তিয়ানশি প্রতারণার আদ্যপ্রান্ত তিয়ানশি(TIENS) বা টিয়ানশি যে নামেই বলিনা কেন!! প্রতারকদের ভিন্ন ভিন্ন নাম থাকে। তাদের উদ্দেশ্য কিন্তু একটাই। ডেসটিনির প্রতারণার পর আমরা ভেবেছিলাম বাংলাদেশের মানুষ এখন অনেক সতর্ক হয়েছে। কিন্তু না, মানুষ এখনো বোকাই রয়ে গিয়েছে। যারা তিয়ানশি তে আছেন বা যোগদানের চিন্তা করছেন তারা এই আর্টিকেলটি পুরোটা পড়ুন। তাহলে আজ আপনি TIENS সম্পর্কে কিছুটা হলেও ধারণা পেয়ে যাবেন। বিশ্বের উন্নত দেশগুলোতে এমএলএম পদ্ধতিতে ব্যাবসায় বৈধ হলেও বাংলাদেশে অবৈধ। বাংলাদেশে অবৈধ হওয়ার পেছনে এটার যুক্তিকতা আছে। কারন অন্যান্য দেশে দৈনন্দিন ব্যাবহারযোগ্য পন্য বিক্রি প্রথমেই শুরু করছি তিয়ানশি (TIENS) নিয়ে কিছু প্রশ্নের উত্তর দিয়ে.... (১) তিয়ানশি কি? উত্তরঃ তিয়ানশি একটি এমএলএম কোম্পানি। যাদের মূল উদ্দেশ্য স্কুল কলেজ ভার্সিটিতে পড়ুয়া ছেলেমেয়েদের মগজধোলাই করে তাদের অপকর্মের অংশিদার করা। আসলে তিয়ানশি ডেসটিনির ভিন্ন রূপ।এটাকে ডেসটিনির খালাতো ভাই বললেও ভুল হবেনা। (২) তিয়ানশি যে প্রতারক সেটা কোন যুক্তিতে বলছেন? উত্তরঃ বাংলাদেশে প্রথম আলো, যুগান্তর, ইত্তেফাক সহ মোট ১৮টি পত্রিকা তিয়ানশি প্রতারণার নিয়ে রিপোর্ট করেছে। আমাদের বাংলাদেশে যেখানে শুধুমাত্র প্রথম আলোর ফিক্সি প্রতিবেদনের উপর ভিত্তি করে ক্রিকেটার আশরাফুল নিষিদ্ধ হয়, সেখানে তিয়ানশি অনেক আগেই নিষিদ্ধ হওয়া কথা!!!... তাহলে নিষিদ্ধ হচ্ছেনা কেন? সেটা বুঝতে পারবেন, এই আর্টিকেলটি শেষ পর্যন্ত পড়ুন। (৩) তাহলে তিয়ানশি যদি অবৈধ হয়,তাহলে ব্যাবসা কিভাবে চলছে?? উত্তরঃ বাংলাদেশে পুলিশ যদি ইয়াবা ব্যাবসায় করতে পারে,তাহলে তিয়ানশি ব্যবসায় করতে সমস্যা কোথায়? প্রশাসন ও পুলিশকে প্রতি মাসে হাজার হাজার টাকা ঘোষ দিয়েই চলছে তিয়ানশি ব্যাবসায়। তিয়ানশি দাবী করে তাদের ফাইভ স্টার,সিক্স স্টার দালালরা নাকি প্রতি মাসে লাখ টাকা ভ্যাট দেয়!!!!! আসলে তারা কোন ভ্যাট দেয়না, তারা প্রশাসনকে ম্যানেজ করার জন্য অবৈধ টাকা দেয়। আর ডেসটিনি যেভাবে বিজ্ঞাপন দিয়ে, পত্রিকা বের করে,বড় বড় সাইনবোর্ড লাগিয়ে,পত্রিকায় বিজ্ঞাপন প্রচার করে ব্যাবসায় করেছিল,তিয়ানশি সেভাবে ব্যাবসায় করতে পারেনি আর পারবেওনা কোনোদিন। এটা তিয়ানশির প্রতি চ্যালেঞ্জ!!!! আপনি লক্ষ করলে দেখবেন, তিয়ানশি অফিসগুলো সাধারণত যদি গ্রাম অঞ্চলে হয়, তবে ছোটখাটো সাইনবোর্ড থাকে। আর যদি শহরে হয় তবে কোন মার্কেটের চিপাচাপা যেখানে মানুষের সমাগম কম ৫ম তলার উপরে সেখানে তারা অফিস তৈরী করে। (৪) তিয়ানশি ঔষধের গুনাগুন কি? উত্তরঃ বাজারে ক্যানভাসার যেখান থেকে মলম/ঔষধ তৈরি করে, তিয়ানশি সেখান থেকেই ঔষধ তৈরি করে। তারপর চীনের মতোই নকল মোড়ক তৈরি করে বিক্রি করে। (৫) বাংলাদেশ সরকারের বিভিন্ন পদক বা পুরস্কার ছবি কিভাবে আসলো? উত্তরঃ তিয়ানশি যত কাগজপত্রাদি দেখায়,এগুলা সবই ল্যাপটপে দেখানো হয়। প্রথমত তারা এগুলার হার্ড কপি কখনোই দেখাতে পারবেনা, দ্বিতীয়ত এগুলা সবই ল্যাপটপের এডিট করা পিকচার। তাছাড়া গতবছর ভেজাল ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল ঔষধ বিক্রির দায়ে তিয়ানশি কোম্পানি কে সাত লাখ টাকা জরিমানা করা হয়। (৬) যারা লাখ লাখ টাকা আয় করছে,তারা কিভাবে করছে?? উত্তরঃ ইয়াবা ব্যাবসায় করে যেভাবে লাখ লাখ টাকা আয় করে,তিয়ানশি সেভাবেই করে কিন্তু ইয়াবা ব্যাবসায় এলএলএম নেই,তিয়ানশি তে আছে। এতটুকুই পার্থক্য!!!! মিয়ানমারের ৪টাকা পিস ইয়াবা বাংলাদেশে আসলে হয় ৪০০টাকা। তিয়ানশি সাভারের ভেজাল কেমিক্যালের ৩০ টাকার পেস্ট ৪২০টাকা। তারপর মাঝে আট লেভেল পর্যন্ত কমিশন!!! আশাকরি আপনাদের মনের কিছু প্রশ্নের উত্তর দিতে পেরেছি। এখন আসি বিস্তারিত আলোচনায়..... তিয়ানশি মূলত সেইসকল শহর বা গ্রামেই তাদের টার্গেট করে থাকে,যেখানে আইন শৃখংলা কড়াকড়ি তুলনামূলক কম। তারমাঝে বাংলাদেশের কুমিল্লা শহরে খন্দকারের ৬ষ্ঠ তলায় তিয়ানশি অফিস আছে। যেখানে তাদের টার্গেট শিকার কুমিল্লার কলেজ ভার্সিটি পড়ুয়া ছাত্রছাত্রী। তিয়ানশিতে জয়েন করতে হলে ২১২০ টাকা দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হয়, বিনিময়ে আপনাকে তারা সমমূল্যের নামমাত্র ভেজাল ঔষধ দিবে। তার মধ্যে থাকবে পেস্ট,তেল,ভিটামিন ক্যাপসুল, হারবাল চা, ডায়েট চা,ডায়াবেটিস চা ইত্যাদি সামগ্রী ধরিয়ে দিবে। কিন্তু আপনার উপরে সাত লেভেল পর্যন্ত কমিশন খাবে প্রায় ১৬০০ টাকা। ২১২০ টাকার পন্যে ১৬০০ টাকা কমিশন.... এতো দেখছি, ইয়াবা ব্যাবসায়ের চেয়েও লাভজনক!!!! সিক্স স্টার,সেভেন স্টার সহ বাড়ি গাড়ির লোভনীয় অফার তো থাকছেই। আপনি গুগলে "তিয়ানশি প্রতারণা" লিখে সার্চ দিলে অসংখ্য প্রতিবেদন পাবেন। এতোকিছুর পরেও বাংলাদেশের অনেক সহজ সরল ছাত্রছাত্রীরা তিয়ানশির প্রতারণার ফাঁদে পা দিচ্ছে।

Talk Doctor Online in Bissoy App