কোটা পদ্ধতির কারণে জীবন টা শেষ।


শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

মেধা যখন কোটার ছোবলে

দেশ স্বাধীন হয়েছে বিয়াল্লিশ বছর হল। তারপরও সরকারি চাকুরি নিয়ে রয়ে গেছে বৈষম্য। পাকিস্তান আমলে এদেশের মানুষ চাকরি পেত না পক্ষপাতত্বের কারণে- আর এখন কোটা ব্যবস্থার কারণে অনেক যোগ্য ও মেধাবী প্রার্থীর কাছে ক্যাডার সার্ভিস এখন হয়ে দাঁড়িয়েছে সোনার হরিণ। দীর্ঘদিন ধরে কোটা পদ্ধতির সংস্কার নিয়ে কথা উঠলেও স্পর্শকাতর বিষয় বলে সব সরকারই এড়িয়ে গেছে। অথচ কোটার এ বিধান চাকরিপ্রার্থী শিক্ষার্থীদের মৌলিক অধিকারের লঙ্ঘন ছাড়া কিছুই নয়। তাই সাধারণের প্রশ্ন এই ভোগান্তি আর কত?

চাকরির ক্ষেত্রে বাড়ছে বৈষম্য-

বর্তমানে বিসিএসসহ অন্যান্য সরকারি চাকরিতে ৫৫ শতাংশই নিয়োগ পাচ্ছে কোটার মাধ্যমে। বাকি ৪৫ শতাংশ মেধা তথা সাধারণদের। ৫৫ শতাংশ কোটার মধ্যে রয়েছে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের, ১০ শতাংশ মহিলা, ১০ শতাংশ জেলা আর পাঁচ শতাংশ উপজাতির জন্যে। তুলনা করলে দেখা যায় প্রকৃত মেধা নয়, কোটাই সরকারি চাকরি পাওয়ার প্রধান মাপকাঠি। কোটা ব্যবস্থার কারণে যোগ্য প্রার্থীরা ছিটকে পড়ছেন প্রতিযোগিতা থেকে। এভাবেই বৈষম্য বেড়ে চলেছে। বিগত কয়েক বছরের পাঁচটি বিসিএসের ফলাফলের চিত্র দেখলে পুরো বিষয়টি সহজেই পরিষ্কার হওয়া যায়। এই সময়ে মোট এক হাজার ১৮৯ জন প্রার্থীকে প্রশাসন ক্যাডারে নিয়োগের সুপারিশ করা হয়, যার মধ্যে ৬২৯ জন কোটায় আর বাকি ৫৬০ জন মেধায়। পুলিশ ক্যাডারে ৭৫৩ জনের মধ্যে মেধায় ৩৫৫ জন আর বাকি ৩৯৮ জন কোটায় নিয়োগের সুপারিশ পেয়েছে। এ ছাড়া প্রথম শ্রেণীর অন্যান্য ১৫টি ক্যাডারেও গত পাঁচটি বিসিএস-এ কোটা এগিয়ে রয়েছে। পিএসসি মোট ৩ হাজার ১৭৯ জনকে নিয়োগের সুপারিশ করেছে, যার মধ্যে এক হাজার ৪৯৩ জন মেধায় আর এক হাজার ৬৮৬ জনকে কোটায় নিয়োগ দেয়া হয়েছে। সরকারি চাকরি প্রাপ্তির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে প্রতিবারই কোটাধারীরা সংখ্যায় এগিয়ে রয়েছেন আর সাধারণ মেধাবীরা প্রতি বছর পিছিয়ে পড়ছেন। দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য যদি এ কোটা ব্যবস্থা যুগের পর যুগ চলতে থাকে তাহলে জনপ্রশাসনে মেধাবীদের বদলে মেধাহীনদের নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হবে। এ সম্পর্কে তথ্যবিজ্ঞ মহল মনে করছে, অপেক্ষাকৃত কম যোগ্য ও মেধাবীদের কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে জনপ্রশাসনে নিয়োগ দিলে দেশের সার্বিক উন্নতি ও কর্মকাণ্ডে অদূরদর্শিতা ও অদক্ষতার ছাপ পড়বে। এতে দেশের অগ্রগতি বাধাগ্রস্ত হবে। সব শ্রেণী ও অঞ্চলের মানুষের সুষম উন্নয়ন করতে হলে নিয়োগ প্রক্রিয়ায় কোটা ব্যবস্থা বজায় রেখে তা কখনো আশা করা যায় না। এর জন্য দরকার ওইসব অঞ্চলের শিক্ষা ব্যবস্থার ওপর জোর দেয়া। পৃথিবীর বেশির ভাগ দেশে বর্ণবৈষম্য, ধর্মবৈষম্য, আয়বৈষম্য ইত্যাদির কারণে যেন সমাজে কোনো বৈষম্য তৈরি করতে না পারে সেদিকে বিশেষ দৃষ্টি রাখা হয়েছে। আর আমরা রাষ্ট্রীয়ভাবে এ ধরনের বৈষম্য জিইয়ে রাখার চেষ্টা করছি! সব ধরনের চাকরিসহ সুযোগ-সুবিধায় কোটা ব্যবস্থা চালু থাকলে দিন দিন সাধারণ আর কোটাধারীদের বৈষম্য বাড়তেই থাকবে বলে দাবি করছে সুশীল সমাজ।

কোটা ব্যবস্থা চালুর উদ্দেশ্য-

বাংলাদেশে কোটা ব্যবস্থা মূলত সমাজের অনগ্রসর শ্রেণীকে উন্নয়ন কাজে সুযোগ দানের উদ্দেশ্যে চালু করা হয়েছিল। পৃথিবীর সব দেশেই সমাজে যারা পশ্চাৎপদ ও অনগ্রসর, তাদের সামনে নিয়ে আসতে বিশেষ সুযোগ-সুবিধার ব্যবস্থা থাকে। সে হিসেবে বাংলাদেশের প্রান্তিক জনগোষ্ঠী ও নারীদের জন্য বিশেষ সুবিধা রাখা হয়েছে। কারণ আমাদের দেশে মহিলা ও উপজাতিরা সমাজে এখনও অনগ্রসর। আরও কিছুদিন যে কোনো অনুপাতে তাদের জন্য এ ব্যবস্থা চালু রাখার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে বলে অনেক বিশেষজ্ঞ মনে করছেন। এ বিষয়ে অনেকের দ্বিমতও রয়েছে। জেলা কোটার বিভাজন একটি জটিল ব্যবস্থা। আর্থসামাজিক অবস্থার বিবেচনায় অনুন্নত জেলাগুলোকে গোটা তিনেক গুচ্ছে বিভক্ত করে শুধু তাদের জন্যই প্রাধিকার থাকতে পারে। উন্নত জেলার জন্য তা থাকার কোনো যুক্তি নেই। শেষে যুক্ত হয় মুক্তিযোদ্ধাদের পোষ্যের বা সন্তানদের কোটাটি। প্রথমে এটা শুধুই মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য ছিল। এখন তা তাদের সন্তানদের জন্য রাখা হয়েছে। জীবিত মুক্তিযোদ্ধা যারা আছেন, তাদের মাঝে যারা অসহায় অসচ্ছল তাদের সংখ্যা কত, তা এখনও নির্ণয় সম্ভব হয়নি, তাদের সেবা বা পুনর্বাসনের ব্যবস্থার কোনো তাগিদ দেখা যায় না। এদিকে মুক্তিযোদ্ধাদের সন্তান কোটায় ৩০ শতাংশ সুযোগ রাখা হয়েছে। বিষয়টির কারণে সাধারণ মেধাবীরা অনেক ক্ষেত্রে চাকরির সুযোগ হারাচ্ছেন। সুশীল সমাজ বলছে, সাধারণ মেধাবীদের সুযোগ না দিয়ে তুলনামূলক কম মেধাবীদের কোটার মাধ্যমে চাকরিতে সুযোগ দেয়া খুবই অমূলক ব্যাপার। তাদের যুক্তি- কোটা ব্যবস্থা থাকলে সেটা সহনীয় পর্যায়ে রাখতে হবে, যেন কোটার কারণে মেধাবীরা পিছিয়ে বা বাদ না পড়েন।

কোটা ব্যবস্থার যৌক্তিকতা কতটুকু-

বহুদিন ধরে চলে আসা প্রচলিত কোটা ব্যবস্থাকে একটি অযৌক্তিক পদ্ধতি বলে অভিযোগ উঠেছে। বর্তমান যুগ হচ্ছে তীব্র প্রতিযোগিতার যুগ। মেধা ও যোগ্যতার বলেই এ যুগে সবাইকে টিকে থাকতে হয়। সূএঃযুগানতর পএিকা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ

এটা নিয়ে কোন জরিপ নেই তাই সঠিক ভাবে বলা সম্ভবনা।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ