ডেলিরিয়াম (ভুল বকা) কি?
ডিলিরিয়াম একটি অস্থায়ী জীবননাশক অবস্থা, যা মানসিক ভারসাম্যে অস্থিরতা সৃষ্টি করে এবং যার কারণে মানুষের পরিবেশ সচেতনতা হ্রাস পেতে থাকে, চিন্তাশক্তি বিক্ষিপ্ত হয় ও মানসিক কর্মহীনতা সৃষ্টি করে। এই রোগের সূত্রপাত হয় খুবই আকস্মিকভাবে এবং কয়েক দিন বা ঘণ্টার মধ্যেই মানুষের আচরণে লক্ষণীয় পরিবর্তন দেখা যায়।

ডেলিরিয়াম হল মস্তিষ্কের ক্রিয়ার হঠাৎ অবক্ষয় যা ডেলিরিয়ামের অবস্থায়, একজন ব্যক্তি দ্রুত মানসিক অবস্থার পরিবর্তন অনুভব করেন। এটিকে তীব্র বিভ্রান্তিকর অবস্থাও বলা হয়।

ডেলিরিয়ামের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ডিলিরিয়ামের উপসর্গগুলো কয়েক ঘণ্টা বা কয়েক দিনের মধ্যে লক্ষ্য করা যায়। এই সময় মানসিক ভারসাম্যে হেরফের হয়। মানুষটিকে কিছুটা সুস্থ আবার এই উপসর্গে মাঝামাঝি ধরনের জর্জরিত হতে দেখা যায়। উপসর্গের প্রাথমিক কিছু লক্ষণ-

  • পরিবেশ সম্পর্কে সচেতনতা হ্রাস পাওয়া
  • কিছু অতি সামান্য বিষয়ে বিভ্রান্ত হওয়া
  • নির্দিষ্ট কোনও বিষয়ে মনঃ সংযোগ করতে না পারা
  • পারিপার্শ্বিক পরিবেশের উপর প্রতিক্রিয়া কমা বা বন্ধ হয়ে যাওয়া
  • সংলাপ বা প্রশ্নের জবাব দিতে না পারা।


চিন্তাশক্তি লোপ পাওয়া-

  • স্মৃতিশক্তি কমে আসা, মুলত শীঘ্র ঘটনা ঘটে যাওয়ার ক্ষেত্রে
  • মতিভ্রম,আশেপাশের লোকজনকে চিনতে না পারা
  • সময় জ্ঞান হারিয়ে ফেলা
  • শব্দ চয়ন ও শব্দ মনে রাখতে অসুবিধা
  • অর্থহীন বাক্য ব্যবহার করা
  • লিখতে বা পড়তে অসুবিধা হওয়া।


ব্যবহারিক পরিবর্তন-

  • সেইসব জিনিস দেখতে পাওয়া যার কোনও অস্তিত্ব নেই
  • অস্থিরতা, রাগ, বিরক্তি, অথবা ক্ষুব্ধ ব্যবহার
  • সব সময় ঘুম পাওয়া বা অনিদ্রা
  • মেজাজের পরিবর্তন অথবা বেশি মাত্রায় ভয়, দুশ্চিন্তা, রক্ষণশীলতা
  • শারীরিক পরিবর্তন যেমন হৃদস্পন্দনের মাত্রা বেড়ে যাওয়া, ক্ষুব্ধ হয়ে যাওয়া, নিদ্রাচক্রে পরিবর্তন লক্ষ করা যায়।


ডেলিরিয়ামের প্রধান কারণগুলি কি কি?
ডেলিরিয়াম হল একটি বহুবিধ অবস্থা। এর সাধারণ কিছু কারণ হল দুরারোগ্য জ্বর, কড়া মাত্রার ওষুধ সেবন, সংক্রমণ (মূত্রনালী, বা ত্বক এবং উদরে সংক্রমণ), নিউমোনিয়া, মদ বা মাদক দ্রব্যের ব্যবহার।
ডিলিরিয়াম-এর আরও কিছু কারণ হতে পারেঃ

  • জ্বর এবং তীব্র সংক্রমণ, শিশুদের ক্ষেত্রে
  • একটা নির্দিষ্ট রোগের চিকিৎসার জন্য বহুরকমের ওষুধ ব্যবহার করা
  • বিভিন্ন স্বাস্থ্যজনিত সমস্যা বা সার্জারি
  • ড্রাগ ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার বা প্রত্যাহার
  • এ ছাড়া কিছু ওষুধ, যা দুশ্চিন্তা, হতাশা, পার্কিনসন্‌স রোগ, হাঁপানি ও ঘুমের ক্ষেত্রে ব্যবহৃত হয়, সেগুলিও ডেলিরিয়ামের কারণ হতে পারে।


ডিলিরিয়ামের ফলে যে যেসব জটিলতা দেখা যায়:
ডিলিরিয়াম কয়েক ঘণ্টা, কয়েক সপ্তাহ বা কয়েক মাসের জন্য দেখা যেতে পারে। যে ব্যক্তি দুরারোগ্য অসুখে ভুগছে, তার ডিলিরিয়াম হওয়ার আগে যে চিন্তাশক্তির ক্ষমতা ছিল, তা সে ফিরে নাও পেতে পারে। যদি ডিলিরিয়াম-এর চিকিৎসা সময় মত না হয় তাহলে একজন ব্যক্তির যা অভিজ্ঞতা হতে পারে, সেগুলো হল:

  • স্বাস্থ্যের অধঃপতন
  • সার্জারির পরে সেরে ওঠার সম্ভাবনা কমে যাওয়া
  • মৃত্যুর সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়া।


ডেলিরিয়াম কিভাবে নির্ণয় এবং চিকিৎসা করা হয়?
ডেলিরিয়ামের রোগ নির্ণয়ের জন্য ব্যক্তিটির চিকিৎসার ইতিহাসের পাশাপাশি রোগীর মানসিক স্থিতির পর্যবেক্ষণ, শারীরিক ও স্নায়ু পরীক্ষা অত্যাবশ্যক।

ডেলিরিয়াম ডিমেনশিয়ার অনুরূপ উপসর্গগুলি দেখায়। ডেলিরিয়ামের আকস্মিক সংঘটন এবং চাক্ষুষ হ্যালুসিনেশন যা ডিমেনশিয়া থেকে এটাকে আলাদা করতে সাহায্য করে।

ডেলিরিয়ামের চিকিৎসা:
যদি পরিবারের কোন ব্যক্তি বা বন্ধুর ডেলিরিয়ামের উপসর্গগুলি দেখা যায়, তাহলে সঠিক সময় ডাক্তারের পরামর্শ নিন। যদি সেই ব্যক্তির ডিমেনশিয়াও হয়ে থাকে তাহলে সতর্ক থাকুন তার আকস্মিক চিন্তাশক্তির পরিবর্তন ঘটার, যা ডেলিরিয়াম-এর সূত্রপাত হতে পারে। সেই ব্যক্তিটির উপসর্গগুলির উপর, তার চিন্তাধারার প্রবাহ, রোজকার অভ্যেস ও কাজকর্মের উপর আপনার পর্যবেক্ষণ অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। বয়স্ক ব্যক্তিরা, যারা হাসপাতালে ভর্তি বা অনেক দিন ধরে বিশেষ পর্যবেক্ষনের মধ্যে রয়েছে, তাদের ডেলিরিয়াম হওয়ার সম্ভাবনা বেশি। এর কারণ হল, কিছু কিছু উপসর্গের মাত্রায় তারতম্য দেখা যায় – যেমন সমাজ থেকে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া বা দুর্বল প্রতিক্রিয়া। যদি আপনি কখনও কোন হাসপাতালে বা নার্সিং হোমে কোনও ব্যাক্তির মধ্যে ডেলিরিয়াম-এর উপসর্গগুলি দেখতে পান, তাহলে তৎক্ষণাৎ ডাক্তারকে জানান। ডেলিরিয়াম-এর ক্ষেত্রে, মূল কারণটি সমাধান করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। উদাহরণঃ সংক্রমণের মতো একটি শারীরিক রোগ অ্যান্টিবায়োটিক দ্বারা চিকিৎসা করা যায়, এ ক্ষেত্রে ব্যক্তি ওই ডেলিরিয়াম থেকে মুক্তি পেতে পারে।

ফার্মাকোলজিকাল থেরাপিগুলি হল:

  • সংক্রমণ, ব্যথা, দীর্ঘস্থায়ী অসুস্থতা এবং অ্যালার্জির মত অন্তর্নিহিত রোগের চিকিৎসার জন্য ওষুধ।
  • এন্টিসাইকোটিক ড্রাগ।
  • মাঝে মাঝে, উত্তেজনা এবং অস্থিরতার ক্ষেত্রে হালকা সিডেটিভস (ঘুমের ওষুধ) ব্যবহার করা যেতে পারে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে