ছোট পরিবার, সুখী পরিবার। এর বিপক্ষে যুক্তি চাই অনেক গুলো। দেন কেঊ
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Call

এক. সন্তান প্রতিটি বাবা-মায়ের কাছে জীবনের শ্রেষ্ঠ সম্পদ। বাবা-মা কখনো সন্তানের অমঙ্গল কামনা করেন না, বরং শত দুঃখ-কষ্ট পেলেও সন্তানের জন্য শুভকামনা করেন। মহানবী (সা.) সন্তানদের সুশিক্ষা দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে বলেছেন, ‘তোমরা নিজেদের সন্তানদের স্নেহ করবে এবং তাদের শিষ্টাচার শিক্ষাদান করবে। সন্তানকে সদাচার শিক্ষা দেওয়া দান-খয়রাতের চেয়েও উত্তম। তোমাদের সন্তানদের উত্তমরূপে জ্ঞানদান কর। কেননা তারা তোমাদের পরবর্তী যুগের জন্য সৃষ্ট।’

যুগের হাওয়ায় বাবা মায়েরা আজ অনেক ব্যস্ত। সন্তানের জন্য তাদের সময় এখন দুষ্প্রাপ্য। যৌথ পরিবার ভেঙে যেতে যেতে পরিবারের সদস্য সংখ্যা এখন ৩ জন কিংবা ৪ জনে এসে ঠেকেছে। তদুপরি সবাই ব্যস্ত। এখনও যখন দেশের বিশিষ্ট ব্যক্তিদের একান্ত আলাপচারিতা দেখি, অধিকাংশ ব্যক্তিই তাদের একান্নবর্তী পরিবারের স্মৃতিচারণ করেন। পরিপূর্ণ আনন্দ যে ঘরভর্তি মানুষের মধ্যে নিহিত, অবলীলায় সবাই স্মরণ এবং স্বীকার করেন।



দুই. আজকের বাবা-মায়েরা চাকরি, ব্যবসা, পার্টি নিয়ে অনেক অনেক ব্যস্ত। অর্থ বিত্ত আর ক্যারিয়ার নামক আজব নেশায় তাদের পেয়ে বসেছে। সন্তান সঠিকভাবে মানুষ করাও যে ক্যারিয়ারের অংশ সেটা তাদের বুঝাবে কে? শুধু দামি দামি জামা কাপড়, গাড়ি করে ঘুরে বেড়ানোর মধ্যে সন্তানের সব প্রাপ্তি নিশ্চিত হয় না। প্রয়োজন স্নেহ, ভালোবাসা, শাসন। 

ভারতের সাবেক প্রেসিডেন্ট এপিজে আব্দুল কালামের মতে,’যদি একটি দেশকে দুর্নীতিমুক্ত এবং সুন্দর মনের মানুষের জাতি হতে হয়, তাহলে আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি এক্ষেত্রে তিনজন সামাজিক সদস্য পার্থক্য এনে দিতে পারে। তারা হলেন- বাবা, মা এবং শিক্ষক।’ বর্তমানে অনেক বাবা মা আত্মীয়-স্বজন থেকে আলাদা থাকার মাধ্যমে নিজেদের গুরুত্ব বাড়িয়ে চলেছেন। কতটা বোকা চিন্তা ভাবনা! আধুনিকতা মানেই নিসঙ্গতা নয়। একা একা যদি বসবাস করতে চান, তবে রবিনসনের মতো নির্জন দ্বীপে বসবাস করেন।

সন্তান বাবা-মায়ের জন্য আল্লাহর সবচেয়ে বড় নিয়ামত। সেই নিয়ামত সঠিকভাবে পরিচর্চা করুন। আজ আপনি অবচেতনভাবে যেভাবে সন্তানদের অবহেলা করছেন, সন্তানও ভবিষ্যতে তাই করবে। অনেকেই সন্তান মানুষ করতে হিমশিম খাচ্ছেন। ঠিক মতো সময় দিতে পারেন না। তাদের জন্য বলছি, যৌথ পরিবার বজায় রাখেন। আপনার সন্তান কখনও নিজেকে একা মনে করবে না। সন্তানের অতিরিক্ত টেলিভিশন দেখা, মাত্রাতিরিক্ত ইন্টারনেট ব্যবহার, সঙ্গদোষ এড়ানো, অপরিকল্পিত মোবাইল ফোনের ব্যবহার বন্ধ করতে চাইলে, সব চিকিৎসা বাদ দিয়ে যৌথ পরিবার প্রথায় ফিরে আসুন। সন্তানের মানসিক বিকাশে সহায়তা করুন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
biggan

Call

আমি এখানে ১০টি যুক্তি দিলাম। আশা করি আপনার কাজে আসবে।


১) শিশুকে সুসংগত ব্যক্তিত্ব গঠনের ক্ষেত্রে বাধা প্রদান:

    বড় পরিবারে সদস্যদের আচার-আচরণের সাথে পারস্পরিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া ঘটে। এর মাধ্যমে শিশু সহযোগিতা, সহিষ্ণুতা, সহমর্মিতা, শ্রদ্ধাবোধ প্রভৃতি গুণাবলি অর্জন করে।কিন্তু ছোট পরিবারে তা না হওয়ায় অনেক সময় শিশুদের আচরণে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক আচরণ গড়ে ওঠে না।

২) শিশু স্বার্থপর হয়ে ওঠা:

    ছোট পরিবারে শিশুদের আচরণে পারস্পরিক সহযোগিতামূলক আচরণ গড়ে না ওঠায় অনেক সময় শিশু এককেন্দ্রিক ও স্বার্থপর হয়ে ওঠে।

৩) অতিরিক্ত যত্নের ফলে চিত্তবিনোদনের অভাব:

     ছোট পরিবারে অধিকাংশ মা-বাবাই তাদের সন্তান নিয়ে অতিরিক্ত চিন্তা করে। যেমন: বাইরে খেললে তারা আঘাত পেতে পারে, বাইরের ধুলা-বালি তাদের অসুস্থ করতে পারে ইত্যাদি। তাই শিশুদের বাইরে বেশি বের হতে দেওয়া হয় না। এতে চিত্তবিনোদনের ঘাটতি দেখা যায়। 

৪) অতিরিক্ত যত্নের ফলে অসামাজিক ও আসক্ত হওয়া:

    একই কারণে শিশুদের বাইরে বেশি বের হতে না দেওয়ায় তার কেবল ঘরে বসে মোবাইল, টিভি, ভিডিও গেম, ফেসবুক, ইন্সটাগ্রাম- এসব নিয়ে পড়ে থাকে। ফলে তারা আসক্ত হয়ে পড়ে। আবার এসবের ফলে তারা বাবা-মা, প্রতিবেশি, আত্মীয়-স্বজনদের বেশি সময় দিতে পারে না। ফলে তারা বাস্তব জগত হতে বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। 

৫) দায়িত্ববোধের অভাব:

     ছোট পরিবারে সাধারণত শিশুদের দায়িত্ব নেওয়ার মত কোন কাজ থাকে না, বরং তাদের নিজেদের যেসব কাজ থাকে তা অন্যরা করে দেয়। শিশুরা দেখা যায়, অনেক সময় মা-বাবা ছাড়া কোন কাজই করতে জানে না। ফলে দায়িত্ববোধের অভাব দেখা যায়।

৬) একাকীত্ব ও অসহায়ত্ব বোধ:

     ছোট পরিবারে মা-বাবার ব্যস্ততার ফলে শিশুরা সাধারণত কারো সাথে গল্প করতে পারে না, শেয়ার করতে পারে না, খেলতে পারে না। ফলে তারা একাকীত্ব বোধ করতে পারে।

৭) বৃদ্ধ বয়সে মা-বাবার সমস্যা:

     ছোট পরিবারে সন্তান ব্যস্ততার কারণে অনেক সময় মা-বাবাকে বৃদ্ধ বয়সে সময় দিতে পারে না। অনেকে আবার বৃদ্ধাশ্রমেও রেখে আসে।

৮) অহংকার বৃদ্ধি:

      ছোট পরিবারে থাকায় বেশি সুবিধা পাওয়ার কারণে অনেক সময় সন্তানের দাম্ভিকতা বৃদ্ধি পায়। নিজের শিক্ষকের প্রতিও অনেক সময় ন্যায্য শ্রদ্ধা ও সম্মান দেখায় না।

৯) কিশোর অপরাধী হওয়া:

     অভিভাবকের কর্মস্থলে থাকার কারণে প্রয়োজনীয় সময় দিতে না পারায় সন্তান কিশোর অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।

১০) পিতামাতার অতিরিক্ত সময় দেওয়া:

     এর বিপরীতক্রমে, সন্তান যাতে কিশোর অপরাধে যুক্ত না হয় সেজন্য পিতামাতাকে অতিরিক্ত সময় দিতে হয়। ফলে দেখা যায়, তারা তাদের কর্মস্থলে ঠিকমত কাজ করতে পারে না।

       পরিশেষে বলা যায়, "ছোট পরিবার, সুখী পরিবার" কথাটি পুরোপুরি সত্য নয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ