মুসাফিরদেরকে সাহায্য করেন, মনে রাখবেন এমন কোন কথা সহিহ নয়, খিজির (আঃ) একজন নবী ছিলেন তিনি ইন্তেকাল করেছেন। উভয় পক্ষের মতামত আপনাদের খেদমতে উপস্থাপন করলাম। আল্লাহ আমাদেরকে সঠিক দ্বীন বুঝার তৌফিক দান করুন। আমিন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ