শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
manik

Call

(وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ) সূরা বাক্বারার ২৮১ নং আয়াত। (ইবনু আবী হাতেম সাঈদ বিন জুবাইর (রাঃ) থেকে বর্ণনা করেন যে, এই আয়াত নাযিল হওয়ার পর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) নয় দিন জীবিত ছিলেন।- আল ইতক্বান ফি উলূমিল কুরআন)

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ
সর্বশেষে নাযিল হওয়া আয়াত: আল কুরআনের কোন আয়াত সর্বশেষে নাযিল হয়েছে এ ব্যাপারে পাঁচটি বিশেষ গ্রহণযোগ্য অভিমত রয়েছে। এছাড়া আরো কিছু অভিমতও লক্ষ করা যায়।
প্রথম অভিমত: রিবা বা সুদ বিষয়ক আয়াত সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত। এ অভিমতের পক্ষে দলিল হলো- ইবনে আব্বাস রাযি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন: সর্বশেষে নাযিল-হওয়া আয়াত হলো আয়াতুর রিবা (সুদ বিষয়ক আয়াত) (সহীহ বুখারী; ৫/১৬৪-১৬৫) 
                                                             يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آَمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِنْ كُنْتُمْ مُؤْمِنِينَঅর্থাৎ  
হজরত উমর (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন: আল কুরআনের সর্বশেষ যা নাযিল হয়েছে, তা হলো ‘রিবা’র আয়াত। আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তা ব্যাখ্যা করার পূর্বেই পরলোকগত হন। অতএব তোমরা সুদ ও সন্দেহ পরিত্যাগ করো।’ [তাফসীরে তাবারী; ৬/৩৮]
আবু সাঈদ খুদরী (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘উমর (রা.) আমাদের উদ্দেশ্য করে খুতবা দিলেন, অতঃপর তিনি বললেন: নিশ্চয় সর্বশেষ নাযিল হওয়া কুরআন হলো ‘রিবা’র আয়াত।’ [সূয়ুতী, আল ইতকান; ৬/৩৫]  শায়খ মাহমুদ শাকের বলেছেন যে হাদীসটি বিশুদ্ধ সনদের ( তাফসীরে তাবারী; ৬/৩৯)
দ্বিতীয় অভিমত: কিছু কিছু তাফসিরবিদদের মতে আল কুরআনের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত হলো
 وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ تُوَفَّى كُلُّ نَفْسٍ مَا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
‘আর তোমরা সে দিনের ভয় কর, যে দিন তোমাদেরকে আল্লাহর দিকে ফিরিয়ে নেয়া হবে। অতঃপর প্রত্যেক ব্যক্তিকে সে যা উপার্জন করেছে, তা পুরোপুরি দেয়া হবে। আর তাদের যুলম করা হবে না।’ (সূরা আলা বাকারা: ২৮১)।
এ অভিমতের পক্ষে নিম্নবর্তী দলিলসমূহ পেশ করা হয়- ইবনে আব্বাস (রা.) বলেন, ‘আল কুরানের সর্বশেষ যা নাযিল হয়েছে, তা হলো وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ  [সুনানে নাসাঈ; হা. ১১০৫৭]
ইবনে মারদুবেহ ও ইবনে জারীর তাবারীও ইবনে আব্বাস (রা.). থেকে অনুরূপ বর্ণনা করেছেন। [আদ্দুররুল মানসুর; ১/৩৭০,তাফসীরে তাবারী; ৬/৪১]
তৃতীয় অভিমত: কারো কারো মতে আলা কুরআনের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত হলো সূরা নিসার কালালাহ সম্পর্কিত আয়াতটি। কালালাহ হলো পিতামাতাহীন নিঃসন্তান ব্যক্তি। ইরশাদ হয়েছে-
 يَسْتَفْتُونَكَ قُلِ اللَّهُ يُفْتِيكُمْ فِي الْكَلَالَةِ إِنِ امْرُؤٌ هَلَكَ لَيْسَ لَهُ وَلَدٌ وَلَهُ أُخْتٌ فَلَهَا نِصْفُ مَا تَرَكَ وَهُوَ يَرِثُهَا إِنْ لَمْ يَكُنْ لَهَا وَلَدٌ فَإِنْكَانَتَا اثْنَتَيْنِ فَلَهُمَا الثُّلُثَانِ مِمَّا تَرَكَ وَإِنْ كَانُوا إِخْوَةً رِجَالًا وَنِسَاءً فَلِلذَّكَرِ مِثْلُ حَظِّ الْأُنْثَيَيْنِ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمْ أَنْ تَضِلُّوا وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍعَلِيمٌ
তারা তোমার কাছে সমাধান চায়। বল,‘আল্লাহ তোমাদেরকে সমাধান দিচ্ছেন কালালা (‘পিতা মাতাহীন নিঃসন্তানকে ‘কালালা’ বলা হয়) সম্পর্কে। কোনো ব্যক্তি যদি মারা যায় এমন অবস্থায় যে, তার কোনো সন্তান নেই এবং তার এক বোন রয়েছে, তবে সে যা রেখে গিয়েছে বোনের জন্য তার অর্ধেক, আর সে (মহিলা) যদি সন্তানহীনা হয় তবে তার ভাই তার উত্তরাধিকারী হবে। কিন্তু যদি তারা (বোনেরা) দু’জন হয়, তবে সে যা রেখে গিয়েছে তাদের জন্য তার দুই তৃতীয়াংশ। আর যদি তারা কয়েক ভাই বোন পুরুষ ও নারী হয়, তবে পুরুষের জন্য দুই নারীর অংশের সমান হবে’। আল্লাহ তোমাদেরকে ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, যাতে তোমরা পথভ্রষ্ট না হও এবং আল্লাহ প্রতিটি বিষয় সম্পর্কে সর্বজ্ঞ’-(সূরা আন নিসা: ১৭৬)। [সহীহ বুখারী বুখারী; হা. ৪৬০৫ ও সহীহ মুসলিম; হা. ১৬১৮]
উক্ত বর্ণনার ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে তা মূলত মিরাছ তথা মৃতব্যক্তির রেখে যাওয়া সম্পদের ভাগবণ্টন বিষয়ক হুকুম-আহকাম বর্ণনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ আয়াত।
চতুর্থ অভিমত: কারো কারো মতে সূরা তাওবার ১২৮ নং আয়াত হলো সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত। অর্থাৎ আল্লাহ তাআলার বাণী;
لَقَدْ جَاءَكُمْ رَسُولٌ مِنْ أَنْفُسِكُمْ عَزِيزٌ عَلَيْهِ مَا عَنِتُّمْ حَرِيصٌ عَلَيْكُمْ بِالْمُؤْمِنِينَ رَءُوفٌ رَحِيمٌ
‘নিশ্চয়ই তোমাদের নিজদের মধ্য থেকে তোমাদের নিকট একজন রাসূল এসেছেন, তা তার জন্য কষ্টদায়ক যা তোমাদেরকে পীড়া দেয়। তিনি তোমাদের কল্যাণকামী, মুমিনদের প্রতি স্নেহশীল, পরম দয়ালু’ (সূরা আত-তাওবা:১২৮)। [মুস্তাদরাকে হাকেম; হা. ৩২৯৬]
এ আয়াতের ব্যাপারে বলা হয়েছে যে, তা মূলত সূরায়ে বারাআত তথা সূরা তাওবার  শেষ আয়াত। অর্থাৎ সূরা তাওবার আয়াতসমূহের মধ্যে এটি হলো সর্বশেষে নাযিল হওয়া আয়াত।
পঞ্চম অভিমত: কারো কারো মতে সূরা আল মায়েদা হলো সর্বশেষ নাযিল হওয়া সূরা। তিরমিযী ও হাকেম আয়াশা (রা.) থেকে এ বিষয়ক একটি বর্ণনা উল্লেখ করেছেন। এ মতের খণ্ডনে বলা হয়েছে যে সূরা মায়েদা মূলত হালাল হারাম বর্ণনার ধারাবাহিকতায় সর্বশেষ সূরা যার  কোনো হুকুমই মানসুখ হয়নি।
পরিশেষে বলা যায় যে আলা কুরআনের সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত বা সূর  কোনটি এ ব্যাপারে সুনিশ্চিতভাবে কিছু বলা মুশকিল। রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের তিরোধানের পূর্বের দিনগুলিতে যে ব্যক্তি যে অংশ শুনেছেন,  সেটিকেই সর্বশেষ নাযিল হওয়া অংশ মনে করেছেন। এ ব্যাপারে কাজী আবু বকর আল বাকেল্লানী বলেন, ‘এ কথাগুলোর কোনোটিই মুত্তাসিল তথা অবিচ্ছদ্য সনদে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম থেকে বর্ণিত হয়নি। বিষয়টি হয়তো এমন  যে অভিমত-ব্যক্তকারী নিজের বুদ্ধি-বিবেচনা ও অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত ধারণার ওপর নির্ভর করে তার মতামত ব্যক্ত করেছেন। আর এটারও সম্ভাবনা রয়েছে যে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যে দিন ইন্তেকাল করেছেন অথবা তাঁর অসুস্থতার কিছু পূর্বে তাঁর কাছ থেকে সর্বশেষে যা শুনেছেন,  সেটাকেই সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত মনে করেছেন। অন্যকেও হয়ত এর পরেও শুনেছেন যা সে শুনেছি। এও সম্ভাবনা রয়েছে যে এ আয়াতটি, যা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সর্বশেষে তিলাওয়াত করেছেন, অন্য আরো আয়াতের সঙ্গে নাযিল হয়েছে। অতঃপর সাজিয়ে লেখার সময় ওই আয়াতটি লেখার পর তার সঙ্গে নাযিল হওয়া আয়াতগুলো  লেখার নির্দেশ দিয়েছেন। যার কারণে এ ধারণা করে নেয়া হয়েছে এ আয়াতগুলোই হলো সর্বশেষ নাযিল হওয়া আয়াত।’ [সুয়ূতী, আল ইতকান: ১/২৭]
ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ