শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে
Ruhul

Call

ডা. এম শমশের আলী

বুকের ব্যথার ধরন ও কারণ যাই হোক না কেন, তাকে মানুষ মারাত্দক হিসাবেই বিবেচনা করে থাকে। বুকের ব্যথা হলে নিশ্চয়ই লক্ষ করেছেন যে, ব্যথা খুব বেশি হলে মনে একটা ভয় চলে আসে। মনটা অনেক উদ্বিগ্ন হয়ে যায়। ব্যাপারগুলো খুবই স্বাভাবিক, কারণ বুকের ব্যথা অনেক সময়ই মারাত্দক ক্ষতি করতে পারে। তবে কিছু কিছু ছোটখাটো কারণে যে বুকের ব্যথা হয় না তা কিন্তু নয়। বাচ্চাদের বুকের ব্যথা সাধারণত সর্দর্ি, ঠাণ্ডা, ফুসফুসের প্রদাহ, ভাইরাল ফিভার, বাতজ্বর, ঞই (যক্ষ্মা), হৃৎপিণ্ডের জন্মগত সমস্যা, হৃৎপিণ্ডের ভাল্বের সমস্যা, হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ, অ্যাজমা, নিউমোনিয়া ও আঘাতজনিত কারণে হয়ে থাকে। তরুণবয়সী মানুষের বুকের ব্যথা হওয়ার কারণগুলো হলো, ভাইরাল ফিভার, অ্যাজমা, হার্টের ভাল্বের সমস্যা, জন্মগত হৃদরোগ, কসট্রোকনড্রাইটিস বা বুকের হাড়ের সমস্যা, হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ, ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, দীর্ঘমেয়াদি ফসফুসের প্রদাহ, হৃৎপিণ্ডে পানি জমা হওয়া, আঘাতজনিত কারণ, ফুসফুসে পানি জমা হওয়া, ফুসফুস ফেটে যাওয়া, ফুসফুসের ক্যান্সার এবং কখনো কখনো নিউমোনিয়া ইত্যাদিই প্রধান কারণ। মধ্যবয়সী মানুষের বুকের ব্যথার প্রধান কারণ হলো ইসকেমিক হার্ট ডিজিজ, ফুসফুসের প্রদাহ এবং ফুসফুসের ক্যান্সারজাতীয় সমস্যা। তবে অন্যান্য অনেক ছোটখাটো কারণগুলো হলো বাতজনিত সমস্যা, হার্টের এওরটিক ভাল্বের সমস্যা, কখনো কখনো জন্মগত হৃদরোগ এবং উপরের পেটের সমস্যা ইত্যাদি।

বয়োবৃদ্ধ ব্যক্তিদের বুকের ব্যথার প্রধান কারণ সকেমিক হার্ট ডিজিজ, হার্ট ফেইলুর, ফুসফুসের প্রদাহ ও ক্যান্সারজাতীয় অসুখ, হৃৎপিণ্ডের প্রদাহ ও হৃৎপিণ্ডের চারদিকে পানি জমা হওয়া, নিউমোনিয়া, বুকের অস্থিসন্ধিতে বাতজাতীয় সমস্যা। লিভারের সমস্যা ও পেটের বড় ধরনের কোনো সমস্যার জন্য বুকে ব্যথা অনুভূত হতে পারে। ফুসফুসের দীর্ঘমেয়াদি প্রদাহ ও তার থেকে হার্ট ফেইলুর আরও একটি অন্যতম কারণ।

কারণ ভেদে বুকের ব্যথার ধরন আলাদা হয়ে থাকে। তবে সবসময় ধরন দেখে কারণ নির্ণয় করা যায় না। ঠাণ্ডাজনিত বুকে ব্যথা মানুষ খুব সহজেই বুঝতে পারে। আরও সহজে বোঝা যায় আঘাতজনিত বুকের ব্যথা। দীর্ঘ সময় ধরে জ্বর, কাশির সঙ্গে বুকে ব্যথা থাকলে যক্ষ্মা ও নিউমোনিয়া এবং ফুসফুসের প্রদাহজনিত সমস্যা হওয়াই স্বাভাবিক। স্বল্পমেয়াদি জ্বরের ও শরীর ব্যথার সঙ্গে বুকের ব্যথা হলে ভাইরাল ফিভার হতে পারে। তবে ভাইরাল ফিভার হৃৎপিণ্ডে মারাত্দক প্রদাহ সৃষ্টি করতে পারে এবং এ ধরনের প্রদাহের জন্যও বুকে ব্যথা হতে পারে। বাতজনিত বুকের ব্যথার সঙ্গে বুক নড়াচড়ার একটা সম্পর্ক থাকে। তবে ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হলে বুক নড়াচড়া না করলেও সারাক্ষণ ব্যথা হতে পারে। হৃদরোগজনিত বুকের ব্যথার ধরন অন্য ব্যথা থেকে অনেকটাই আলাদা, সাধারণভাবে কাজ করতে গেলে, হাঁটতে থাকলে, সিঁড়িতে অথবা পাহাড় বেয়ে উপরে উঠতে গেলে বুকে প্রচণ্ড ব্যথা অনুভূত হয়। একটু বিশ্রাম নিলে বা থেমে গেলে কয়েক মিনিটের মধ্যে তা ছেড়ে উপশম হয়ে যায়। খাওয়ার পরে (ভরাপেটে) এ ধরনের উপসর্গ বেশি হয়। খুব বেশি মন খারাপ থাকলে, দুশ্চিন্তাগ্রস্ত থাকলে, আবহাওয়া বিরূপ থাকলে, কখনো উত্তেজিত হলে, তাড়াহুড়া করে স্বাভাবিক কাজ করতে গেলেও এ ধরনের বুকের ব্যথা শুরু হয়ে যেতে পারে। খুব বেশি কাশি, পায়খানায় শক্তি প্রয়োগের সময়ও তা হতে পারে। বুকে জ্বালা জ্বালা করা, বুকচেপে আসা, বুক খুব ভার মনে হওয়া। এ ধরনের বুকের ব্যথার সঙ্গে শ্বাসকষ্ট, শরীর ফুলে যাওয়া, হার্ট ফেইলুরের লক্ষণ। লেখক : সহকারী অধ্যাপক, ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল, ঢাকা। 

ভিডিও কলে ডাক্তারের পরামর্শ পেতে Play Store থেকে ডাউনলোড করুন Bissoy অ্যাপ