tiens company এবং excellent world এই কোম্পানি গুলো কি বিশ্বাসযোগ্য? 
Share with your friends
Call

MLM  বিজনেসের মূলমন্ত্র হচ্ছে মাছের তেলে মাছ ভাজা, অথবা বলতে পারেন গরু মেরে জুতো দান। অর্থাৎ আপনাকে একটি নির্দিষ্ট পরিমান টাকা দিয়ে এদের সদস্য হতে হবে, এরপর আপনি যদি তাদেরকে আপনার মত আরো সদস্য যোগার করে দিতে পারেন তাহলে আপনি লভ্যাংশ বা কমিশন পাবেন। এরকম একটি পরিচিত সাইটের উদাহরণ দেই। এই সাইটটিতে আপনাকে ১৪৯ ইউরো দিয়ে মেম্বার হতে হবে, এরপর আপনি যদি তাদেরকে আপনার মত একজন মেম্বার যোগার করে দিতে পারেন তাহলে আপনি পাবেন ১৫ ইউরো। অর্থাৎ আপনার ইনভেস্টের ১৪৯ ইউরো উঠাতেই আপনাকে ১০ জন মেম্বার যোগার করতে হবে। অর্থাৎ ১০ জন লোকের কাছ থেকে ১৪৯০ ইউরো নিয়ে তাদেরকে দিলে তারা আপনাকে আপনার ইনভেস্টের ১৪৯ ইউরো ফেরত দেবে। আর এ সাইট থেকে লভ্যাংশ বা কমিশন পেতে হলে কি পরিমান ইউরো তাদের দিতে হবে, তার হিসাব নিজেরাই করে নিন। তবে এসব কোম্পানি তাদের এই সহজ হিসাব লুকানোর জন্য এর সাথে বিভিন্ন ধরনের আকর্ষণী নিয়ম, পদ্ধতি, শাখা প্রশাখা অথবা পন্য বিক্রির শর্ত, ডিলারশিপ, মেম্বারশিপ দিয়ে থাকে।

আসল কথা হচ্ছে, বিশ্বের বর্তমান অর্থনৈতিক মন্দা কাটিয়ে উঠতে উন্নত বিশ্বের বিভিন্ন দেশ নিজেদের ডলার, ইউরোর রিজার্ভ বাড়ানোর জন্য MLM পদ্ধতিকে বেঁছে নিয়েছে, আর তাদের এই পদ্ধতি প্রয়োগের জন্য তারা আমাদের মত (উন্নয়নশীল ও শিক্ষিতের হার কম) দেশগুলোকে তাদের শিকারে পরিনত করেছে। আর এই কাজের প্রচার ও প্রসারের জন্য তারা এসব দেশের কিছু ব্যক্তিকে দালাল হিসেবে টাকা দিয়ে কিনে নিয়েছে, যারা এসব কোম্পানির গুণগান ফুলিয়ে ফাঁপিয়ে মানুষের কাছে তুলে ধরছে। আমরাও আমাদের তাৎক্ষনিক লাভ আর ব্যক্তি স্বার্থের জন্য কিছু চিন্তা না করেই এইসব ব্যবসায় নিজেরা ঝাঁপিয়ে পরছি এবং নিজের আত্মীয় সজন, বন্ধু বান্ধব, পরিচিত অপরিচিত সবাইকে এতে যোগ দিতে বলছি। কিন্তু একটুও ভেবে দেখছিনা যে, আমাদের একজনের ইনভেস্টের ১৪৯ ইউরো (প্রায় পনর হাজার টাকা) উঠাতেই যদি ১৪৯০ ইউরো (প্রায় দেড় লাখ টাকা) বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হয়, তাহলে আমাদের মতই দেশের আরও শত শত কিংবা হাজার হাজার সদস্য যদি তাদের ইনভেস্ট অথবা কমিশন উঠাতে চায় তহলে কত লক্ষ কোটি ইউরো বিদেশিদের হাতে তুলে দিতে হবে (হয়ত দিয়েছিও)। আপনাদের অনেকেই হয়ত কয়েকদিন আগে বিভিন্ন পত্রিকায় দেশের ইউরো রিজার্ভ সঙ্কটের বিষয়ে নিয়ে প্রকাশিত সংবাদটি পড়ে থাকবেন।

আপানার হয়তো জানেন যে, বাংলাদেশের ডলার, ইউরো তথা বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ  সংগৃহীত হয় প্রধানত দুই ভাবে। যার একটি হচ্ছে, বাংলাদেশের উৎপাদিত বিভিন্ন পন্য বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানির মাধ্যমে, আর দ্বিতীয়টি হচ্ছে “ফরেন রেমিটেন্স” অর্থাৎ বিভিন্ন দেশে কর্মরত আমাদের প্রবাসী ভাইদের কষ্টার্জিত উপার্জনের মাধ্যমে, যা তারা দেশে পাঠিয়ে থাকেন। আর আমরা তাদের এই কষ্টার্জিত ডলার, ইউরো নিজেদের সামান্য লাভের আশায় বুঝে অথবা না বুঝে বিদেশীদের হাতে তুলে দিচ্ছি। বিদেশীরাও এই বিপুল অংকের ইউরো, ডলার হাতিয়ে নিয়ে উক্ত ইউরো, ডলার থকেই সামান্য কিছু লভ্যাংশ আমাদেরকে দিয়ে মাছের তেলে মাছ ভেজে নিয়ে যাচ্ছে। আর আমরা আমাদের ব্যক্তিস্বার্থ, সঙ্কীর্ণ দৃষ্টিভঙ্গি এবং শিক্ষা ও চিন্তার দৈন্যতার কারনে বিদেশীদের এই সহজ শুভঙ্করের ফাঁকিও ধরতে পারছিনা। তাই সবার কাছে আমার সবিনয় অনুরোধ, নিজেদের ক্ষনিকের লাভের জন্য সমাজ ও রাষ্ট্রের দীর্ঘস্থায়ী ক্ষতি করা থেকে আমরা বিরত হই। আর তা নাহলে, এর ভয়াবহতার শিকার আমাদের সবাইকেই হতে হবে, প্রত্যক্ষ অথবা পরোক্ষ ভাবে।

একটি উদাহরণঃ মনে করুন যে, বাংলাদেশের অন্যতম MLM কোম্পানিটিতে বাংলাদেশের সব মানুষ সদস্য হয়ে গেল। MLM কোম্পানি আর তাদের সদস্যদের জন্য খুবই আনন্দের সংবাদ তাই না? কিন্তু একটু ভেবে দেখুন, একদম শেষে যারা সদস্য হবে, তারা রেফারেল বা সদস্য সংগ্রহ করবে কোথার থেকে, কেননা তাদের আগেই বাংলাদেশের সব মানুষ MLM কোম্পানির সদস্য হয়ে গেছে। অতএব, তারা সদস্যও সংগ্রহ করতে পারবেনা আর কমিশনও পাবেনা। এভাবে যদি সারা পৃথিবীর মানুষকেও উদাহরন হিসেবে ধরা হয় তাহলেও দেখবেন যে, যারা সব শেষে MLM কোম্পানির সদস্য হবে তারা তাদের কমিশন পাবার জন্য আর কোন রেফারেল বা সদস্য খুঁজে পাবেনা। কারন তাদের আগেই সারা পৃথিবীর মানুষ এর সদস্য হয়ে গেছে। আর তাই মনে রাখবেন, MLM বা পিরামিড বিজনেসে শেষের দিকে যারা ঢুকবেন তাদের MLM এর অংকের নিয়মে ক্ষতিগ্রস্থ হতেই হবে। আর ইসলামে MLM নিষিদ্ধ হবার জন্য এই কারণটাই যথেষ্ট। আর এ জন্যই MLM বিজনেসকে পিরামিড বিজনেসও বলা হয়, অর্থাৎ অপরের মাথায় পা দিয়ে নিজে উন্নতির শিখরে ওঠো।

পরিশেষে আমাদের এলাকার এক বুয়ার MLM ব্যবসা ও এর পরিণতির কাহিনী বলে শেষ করছি। এই বুয়া বিভিন্ন বাসা ও মেসে কাজ করত আর তার স্বামী ছিল রিকশা চালক। বুয়া এবং তার স্বামী তাদের বিপদ আপদের কথা ভেবে একটু একটু করে কিছু টাকা সঞ্চয় করেছিল। তো, বুয়া যেসব মেসে কাজ করত তার একটি মেসে থাকতো বাংলাদেশের অন্যতম একটি MLM কোম্পানির একজন করিৎকর্মা সদস্য। সে মাঝে মাঝেই বুয়াকে অল্প পুঁজি ও স্বল্প সময়ে বিশাল বড়লোক হবার বর্ণিল স্বপ্ন দেখাত, যেভাবে MLM এর সদস্যরা সুযোগ পেলেই সবাইকে এই স্বপ্ন দেখায়। তার যাদুকরি কথার প্রভাবে বুয়া তার ও তার স্বামীর সমস্ত সঞ্চয় দিয়ে উক্ত MLM কোম্পানির সদস্য হল। কিন্তু বুয়াতো আর কোম্পানির ডান বামের হিসাবও বোঝে না, আর সদস্যও সংগ্রহ করতে পারেনা। কারন সে তার সীমিত শিক্ষা আর বুঝ দিয়ে মানুষকে ঐ করিৎকর্মা ! MLM সদস্যের মত বুঝাতেও পারেনা আর স্বপ্নও দেখাতে পারেনা, তাই তার অল্প সময়ে বড়লোক হবার স্বপ্ন, স্বপ্নই থেকে যায়। এসব দেখে ও শুনে তার রিকশা চালক স্বামী তাকে তালাক দিয়ে চলে যায়। এই ফাঁকে ঐ করিৎকর্মা ! MLM সদস্যও উক্ত মেস ছেড়ে চলে যায়। এর ফলাফল যা দাঁড়ালো তা হচ্ছে, MLM কোম্পানি পেল বুয়ার সারা জীবনের সঞ্চিত টাকা, ঐ করিৎকর্মা ! MLM সদস্য পেল তার কমিশন, আর ঐ বুয়া পেল তালাক আর সব হারানোর হাহাকার।

আশাকরি টিউন টি পড়ে আমরা নিজেরা সচেতন হবো এবং অপরকে সচেতন করব। আর মুসলিম ভাইদের বলছি, MLM পদ্ধতিতে ব্যবসা ইসলামে গ্রহণযোগ্য নয়। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক আলেমদের একটি দলিল ভিত্তিক লেখা (বাংলা অনুবাদ সহ) আমার সংগ্রহে আছে। এখান থেকে এটি ডাউনলোড করে নিতে পারেন। ডাউনলোড লিঙ্কhttps://www.mediafire.com/?73lksh48x8sbajb

Talk Doctor Online in Bissoy App