শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Arman

Call

নাথুরাম গডসে ১৯৪৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বিকেল পাঁচটায় মহাত্মা করম চাঁদ গান্ধীকে পিস্তলের গুলিতে হত্যা করে। ১৫ নভেম্বর ১৯৪৯ সালে নাথুরামের ফাঁসি হয়। তার বিচার কার্য সম্পন্ন হতে ছয়শত পঞ্চান্ন দিন লেগেছিল। নাথুরাম আপিল মামলায় উকিল নিযুক্ত না করে নিজেই সাফাই বক্তব্য দেন। নাথুরাম গডসের সাফাই বক্তব্য ভারত সরকার প্রকাশ নিষিদ্ধ করেন। ১৯৬৮ সালে বোম্বে হাইকোর্ট নাথুরাম গডসের জবানবন্দীর উপর দায়ের করা মামলায় জবানবন্দী প্রকাশের পক্ষে রায় দেন। তার নয় বৎসর পর ১৯৭৭ সালে যে আপিল বিভাগ মৃত্যুদণ্ডাদেশ বহাল রাখে তার একজন বিচারপতি জাস্টিস জি.ডি. খোসলা একটি বই লেখেন। এই বইয়ের পর নাথুরাম গডসের ভাই গোপাল গডসে নাথুরামের জীবন, কেন সে মহাত্মা গান্ধীকে হত্যা করেছিল-তা নিয়ে এক বই লিখেন। বইটির নাম ‘‘Gandhi Hatya Ani Mee’’। (‘গান্ধী হত্যা আর আমি)। এই বইয়ে মূলতঃ মহাত্মা গান্ধী হত্যার প্রেক্ষাপট, হত্যার কারণ নিয়ে নাথুরাম মামলায় যে জবানবন্দী দিয়েছে তা-ই অত্যন্ত আবেগপূর্ণ ভাষায় বর্ণিত হয়েছে। নাথুরাম ভারতের বোম্বাই শহরের কাছে পুনায় জন্মগ্রহণ করে। কলেজ জীবন থেকে সে সাভারকাবের হিন্দু মহাসভা ও আরএসএস এর ফ্লাটফরমে কাজ করতো। হিন্দু মহাসভার কর্মীরা ভারতের স্বাধীনতা আন্দোলনে নেহেরু ও মহাত্মা গান্ধীর নীতির সমর্থন করতো না। ১৯৪০ সালের পর মুসলমানদের পৃথক রাষ্ট্র গঠনের প্রশ্নে হিন্দু মহাসভার কর্মীরা কংগ্রেসের উপর ক্ষেপে যায়। ১৯৪৭ সালে ভারত ভাগ হয়ে যাবার নিশ্চিত মুহূর্তে পুরো উপমহাদেশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা ছড়িয়ে পড়ে। এই দাঙ্গা পরবর্তী সময়ে মহাত্মা গান্ধী সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় মরিয়া হয়ে ওঠেন। গান্ধী তার স্বভাবসুলভ প্রক্রিয়ায় সরকারের উপর চাপ সৃষ্টি করার জন্য অনশন কর্মসূচি করতে থাকেন। গান্ধীর এসব কাণ্ড হিন্দু মহাসভার কর্মীরা হিন্দু বিরোধী ও মুসলিম তোষণ রূপে দেখে। ভারত স্বাধীন হয়ে গেলে হিন্দু মহাসভার পুরান নেতৃত্ব কংগ্রেস সরকারকে জাতীয় সরকার হিসেবে সমর্থন দেয়া প্রয়োজন মনে করলেও নাথুরাম গডসের মত তরুণ আর এস এস কর্মীরা কংগ্রেসকে ভারত বিভক্তির জন্য ও মুসলিম তোষণের জন্য দায়ী করতে থাকে। তারা তখনো কংগ্রেস এর বিরুদ্ধে ‘অখণ্ড ভারতের’ স্লোগান তোলে। নাথুরাম গডসে ও তার বন্ধু নারায়ন আপতে ‘অগ্রণী’ ও ‘হিন্দু রাষ্ট্র’ নামে দুটো পত্রিকা বের করেন পুনা থেকে। এই দুটো পত্রিকাতেই গান্ধী ও নেহেরুর মুসলিম তোষণের বিরুদ্ধে প্রচারণা চালানো হতো। সাভারকার ও পুরাতন সিনিয়র হিন্দু মহাসভার নেতাদের মত বিরুদ্ধে গিয়ে নাথুরামসহ তরুণ কিছু সদস্য দিল্লী গিয়ে গান্ধীজির ধর্মসভায় হৈ চৈ করা ও বিক্ষোভ দেখানোর সিদ্ধান্ত নেয়। মহাত্মা গান্ধীর হত্যাকাণ্ড গান্ধীজি ১৯৪৭ পরবর্তী সাম্প্রদায়িক হানাহানি বন্ধের জন্য সর্বদলীয় ও সর্বধর্মীয় প্রার্থনা সভা শুরু করেন দিল্লীর বিড়ালা ভবনে। নাথুরাম ও তার সঙ্গীরা কয়েক দফা বিক্ষোভ করেও গান্ধীকে এ প্রার্থনা সভা থেকে বিরত রাখতে পারেনি। পাকিস্তান ও ভারত ভাগাভাগি হওয়ার ছয়মাসের মধ্যে যে সমস্ত যৌথ সম্পদ ভারতে রয়ে গেছে তার বিনিময়ে ভারত পাকিস্তানকে ৫৫ কোটি টাকা শোধ করার কথা ছিল। কিন্তু সর্দার প্যাটেল এই টাকা শোধ করতে গড়িমসি করে। প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী পাওনা টাকা শোধ না করায় গান্ধীজি নেহেরু ও প্যাটেলের উপর ক্ষেপে গিয়ে অনশন শুরু করেন। তার অনশন এর খবরে ভারত সরকার এই টাকা পাকিস্তানকে শোধ করে দেয়। এই ঘটনায় হিন্দু মহাসভার তরুণ কর্মীরা গান্ধীজি ও মুসলমানদের উপর আরো রেগে যায়। তারা মনে করে যে গান্ধীজি বেঁচে থাকলে তার এই মুসলমান তোষণ চলতেই থাকবে। এর মাঝে গান্ধীজি আরো এক কাণ্ড করে বসেন। তিনি বিভিন্ন হিন্দু মন্দিরে কোরানের সম্প্রীতি বিষয়ক আয়াতগুলো পাঠ করে হিন্দুদেরকে শোনাতে লাগলেন। গান্ধীজি হোসেন সোহরাওয়ার্দীকে ‘শহিদ’ বলে উল্লেখ করলে হিন্দু তরুণরা আরো ক্ষেপে যায়। তবে তাদের কেউই গান্ধীজীকে নিহত করার পক্ষে ছিলেন না।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ