শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Sujon Max

Call

মোঃ মনসুর আলী (১৬ জানুয়ারি ১৯১৯ - ৩ নভেম্বর ১৯৭৫) হলেন বাংলাদেশের সাবেক প্রধানমন্ত্রী। তিনি শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক বাকশাল প্রতিষ্ঠার পর তিনি বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তিনি সামরিক বাহিনীর অবসরপ্রাপ্ত একজন ক্যাপ্টেন ছিলেন। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের প্রাক্কালে মেহেরপুরের বৈদ্যনাথতলার আম্রকাননে গঠিত বাংলাদেশ সরকারে তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব নিয়ে গুরুত্বপূর্ন ভূমিকা পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর জেলহত্যার ফলে নিহত চার জাতীয় নেতার মধ্যে তিনিও একজন। তার পুত্র মোহাম্মদ নাসিম বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের একজন প্রভাবশালী নেতা এবং ১৯৯৬-২০০১ সময়কালে বাংলাদেশ সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন এবং ২০১৩ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত স্বাস্থ্যমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেছেন। [১] মোঃ মনসুর আলী কাজের মেয়াদ জানুয়ারি ২৬, ১৯৭৫ – আগস্ট ১৫, ১৯৭৫ পূর্বসূরী বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান উত্তরসূরী মশিউর রহমান ব্যক্তিগত বিবরণ জন্ম ১৬ জানুয়ারী ১৯১৯ সিরাজগঞ্জ জেলা মৃত্যু ৩ নভেম্বর ১৯৭৫ সন্তান মোহাম্মদ নাসিম ও ডাঃ সেলিম ধর্ম ইসলাম প্রাথমিক জীবন জন্ম সিরাজগঞ্জ জেলার রতনকান্দি ইউনিয়নের 'কুড়িপাড়া'য় ১৯১৯ সালের ১৬ জানুয়ারি । বাবার নাম হরফ আলী সরকার। পড়াশোনা শুরু করেন কাজিপুরের গান্ধাইল হাই স্কুলে৷ এরপর চলে আসেন সিরাজগঞ্জ বি.এল. হাইস্কুলে৷ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হন এখান থেকেই৷ এরপর চলে যান পাবনা৷ ভর্তি হন এডওয়ার্ড কলেজে৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করেন এই কলেজ থেকে৷ উচ্চ মাধ্যমিক পাশ করার পর ১৯৪১ সালে কলকাতা ইসলামিয়া কলেজ থেকে বি.এ পাস করেন ৷ এরপর ভর্তি হন আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়ের মতো নাম করা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে৷ ১৯৪৫ সালে এখান থেকেই অর্থনীতিতে এম.এ এবং 'ল' পাস করেন৷ এল.এল.বি- তে প্রথম শ্রেণী লাভ তিনি। [১]১৯৫১ সালে আইন ব্যবসা শুরু করেন পাবনা জেলা আদালতে৷ আইনজীবী হিসেবে তিনি ছিলেন একজন সফল ব্যক্তি৷ পাবনা আইনজীবী সমিতির নির্বাচিত সভাপতিও ছিলেন তিনি। রাজনৈতিক জীবন আলীগড় থেকে দেশে ফেরার পর তিনি জড়িয়ে পড়েন রাজনীতির সাথে৷১৯৪৬ সাল থেকে ১৯৫০ সাল পর্যন্ত ছিলেন পাবনা জেলা মুসলিম লীগের সহ-সভাপতি৷ ১৯৪৮ সালে তিনি যশোর ক্যান্টনমেন্টে প্রশিক্ষণ নেন এবং পিএলজি-এর ক্যাপ্টেন পদে অধিষ্ঠিত হন৷ এ সময় থেকেই তিনি ক্যাপ্টেন মনসুর নামে পরিচিত হতে থাকেন৷ ইসলামিয়া কলেজে পড়ার সময় তিনি শেখ মুজিবুর রহমানের সাথে পরিচিত হন৷ কলকাতা থেকে দেশে ফেরার পর স্থানীয় রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব আমজাদ হোসেন, আব্দুর রব বগা মিঞা, জনাব আমিন উদ্দিন অ্যাডভোকেট প্রমুখের সাথে তাঁর রাজনৈতিক ঘনিষ্ঠতা বাড়তে থাকে৷ ১৯৫১ সালে তিনি আওয়ামী- মুসলিম লীগে যোগ দেন৷ জড়িয়ে পড়েন সক্রিয় রাজনীতিতে৷ আওয়ামী মুসলিম লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্য হন এবং দলের পাবনা জেলা কমিটির সভাপতি নির্বাচিত হন তিনি৷ শহরে রাষ্ট্রভাষা বাংলার দাবিতে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেন এম. মনসুর আলী৷ ফলে গ্রেফতার করা হয় তাঁকে৷ পরবর্তীকালে মুক্ত হন৷ ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট মনোনীত প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে পূর্ব বাংলা প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন৷ এ নির্বাচনে পাবনা-১ আসনের কেন্দ্রীয় মন্ত্রী আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদের বিরুদ্ধে লড়াই করেন তিনি৷ এবং সবাইকে অবাক করে দিয়ে বিপুল ভোটে জয়লাভ করেন মনসুর আলী ৷ আব্দুল্লাহ্ আল মাহমুদের জামানত [১]বাজেয়াপ্ত হয়ে যায়৷ এরপর যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা ভেঙে যায়৷ ১৯৫৬ সালে আতাউর রহমান খানের নেতৃত্বে বিভিন্ন সময় পূর্ববঙ্গ কোয়ালিশন সরকারের আইন ও সংসদ বিষয়ক, খাদ্য ও কৃষি এবং শিল্প ও বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রীর দায়িত্ব লাভ করেন তিনি৷ ১৯৫৮ সালে দেশে জারি হয় সামরিক শাসন৷ তিনি নিরাপত্তা আইনে গ্রেফতার হন৷ কারা নির্যাতন ভোগের পর মুক্ত হন, ১৯৫৯ সালের শেষের দিকে৷ বাঙালির মুক্তির সনদ ১৯৬৬ সালের ৬ দফা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন৷১৯৭০ সালের ১৭ ডিসেম্বর সাধারণ নির্বাচনে তিনি প্রাদেশিক পরিষদে নির্বাচন করেন৷ পাবনা-১ আসন থেকে পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন স্বাধীনতা যুদ্ধ ২৫ মার্চ বঙ্গবন্ধু গ্রেফতার হলে মনসুর আলী গ্রেফতার এড়াতে চলে যান সোবহানবাগ কালোনীতে।এখান থেকে তিনি কেরানীগঞ্জ হয়ে কুড়িপাড়া যান তাঁর পরিবারের সাথে দেখা করতে৷ এরপর চলে যান ভারতে৷ আসামের মাইনকার চর হয়ে তিনি কলকাতা গমন করেন৷ ভারতে আশ্রয় নেয়া অন্য নেতাদের সাথে দেখা ও যোগাযোগ হয় তাঁর৷ এরপর দলীয় হাই কমান্ডের অন্য নেতারা মিলে সম্মিলিত সিদ্ধান্তে গঠন করেন মুজিব নগর সরকার৷ [১]নতুন গঠিত সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব [১]পালন করেন তিনি৷ এবছরের মাঝামাঝি সময়ে তাঁর পরিবারও কলকাতা গিয়ে পৌঁছে৷ তিনি সপরিবারে বসবাস করতে থাকেন পার্কসার্কাসের সিআইটি রোড়ের বাড়িতে৷ তাঁর অফিস ছিল ৮নং থিয়েটার রোডে৷ স্বাধীনতা পরবর্তী ভূমিকা ১৯৭২-এর জানুয়ারি মাসে শেখ মুজিব পাকিস্তানি কারাগার থেকে দেশে ফিরে মন্ত্রী পরিষদ পুনর্গঠন করেন৷ এবার মনসুর আলী দায়িত্ব নেন প্রথমে যোগাযোগ ও পরে স্বরাষ্ট্র এবং যোগাযোগ মন্ত্রী হিসেবে৷ হার্ডিঞ্জ ব্রিজ মেরামতে রাখেন ভূমিকা৷ ১৯৭৩ সালের ৭ মার্চের নির্বাচনে মনসুর আলী পুনরায় পাবনা-১ আসন থেকে জাতীয় সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন৷ এ বছর তিনি আওয়ামী লীগের পার্লামেন্টারি দলের সদস্য নির্বাচিত হন৷শেখ মুজিবুর রহমান সকল দলকে একত্রিত করার মাধ্যমে রাষ্ট্রপতি শাসিত সরকার পদ্ধতি চালু করেন৷ এ সময় ক্যাপ্টেন মোহাম্মদ মনসুর আলী বঙ্গবন্ধু মন্ত্রিসভার প্রধান মন্ত্রীর দায়িত্ব নেন৷ শেখ মুজিবুর রহমান কর্তৃক গঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের ( বাকশাল) সাধারণ সম্পাদক হন তিনি৷ সময় ১৯৭৫ সালের ২৪ ফেব্রুয়ারি। মৃত্যু ১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর মধ্যরাত্রিতে অন্য তিন জাতীয় নেতার সাথে তাঁকে হত্যা করা হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ