সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস বা ঘাড়ের বাত কি?
সারভাইকাল স্পন্ডাইলোসিসে ঘাড়ে যে কশেরুকাগুলো থাকে সেখানে ব্যথা হয়। অসুখটি খুবই পরিচিত। বয়সের সাথে রোগটির সম্পর্ক আছে। পুরুষ এবং মহিলাদের মধ্যে একটি সাধারণ সমস্যা, যা সাধারণত তাদের মধ্যে মাঝ বয়সে দেখা দেয়। এটির উৎপত্তি সারভাইকাল ভারটিব্রে বা মেরুদন্ডে হওয়ার কারণে এটিকে সারভাইকাল পেইন বা ব্যথাও বলা হয়ে থাকে। এই অসুখের আরো কিছু নাম আছে। একে সারভাইকাল অস্টিও আর্থ্রাইটিস এবং নেক আর্থ্রাইটিসও বলে।
এই রোগ ঘাড়ের চারপাশের পেশীগুলিতে হালকা ব্যথা থেকে শুরু করে স্বাভাবিকভাবে ঘাড় ঘোরানোর ক্ষেত্রেও অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারে এবং এমনকি এর ফলে উপরের অঙ্গগুলির সংবেদনশীলতাও কমে যেতে পারে।
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগের প্রধান লক্ষণ এবং উপসর্গগুলি কি কি?
ঘাড় ব্যথা একটি তীব্র বা দীর্ঘস্থায়ী (ক্রনিক) অবস্থায় পরিণত হতে পারে। যদিও ঘাড় ব্যথাই সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের প্রধান উপসর্গ তথাপি এ রোগে মাথাব্যথা, মাথা ঘোরা বা বুক ব্যথার মতো ব্যতিক্রমী উপসর্গও থাকতে পারে। সারভাইক্যাল স্পন্ডাইলোসিসের কারণে অনেক সময় ঘাড়ে ব্যথাই অনুভূত হয় না। রোগী বলেন, মাথা ঘুরছে অথবা বুকে ব্যথা হচ্ছে।
সাধারণভাবে ঘাড় ব্যথার সঙ্গে যুক্ত লক্ষণগুলি হল:
- ঘাড়ের পেশীগুলি শক্ত হয়ে যাওয়া।
- ঘাড় ঘোরাতে অক্ষমতা।
- উপরের অঙ্গগুলির মধ্যে ঝিঝির অনুভুতি বা অসাড়তা অনুভব করা।
- ঘাড়ে এবং এর আশেপাশের জায়গাগুলিতে ব্যথার অনুভুতি।
- কাঁধে ব্যথা এবং উপরের অঙ্গগুলিতে ব্যথা।
- একটি বিরল লক্ষণ যেটি আপনি অনুভব করতে পারেন সেটি হল মাইগ্রেনের অ্যাটাক। দীর্ঘস্থায়ী ব্যথার ক্ষেত্রে, কিছু স্নায়বিক জটিলতা দেখা দিতে পারে।
অন্যান্য উপসর্গ:
- ৬ সপ্তাহের বেশি ব্যথা থাকা।
- হাত বা পায়ে অস্বাভাবিক দুর্বলতা
- জ্বর থাকা
- ওজন কমতে থাকা
- বিনা কারণে হঠাৎ পায়খানা প্রস্রাব বন্ধ হয়ে যাওয়া বা নিয়ন্ত্রণ করতে অসুবিধা।
- অনান্য সমস্যা যেমন, কথা বলতে অসুবিধা, মাথা ঘোরা, চোখে দেখতে অসুবিধা
- রাতে ঘুমাতে অসুবিধা হওয়া।
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগের প্রধান লক্ষণগুলি কি কি?
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস বিভিন্ন কারণে হতে পারে। এর সাধারণ কারণগুলি হল:
- যেকোনো ধরনের আঘাত।
- ঘাড়ে তীব্র টান ধরা।
- ডিজেনারেটিভ বা অপজনন সম্বন্ধীয় রোগ।
- কাজের সময় খারাপ ভঙ্গিতে বসা।
- ঘাড়ের কাছে ঝাঁকুনি অনুভূত হওয়া।
- পজিশনাল অর্থাৎ ঘাড়ের নড়াচড়ার কারণে ব্যথা
- কম্পিউটার বা মোবাইল ফোনের অত্যধিক ব্যবহার।
- ক্লান্তি বোধ করা বা ঘুমের অভাব।
- সারভাইকাল স্পন্ডাইলোসিস, আর্থরাইটিস এবং অস্টিওপরোসিসের মত রোগের উপস্থিতি।
- মানসিক কারণ যেমন মানসিক চাপ এবং উদ্বেগ।
- কখনো কখনো, ঘাড়ের এলাকায় টিউমারের বেড়ে ওঠাও কারণ হতে পারে।
- হাড়ের ইনফেকশন
- অস্টিও ম্যালেসিয়া বা ভিটামিন ডি-এর অভাব
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগ নির্ণয়:
স্পনডাইলোসিস নির্ণয়ের জন্য এক্সরে পরীক্ষা করা হয়। তবে কোন কোন ক্ষেত্রে সিটি স্ক্যান অথবা এমআরআই করা হয়ে থাকে।
এক্সরেতে বিশেষ ধরনের কিছু পরিবর্তন দেখে স্পনডাইলোসিস নির্ণয় করা হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো ডিস্কের ক্ষয়। কশেরুকাতে বিভিন্ন মাপের নতুন হাড়ের দানা লক্ষ করা যেতে পারে। কারো কারো ক্ষেত্রে দুই কশেরুকার মধ্যবর্তী অংশের ফাঁক কমে যায়।
সার্ভাইক্যাল স্পনডাইলোসিস রোগ এর চিকিৎসা:
- ফিজিওথেরাপি- স্বল্পমেয়াদী জয়েন্ট ইমমোবিলাইজেশন।
- ঘাড়ের ব্যায়াম।
- পালস্ড ইলেক্ট্রোম্যাগনেটিক ফিল্ড থেরাপি।
- নন-স্টেরয়েডিয়াল অ্যান্টি-ইনফ্ল্যামেটরি বা প্রদাহ-বিরোধী ওষুধ এবং মাসল রিল্যাক্সেন্ট বা পেশী শিথিলকারক দিয়ে চিকিৎসার দ্বারা ব্যথার নিরাময়।
- গরম সেক।
ক্রনিক বা দুরারোগ্য ব্যথা যেগুলির দ্বারা চিকিৎসা করা যেতে পারে সেগুলি হল:
- পেশী শক্তিশালী করে তোলা এবং সহনশীলতার ব্যায়াম।
- ফিজিওথেরাপি এবং ডায়াথারমি।
- অ্যানালজেসিক্স বা বেদনানাশক, অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি এবং পেশী শিথিলকারক বা মাসল রিল্যাক্সেন্ট।
- কাউন্সেলিং।
- বৈকল্পিক থেরাপি যেমন আকুপাংচার।
- যদি কোন স্নায়বিক সমস্যা দেখা দেয়, সেক্ষেত্রে সার্জারি।
সবমিলিয়ে বলা যায়, ঘাড়ের বাত ঘাড় থেকে শুরু হয় এবং পেশীজনিত ব্যথা থেকে স্নায়বিক জটিলতা পর্যন্ত ছড়াতে পারে। ফিজিওথেরাপি, ব্যায়াম এবং ওষুধের মাধ্যমে এটির চিকিৎসা করা যেতে পারে। কাজের সময় সঠিক বা ভাল ভঙ্গিমায় বসা এবং সঠিক ব্যায়াম এই ব্যথার রোগকে সারিয়ে তুলতে সাহায্য করে।