সিউডোমোনাস ইনফেকশন কাকে বলে?
সিউডোমোনাস প্রজাতির ব্যাকটেরিয়াগুলি যে ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণ সৃষ্টি করে তাকে সিউডোমোনাস সংক্রমণ বলে। পরিবেশে যথেষ্ট পরিমাণে ছড়িয়ে থাকা এই ব্যাকটেরিয়া একটি অত্যন্ত সাধারণ সংক্রামক জীবাণু হিসাবে কাজ করে। সিউডোমোনাসের দুইশত প্রজাতি আছে। কিন্তু তাদের মধ্যে শুধুমাত্র তিনটি প্রজাতিই মানুষের মধ্যে রোগসৃষ্টি করে বলে জানা যায়। এগুলি হল পি. এরুজিনোসা, পি. ম্যালেই এবং পি. সিউডোম্যালেই। সিউডোমোনাসের এই সমস্ত প্রজাতিগুলির মধ্যে পি. এরুজিনোসা মানুষের সংক্রমণ ঘটানোর জন্য সবথেকে বেশি দায়ী।

সিউডোমোনাস ইনফেকশনের প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি?
শরীরের কোন অঙ্গটি প্রভাবিত হয়েছে তার উপর নির্ভর করে সিউডোমোনাস সংক্রমণের বিভিন্ন উপসর্গ দেখা যায়। যেমন:

  • মূত্রনালী: মূত্রে রক্তের উপস্থিতি, মূত্রত্যাগের সময় জ্বালা ও ব্যথার অনুভূতি, ঘোলা রঙের মূত্র।
  • কান: কানে ব্যথা, শোনার সমস্যা, কান থেকে হলুদ/সবুজ ক্ষরণ এবং কানে অস্বস্তি বা চুলকানি।
  • গলা: মাথা যন্ত্রণা, জ্বর, গলা ব্যথা, ত্বকে ফুসকুড়ি, ঘাড়ের লসিকা গ্রন্থি ফুলে ওঠা।


সিউডোমোনাস ইনফেকশনের প্রধান কারণগুলি কি?
যে কারণগুলি একজন ব্যক্তির মধ্যে সিউডোমোনাস সংক্রমণের প্রবণতা বৃদ্ধি করে সেগুলি নিচে দেওয়া হল:

  • অস্ত্রোপচার বা পোড়ার ক্ষত।
  • ইউরিনারি ক্যাথেটার জাতীয় যন্ত্রের ব্যবহার।
  • কৃত্রিম শ্বাসযন্ত্র ব্যবহারকারী ব্যক্তি।
  • কোন রোগ বা ইমিউনোসাপ্রেস্যান্ট থেরাপির ফলে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা দুর্বল হয়ে যাওয়া।


কিভাবে সিউডোমোনাস ইনফেকশন নির্ণয় করা হয় এবং এর চিকিৎসা কি?
বিস্তৃত ইতিহাস এবং শারীরিক পরীক্ষার পরে এই সংক্রমণ নির্ণয়ের জন্য সাধারণত টিস্যু বায়োপ্সি, কমপ্লিট ব্লাড কাউন্ট, বুকের এক্স-রে, ইউরিন মাইক্রোস্কোপি ও কালচার প্রভৃতি পরীক্ষাগুলি করা হয়ে থাকে। নিচের নির্ণয় প্রক্রিয়াগুলি এই ব্যাকটেরিয়াল সংক্রমণের ক্ষেত্রে কার্যকরী:

  • ফ্লুওরেসিন টেস্ট: উডের অতিবেগুনি আলোর তলায় পর্যবেক্ষণ করলে আক্রান্ত অঞ্চলগুলি জ্বলজ্বল করবে।
  • পায়োসায়ানিন ফরমেশন: বেশিরভাগ ক্ষেত্রে পায়োসায়ানিন তৈরি হয় যার ফলে পুঁজের রং হয় নীলচে সবুজ।


সিউডোমোনাস সংক্রমণের চিকিৎসা:

  • ক্ষতের ডিব্রাইডমেন্ট (মৃত টিস্যু সরিয়ে ফেলা)।
  • ইমিউনোথেরাপি, এর মধ্যে আছে টিকাকরণ।
  • অ্যান্টিবায়োটিক জাতীয় ওষুধ। সাধারণত যে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি দেওয়া হয় তা হল:
  • কারবেনিসিলিন
  • টবরামাইসিন
  • জেন্টামাইসিন
  • সিলভার সালফাডায়াজিন
  • সিপ্রোফ্লক্সাসিন।


সিউডোমোনাস সংক্রমণ প্রতিরোধের উপায় কি?

  • যথাযথ নির্বিজকরণ প্রণালী মেনে চলা।
  • যথাযথ বিচ্ছিন্নকরণ পদ্ধতির ব্যবহার।
  • ক্যাথেটার ও অন্যান্য যন্ত্রগুলিকে পর্যাপ্ত পরিমাণে পরিষ্কার রাখা।
  • ক্ষতের চিকিৎসায় টপিক্যাল অ্যান্টিব্যাকটেরিয়াল ক্রিম ও লোশনের ব্যবহার।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে