একই সঙ্গে তিন বা ততোধিক বার অথবা একবার তালাক দিলে তা এক তালাক রজয়ী হয়। তাকে ইদ্দতের মধ্যে ফিরিয়ে নেওয়া যায়। ইদ্দত পার হয়ে গেলে স্ত্রী হারাম হয়ে যায়। তারপরেও তাকে পেতে চাইলে নতুনভাবে বিয়ে করতে হবে। কিন্তু নিয়মিত তিন তালাক দেওয়ার পর সে সুযোগ আর থাকে না। অবশ্য সে মহিলার অন্যত্র বিবাহ হলে, অতঃপর স্বামী তাকে স্বেচ্ছায় তালাক দিলে অথবা মারা গেলে ইদ্দতের পর আগের স্বামী তাকে পূর্ণবিবাহ করতে পারে। মহান আল্লাহ বলেছেন, “ অতঃপর উক্ত স্ত্রীকে যদি সে (তৃতীয়) তালাক দেয়, তবে সে পর্যন্ত না ঐ স্ত্রী অন্য স্বামীকে বিবাহ করবে, তার পক্ষে সে বৈধ হবে না। অতঃপর ঐ দ্বিতীয় স্বামী যদি তাকে তালাক দেয় এবং যদি উভয় মনে করে যে, তারা আল্লাহ্র সীমারেখা রক্ষা করে চলতে পারবে, তাহলে তাদের (পুনর্বিবাহের মাধ্যমে দাম্পত্য জীবনে) ফিরে আসায় কোন দোষ নেই। এ সব আল্লহর নির্ধারিত সীমারেখা, জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্য আল্লাহ ঐগুলি স্পষ্টভাবে বর্ণনা করেন।” (বাকারাহঃ ২৩০) জ্ঞাতব্য যে, এ ক্ষেত্রে পরিকল্পিতভাবে ‘হালালা-বিবাহ’ দিয়ে স্ত্রী হালাল করা বৈধ নয়। যেহেতু তাতে স্ত্রী হালাল হয় না। সতর্কতার বিষয় যে, তালাকের বিষয় যে, তালাকের বিষয়টি সকল ক্ষেত্রে এক রকম নয়। সুতরাং সে ক্ষেত্রে স্থানীয় কাযীর সহযোগিতা প্রয়োজন। আইন অধিকার- স্ত্রী কি স্বামীকে তালাক দিতে পারেন? প্রভাতীর আলো.কম:কোনো স্ত্রী যদি যুক্তিসংগত কারণে স্বামীকে তালাক দিতে চান, সে ক্ষমতা প্রচলিত আইনে স্ত্রীর রয়েছে। মুসলিম আইনে স্ত্রীর তালাকের অধিকারকে তালাকে তৌফিজ বলা হয়। এ ক্ষমতা প্রয়োগ করে স্ত্রী আদালতে না গিয়েই সরাসরি বিবাহবিচ্ছেদ ঘটাতে পারেন। মূলত তালাক প্রদানের বিষয়টি নির্ভর করে বিয়ের সময় সম্পন্ন করা কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটি পূরণের মাধ্যমে। এ কলামে স্বামী তাঁর স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার ক্ষমতা প্রদান করেন। এ ক্ষমতা শর্তযুক্ত কিংবা শর্তহীন হতে পারে। এ কলামে লেখা থাকে, স্ত্রীকে তালাক প্রদানের ক্ষমতা স্বামী প্রদান করেছেন কি না এবং করে থাকলে কী কী শর্তে। তখন কাজি এর পাশে লিখবেন, হ্যাঁ দিয়েছেন। তা ছাড়া এ বিষয়ে একাধিক শর্ত লিখবেন। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, যদি বিয়ের সময় কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামে স্ত্রীর তালাকের অধিকার উল্লেখ না থাকে, সে ক্ষেত্রে কি তালাক দিতে পারবেন না? সে ক্ষেত্রেও স্ত্রী তালাক দিতে পারবেন। তবে তাঁকে পারিবারিক আদালতে আইন অনুযায়ী উপযুক্ত কারণ দেখিয়ে তালাকের জন্য প্রতিকার চাইতে হবে। আদালতের ডিক্রিমূলে তখন স্ত্রীর তালাক কার্যকর হবে। আইন অনুযায়ী স্ত্রী যেসব কারণে আদালতে তালাক চাইতে পারেন, তা হলো— চার বছর স্বামী নিরুদ্দেশ থাকলে;l স্বামী দুই বছর ভরণপোষণ দিতে অবহেলা করলে;l স্বামী ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইন অধ্যাদেশের বিধান লঙ্ঘন করে দ্বিতীয় স্ত্রী গ্রহণ করলে;l স্বামী সাত বছর বা এর বেশি সময়ের জন্য কারাদণ্ডে দণ্ডিত হলে;l স্বামী যুক্তিসংগত কারণ ছাড়া তিন বছর বৈবাহিক দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হলে;l স্বামী বিয়ের সময় পুরুষত্বহীন থাকলে;l স্বামী দুই বছর অপ্রকৃতিস্থ, কুষ্ঠরোগ বা মারাত্মক যৌনব্যাধিতে ভুগলে;l নাবালিকা অবস্থায় স্ত্রীর সঙ্গে বিয়ে হয়ে থাকলে সাবালিকা (১৮ বছর পূর্ণ)l হওয়ার পর স্ত্রী যদি তা অস্বীকার করেন (তবে যৌন সম্পর্ক স্থাপন করলে মামলা করা যায় না); স্ত্রীর সঙ্গে স্বামী নিষ্ঠুর আচরণ করলে। যেমন: অভ্যাসগত কারণে স্ত্রীকেl মারধর বা আচরণের নিষ্ঠুরতার মাধ্যমে তাঁর জীবন দুর্বিষহ করে তুললে, অন্য নারীর সঙ্গে স্বামী মেলামেশা করলে, নৈতিকতাবিরোধী জীবনযাপনের জন্য স্ত্রীকে বাধ্য করার চেষ্টা করা হলে, স্ত্রীর সম্পত্তি হস্তান্তর করে দিলে বা সম্পত্তিতে বৈধ অধিকার প্রয়োগ থেকে তাঁকে নিবারণ করলে প্রভৃতি এবং মুসলিম আইনে বিবাহবিচ্ছেদের জন্য বৈধ বলে স্বীকৃত অন্য যেকোনো কারণে স্ত্রী বিবাহবিচ্ছেদের দাবি করতে পারেন।l জেনে রাখুন বিয়ের সময় কাবিননামার ১৮ নম্বর কলামটি পূর্ণ করা হয়েছে কি না, তা মেয়ের অভিভাবকদের খেয়াল রাখতে হবে। অনেক সময় পাত্রপক্ষের প্ররোচনায় কাজিরা কলামটি পূরণ করতে অবহেলা করেন। যেভাবেই বিবাহবিচ্ছেদ বা তালাক ঘটুক না কেন, তালাকের পর যত তাড়াতাড়ি সম্ভব স্বামীকে ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান অথবা মিউনিসিপ্যালিটির বা সিটি করপোরেশনের চেয়ারম্যান বা মেয়রের কাছে নোটিশ লিখিতভাবে পাঠাতে হবে। তবে আদালতের মাধ্যমে কোনো বিবাহবিচ্ছেদের মামলার ডিক্রি হলে সেই ডিক্রির কপি চেয়ারম্যানকে প্রদান করলেই হবে। স্ত্রী তালাক দিলেও মোহরানার টাকা তাঁকে দিতে হবে এবং তালাক কার্যকর না হওয়া পর্যন্ত ভরণপোষণ করতে হবে। খোলা তালাক মুসলিম আইনে স্ত্রীর ইচ্ছায় বিবাহবিচ্ছেদের আরেকটি ব্যবস্থা হচ্ছে খোলা তালাক। এ তালাক এমন একধরনের তালাক, যা স্বামী-স্ত্রীর সম্মতিতে কার্যকর হয়। খোলা তালাক পারস্পরিক চুক্তি দ্বারা অথবা কাজি বা আদালতের নির্দেশে হতে পারে। এ তালাকের উল্লেখযোগ্য দিক হলো— স্ত্রী স্বামীকে তালাক দেওয়ার প্রস্তাব দিয়ে থাকেন;l স্বামী ওই প্রস্তাবে সম্মতি জানিয়ে থাকেন;l স্ত্রীকে তালাক দেওয়ার সময় স্বামী বিনিময়ে স্ত্রীর কাছ থেকে প্রতিদানl নিয়ে থাকেন এবং স্ত্রী তা দিয়ে থাকেন বা দিতে সম্মত হন। তবে খোলা তালাকের ক্ষেত্রে অন্য কোনো চুক্তি না থাকলে স্ত্রী মোহরানা পাওয়ার অধিকারী হবেন না; কিন্তু ইদ্দত পালনকালে স্ত্রী তাঁর গর্ভের সন্তানের জন্য স্বামীর কাছ থেকে ভরণপোষণ পাওয়ার অধিকারী হবেন। লেখক: আইনজীবীl তালাক পারিবারিক জীবনে ভাঙ্গন ও বিপর্যয় অত্যন্ত মর্মান্তিক ব্যাপার। তালাক হচ্ছে এ বিপর্যয়ের চুড়ান্ত পরিণতি। পারিবারিক জীবনে চুড়ান্ত বিপর্যয় থেকে স্বামী স্ত্রী উভয়কে রক্ষার জন্য ইসলামে তালাকের সুযোগ সৃষ্টি করা হয়েছে। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে যখন চরমভাবে বিরোধ দেখা দেয়,পরস্পর মিলে মিশে স্বামী স্ত্রী হিসেবে শান্তিপূর্ণ ও মাধুর্য মন্ডিত জীবন যাপন যখন একেবারেই অসম্ভব হয়ে দাঁড়ায়,পারস্পারিক সম্পর্ক যখন হয়েপড়ে তিক্ত,বিষক্ত,একজনের মন যখন অপরজন থেকে এমন ভাবে বিমূখ হয়ে যায় যে,তাদের শুভ মিলনের আর কোন সম্ভাবনা থাকেনা; ঠিক তখনই এই চুড়ান্ত পন্থা অবলম্বনের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ইসলামে। তালাক হচ্ছে নিরুপায়ের উপায়। স্বামী স্ত্রী পরস্পরকে বেঁধে রাখার শেষ চেষ্টাও যখন ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয় তখন বিবাহ নামক রশিকে ছিন্ন করে পরস্পরের অস্তিত্বকে রক্ষা করাই তালাকের উদ্দেশ্য। ইসলাম তালাক দেওয়ার ব্যাপারে অতিরিক্ত বাড়াবাড়ি অনুমোদন করে নি। তালাক প্রদানের ক্ষেত্রে সঠিক পন্থা স্পষ্টভাবে বেধে দিয়েছে। যা সর্বকালে ও সর্বযুগে অতীব ভারসাম্য পূর্ণ এবং বিজ্ঞান সম্মত। বাংলাদেশে প্রচলিত ১৯৬১ সালের মুসলিম পারিবারিক আইনের ৭ ধারা মতে তালাক সক্রান্ত যে বিধান প্রবর্তন করা হয়েছে, সেখানে তালাক ঘোষণার কোন পদ্ধতি বলা হয়নি। মুসলিম পারিবারিক আইনে বলা হয়েছে- "কোন পুরুষ তাহার স্ত্রীকে তালাক দিতে চাহিলে তাহাকে মুসরিম আইনে অনুমোদিত যে কোন পদ্ধতিতে ঘোষণার পরই তিনি তাহার স্ত্রীকে তালাক দিয়েছেন এ মর্মে চেয়ারম্যানকে লিখিত ভাবে নোটিশ প্রদান করবেন এবং স্ত্রীকেও উহার নকল দিবেন" অর্থাৎ তালাক প্রদান বা ঘোষণার ক্ষেত্রে ইসলামী শরীয়তের প্রবর্তিত পদ্ধতিই হচ্ছে মুসলিম পারিবারিক আইনের পদ্ধতি। তাই শরীয়ত প্রবর্তিত তালাক সংক্রান্ত বিধানাবলি ভালভাবে জানা ও বুঝা খুবই জরুরী। বিশেষ করে নিকাহ রেজিস্ট্রারদের এ সম্পর্কে পরিষ্কার ধারনা থাকা অত্যন্ত জরুরী। এদিকে লক্ষ রেখে নিম্নে তালাকের সংঙ্গা,প্রকারভেদ, আমাদের করণীয় ইত্যাদি বিষয় সংক্ষিপ্তভাবে উল্লেখ করা হল। তালাকের সংজ্ঞাঃ- "তালাক" শব্দের অর্থ ছড়িয়া দেওয়া,ত্যাগ করা বা বন্ধন খুলে দেওয়া বা বাঁধন খুলিয়া ফেলা বা শক্ত রজ্জুর বাঁধন খুলে ফেলা। আরবী ভাষায় বলা হয় "আমি শহর ত্যাগ করেছি"। শরীয়তের পরিভাষায় তালাক অর্থ "বিবাহের বাঁধন তুলিয়া ও খুলিয়া দেওয়া, বা বিবাহের শক্ত বাঁধন খুলিয়া দেওয়া "স্বামী তার স্ত্রীর সকল সম্পর্ক ছিন্ন করে দেওয়া।" তালাকের উদ্দেশ্য তালাক প্রদানের উদ্দেশ্য হল অন্যায়,জুলুম ও নিদারুন কষ্ট,জ্বালাতন ও উৎপীড়ন ইত্যাদি অশান্তি হতে মুক্তি লাভ করা। প্রকৃতপক্ষে ইসলামে তালাক প্রদানের যে উদ্দেশ্য তা হল স্বামী স্ত্রী উভয়ের মধ্যে যে সকল অশান্তি সৃষ্টিকারী কারণ সমুহ রয়েছে তা হতে সংশোধনের চেষ্টা করা বা দুর করা। তালাক সম্পর্কে ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি তালাক শরীয়তের একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। নবী (সাঃ) তালাক সম্পর্কে বলেছেন তালাক অপেক্ষা ঘৃনার জিনিস আল্লাহ তায়ালা আর সৃষ্টি করেন নি হযরত আলী (রাঃ) হতে বর্ণিত নিম্নোক্ত বাণী হতে তালাকের ভয়াভহতা উপলদ্ধি করা যায়।তোমরা বিয়ে কর কিন্তু তালাক দিয়োনা কেননা,তালাক দিলে তার দরুন আল্লাহর আরশ কেঁপে উঠে। তালাক প্রদানের পূর্বে করনীয় দাম্পত্য জীবনে স্বামী স্ত্রী'র মধ্যে বিবাধ-বিরোধ মনোমালিন্য দেখা দিতেই পারে। স্বামী স্ত্রীর মাঝে এ ধরনের বিরোধ দেখা দিলে তাদের জন্য নসীহত রয়েছে যে "আর তাহলে প্রত্যেকেই যেন অপরের ব্যাপারে নিজের মধ্যে ধৈর্য্য ও সহ্য শক্তি রক্ষা করে অপরের কোন কিছু অপছন্দনীয় হলে তা ঘৃনা হলেও সে যেন দাম্পত্য জীবন রক্ষার সার্থে তা অকপটে বরদাশত করতে চেষ্টা করে। এর পরেও যদি দাম্পত্য জীবন সংরক্ষন করতে ব্যার্থ হয় তবে সে সম্পর্কে আল্লাহ তায়ালা বলেছেন "তোমরা স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে কোন বিরোধ মনোমালিন্য হয়েছে বলে ভয় কর তাহলে তোমরা স্বামীর পরিবারের থেকে একজন বিচারক এবং স্ত্রীর পরিবার থেকে একজন বিচারক পাঠাও। তারা দু'জন যদি বাস্তবিকই অবস্থার সংশোধন করতে চায় তাহলে আল্লাহ তাদের সেজন্য তওফীক দান করবেন এবং তার সংশোধন করে স্বমী-স্ত্রী উভয়ের মধ্যে মিল মিশ করার চেষ্টা করবেন। আর যদি মিলমিশ অসম্ভব বলে মনে করেন তবে তাদের মধ্যেবিচ্ছেদের ব্যাবস্থা করবেন।" মুসলিম পারিবারিক আইনে বিরোধ মিমাংসার জন্য এবং স্বামী স্ত্রীর মধ্যে আপোষ করার দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেয়ারম্যান বা সালিসী পরিষদের উপর। তিনি উভয় পক্ষকে নটিশের মাধ্যমে উপস্তিত করার জন্য বলবেন। কোন পক্ষ যদি হাজির না হয় তবে তাকে হাজির করার ক্ষমতা তার নেই। স্বামী-স্ত্রী উভয় পক্ষের মধ্যে আপোষ মিমাংসা করার চেষ্টা করা ছাড়া চেয়ারম্যানের আর কোন দ্বায়িত্ব নেই। তালাক কার্যকর অথবা অকার্যকর কোনটাই করার এখতিয়ার চেয়ারম্যানের নেই। প্রকার পদ্ধতিগত দিক দিয়ে তালাক তিন প্রকারঃ- (ক) আহসান বা সর্বোত্তম তালাক ; (খ) হাসান বা উত্তম তালাক এবং (গ) বিদ'ই বা শরিয়া বিরূদ্ধ তালাক। ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ- (১)তালাকে সুন্নাত (২) তালাকে বাদী (৩)তালাকে তাফবীজ (৪)তালাকে মোবারত ও (৫)খোলা তালাক। কার্যকর হওয়ার দিক দিয়ে তালাক প্রধানত দুই প্রকারঃ- (১) তালাকে রেজী ও (২)তালাকে বাইন তালাকে বাইন আবার দুই প্রকারঃ- (১)বাইনে সগির ও (২) বাইনে কবির। মর্যাদা ও অবস্থানের দিক থেকে তালাক চার প্রকারঃ- (১)হারাম (২)মাকরুহ (৩)মুস্তাহাব ও (৪)ওয়াজিব (ক)তালাকে হাসানঃ- তালাকে হাসানা তাকে বলে,যে তুহুরে স্বামী স্ত্রীর মধ্যে সহবাস,যায়েজ অবস্থা কিংবা গর্ভাবস্থা নেই। উলালেখিত অবস্থা সমুহ নেই এমন তুহুর অবস্থায় শুধু মাত্র এক তালাক দিয়ে ইদ্দত পূর্ণ হতে দেওয়া। অর্থাৎ তিন তুহুর অতিক্রম করলে তালাকটি কার্যকর হয়ে যায়। এমতাবস্থায় স্ত্রী ইচ্ছা করলে অন্য যে কোন পুরুষের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে কিংবা তালাক প্রপ্তা স্ত্রী ইচ্ছা করলে এবং স্বামী চাইলে তারা পুনঃ বিবাহে আবদ্ধ হতে পারে। এই ধরনের তালককে বলা হয় তালাকে আহসান। "(খ) তালাকে হাসানঃ-" হাসান তালাক হলো প্রত্যেক তুহুরে একটি করে তালাক দিবে। এই নিয়মে তিন তুহুরে তিন তালাক দেওয়ার নিয়ম কে তালাকে হাসান বলে। তালাকে হাসান দিলে অর্থাৎ তিন তুহুরে তিন তালেক দিলে সেই স্ত্রী তার স্বামীর জন্য চিরতরে হারাম হয়ে যাবে। সে তার স্বামীর নিকট রেজাত বা পূন বিবাহে আসতে পারবেনা। তবে স্ত্রীর যদি অন্য কোন পুরুষের সাথে বিবাহ হয় এবং দ্বিতীয় স্বামী যদি কোন দৈবাত কারণে তালাক দেয় অধবা মৃত্যু বরণ করে তবে ইচ্ছা করলে পূর্বের স্বামীর সহিত বিবাহ বন্দনে আবদ্ধ হতে পারবে। "(গ) তালােক েবদীঃ-" বিদায়াত তালাক হলো কোন ব্যাক্তি একসাথে তিন তালাক দিয়ে দেওয়া বা হায়েয অবস্থায় তিন তালাক দেওয়া অথবা যে তুহুরে সহবাস করেছে সেই তুহুরে তিন তালাক দেওয়া। উল্লেখিত যে কোন প্রকারে তালাক দেওয়া হউক না কেন তালাক দাতা গুনাহগার হবে গর্ভাবস্থা প্রকাশ পাইনি এমন সন্দেহ জনক অবস্থায় তিন তালাক প্রদান করাও বিদায়াত বা হারাম। বর্তমান সময়ে অধিকাংশ তালাক অনুষ্টিত হওয়ার ক্ষেত্রে প্রচলিত মুসলিম পারিবারিক আইন অথবা শরীয়ত প্রবর্তিত পদ্ধতি কোনটাই অনুসরণ করা হচ্ছেনা। স্বামী স্ত্রীর মধ্যে বিরোধ দেখা দিলে চেয়ারম্যান,মেম্বার বা কোন গন্য মান্য ব্যাক্তি তালাকের নোটিশ সহি বা স্বাক্ষর করলেই তালাক হয়ে গেছে বলে ধরে নেওয়া হয়। তারা তালাকের ঘোষনা দেন না, আবার কোন কোন ক্ষেত্রে দেখা যায় তালাকের নোটিশে লিখা হয় এক তালাক,দুই তালাক, তিন তালাক ও বাইন তালাক। এমন ধরনের তালাক প্রকাশ্য তালাকে বিদয়ীর মধ্যে অন্তর্ভূক্ত হবে এবং যারা এধরনের তালাক অনুষ্ঠিত করিয়া থাকেন তারা সবাই গুনাহ্গার হবেন। ক্ষমতা বা এখতিয়ার গত দিক দিয়ে তালাক পাঁচ প্রকারঃ- ইদ্দত কাল ইসলামে তালাকের পর একজন মহিলাকে ইদ্দত পালন করতে হয়।সেই (ইদ্দত কালীন) সময়ের মধ্যে একজন মুসলীম নারীর পুন:বিবাহ ইসলামে নিষিদ্ধ। একজন মুসলীম নারীর জন্য ইদ্দত দুই প্রকার বা ভাগে ভাগ করা সম্ভব। ১)তালাকের পর ২)স্বামীর মৃত্যুর পর প্রথমত তালাকের পর, একজন মুসলীম নারীকে তার তালাকের পর ৯০ দিন বা তিন চন্দ্রমাস অপেক্ষা করতে হবে । এই ৯০ দিন হচ্ছে ইদ্দত কালীন সময়। তালাকের পর পুনর্বিবাহ তালাকের পর স্বামী ও স্ত্র্রী পুনর্বার বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে তবে তা শর্তসাপেক্ষ। শর্তটি এই যে তালাকপ্রাপ্তা স্ত্রীকে অন্য কারো সঙ্গে শরিয়া অনুসরণপূর্বক যথাযথভাবে বিবাহবন্ধনে আবদ্ধ হতে হবে এবং নতুন স্বামী তালাক প্রদানের পর আগের স্বামীর সঙ্গে পুনর্বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারবে। এই শর্তটি কঠিন কারণ ইসলাম সামান্য অজুহাতে বা রাগের মাথায় উত্তেজনাবশতঃ তালাক দেয়ার বিপক্ষে।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
Call

এ ফতওয়াটি পড়ুন--


সুত্রঃ http://quran

জবাব: সম্মানিত দীনি ভাই, তালাক অত্যন্ত স্পর্শকাতর একটি বিষয়। কেউ এই ক্ষমতার অপব্যবহার করলে কিংবা ভুল পন্থায় তা প্রয়োগ করলে সে একদিকে যেমন গুনাহগার হয় অন্যদিকে তালাকও কার্যকর হয়ে যায়। তাই প্রতিটি বিবেচক স্বামীর দায়িত্ব হল, তালাকের শব্দ কিংবা এর সমার্থক কোনো শব্দ মুখে উচ্চারণ করা থেকে সতর্কতার সাথে বিরত থাকা। এজন্যই তো ওলামায়ে কেরাম বলেন, দাম্পত্য-জীবনে পা রাখার চেষ্টা করলে তার অপরিহার্য কর্তব্য হবে, বিয়ের আগেই দাম্পত্য জীবনের নিত্য প্রয়োজনীয় মাসআলাগুলোর সাথে তালাকের বিধানসমূহ জেনে নেওয়া।

যাই হোক, আপনার উক্ত আত্মীয় রাগের মাথায় যা করার তাতো করেই ফেলেছেন। কাউকে হত্যা করে আফসোস করেতো লাভ নেই। তেমনি তিন তালাক দিয়ে ফেলে আফসোস করে কোন ফায়দা নেই।

আসলে তালাক তো দেওয়াই হয় রাগ হয়ে। কয়জন আছে, শান্তভাবে তালাক দেয়! মূলতঃ রাগের অবস্থায় তালাক দিলেও তালাক হয়ে যায়, এমনকি হাস্যরস বা ঠাট্টাচ্ছলে তালাক দিলেও তা পতিত হয়ে যায়।

সম্মানিত দীনি ভাই, একসাথে তিন তালাক দেওয়া কিংবা বিভিন্ন সময় তালাক দিতে দিতে তিন পর্যন্ত পৌঁছে যাওয়া একটি জঘণ্য অপরাধ ও ঘৃণিত কাজ। আল্লাহ তাআলা এর শাস্তি হিসেবে এই বিধান দিয়েছেন যে, তারা স্বামী-স্ত্রী হিসেবে পুনরায় একসাথে বসবাস করতে চাইলে স্ত্রীর ইদ্দত অতিবাহিত হওয়ার পর অন্যত্র তার বিয়ে হওয়া এবং সে স্বামীর সাথে তার মিলন হওয়া অপরিহার্য। এরপর কোনো কারণে সে তালাকপ্রাপ্তা হলে কিংবা স্বামীর মৃত্যু হলে ইদ্দত পালনের পর এরা দু’জন পরস্পর সম্মত হলে নতুন করে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হতে পারে।

প্রমাণ–

وقال الليث عن نافع كان ابن عمر إذا سئل عمن طلق ثلاثا قال لو طلقت مرة أو مرتين فأن النبي صلى الله عليه و سلم أمرني بهذا فإن طلقتها ثلاثا حرمت حتى تنكح زوجا غيرك

হযরত নাফে রহ. বলেন,যখন হযরত ইবনে উমর রাযি. এর কাছে ‘এক সাথে তিন তালাক দিলে ‎তিন তালাক পতিত হওয়া না হওয়া’ (রুজু‘করা যাবে কিনা) বিষয়ে জিজ্ঞাসা করা হলো,‎ তখন তিনি বলেন-“যদি তুমি এক বা দুই তালাক দিয়ে থাকো তাহলে ‘রুজু’ [তথা স্ত্রীকে বিবাহ করা ছাড়াই ফিরিয়ে আনা] করতে পার। ‎কারণ, রাসূলুল্লাহ ﷺ আমাকে এরকম অবস্থায় ‘রুজু’ করার আদেশ দিয়েছিলেন। ‎যদি তিন তালাক দিয়ে দাও তাহলে স্ত্রী হারাম হয়ে যাবে, সে তোমাকে ছাড়া অন্য স্বামী গ্রহণ করা পর্যন্ত। (সহীহ বুখারী-২/৭৯২, ২/৮০৩)

হযরত হারুন ইবনে আনতারা তার পিতা থেকে বর্ণনা করেন, তার পিতা বলেছেন, আমি একদিন আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. এর নিকট বসা ছিলাম। ইতিমধ্যে এক লোক এসে বলল, সে তার স্ত্রীকে এক বারেই একশো তালাক দিয়েছে। সে জানতে চাইল, এতে কি এক তালাক গণ্য হবে নাকি তিন তালাক গণ্য হবে? আব্দুল্লাহ ইবনে আব্বাস রাযি. বললেন, তিন তালাক কার্যকর হয়ে তোমার স্ত্রী তোমার থেকে সম্পূর্ণরূপে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে। আর বাকি সাতানব্বই তালাকের গুনাহ তোমার উপর বর্তাবে। (মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা আসার নং ১৮১০১)

উপরোক্ত হাদীস ও আসার থেকে বিষয়টি সুপ্রমাণিত যে. এক সাথে তিন তালাক দিলে (যেমন আপনার উক্ত আত্মীয় দিয়েছেন) তিন তালাকই হবে । এক তালাক নয়।

এজন্যই বিখ্যাত ফকীহ ও মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুল হুমাম রহ. (মৃত.৬৮১হি.) আলোচ্য মাসআলাটি যে সাহাবাযুগ থেকেই অবিসংবাদিত তা উল্লেখ করার পর লিখেছেন- (তরজমা) “আর এ জন্যই যদি কোন (শরয়ী) আদালতের বিচারক এই সিদ্ধান্ত দেয় যে, এক সাথে তিন তালাক দিলে এক তালাক হয়, তাহলে তার ফায়সালা গ্রহণযোগ্য হবে না। কেননা বিষয়টিতে নতুন ইজতিহাদ ও সিদ্ধান্তের কোন সুযোগ নেই। সুতরাং নতুন কোন সিদ্ধান্ত দেয়া হলে তা শরীয়তসম্মত ‘মতপার্থক্য’ নয়; শরীয়ত গর্হিত ‘বিচ্ছিন্নতা’ হিসাবেই গণ্য হবে।”

আর তিন তালাক হয়ে গেলে বিধান কী- এসম্পর্কে আল্লাহ তাআলা বলেন,

فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا تَحِلُّ لَهُ مِن بَعْدُ حَتَّىٰ تَنكِحَ زَوْجًا غَيْرَهُ ۗ فَإِن طَلَّقَهَا فَلَا جُنَاحَ عَلَيْهِمَا أَن يَتَرَاجَعَا إِن ظَنَّا أَن يُقِيمَا حُدُودَ اللَّهِ ۗ وَتِلْكَ حُدُودُ اللَّهِ يُبَيِّنُهَا لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

তারপর যদি সে স্ত্রীকে (তৃতীয়বার) তালাক দেয়া হয়, তবে সে স্ত্রী যে পর্যন্ত তাকে ছাড়া অপর কোন স্বামীর সাথে বিয়ে করে না নেবে, তার জন্য হালাল নয়। অতঃপর যদি দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তাহলে তাদের উভয়ের জন্যই পরস্পরকে পুনরায় বিয়ে করাতে কোন পাপ নেই। যদি আল্লাহর হুকুম বজায় রাখার ইচ্ছা থাকে। আর এই হলো আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত সীমা; যারা উপলব্ধি করে তাদের জন্য এসব বর্ণনা করা হয়। (সূরা বাকারা-২৩০)

এ মর্মে হাদীস শরিফে এসেছে,

আম্মাজান আয়েশা রা. থেকে বরণিত, রাফায়ার স্ত্রী বলল, হে আল্লাহর রাসুল, আমার স্বামী রাফায়া আমাকে এক সাথে তিন তালাক দিয়েছে? এরপর আমি আব্দুর রাহমানের সাথে বিবাহ করেছি। এখন রাফায়ার কাছে যেতে পারবো কিনা? নবীজী বললেন, আবদুর রহমান তোমার সাথে সহবাস করলে এরপর রাফায়ার নিকট যেতে পারবে। (সহীহ বুখারী ৫২৬১)

সম্মানিত দীনি ভাই, সুতরাং আপনার উক্ত আত্মীয়ের জন্য আবশ্যক হল, এখনি স্বামী স্ত্রী আলাদা হয়ে যাওয়া। যেহেতু তিন তালাকের মাধ্যমে তাদের সম্পর্ক শেষ হয়ে গেছে। সুতরাং এখন একসাথে থাকা জিনার গোনাহ হচ্ছে।

এখন নিয়ম মাফিক  স্ত্রীর যদি অন্যত্র বিয়ে হয়, তারপর কোন  কারণে দ্বিতীয় স্বামী তালাক দিয়ে দেয়, তারপর ইদ্দত শেষে উক্ত মহিলাকে আপনার উক্ত আত্মীয় দ্বিতীয়বার বিয়ে করতে পারবেন। এছাড়া দ্বিতীয় কোনো পথ নেই।

উল্লেখ্য, পরিস্কার শব্দে “তালাক” বললে সেখানে নিয়তের কোনো প্রয়োজন নেই। নিয়ত ছাড়াই তালাক পতিত হয়ে যায়। তালাকের পরিস্কার শব্দ ছাড়া অন্য শব্দে তালাক দিলে নিয়তের প্রয়োজন হয়। তালাক শব্দ দিয়ে তালাক দিলে নিয়তের প্রয়োজন নেই।

উত্তর দিয়েছেন
মাওলানা উমায়ের কোব্বাদী নকশবন্দী

সুত্রঃ http://quranerjyoti.com

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ