বার বার প্রস্রাব হওয়া কি?
ঘন ঘন প্রস্রাব হওয়ার মানে হলো স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি মাত্রায় বেগ পাওয়া এবং প্রস্রাব করা। এটি যেকোন ব্যক্তির প্রতিদিনকার দিন লিপিতে বিঘ্ন ঘটায় এবং ঘুমের ব্যাঘাত সৃষ্টি করে থাকে। তাই দ্রুত আরাম পাওয়ার জন্য ঘন ঘন প্রস্রাব হলে শুরুতে অনেকেই না বুঝে এন্টিবায়োটিক খাওয়া শুরু করেন যা বহু ক্ষেত্রেই উল্টো ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। অনেকের দিনে ঘন ঘন প্রস্রাবের চাপ আসে আবার অনেকের রাতে বেশি আসে আবার কারো ক্ষেত্রে দিন রাতে সমান থাকে। দিনে ৪ থেকে ৫ বার প্রস্রাবের চাপ আসা মোটেই অস্বাভাবিক নয়। তবে তার থেকে বেশি বার হলে কিন্তু চিন্তার বিষয় হয়ে দাঁড়ায়।

যখন আপনি স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি বার প্রস্রাব করার প্রয়োজন অনুভব করেন তখন এটি একটি সংক্রমণ বা কিডনিতে পাথরের মত অন্তর্নিহিত রোগের কারণে হতে পারে।

বার বার প্রস্রাব হওয়ার সাথে যুক্ত প্রধান লক্ষণ ও উপসর্গগুলি কি কি?

  • সাধারণভাবে, বেশীরভাগ মানুষ ২৪ ঘন্টায় ৭ থেকে ৮ বার প্রস্রাব করেন। যদিও এটাকে সাধারণকরণ করা যায় না তবে এর থেকে বেশী হলে তা একটি সমস্যা বলে বিবেচিত হতে পারে।
  • এটা রাতে আরো বেশী হওয়ার সম্ভাবনা থাকতে পারে, আপনার নিয়মিত ঘুমের সূচিতে ব্যাঘাত ঘটাতে পারে এবং এর ফলে পুরো দিন ঝিমুনি ও ঘুমঘুম ভাব লাগতে পারে।
  • বার বার প্রস্রাব হওয়ার কারণে সাধারণত পিপাসা বেড়ে যায়।


কিছু ব্যতিক্রমী উপসর্গগুলির মধ্যে রয়েছে:

  • জ্বর এবং ঠান্ডা লাগা
  • পিঠে ব্যথা ও পেটে ব্যথা
  • প্রস্রাবের সময় অস্বাভাবিক নির্গমন বা স্রাব হওয়া
  • বমি বমি ভাব।


বার বার প্রস্রাব হওয়ার প্রধান কারণগুলি কি কি?

  • বার বার প্রস্রাব হওয়া কোনো স্বাস্থ্যগত পরিবর্তনের জন্য হতে পারে যেমন অত্যধিক তরল পদার্থ গ্রহণ করা বা অত্যধিক ঠান্ডা অবস্থা।
  • ডায়াবেটিস মেলাইটাস বা ডায়াবেটিস ইনসিপিডাসের রোগীরাও বার বার প্রস্রাব হওয়ায় ভোগেন।
  • ইউরিনারি এলাকায় সংক্রমণ এবং ওভারঅ্যাক্টিভ ব্লাডারের উপসর্গগুলির মধ্যে একটি হল বার বার প্রস্রাব হওয়া।
  • মহিলাদের মধ্যে, মেনোপজ বা ইস্ট্রোজেনের অসাম্যের জন্যও বার বার প্রস্রাব করার তাড়না হতে পারে।
  • ইউরিনারি ব্লাডারে পাথর হওয়াও বার বার প্রস্রাব হওয়ার আরেকটা কারণ।
  • কখনও কখনও, অ্যান্টি-এপিলেপ্টিক্সের মত ওষুধগুলোও এই উপসর্গের কারণ হতে পারে।
  • যুবকদের পর্ণ দেখা বা উত্তেজক চিন্তার ফলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
  • শীতকাল বা ঠান্ডা-শুষ্ক পরিবেশে মানুষের শরীর ঘামে না, ঐ সময় অতিরিক্ত প্রস্রাব তৈরি করে কিডনী শরীরে পানি ও লবণের মাত্রা নিয়ন্ত্রণ করে।
  • কিছু রোগের লক্ষণ হিসেবে অতিরিক্ত প্রস্রাব হয়, যেমন - ডায়াবেটিস, প্রস্টেট গ্রন্থির টিউমার, প্রস্রাবে জীবাণু সংক্রমণ ইত্যাদি।
  • কিডনী অকেজো হবার অন্যতম লক্ষণ হল অতিরিক্ত প্রস্রাব হওয়া।
  • ব্লাডার ক্যান্সার, ব্লাডার বা কিডনিতে পাথর হলে।
  • মূত্র নালীর সংকোচন হলে ঘন ঘন প্রস্রাব বা প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া হতে পারে।
  • পুরুষদের প্রোস্টেটে ইনফেকশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
  • প্রস্রাবের পথে যদি কোন বাধা থাকে তাহলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
  • মেয়েদের গর্ভে সন্তান আসার প্রথম ৩ মাসে ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
  • মেয়েদের পেলভিক ইনফ্লামেশন হলেও ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
  • যক্ষা বা TB হলেও তলপেটে জ্বালাপোড়া, প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে।
  • প্রস্রাবের থলিতে ক্যান্সার হলেও প্রস্রাবে জ্বালাপোড়া এবং ঘন ঘন প্রস্রাব হতে পারে, এমনকি রক্তও বের হতে পারে।


বার বার প্রস্রাব হওয়া কিভাবে নির্ণয় ও চিকিৎসা করা হয়?
যখন আপনি বার বার প্রস্রাব হওয়ার কথা বলবেন, আপনার চিকিৎসক আরম্ভের ইতিহাস ও উপসর্গের সময়সীমা জানবেন। যদি আপনার বার বার প্রস্রাব হওয়া ছাড়া অন্য কোনো সমস্যা থাকে তাহলে আপনার চিকিৎসককে অবশ্যই সেটা জানানো উচিত।

  • প্রস্রাবে রক্ত, গ্লুকোজ, প্রোটিন বা অন্য অস্বাভাবিকতা আছে কিনা দেখার জন্য ভোরবেলার প্রস্রাব সাধারণত ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়।
  • প্রস্রাবের পরে ব্লাডার সম্পূর্ণ খালি হচ্ছে কিনা দেখার জন্য ব্লাডারের আল্ট্রাসাউন্ড করা হয়। পেলভিসের সিটি স্ক্যান বা এক্স-রেও করা হয়।
  • যদি চিকিৎসক ডায়াবেটিসের মত অন্য কোনো অসুখ সন্দেহ করেন তাহলে প্রাসঙ্গিক পরীক্ষা ও রক্তপরীক্ষা করতে পরামর্শ দেন।


বার বার প্রস্রাব হওয়ার চিকিৎসা উপসর্গের কারণের উপর নির্ভর করে।

  • যদি বার বার প্রস্রাব হওয়া কোনো সংক্রমণের কারণে হয় তাহলে অ্যান্টিবায়োটিকগুলি সাহায্য করে।
  • ডায়াবেটিস মেলাইটাস ইন্সুলিন থেরাপি অথবা ওষুধের সাহায্যে এবং কিছু জীবনধারার পরিবর্তন করে নিয়ন্ত্রণ করা হয়।
  • যদি কারণটি ওভারঅ্যাক্টিভ ব্লাডারের জন্য হয় তাহলে ব্লাডারের পেশীকে শিথিল করার জন্য ওষুধ দেওয়া হয়। ব্লাডার প্রশিক্ষণ ব্যায়ামও সাহায্য করে।

শেয়ার করুন বন্ধুর সাথে