আমাকে একজন বীধর্মি ইফতারের দাওয়াত দিয়েছেন। শুধু আমাকেই না তিনি একজন শিক্ষক হওয়ায় প্রায় সব ছাত্র/ছাত্রীকেই দাওয়াত দিয়েছেন। তার দেওয়া দাওয়াত গ্রহণ করে ইফতার করা যাবে কিনা? এতো রোজার কী কোনো ক্ষতি হবে কিনা? রেফারেন্স সহ উত্তর দিবেন প্লিজ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call
বিধর্মীর সাথে আন্তরিক মোহাব্বত রাখা যাবে না। একথা ঠিক আছে। কিন্তু সামাজিক সম্পর্ক রাখা শরীয়তেরই বিধান। তবে অতিরিক্ত টান থেকে বিরত থাকা কর্তব্য। সেই সাথে এ সম্পর্কে দরূণ যদি দ্বীনী ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে, তাহলেও সম্পর্ক রাখা যাবে না। দ্বীনের প্রতি আকৃষ্ট করার মানসে, সামাজিক দায়িত্ববোধ থেকে সম্পর্ক রাখাতে শরয়ী কোন নিষেধাজ্ঞা নেই। 

إِنَّمَا يَنْهَاكُمُ اللَّهُ عَنِ الَّذِينَ قَاتَلُوكُمْ فِي الدِّينِ وَأَخْرَجُوكُمْ مِنْ دِيَارِكُمْ وَظَاهَرُوا عَلَىٰ إِخْرَاجِكُمْ أَنْ تَوَلَّوْهُمْ ۚ وَمَنْ يَتَوَلَّهُمْ فَأُولَٰئِكَ هُمُ الظَّالِمُونَ [٦٠:٩ 
আল্লাহ কেবল তাদের সাথে বন্ধুত্ব করতে নিষেধ করেন, যারা ধর্মের ব্যাপারে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করেছে, তোমাদেরকে দেশ থেকে বহিস্কৃত করেছে এবং বহিস্কারকার্যে সহায়তা করেছে। যারা তাদের সাথে বন্ধুত্ব করে তারাই জালেম। {সূরা মুমতাহিনা-৮} সুতরাং যেসব বিধর্মীগণ আয়াতে উল্লেখিত দোষে দুষ্ট নয়, এমন বিধর্মীদের সাথে সামাজিক বন্ধন অটুট রাখাতে শরয়ী বিধিনিষেধ নেই। 

এক ইহুদী কিশোর নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর খেদমত করত। সে অসুস্থ হয়ে পড়লে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে দেখতে গেলেন এবং তাকে ইসলামের দাওয়াত দিলেন। তখন সে মুসলমান হয়ে গেল। (সহীহ বুখারী, হাদীস : ১৩৫৬, ৫৬৫৭) সুতরাং কোন বিধর্মী যদি সামাজিকতা হিসেবে ইফতার প্রদান করে থাকে, তাহলে এতে যদি কোন হারাম খাদ্য না থাকে, বা হারাম উপায়ে তৈরী না হয়ে থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করাতে কোন সমস্যা নেই।

 وَفِي التَّفَارِيقِ لَا بَأْسَ بِأَنْ يُضِيفَ كَافِرًا لِقَرَابَةٍ أَوْ لِحَاجَةٍ كَذَا فِي التُّمُرْتَاشِيِّ. وَلَا بَأْسَ بِالذَّهَابِ إلَى ضِيَافَةِ أَهْلِ الذِّمَّةِ هَكَذَا ذَكَرَ مُحَمَّدٌ – رَحِمَهُ اللَّهُ تَعَالَى (الفتاوى الهندية، كتاب الكراهية، الباب الرابع فى اهل الذمة-5/347) 
আর বিধর্মীদের সকল কিছুই হারাম কথাটি সঠিক নয়। বিধর্মীরা যদি হালাল চাকুরী করে, হালাল ব্যবসা করে, তাহলে তাদের সেই হালাল চাকুরী ও হালাল ব্যবসার টাকা আপনি হারাম বলবেন কিভাবে? হ্যাঁ, যদি হারাম উপায়ে উপার্জন করে থাকে, তাহলে তা গ্রহণ করা যাবে না।
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

মানুষকে খাওয়ানো মহৎ গুণ। এর দ্বারা আল্লাহর নৈকট্য হাসিল হয়। এখানে সাধারণ ও অসাধরণ বলতে কোন পার্থক্য নেই। মুসলিম অমুসলিম বলে পার্থক্য নেই। অমুসলিমকে খাওয়ালেও সওয়াব হবে। তবে জাকাতের অর্থ তাদের দেয়া যাবে না। কারণ জাকাত একটি আর্থিক ইবাদত।

অনেক সময় দেখা যায়, অমুসলিমরা মুসলিমদের ইফতারে দাওয়াত দিয়ে আপ্যায়ন করে। এটি তাঁর (ইফতার প্রদানকারী) কাছ থেকে নেওয়া নাজায়েজ নয় বা হারাম নয়। তবে মুসলিমদের জন্য উত্তম হচ্ছে তাঁরা নিজেরা ইফতারের আয়োজন করবে অথবা কোনো মুসলিম ব্যক্তি যদি তাঁদের ইফতার করায়, তাহলে ইফতার করবে।

পক্ষান্তরে যদি কোনো অমুসলিম মনে করেন যে, এখানে মুসলিম যারা আছে, তাদের ইফতার করালে সামাজিক একটা ভালো কাজে অবদান রাখা যায়, তাহলে এই কাজটি হারাম নয়। সুতরাং যদি তাঁর ইফতার করা হয় তাহলে তা হারাম হবে না। শর্ত হলো, হারাম কোনো বস্তু যেন না দেওয়া হয়। কারণ, ইফতারের খাবার অবশ্যই হালাল হতে হবে। এমনকি তাদের জবেহকৃত প্রাণীও খাওয়া জায়েজ হবে না। শুকনা খাবার খাওয়া যাবে।

কিন্তু অমুসলিমদের সাথে একত্রে বসে তাদের বরতনে খাওয়া মাকরূহ, তবে ঠেকা বশতঃ হলে জায়েয। আর যদি জানা থাকে যে, তাদের বরতন নাপাক তাহলে জায়েয নয়।

(ফাতওয়ায়ে মাহমুদিয়া)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ