বিস্তারিতভাবে এবং কোন রেফারেন্স থাকলে উল্লেখ করবেন ।
শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে

সমাজে চলার পথে বন্ধুর প্রয়োজন হয়। সামাজিক সম্পর্ক তৈরীতে বন্ধুত্বের একটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। মানুষের কর্ম, চিন্তা-ভাবনা ও দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন হয় বন্ধুত্বের কল্যাণে। এ কারণে কার সাথে বন্ধুত্ব করতে হবে এবং কাদের  বর্জন করতে হবে এ ব্যাপারে স্বয়ং আল্লাহতায়ালা আমাদের পথ দেখিয়েছেন। পবিত্র কুরআনে মহান আল্লাহতায়ালা বলেন, “আর ঈমানদার পুরুষ এবং ঈমানদার একে অপরের বন্ধু। তারা ভালো কথার শিক্ষা দেয় এবং মন্দ কাজ থেকে বিরত রাখে। নামাজ প্রতিষ্ঠিত করে, যাকাত দেয় এবং আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশ অনুযায়ী জীবনজাপন করে। তাদের ওপর আল্লাহতায়ালা অনুগ্রহ করবেন। নিশ্চয় আল্লাহ পরাক্রমশালী সুকৌশলী। [সূরা আত্্-তওবা : ৭১]

নবী করীম (সাঃ) বলেছেন, “মুমিন ব্যক্তির সাথে বন্ধুত্বের সম্পর্ক মজবুত কর। আর তার সাথেই পানাহার কর।” এখানে মুমিন ব্যক্তিদের সাথে বন্ধুত্ব করার কথা বলা হয়েছে। কিন্তু মুমিন ছাড়া কি আর কারো সাথে বন্ধুত্ব করা যাবে না? এ প্রশ্নের উত্তর আল্লাহ তায়ালাই দিয়েছেন। তিনি বলেন,

“হে ঈমানদারগণ, তোমরা ঈমানদারদের বাদ দিয়ে কাফেরদের নিজের বন্ধুরূপে গ্রহণ করো না। তোমরা কি তাদের বন্ধুরূপে গ্রহণ করে আল্লাহতায়ালার কাছে তোমাদের বিরুদ্ধে কোন সুস্পষ্ট প্রমাণ তুলে দিতে চাও?

[সূরা আন নিসা : ১৪৪]

অন্য এক আয়াতে আল্লাহ তায়ালা বলেন, “ঈমানদার ব্যক্তিরা কখনো ঈমানদারদের বদলে কাফেরদের বন্ধু বানাবে না। যদি তোমাদের কেউ তা করে, তবে আল্লাহর সাথে তার কোন সম্পর্কই থাকবে না।” [সূরা আলে-ইমরান : ২৮]

এ আয়াত দ্বারা বোঝা যায় যে, এমন ব্যক্তিকে আমরা বন্ধু হিসাবে গ্রহণ করবো যে ঈমানদার, ধর্মপ্রাণ, সত্যবাদী, সদাচারী, সৎকাজে অভ্যস্ত এবং নীতিবান।

যেহেতু আমরা বন্ধুছাড়া চলতে পারি না সেহেতু বন্ধু গ্রহণের ক্ষেত্রে অত্যন্ত সতর্ক হতে হবে।

এ সম্পর্কে মহানবী (সাঃ) বলেন, “মানুষ তার বন্ধুর ধর্মের দ্বারা প্রভাবিত হয়। তাই তোমাদের যে কেউ যেন বিচেনা করে দেখে কাকে সে বন্ধুরূপে গ্রহণ করছে। [তিরমিজি]

মহানবী (সঃ) আরো বলেন “জীবন যাপন প্রণালী ও চিন্তা ভাবনায় ঘনিষ্ঠ বন্ধুত্বের বেলায় অভিন্নতা থাকা বাঞ্ছনীয়। অতএব বন্ধু নির্বাচনে প্রত্যেকের যতœশীল হওয়া উচিত। [তিরমিজি]

বিভিন্ন কারণে আমাদের বন্ধুত্ব গড়ে উঠে। কিন্তু আল্লাহর প্রতি আনুগত্যের ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে সে বন্ধুত্ব সবচেয়ে মজবুত হয়। অপরদিকে নিজের স্বার্থের জন্য উপকার লাভের আশায়, ক্লাব সদস্যের ভিত্তিতে, সামাজিক শ্রেণী ও জাতিগত পরিচিতির ভিত্তিতে যে বন্ধুত্ব গড়ে উঠে তা বেশিদিন টিকে না। এ সকল ক্ষেত্রে কারো স্বার্থে কোন রকম আঘাত লাগলেই নষ্ট হয়ে যায়।

নবী করিম (সাঃ) বলেন, “যে ব্যক্তি কাউকে ভালোবাসলো তো আল্লাহ্্র জন্যই ভালোবাসলো, কাউকে ঘূণা করলো তো আল্লাহ্্র জন্যই ঘৃণা করলো, কাউকে কিছু দিল তো আল্লাহর জন্যইড দিল এবং কাউকে দেওয়া বন্ধ করলো তো আল্লাহর জন্যই দেয়া বন্ধ করলো, তবে সে তার ঈমানকে পূর্ণ করলো। [মিশকাত]

অর্থাৎ ঈমান ও আনুগত্যের ভিত্তিতে গড়ে ওঠা বন্ধুত্ব সর্বোত্তম। হাদীসে কুদসীতে আছে, আল্লাহতায়ালা বলেছেন, “যারা আমার প্রেমে পরস্পরকে ভালোবাসে, আমার খাতিরে সমবেত হয়, যারা আমার খাতিরে পরস্পরের খবরাখবর নেয় ও পারস্পরিক যোগাযোগ বহাল রাখে, আমার ভালোবাসা তাদেরই প্রাপ্য”।

ইসলামের দৃষ্টিতে উপযুক্ত লোকদের সাথেই বন্ধুত্ব করা উচিত এবং সারা জীবন ঐ বন্ধুত্ব অটুট রাখার জন্য চেষ্টা করা উচিত। যে বন্ধুত্ব আমাদের জীবনের আমূল পরিবর্তন করে দেয়, যে বন্ধুত্ব ছাড়া আমাদের চলা সম্ভব নয়, সে বন্ধুত্ব লালনের জন্য কুরআন ও হাদীসে নির্দেশনা রয়েছে। সেগুলো হচ্ছে:-

*   আল্লাহর আনুগত্য লাভের আশায় সকল বিশ্বাসীগণকে ভালোবাসা।

*   ঘনিষ্ঠ বন্ধুদের সাথে সাক্ষাৎ করা। বেহেস্তের সুসংবাদ সেই ব্যক্তির জন্য রয়েছে, যে অন্য সমস্ত উদ্দেশ্য বাদ দিয়ে শুধুমাত্র বন্ধুর ভালোমন্দ জানার জন্য বন্ধুত্বের খাতিরে বন্ধুর সাথে সাক্ষাৎ করে।

*   আত্ম সর্বস্বতা পরিহার করা। নবী করীম (সাঃ) বলেছেন,” নিজের ভাবনায় যা প্রিয়, তা অন্য মুসলিম ভাইয়ের জন্য প্রিয় না হওয়া পর্যন্ত সত্যিকারের বিশ্বাসী হওয়া যায় না।

*   দুর্নীতি, মুনাফেকী ও আত্মম্ভরিতা পরিহার করা। এগুলো হৃদয়ে পরিবর্তন আছে এবং বন্ধুত্ব নষ্ট করে।

*   সামাজিক সৌজন্য চর্চা করা যেমন সহগামী মুসলিমের নাম জানা ও ঠিকানা সংগ্রহ করা।

*   ভোজনের দাওয়াত দেয়া হলে তা কবুল করা।

*   দয়ার বিনিময়ে দয়া জানানো।

*   বন্ধুদের খাটো বা বিদ্রƒপ করবেন না।

*   বিদ্রƒপ করে বন্ধুদের মনে কষ্ট দেয়া থেকে বিরত থাকুন।

*   অসাক্ষাতে বন্ধুর নামে খারাপ কথা বলবেন না।

*   বিনয়ী হোন এবং আত্মম্ভরিতা ত্যাগ করুন।

*   বন্ধুর  কর্মকা-ে অসৎ উদ্দেশ্য আরোপ করবেন না।

*   বন্ধুকে খারাপ কাজ থেকে বিরত রাখুন এবং সৎ কাজে উৎসাহিত করুন।

*   বিরোধ দেখা দিলে নিজেই প্রথমে মিটিয়ে ফেলার জন্য উদ্যোগী হোন।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ