Call

 পৃথিবীর ইতিহাসে এরকম বিরল ঘটনা ঘটেছে যা রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট নামে । ঘুম মানুষের জীবনের গুরুত্বপূর্ণ একটি অংশ। মানুষ জীবনের তিন ভাগের এক ভাগ বা তার বেশি সময় ঘুমিয়ে কাটিয়ে দেন। মানব মস্তিষ্ক কার্যক্ষম রাখতে ঘুমের বিকল্প নেই। আবার অনেকেই অনিদ্রা বা ইনসমনিয়ায় ভোগে। ফলে তারা নানা রকম সমস্যার সম্মুখীন হন। তবে যদি কোনো মানুষকে জোর করে বা কোনো ওষুধ প্রয়োগ করে দিনের পর দিন ঘুমুতে না দেয়া হয় তাহলে? রাশিয়ার কিছু গবেষক এমনই করেছিল দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ চলাকালে। যা "রাশিয়ান স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট" নামে পরিচিত। প্রথম ও দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের সময়ে পরাশক্তিগুলো মত্ত হয়েছিল নতুন অস্ত্র, নতুন সব যুদ্ধকৌশল এবং নতুন সব সামরিক সরঞ্জাম তৈরির গবেষণায়। এর ভিতর কিছু কিছু গবেষণা ফল দিলেও বেশিরভাগই ভয়ানক পরিণতিতে পৌছায়। এমনই একটি ব্যর্থ গবেষণা ছিল ‘দ্য স্লিপ এক্সপেরিমেন্ট’। রাশিয়ান মিলিটারি ও গোয়েন্দা সংস্থা কেজিবি ঘুমহীন সৈন্য তৈরি করার চিন্তা করছিল। তারা সাইবেরিয়ার একটি সিক্রেট মিলিটারি ফ্যাসিলিটিতে এই গবেষণার ব্যবস্থা করেন। গবেষকরা একটি নতুন পরীক্ষামূলক গ্যাস আবিষ্কার করে। এই গ্যাসের মাধ্যমে ঘুম নিধন সম্ভব। এদিকে, গ্যাসটি পরীক্ষা করার জন্য সোভিয়েত কর্তৃপক্ষ পাঁচজন রাজনৈতিক বন্দীর সঙ্গে মিথ্যা চুক্তি করে। চুক্তি অনুযায়ী, যদি এই পাঁচজন বন্দী গবেষণায় সকল প্রকার সাহায্য করে এক মাস না ঘুমিয়ে থাকেন তাহলে তাঁদেরকে চিরতরে মুক্তি দেয়া হবে। পরীক্ষাটি করার জন্য গবেষণাগারে একটি কক্ষ ঠিক করা হয়। ওই কক্ষে বন্দীদের জন্য ৩০ দিনের শুকনো খাবার, পানীয় এর ব্যবস্থা করা হয়। এই কক্ষের একটি দরজা ও এর দেয়ালের একটি গবেষকদের পর্যবেক্ষণের জন্য কাচ দেয়া হয়। তাছাড়া কক্ষের ভিতরে ৬টি মাইক্রোফোন ও একটি ক্যামেরা সেট করা হয়। এরপর সাবজেক্টদের ঐ কক্ষে বন্দী করে গ্যাস প্রয়োগ করা হয়। কিন্তু কী ছিল পরিণাম? গ্যাস প্রয়োগের পরে প্রথম চারদিন বন্দীরা সাধারণ ব্যবহার করছিলেন। তাঁরা নির্ঘুম চারদিন কাটানোর পর ভিন্ন আচরণ শুরু করেন। এই পরিণামের কারণ এবং তাদের অতীতের দুর্ঘটনা নিয়ে কথা বলতে শুরু করেন। পঞ্চম দিন থেকে তাঁরা নিজেদের মধ্যে কথা বলা বন্ধ করে দেন। এরপর তারা মাইক্রোফোনে অর্থহীন ফিসফিস শুরু করে। এই বন্দীদশা থেকে মুক্তির জন্য গবেষকদের তাঁদের নেতাদের ধরিয়ে দেওয়ার প্রলোভন দিতে শুরু করেন। রাশিয়ান গবেষকরা মনে করেছিলেন এটি ছিল গ্যাসের প্রভাব। ধীরে ধীরে বন্দীরা সকল কথাবার্তা বন্ধ করে শুধু মাইক্রোফোনে ফিসফিস করতে থাকে। নবম দিন হঠাৎ এক বন্দী চিৎকার করতে শুরু করেন। তিনি তাঁর ভোকাল কর্ড ছিড়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত চিৎকার করতে থাকেন। অস্বাভাবিকভাবে বাকি চার বন্দী এতে কোনোরকম প্রতিক্রিয়া দেখান না। তাঁরা নীরবে মুখ থেকে বইয়ের পাতা ছিঁড়ে সেগুলো দেয়ালের কাচে ও ক্যামেরায় লাগিয়ে দেন। ফলে গবেষকরা আর বন্দীদের দেখতে পান না। এরপর তাঁরা পুরোপুরি নিঃশব্দ হয়ে যান। এভাবে তিন দিন কাটার পর গবেষকরা মাইক্রোফোন ঠিক আছে কিনা তা পরীক্ষা করলেন। রুমের অক্সিজেন সাপ্লাইও চেক করলেন এবং নিশ্চিত হলেন যে বন্দীরা সবাই জীবিত। কোনো উপায় না পেয়ে গবেষকরা ইন্টারকমে বন্দীদের সঙ্গে কথা বলার চেষ্টা করে বললেন, তাঁরা কক্ষে প্রবেশ করবেন এবং বন্দীরা যদি কোনো সমস্যা সৃষ্টি না করেন তবে একজন বন্দীকে মুক্তি দেয়া হবে। এক বন্দী ভয়ানক স্বরে উত্তর দিলেন, তাঁরা মুক্তি চান না। এরপর থেকে বন্দীরা আবার কথা বলা বন্ধ করে দেন। শেষমেষ কোনো উপায় না পেয়ে ১৫তম দিন গবেষকরা ঠিক করলেন তাঁরা কক্ষে প্রবেশ করবেন। এ জন্য তারা রাশিয়ান স্পেশাল ফোর্সকে তলব করলেন। রাশিয়ান স্পেশাল ফোর্স কক্ষে প্রবেশের পূর্বে তাঁর ঐ পরীক্ষামূলক গ্যাসের সাপ্লাই বন্ধ করে দিলেন এবং কক্ষে সাধারণ বায়ু প্রবেশ করালেন। এতে সকল বন্দী চিৎকার শুরু করলেন। তাঁরা বার বার ঐ গ্যাস পুনরায় চালুর জন্য আকুতি করতে থাকলেন। এই পরিস্থিতিতে রাশিয়ান সৈন্যরা কক্ষে প্রবেশ করলেন। সৈন্যরা কক্ষে প্রবেশ করে বন্দীদের পরিস্থিতি দেখে ঘাবড়ে গেলেন। বন্দীদের শরীরের বিভিন্ন অংশ থেকে মাংস খুলে পড়ছিল। তাঁদের হাড়গোড় বের হয়ে আসছিল। পাঁচ বন্দীর মধ্যে চারজন জীবিত ছিলেন। জীবিত বন্দীরা গ্যাসে জন্য আকুতি করতে থাকেন এবং কক্ষ থেকে বের হতে অস্বীকৃতি জানান। তাঁদেরকে কক্ষ থেকে বের করার প্রক্রিয়ায় দুই সৈন্য প্রাণ হারান এবং একজন আহত হন। বন্দীদের কক্ষ থেকে বের করার পর গবেষকরা কক্ষে প্রবেশ করে রীতিমত থমকে গেলেন। মজুদ খাবারের কিছুই বন্দীরা ধরেননি এবং তারা নিজেরদের শরীর থেকেই মাংস খাচ্ছিলেন। এছাড়াও মৃত বন্দীর শরীরের বিভিন্ন অংশও জীবিতরা খেয়ে ফেলেছিল। হতোচকিত গবেষকরা জীবিত বন্দীদের পরীক্ষার জন্য অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করে অবশ করার চেষ্টা করলে বন্দীরা অস্বীকৃতি জানান। জোর করে একজনকে অ্যানেস্থেসিয়া প্রয়োগ করলে তাঁর হার্ট বন্ধ হয়ে যায় এবং তিনি মৃত্যুবরণ করেন। জীবিত তিন বন্দীর পরীক্ষা করার জন্য অ্যানেস্থেসিয়া ব্যবহার না করেই পরীক্ষা করা হয়। গবেষকরা পরীক্ষা করে জানতে পারেন এই গ্যাসটিতে অতিমাত্রায় আসক্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। তাছাড়াও এই গ্যাসের প্রভাবে বন্দীদের সকল ব্যথা ও অন্যান্য আবেগ বিলুপ্ত হয়েছিল। গ্যাসটি তাঁদের শারীরিক শক্তিও বহুগুণ বাড়িয়ে দিয়েছিল। গ্যাসটির প্রভাব সম্ভাবনা হিসেবে দেখে একজন রাশিয়ান জেনারেল এই পরীক্ষা চালিয়ে যেতে চেয়েছিলেন। কিন্তু গবেষকরা রাজি ছিলেন না। এরপর গবেষক বা জীবিত বন্দীদের সঙ্গে কী হয়েছিল তা সম্পর্কে সঠিক কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি। ধারণা করা হয় ১৯৪৫ সালের পরে ঐ মিলিটারি গবেষণাগার পুরোপুরি সিল করে দেয়া হয়। এই সকল পরীক্ষা সম্পর্কেও সাধারণ মানুষের ধারণা ছিল না যতদিন পর্যন্ত না ২০০৯ সালে রাশিয়ান কিছু নথি হ্যাক করে প্রকাশ করা হয়।

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ